শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিন

প্রকাশিত: ১২:১৬ অপরাহ্ণ, মে ২৯, ২০২১

 শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিন

আনোয়ার ফারুক তালুকদার

 

বাংলদেশসহ গোটা বিশ্বে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে স্থবির রয়েছে শিক্ষা খাত। যদিও জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে একে একে সবকিছু প্রায় খুলে গেছে কিন্তু শিক্ষার্থীদের সংক্রমণ ঝুঁকির চিন্তা মাথায় থাকায় খোলা হচ্ছে না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যেহেতু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গত এক বছরের বেশি বন্ধ রয়েছে তাই এবারও অনিশ্চয়তায় পড়েছে এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষা। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পরীক্ষাও হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। সংক্রমণ ঝুঁকির কারণে চলতি বছরের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছুরা অনিশ্চয়তায় পড়েছেন। বার বার পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েও তা থেমে যাচ্ছে। পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা হলেও পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি। পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে শিক্ষাবর্ষ আরো পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এবার তিনটি গুচ্ছে ৩০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া সিদ্ধান্ত হয়েছিল আগেই। এতে শিক্ষার্থীদের মাঝে স্বস্তি ফিরেছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি তাদের বড় অনিশ্চয়তায় ঠেলে দিয়েছে। ২৩শে মে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়ার কথা বলা হলেও ছুটির মেয়াদ আরো এক সপ্তাহ বাড়িয়ে ২৯শে পর্যন্ত করা হয়েছে। এমন পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। আবার সম্প্রতি মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার পর প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। দেশে এখন ৪০ বছরের বেশি বয়সীদের টিকা দেয়া হচ্ছে। দেশে যে পরিমাণ টিকা মজুত আছে তা দিয়ে আর ৭ দিন চলতে পারে । ৪০ ঊর্ধ্ব বয়সীরাই যেখানে টিকার আওতায় আসতে পারেননি সেখানে এ অবস্থায় শিক্ষার্থীরা কবে টিকা পাবে তার নিশ্চয়তা কি? তাছাড়া ১৮ বছরের কম বয়সীদের জন্য এখন পর্যন্ত টিকার অনুমোদন মিলেনি দেশে। এত সব প্রশ্নের সমাধান কবে হবে, আর কবে খুলবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তার কোন নিশ্চয়তা কে দিবে?

 

তবে জানা যায় এমন অবস্থার মধ্যেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এটা উদ্বিগ্ন অভিভাবক হিসাবে অনেকই আশান্বিত। যেহেতু করোনাভাইরাস মোকাবিলায় আমরা এক বছর পার করে ফেলেছি অনেক কিছুই রপ্ত করেছি। সেগুলো বিবেচনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর স্বাস্থ্য সুরক্ষার শর্তগুলো যেমন- স্কুলে শিক্ষার্থী, শিক্ষকদের মাস্ক পরা, স্যানিটাইজার, হ্যান্ডওয়াস, টয়লেট, ক্লাসরুম, বেঞ্চ স্যানিটাইজ ও পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ক্লাসরুমে শিক্ষার্থীদের সামাজিক দূরুত্ব বজায় রাখতে প্রতিটি ক্লাসে একাধিক শিফট করা বা বিকল্প দিনে ক্লাসে উপস্থিতি বা উভয়েই বিবেচনা করা যেতে পারে বলে গবেষকরা মনে করেন। সব শ্রেণির সপ্তাহে ৫ দিন না হোক অন্তত একদিন করে ক্লাস নেয়া যেতে পারে। এতে করে শিক্ষার্থীরা অন্তত শিক্ষকদের এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আবহ পাবে , যা তাদের শিক্ষায় ফিরে আসতে সহায়তা করবে। বাসায় থেকে থেকে মোবাইল, কম্পিউটার আর টিভির প্রতি যেভাবে এরা ঝুঁকে পড়েছে তাতে ওদের মানসিক এবং শারীরিক দুই সমস্যাই বাড়ছে এবং পাশাপাশি বাবা-মায়েরদেরও মানসিক চিন্তার কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, “অফিস-আদালত, মিল-কারখানা, দোকানপাট, যানবাহন, হাটবাজার কোন কিছুই বন্ধ রাখা হচ্ছে না। শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ রাখার যৌক্তিকতা দেখি না। আমি মনে করি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া উচিত।“ এদিকে ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন পরিচালিত গবেষণায় দেখা যায় যে শিশু ও কিশোরা এই রোগে সংক্রামিত হতে পারে এবং অন্যকেও সংক্রামিত করতে পারে। তবে শিশুদের মধ্যে সংক্রমণ হালকা হয় এবং খুব কম সংখ্যক শিশু -কিশোরেরা কোভিড -১৯ এ মারা যায়। বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা গেছে ২০ বছরের কম বয়সীদের সংক্রমণের হার ১০ শতাংশের কম এবং মৃত্যুর হার শুন্য দশমিক ২ শতাংশেরও কম। এমতাবস্থায় আমরা অভিভাবকরাও তাই মনে করি, তাই আর কাল বিলম্ব না করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হউক।

 

আনোয়ার ফারুক তালুকদার :একজন উদ্বিগ্ন অভিভাবক

লাইভ রেডিও

Calendar

March 2024
S M T W T F S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31