মৌলভীবাজার পশুর হাটে গ্রাহক প্রতারণাসহ নানা অনিয়ম ঠেকাতে বাজারে তদারকির দাবি ভোক্তাদের

প্রকাশিত: ২:১৬ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৫, ২০২৩

মৌলভীবাজার পশুর হাটে গ্রাহক প্রতারণাসহ নানা অনিয়ম ঠেকাতে বাজারে তদারকির দাবি ভোক্তাদের

জুবায়ের আহমেদ রুমি মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:

 

সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী গবাদি পশুর হাটের প্রকাশ্য স্থানে হাসিল বা খাজনার রেট সম্বলিত চার্ট লাগিয়ে রাখার কথা থাকলেও মৌলভীবাজার শ্রীমঙ্গলের ভৈরব বাজার পশুর হাটে এ ধরনের চার্ট লাগানো নেই। ফলে ক্রেতা ও বিক্রেতা কেউই জানেন না হাসিলের সরকারি রেট কত।

 

এ বিষয়ে সচেতন মহল মনে করেন, এক দেশে দুই আইন হওয়ার কথা নয়। সারাদেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে মৌলভীবাজার জেলায় ও হাসিল রেট কার্যকর করা উচিত।

 

সরকারি হাট-বাজারগুলোর ব্যবস্থাপনা,ইজারা পদ্ধতি এবং তা থেকে প্রাপ্ত আয় বণ্টন অনুযায়ী হাট ইজারা দেয়া হয়।পশুর হাটে অতিরিক্ত হাসিল আদায় করছেন ইজারাদার।খবর পাওয়া গেছে পশুর দামের ওপর শতকরা ৫ টাকা করে হাসিল আদায় করার কথা কিন্তু ইজারাদার ৫টাকার স্থলে ১০ টাকা হাসিল আদায় করছেন।

 

বাজারে আসা সমিদ মিয়া নামে এক ক্রেতা ভুক্তভোগীবলেন,
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী একটি ছাগল কেনাবেচায় ৪/৫ টাকা হাসিল নেয়ার বিধান রয়েছে এবং সব জায়গায় আরও কম রেইট অথচ এখানে ইজারাদার একটি ছাগল বিক্রি হলে ৫ টাকার স্থলে ১০ টাকা হাসিল আদায় করছেন।এযেন মগের মুলুক রে ভাই।

গেলো শুক্রবার (২৪ মার্চ ) দুপুরে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল ভৈরব বাজার পশুর হাটে আসা ভুক্তভোগী ক্রেতা আব্দুর রশিদ জানান,ভৈরব বাজার হচ্ছে সবার পরিচিত ছাগল,মোরগ,হাঁস ও পাখির হাট। বিশেষ করে-প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার ছাগলসহ হাঁস, মোরগ,পাখি কেনাবেচার জন্য সদর উপজেলার প্রত্যেক এলাকা থেকে হাজারো মানুষের ঢল নামে এ হাটে। অথচ এই হাটে একটি ছাগল বিক্রি হলে শতকরা ৫ টাকার স্থলে ১০ টাকা করে হাসিল আদায় করছেন ইজারাদার।

 

হাটে পশু কিনতে গিয়ে দালালদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।হাটে আসা মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে এমন এক পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে যে ছাগল,মুরগী, হাঁস ইত্যাদি কেনাবেচা করতে গেলে দালালদের শরণাপন্ন হতেই হবে। তাঁরাই পশু বিক্রি করে দেবে অথবা কিনে দেবে। কোনো ক্রেতা-বিক্রেতা তাঁদের শরণাপন্ন না হলে পশু তুলনামূলক কম দামে বেচতে বা বেশি দামে কিনতে হবে।

 

হাটগুলো ঘুরে দেখা যায়, হাটে নিয়ে আসা ছাগল বিক্রেতা কে কয়েকজন দালাল(নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) শ্রীমঙ্গল ভূনবী গ্রামের ইয়াছিন আলীকে ঘিরে রেখেছেন।তার হাতে থাকা ছাগল টপ করে তাদের মধ্যে একজন হাতে নিয়ে বলে কত বিক্রি করতে চাচ্ছেন জিজ্ঞেস করেই তাদের হাতে নিয়ে গেলো।বিক্রেতা কে জিজ্ঞেস করলাম কত বিক্রি করেছেন বলে না ভাই বিক্রি করিনি সে(দালাল)নিয়ে গেছে দাম ধরে এখন বেশি টাকায় বিক্রি করলে আমাকে কিছু দিবে।ইয়াছিন আলী বলেন, ‘দালাল ছাড়া পশু কেনা়বেচা কঠিন। সহজে পশু কিনতে বেঁচতে তাঁদের সঙ্গে চুক্তি করতে হয়।

 

দালাল জয়নাল হোসেন বলেন, ‘সারা বছর এ পেশায় তেমন আয় হয় না। প্রতি শুক্রবারে এই সময়টাতেই যা হয়।’

 

জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেক প্রতি শুক্রবার ছাগল,ভেড়া, হাঁস,মোরগসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি নিয়ে আসেন বিক্রেতারা, এই সব গবাদি পশু এখানকার বিভিন্ন বাজারে আসার পর স্থানীয় দালাল চক্র ও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণে চড়া মূল্যে বিক্রয় হচ্ছে।

 

সরজমিনে পশুর হাট পরিদর্শন করে জানা যায়, হাটে ক্রেতা-বিক্রেতার চেয়ে দালালের সংখ্যা বেশি বলে অভিযোগ উঠেছে। লোকমুখে শুনা যায় কোন ক্রেতা গবাদিপশু দেখতে গেলে হঠাৎ আচমকা একজন এসে ধারনার চেয়ে বেশি মূল্যে দামদর করে চলে যায়। ফলে বিপাকে পড়ে স্থানীয় সাধারণ ক্রেতারা।হাটগুলোতে যত ছাগল,মুরগী, হাঁস ও পাখি তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দালাল।কোনো ক্রেতা-বিক্রেতা তাঁদের শরণাপন্ন না হলে পশু তুলনামূলক কম দামে বেচতে বা বেশি দামে কিনতে হবে।

এদিকে,পশুর হাটে বিক্রির জন্য পাইপ দিয়ে অতিরিক্ত পানি খাওয়ায়ে ছাগল মোটা করন করা,অতিরিক্ত মুনাফার জন্য কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নানা অবৈধ কৌশলে ছাগলকে মোটা করে প্রতিনিয়ত বেশি দামে হাটে বিক্রি করছে।কিছু ব্যবসায়ী হাটে নেওয়ার আগে ছাগলকে পাইপের মাধ্যমে পানি খাওয়াচ্ছে। ছাগলের পেট সম্পূর্ণ ভর্তি না হওয়া পর্যন্ত তারা এ প্রক্রিয়া চালিয়ে যায়। এ প্রক্রিয়ায় পেট পূর্ণ হলে পশুকে মোটা দেখা যায় এবং নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে বিক্রি করা সম্ভব হয়।এভাবে প্রতিনিয়ত ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।এমন পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর ও প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছেন বাজারে আসা ভোক্তামহল।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

লাইভ রেডিও

Calendar

March 2024
S M T W T F S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31