শেখ হাসিনাকে নিবেদিত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীয় কবির অনুবাদে নির্বাচিত কবিতা

প্রকাশিত: ৬:০১ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৩, ২০২১

শেখ হাসিনাকে নিবেদিত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীয় কবির অনুবাদে নির্বাচিত  কবিতা

-ড. আবুল আজাদ, চেয়ারম্যান, মুক্তিযুদ্ধ একাডেমি ট্রাস্ট
স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারাবিশে^র নিপীড়িত শোষিত মানুষের মুক্তির অবিনাশী কণ্ঠস্বর। তাঁর অবিসংবাদিত নেতৃত্বে দীর্ঘ নয় মাস সশ¯্র যুদ্ধ শেষে তিরিশ লক্ষ শহীদের এক সাগর রক্ত ও দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর নিপীড়িত বাঙালি জাতি পরাধীনতার অর্গল ভেঙ্গে অর্জন করে কাঙ্খিত স্বাধীনতা, জন্ম হয় একটি নতুন স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের, নাম যার বাংলাদেশ। বাঙালিকে হাজার বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল এই ক্ষণজন্মা ভুমিপুত্রের জন্য। আমাদের বঙ্গবন্ধু সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। তাঁর জন্ম, বেড়ে ওঠা ও সংগ্রামের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে বাঙালির সংগ্রামের ইতিহাস, গৌরব ও সাফল্য।
এই ক্ষণজন্মা ভুমিপুত্রের জ্যেষ্ঠ সন্তান বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব এর আদরে ধন সমকালীন বিশে^র অন্যতম শ্রেষ্ঠ চিন্তক বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পিতা শেখ মুজিব অমর কাব্যের মহাকবি; কন্যা শেখ হাসিনা বিষাদকাব্যের জীবন্ত কিংবদন্তী। মুজিবের রক্তধারায় পুষ্ট, তবু, শেখ হাসিনা-ই নতুন বাংলাদেশ গড়ার মহান কারিগর। শেখ হাসিনা মানেই উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। তাইতো পিতার মতোই বাঙালির অতি আপনজন হিসেবে শেখ হাসিনাকেও তুমি সম্বোধন করো লিখি, ‘স্বজনহারানো শোকের হিমালয় বুকে/সমুদ্র জয় করে নীলিমা ছোঁয়ার স্বপ্ন মেখেছ আমাদের চোখে মুখে/ রক্তাক্ত পাহাড়ে এনেছ শান্তি/ ছিটমহলে খুশির প্লাবন। … বঙ্গপিতার স্বপ্ন-সাহসে লালিত/ বাঙালি জাতির ভাগ্যের বাতিঘর/ কালের প্রচ্ছদে মহিয়সী নারী হয়ে ফুটে থাকা/ রতœগর্ভা মা তুমি;/ তোমার জন্মে গর্বিত আজ প্রিয় পিতৃভূমি।’
অসহায়, প্রান্তিক, ছিন্নমূল, আশ্রয়হীন মানুষের আলোর দিশারি তিনি। চিত্রকল্পের মতো তিনি দেখতে পান বিপন্ন-নিরন্ন মানুষের মুখচ্ছবি। অনেকবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে তিনি অবিচল। তাঁর অবিরাম সাহসী পথচলায় আমাদের ভেতরের শুকনো সলতেগুলো জ¦লে উঠে; আমরা নতুন দিনের স্বপ্নে জেগে উঠি তাঁর ঘুম জাগানিয়া গানে। শান্তি-সম্প্রীতি, সুন্দর ও সত্যের পথে আমাদের পথ চলার অনুপ্রেরক শক্তি তিনি- শেখ হাসিনা।
বিশ^মানবতার প্রতি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ও অঙ্গিকার অভূতপূর্ব। দেশের ভেতরে ও বাহিরে তা বহুবার প্রমাণিত হয়েছে। এজন্যই বোধহয় কবি নুরুল হুদা লিখেন, তুমি সেই জয়কন্যা এই বঙ্গে, জাতিসংঘে নিশঙ্ক, নির্ভয়/ শান্তির মডেল হাতে শান্তিকন্যা, জয় হোক মানুষের জয়/… তোমার এ-জন্ম মানে শস্য জন্ম,/ বঙ্গজুড়ে বংপ্রজাতিরÑ/ তোমার এ জন্ম মানে শান্তিজন্ম/ একবিংশ শতাব্দীর দুখী ধরণীর…। অতি সম্প্রতি পাশর্^বর্তী দেশ মিয়ানমারের বিপন্ন, নিরন্ন, নিপীড়িত প্রায় দশ লক্ষ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে শেখ হাসিনা নিবিড় মমতায় বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়েছেন। গভীর ভালোবেসে রোহিঙ্গা শিশুদের কোলে তুলে নিয়েছেন তিনি। রোহিঙ্গাদের সাথে ভাগ করে খাবার গ্রহনের অঙ্গিকারে তিনি অবিচল । তাঁর মানবিক বোধ, ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও উন্নয়ন কর্মকান্ডে নিরলস প্রচেষ্টার কারণে তিনি আজ বিশ^পরিম-লে ‘মানবতার জননী’ হিসেবে অভিষিক্ত।
এ সকল কারণেই তিনি বোধ হয় কবিতার বিষয় হয়ে উঠেছেন। এদেশের বিশিষ্ট প্রায় সব কবি কবিতা লিখেছেন আমাদের পরম প্রিয় নেত্রী দেশরতœ বিশ^চিন্তক শেখ হাসিনাকে নিয়ে। কবিদের ভাবনা, আকাঙ্খা, স্মৃতি, স্বপ্ন, কল্পনা ও পরিকল্পনা আমাদের প্রিয় কান্ডারী শেখ হাসিনাকে ঘিরে। শেখ হাসিনার চরিত্রের নানান আলো আর বিভা, শোক ও দু:খ, আনন্দ আর অভিযাত্রা মূর্ত হয়েছে চঊঅঈঊ অঘউ ঐঅজগঙঘণ (ঋরভঃু-ঃড়ি ংবষবপঃবফ ঢ়ড়বসং ফবফরপধঃবফ ঃড় ঝঐঊওকঐ ঐঅঝওঘঅ) শীর্ষক কাব্যগ্রন্থে সংকলিত ৫২টি কবিতায়। মহান ভাষা আন্দোলনের বছর ১৯৫২, শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২১ ফেব্রুয়ারি এবং ১৭ মে চ্যাম্পিয়ন অব দ্যা আর্থ শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস; এ বিষয়সমূহ স্মরণে রেখে নির্বাচিত ৫২টি কবিতা ২১জন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীয় কবির অনুবাদে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীয় ১৭টি ভাষায় (১. চাকমা, ২. মারমা, ৩. রাখাইন, ৪. গুর্খা, ৫. তঞ্চজ্ঞ্যা, ৬. গারো, ৭. খিয়াং, ৮. চাক, ৯. বম, ১০. অহমিয়া, ১১. ককবরক, ১২. ¤্রাে, ১৩. সাঁওতাল, ১৪. হাজং, ১৫. পাংখুয়া, ১৬. বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি ও ১৭. মণিপুরি) অনূদিত হয়ে প্রকাশিত হয়েছে।
বাংলাদেশ কবির দেশ, কবিতার দেশ। বাংলাদেশ পাখির দেশ, নদীর দেশ। পাহাড়-সমুদ্র-আকাশ, জলা-জংলা, হাওড়-বাওড়-বিল আমাদের অস্তিত্বে মিশে আছে। বিচিত্র ভাষাভাষী মানুষের বসবাস আমাদের এই ভূখন্ডে। আমাদের কবিতায় আর গানে আমাদের ভালোবাসার বিভাস আর প্রতিবাদ, শ্রদ্ধা আর দ্রোহ, শংকা আর সাহস প্রকাশ করি অসংকোচে, নান্দনিক সৌকর্যে।
পূর্ণিমার চাঁদের জোছনার গলিত প্লাবনে শিশির-¯œাত ভোরের মায়াভরা হাওয়ায় দোয়েলের লেজ নাচানো গানের সুরে আকাশে বাউল চুল উড়ানো শরতে কবিতার মতো একদিন হঠাৎ যে নামটি ফুটে উঠেছিলো আমাদের হৃদয়ের আঙ্গিনায় সারা বাংলাদেশে, সে নামটিকে পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশের সকল ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষায় অনুবাদের মাধ্যমে বাংলাদেশের সকল মানুষের মনের মুকুরে চিরন্তন করে রাখার বিরল উদ্যোগ নিয়েছেন কবি আনিস মুহম্মদ। তাঁকে জানাই অগাধ ভালোবাসা। শেখ হাসিনা- একটি কবিতাও এ নামে হতে পারে/ কিংবা একটি কবিতারই এ নাম। আসুন হাত মেলাই সুন্দর ও সত্যের মিছিলে।

ড. আবুল আজাদ, চেয়ারম্যান, মুক্তিযুদ্ধ একাডেমি ট্রাস্ট