যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদন পক্ষপাতদুষ্ট : নিরাপত্তা বিশ্লেষক

প্রকাশিত: ১১:৩৪ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ২৪, ২০২৪

যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদন পক্ষপাতদুষ্ট : নিরাপত্তা বিশ্লেষক

 

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

মার্কিন প্রতিবেদনের অসঙ্গতির বিষয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব) আবদুর রশীদ বলেন, কোনো একটি রিপোর্টে একপক্ষের কথা থাকা আরেকপক্ষকে গুরুত্ব না দেওয়া হলে সেটাকে আমরা পক্ষপাতদুষ্ট বলে থাকি। আমার মনে হয়, এই রিপোর্টগুলো নিয়ে আমাদের আরও অফিসিয়াল জায়গা থেকে কথা বলা উচিত।

যুক্তরাষ্ট্রের ২০২৩ সালের মানবাধিকার বিষয়ক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সরকার শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও সংগঠন করার স্বাধীনতা সীমিত করে দেয়। সমাবেশ করতে হলে সরকারের আগাম অনুমতি নিতে হয় এবং প্রায়ই সরকার রাজনৈতিক সভা সমাবেশ করতে বিএনপিকে অনুমতি দেয় না। অথচ গত দুই বছরে বিএনপি সারাদেশে অন্তত কয়েকশ’ সভা সমাবেশ এবং বিক্ষোভ করেছে। প্রতিবেদনে সরকারের অনুমতি নেওয়ার কথা বলা হলেও মূলত অনুমতি নিতে হয় পুলিশের কাছ থেকে। জননিরাপত্তা এবং ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে পুলিশ সেই অনুমতি দিয়ে থাকে। প্রতিবেদনে শুধু বিএনপি’র কথা উল্লেখ করা হলেও, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকেও সভা সমাবেশ করতে অনুমতি নিতে হয় পুলিশের সেবিষয়ে কিছু বলা হয়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার বিষয়ক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারের কথা বাংলাদেশের সংবিধানে বলা হলেও সরকার সাধারণত এই অধিকারকে সম্মান করে না। বাংলাদেশে বিক্ষোভ ও বিক্ষোভের মতো সমাবেশের জন্য সরকারের আগাম অনুমতি নিতে হয়। বিভিন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, প্রায়শই বিরোধী দলগুলোর জমায়েত নিষিদ্ধ করে এবং অনুমতির জন্য অযৌক্তিক প্রয়োজনীয়তা আরোপ করে। পুলিশ এবং বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা অনেক ক্ষেত্রে বিরোধী দল, সংগঠন এবং কর্মীদের দ্বারা সমবেত হওয়া বিক্ষোভ কিংবা অবরোধ ছত্রভঙ্গ করতে শক্তি প্রয়োগ করেছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সরকারি কর্তৃপক্ষ প্রায়ই প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং অন্য বিরোধী দলকে অনুষ্ঠান করার অনুমতি দেয়নি। সরকারি কর্তৃপক্ষ ক্ষমতাসীন দলের কর্মীদের তাদের কর্মসূচিতে বিরোধী সমর্থকদের ভয় দেখানো ও আক্রমণ করার অনুমতি দিয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, গত আগস্টে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ২৮ ও ২৯ জুলাই বিএনপির অবস্থান কর্মসূচির সময় সংঘর্ষের পর বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ বন্ধের জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ রিপোর্ট করেছে যে, পুলিশ বিক্ষোভের সময় নির্বিচারে রাবার বুলেট, টিয়ার গ্যাস এবং জল কামান নিক্ষেপ করেছে এবং বিরোধী দলের সমর্থকদের লাঠিপেটা করেছে।

মুলত , গত দুই বছরে কয়েকশ’ সভা সমাবেশ করেছে বিএনপি। নানা ইস্যুতে দলীয় কার্যালয় নয়াপল্টনের সামনে থেকে শুরু করে দেশব্যাপী এসব কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কর্মসূচি পালনের জন্য শর্তসাপেক্ষে অনুমতি দিয়েছে পুলিশ। তবে বেশ কয়েকটি কর্মসূচির নামে গাড়ি ভাংচুর এবং হামলার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে।

গত বছরের ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা দেয় বিএনপি। এই কর্মসূচি পালনে পুলিশ কোন প্রকার অনুমতি দেয়নি। রাজধানীর ধোলাইখাল, শনিরআখড়া ও উত্তরায় রাস্তা বন্ধ করে অবস্থান নেয় বিএনপি’র নেতা কর্মীরা। পুলিশ তাদেরকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে চাইলে বিএনপি কর্মীরা পুলিশের ওপর চড়াও হয়। আর তাতে বেঁধে যায় সংঘর্ষ। সেদিনের ঘটনায় ২০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

গত ২৮ অক্টোবর বিএনপি শান্তিপূর্ণ সমাবেশের নামে রাজধানীতে তান্ডব চালায়। সমাবেশ থেকে প্রথমে হামলা চালায় প্রধান বিচারপতির বাসভবনে। এরপর গাড়ি ভাংচুর শুরু করে। সেদিন একজন পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করে ফেলে রাখে রাস্তায়। এসব খবর সংগ্রহ করার সময় অন্তত ৩০ জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে এসব কোন কিছুই উল্লেখ করা হয়নি।

২০২০ সালে তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম রাজধানীতে সভা সমাবেশের বিষয়ে নির্দেশনা জারি করেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, ঢাকা মহানগরীতে সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংগঠনের পক্ষে সভা, সমাবেশ, গণজমায়েত কার্যক্রম গ্রহণ করতে পুলিশের অনুমতি নিতে হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ঢাকা মহানগরীর নাগরিকদের জানমালের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পূর্বানুমতি ব্যতীত কোনরূপ মিছিল, সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচির কার্যক্রম গ্রহণ এবং এর জন্য শব্দযন্ত্র ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ করছে। পূর্বানুমতি ব্যতীত কেউ এরূপ কার্যকলাপে জড়িত হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে মহানগরীতে শান্তি-শৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

বর্তমান ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেছেন, রাজধানীবাসীকে নিরাপদে চলাচল করা আমাদের দায়িত্ব। রাজপথকেন্দ্রিক জনসভা হলে জনগণের চলাচল বিঘ্নিত হয়। সেক্ষেত্রে জনসভার অনুমতি দেওয়ার আগে আমাদের কিছু বিচার বিশ্লেষণ রয়েছে। ঝুঁকি ও নিরাপত্তা বিশ্লেষণ রয়েছে। সেগুলো পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট থানার ওসি-এসি-ডিসিরা বাস্তবতা পরীক্ষা করে আমাদের কাছে রিপোর্ট এলে এরপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, অনুমতি দেওয়া হবে কি না।

তিনি আরও বলেন, সমাবেশ রাজনৈতিক দলগুলোর গণতান্ত্রিক অধিকার। আমরা জনগণের নিরাপত্তা সব সময় বড় করে দেখি। জনগণের যে নিরাপত্তা, সেটি অক্ষুণ্ণ রেখে আমাদের ফোর্স ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থা রেখে, যাদের সমাবেশ তাদের বিষয়টিও মাথায় রেখে পুলিশ নিরাপত্তা দিয়ে থাকে।