মৌলভীবাজার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও জরিমানা প্রদান

প্রকাশিত: ৮:৫৩ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৪, ২০২৪

মৌলভীবাজার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও জরিমানা প্রদান

কপিল দেব মৌলভীবাজার:

মৌলভীবাজার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মারামারি মামলায় ৪ জন আসামীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও জরিমানা দিয়েছেন আদালত।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল ) দুপুরে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সৈয়দ মো: কায়সার মোশাররফ ইউসুফ এ রায় প্রদান করেন।

কারাদণ্ড ও জরিমানা প্রাপ্ত আসামিরা হলেন, মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার গনকিয়া এলাকার মৃত দুলু মিয়ার ছেলে মাসুক মিয়া ও মুজিবুর রহমান ময়না,মালিক মিয়া ছেলে মায়া মিয়া, মানিক মিয়ার ছেলে রেনু মিয়া।

আদালতে রায় প্রদানের সময় রাষ্ট্র পক্ষে অ্যাডভোকেট সাইফুর রহমান ( এপিপি) ও আসামীদের পক্ষে এডভোকেট আব্দুল মতিন ( হারুন) উপস্থিত ছিলেন।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, কুলাউড়া উপজেলার অবস্থিত গনকিয়ায় গত ০৩/০৮/২০১৫ খ্রিঃ তারিখ সকাল অনুমান ৫.৩০ ঘটিকার সময় এজাহারকারী মোঃ আব্দুল কাদির ঘুম থেকে উঠে তার বসত বাড়ির পশ্চিম দিকে বের হলে দেখতে পান আসামীগণ লাঠি, দা, খুন্তি, লোহার রডসহ দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বেআইনী জনতাবদ্ধে তার পৈত্রিক সম্পত্তির ভূমির উপর অনধিকার প্রবেশ করত: মাটি ও হালি চারা কাটছে দখল করার জন্য। এজাহারকারী আসামীগণের এহেন অবস্থান দেখতে পেয়ে তার ভাই সাক্ষী মতলিব মিয়াসহ সাক্ষী সহিদ মিয়া ও মছব্বির মিয়াকে অবহিত করলে সাক্ষীগণসহ এজাহারকারী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আসামীগণকে জমি হতে উঠে যেতে বলেন। আসামী মানিক মিয়া এজাহারকারীকে লক্ষ্য করে বলে যে, আর যদি তাদেরকে উঠে যেতে বলি তবে প্রাণে হত্যার করে মাটিতে পুঁতে ফেলবে। তখন এজাহারকারী ও উক্ত সাক্ষীগণ আইনের আশ্রয়ে যাবেন বললে আসামী মানিক মিয়া অন্যান্য আসামীদেরকে হুকুম দেয় এজাহারকারী ও উক্ত সাক্ষীদেরকে খুন করে মাটির নীচে চাপা দিয়ে দিতে। এতে
এজাহারকারী ও উক্ত সাক্ষীগণ পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে আসামী রেনু মিয়া ও বাবুল মিয়া লাঠি, চাকু ও লোহার রড হাতে নিয়ে তাদের গতিরোধ করে দাঁড়ায় এবং এলোপাথারী-মারপিট শুরু করে। তাৎক্ষণিক আসামীগণ এজাহারকারী ও উক্ত সাক্ষীদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে লোহার রড, লাঠি দিয়ে বেদম প্রহার করে। আসামী মাসুক মিয়া ধারালো লম্বা দা দিয়ে প্রাণে হত্যার উদ্দেশ্যে এজাহারকারীর ছেদ মারলে মারলে মাথা নুইয়ে মাটিতে গড়ান দিয়ে পড়ে প্রাণে রক্ষা পান। এজাহারকারীকে রক্ষার জন্য সাক্ষী সহিদ মিয়া মতলিব মিয়া এগিয়ে আসলে আসামী মুজিবুর রহমান ময়না সাক্ষী সহিদ মিয়া-এর ঘাড় হতে মস্তক দ্বিখন্ডিত করে
ফেলবে মর্মে হুমকি দিয়ে সজোরে লম্বা রামদা দিয়ে ছেদ মারলে উক্ত ছেদ ডান হাত দিয়ে প্রতিহত করলে উক্ত ছেদ সাক্ষী সহিদ মিয়া-এর ডান হাতের তালুতে পড়ে মারাত্মক কাটা রক্তাক্ত জখম হয়, যাতে চিকিৎসাকালে প্রায় ১০টি সেলাই লাগে। আসামী মায়া মিয়া হাত ভেঙ্গে ফেলবে বলে লোহার খুন্তি দিয়ে সাক্ষী সহিদ মিয়াকে সজোরে আঘাত করলে উক্ত আঘাত তার ডান হাতের কব্জির উপরে লেগে চামড়া থেতলে গিয়ে হাতের রগ ছিড়ে হাড় ভাঙ্গা জখম হয়, যাতে প্রায় ৬টি সেলাই লাগে। সাক্ষী মতলিব মিয়া ও মছব্বির বাধা প্রদান করে চিৎকার করলে আসামী মায়া মিয়া প্রাণে হত্যার উদ্দেশ্যে হাতে থাকা লোহার খুন্তি দিয়ে
এলোপাথারী আঘাত করে, এতে উক্ত সাক্ষীদ্বয়ের শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক রক্তাক্ত জখম হয়। আসামী মাসুক মিয়া সাক্ষী মতলিব মিয়াকে প্রাণে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথা লক্ষ্য করে ধারালো রামদা দিয়ে ছেদ মারলে উক্ত ছেদ লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে তার গলার নীচে বুকের মধ্যে পড়ে,এতে দা-এর অগ্রভাগ লেগে মারাতাক কাটা রক্তাক্ত জখম হয়, যাতে প্রায় ৬টি সেলাই লাগে।আসামী রেনু মিয়া চাকু দিয়ে সাক্ষী মতলিব মিয়াকে ছেদ মারতে উদ্যত হলে সাক্ষী মছব্বির মিয়া বাধা প্রদান করে, তখন আসামী রেনু মিয়া সাক্ষী মছব্বির মিয়াকে এলোপাথারী ছেদ মারলে ডান হাত দিয়ে প্রতিহত করলে তার ডান হাতের কব্জির উপরে পড়ে গুরুতর কাটা রক্তাক্ত জখম হয়, যাতে প্রায় ৭/৮টি সেলাই লাগে। আসামী মাসুক মিয়া রামদা দিয়ে সাক্ষী সহিদ মিয়াকে ঘটনাস্থলে প্রাণে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথা লক্ষ্য করে ছেদ মারলে উক্ত ছেদ লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে গলার নীচে পড়ে মারাত্মক কাটা রক্তাক্ত জখম হয়। সাক্ষী সহিদ মিয়া প্রায়
মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার উপক্রম হলে এজাহারকারী তাকে রক্ষার জন্য এগিয়ে গেলে আসামী মুজিবুর রহমান ময়না মাথা লক্ষ্য করে প্রাণে হত্যার উদ্দেশ্যে ছেদ মারলে উক্ত ছেদ এজাহারকারীর ডান হাতের কাঁধের নীচে পড়ে কাটা রক্তাক্ত জখম হয়, যাতে প্রায় ৪টি সেলাই লাগে। শোর চিৎকার শুনে সাক্ষী রেজিয়া বেগম ও লিলা বেগম এগিয়ে আসলে আসামী মুজিবুর রহমান ময়না, রেনু মিয়া ও বাবুল মিয়া তাদের কাপড়ে ধরে টানা হেচড়া করে শ্লীলতাহানী করে। আসামী বাবুল মিয়া সাক্ষী রেজিয়া বেগম-এর গলায় থাকা ১টি স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নিয়ে যায়। শোর চিৎকারে ৪-৮নং সাক্ষীগণ এগিয়ে এসে এজাহারকারী ও উক্ত জখমীদেরকে আসামীদের কবল হতে উদ্ধার করে। আসামীগণ হুমকি দিয়ে বলে যে, এজাহারকারী ও উক্ত জখমীদেরকে যেথায় পাবে সেথায় প্রাণে হত্যা করে ফেলবে, এজাহারকারীর বাড়িতে আগুন লাগিয়ে সর্বহারা করবে এবং তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা-মোকদ্দমা দিয়ে হয়রানী করবে।ঘটনার পর এজাহারকারী ও জখমীগণ আশপাশের লোকজন ও অন্যান্য সাক্ষীদের সহায়তায় কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। জখমী সহিদ মিয়া ও মতলিব মিয়া-এর অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় কর্তব্যরত ডাক্তার তাদেরকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে রেফার করে। তারপর সাক্ষী সহিদ মিয়া-এর অবস্থায় আরও বেশি আশংকজনক হওয়ায় তাকে সিলেট এম.এ.জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে।

আদালতের বিচারক ১০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত হলে এ রায় প্রদান করেন।

চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বেঞ্চ সহকারী প্রণব চন্দ্র গোপ সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, বিজ্ঞ আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হওয়ায় প্রত্যেক আসামিদেরকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও জরিমানা দিয়েছেন। অভিযুক্ত আসামীরা হলেন- মাসুক মিয়া-এর বিরুদ্ধে আনীত The Penal Code, 1860 এর ৩২৪ ধারার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে উক্ত ধারায় দোষী সাব্যস্তক্রমে ০২ (দুই) বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৩,০০০/- (তিন হাজার) টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরো ১৫ (পনেরো) দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড, মুজিবুর রহমান ময়না-এর বিরুদ্ধে আনীত The Penal Code, 1860 এর ৩২৪ ও ৩২৬ ধারার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে উক্ত ধারায় দোষী সাব্যস্তক্রমে তাকে The Penal Code, 1860 এর ৩২৪ ধারায় ০২ (দুই) বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৩,০০০/- (তিন হাজার) টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরো ১৫ (পনেরো) দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং The Penal Code, 1860 এর ৩২৬ ধারায় ০৫ (পাঁচ) বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫,০০০/- (পাঁচ হাজার) টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরো ০১ (এক) মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড, মায়া মিয়া-এর বিরুদ্ধে আনীত The Penal Code, 1860 এর ৩২৩ ধারার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে উক্ত ধারায় দোষী সাব্যস্তক্রমে ০৬ (ছয়) মাসের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০০/- (পাঁচশত) টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরো ০১ (সাত) দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং রেনু মিয়া-এর বিরুদ্ধে আনীত (8) The Penal Code, 1860 এর ৩২৪ ধারার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে উক্ত ধারায় দোষী সাব্যস্তক্রমে ০২ (দুই) বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৩,০০০/- (তিন হাজার) টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরো ১৫ (পনেরো) দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।তিনি আরো ও জানান রায় ঘোষণা শেষে দন্ড প্রাপ্ত আসামীদেরকে সাজা পরোয়ানা মুলে জেল হাজতে প্রেরন করা হয়।