শ্রীহট্ট: উনিশ শতকে মুসলিম সমাজে ইংরেজি শিক্ষার দ্বন্ধ: ক্রান্তিকাল ও উত্তরণ

প্রকাশিত: ২:২৯ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৩, ২০২১

শ্রীহট্ট: উনিশ শতকে মুসলিম সমাজে ইংরেজি শিক্ষার দ্বন্ধ: ক্রান্তিকাল ও উত্তরণ

দীপংকর মোহান্ত
সিলেটে প্রাপ্ত বিভিন্ন তা¤্রলিপি সাক্ষ্য দেয় যে, প্রাচীনকালে বৌদ্ধ শাসনাধীন শ্রীহট্ট ম-লে শক্তিশালী প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণে ‘বিহার’ সামান্য কেন্দ্রিক শিক্ষা গড়ে ওঠে। সম্ভবত আগন্তুক ব্রাহ্মণরা বৌদ্ধ ব্যাকরণ ইত্যাদি শিক্ষা দিতেন। পরে সংস্কৃত ভাষায় আর্য-ব্রাহ্মণ্য শাস্ত্র গ্রন্থাদির চর্চা শুরু হয়। আবার মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার পর শ্রীহট্টীয় প-িতরা সুদূর নবদ্বীপ গিয়ে সংস্কৃত ভাষায় শাস্ত্রজ্ঞানচর্চা করেছেন। স্থানীয়ভাবে সংস্কৃত ভাষা কেন্দ্রিক অনেক টোল গড়ে ওঠেছিল। উচ্চ স্তরের লোকজন টোলে পড়াশোনাকে পূণ্যকাজ অর্জন হিসেবে মনে করতো। কিন্তু তার বাইরে লোকজন ছিল ব্রাত্য সমাজের। যারা বৈষ্ণব ও পিরদের দ্বারা বেশি প্রভাবিত ছিল। অর্থাৎ ‘গুরু’ ভজনাকারী। তারা প্রেমবাদী ও ¯্রষ্টার মধুকোষের একান্ত প্রার্থী।
অন্যদিকে সিলেটে ইসলামের বিকাশ ও মুসলিম জনসংখ্যা বাড়ার সাথে প্রতিষ্ঠানগত ধর্মীয় শিক্ষা শুরু হয়। তবে প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মীয় শিক্ষা কখন কীভাবে শুরু হয় তা বলা কঠিন। মোগল আমলে নানাভাবে ফারসি চর্চার কথা জানা যায়। উপরতলার কিছু মানুষ চাকরির লোভে ফারসি শেখা শুরু করেন। সামান্য ফারসি অধ্যয়ন করেও লোকজন আয়ের পথ দেখেন। তখন ফারসি রাজভাষাÑ জমি-জমা ও আদালতের ভাষা। প্রধানত মক্তব কেন্দ্রিক তার বিকাশ ঘটে। এই প্রেক্ষিতে মক্তবের কাম্যতা সমাজে বাড়তে থাকে। সেকালের মক্তবে হিন্দুদের ফারসি পড়ার কথা বিপিনচন্দ্র পাল তাঁর আত্মজীবনীতে বলেছেন [সত্তর বৎসর, পৃ. ২৮]। কিন্তু কোম্পানির শাসনামলে ফারসি ভাষা ধাক্কা খায়, যদিও দীর্ঘদিন পর্যন্ত ফারসি ভাষা চালু ছিল। ১৮৩৫ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ইংরেজি ভাষাকে অফিস-আদালতের ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করলে ফারসিজনা হিন্দু-মুসলমান বিষয়কে সহজে মেনে নিতে পারেনি। ১৮৩৭ সালের ২৯ নভেম্বর আদালতে ফারসি ভাষার পরিবর্তে ইংরেজি ভাষা চালু হয়। সে প্রভাব সিলেটের আদালতে পড়ে। হিন্দু নকলনবিশরা পেশা বদলের চেষ্টা চালায় কিন্তু মুসলিম সমাজ ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ইংরেজি ভাষা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায় এবং বিরোধীতা করে। ইংরেজ শাসকদের কাছে মক্তবের কাম্যতা ছিল না। সেগুলো ক্রমে সরকারি সমর্থনও হারায়। ইংরেজদের বদাণ্যতায় কলকাতা আলেয়া মাদ্রাসার [১৭৮০] গড়ে ওঠলেও সিলেটের মুসলিম সমাজ ‘দেওবন্ধ’[১৮৬৬] গিয়ে ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণের প্রতি আকৃষ্ট হয়। অন্যদিকে সংরক্ষণবাদীরা সামাজিক নীতির আলোকে মক্তব, মাদ্রাসা ও মসজিদে ধর্মীয় পাঠদান প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম অব্যাহত থাকে। ততদিনে অফিস-আদালতে ফারসি ভাষা পরিবর্তে ইংরেজি নকলনবিসের কাজ ও আয় করার পথ খুলে যায়। কিন্তু এই বিরাট পরিবর্তনও স্থানীয় মুসলিম সমাজকে স্পর্শ করতে পারেনি।
সিলেটে হযরত শাহ জালল [র] ও শ্রীচৈতন্যের প্রভাবে ধর্মশিক্ষার প্রতি মানুষের ঝোঁক ছিল বেশি। সিলেটের অফিস ও আদালতে ফারসি ভাষার পরিবর্তে ইংরেজি কিছুটা চালু হলে সেই ফারসি নকলনবিসরা জীবিকার টানে ইংরেজি শব্দ দেখে নকল করার চেষ্টা চালায়। ধর্মীয় কারণে এই কাজে মুসলমান সমাজ থেকে নিষেধ চলে আসে। ফলে অফিস-আদালতে হিন্দু নকলনবিসের সংখ্যা বেড়ে যায়Ñ যার একটা বড় অংশ ছিল বহিরাগত হিন্দু। স্থানীয় হিন্দুদের তখনো টোল ও বাংলা পাঠশালায় দিকে ঝুঁক ছিল। তবে উচ্চ স্তরের প্রাচীনপন্থী হিন্দুরা কিছুদিন ইংরেজি শিক্ষার বিরোধীতা করলেও ক্রমে তারা ইংরেজি শিক্ষার প্রতি নমনীয় নীতি গ্রহণ করে। মুসলমানরা থাকে কঠোর অবস্থানে। তারা নানাবিধ ফতোয়া দিয়ে নতুন প্রজন্মের জন্য ইংরেজি শিক্ষার পথ আরো রুদ্ধ করে দেয়। সাধারণ মুসলমানদের মনে এই ধারণা দীর্ঘকাল বজায় থাকে যে, ইংরেজি বা ‘ফিরিঙ্গী শিক্ষা’ গ্রহণ করলে ধর্ম থাকবে না। সিলেটে এই ভয় বহুকাল বজায় থাকে। এমতাবস্থায় মুসলিম সমাজ অর্থ ও শিক্ষার ক্ষেত্রে পিছনে পড়ে যায়।
অগ্রবর্তী মুসলিম পরিবারগুলো দীর্ঘ দিন ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণের প্রশ্নে অনেক দ্বিধা-দ্বন্ধ-সংশয়ে থাকলেও ক্রমে তারা অর্থ-সংস্থান ও ক্ষমতা ধরে রাখার কারণে নমনীয় হয়ে ওঠে। কিন্ত সাধারণ মুসলিম পরিবারগুলো কঠোর অবস্থানে অটল থাকে। তারা শেষ পর্যন্ত কেবল ধর্ম শিক্ষার লাইন বজায় রাখেন। তারা স্থানীয় মুসলিম সমাজের ঐতিহ্যবাদী নীতি এবং সংরক্ষণবাদী চেতনা ধরে রাখে। পূর্বের প্রভাবশালী মুসলমানদের একাংশ ফিরে দেখেছে ফারসি ভাষা হারোনোর ফলে আয় কমেছে; অনেক ‘মুন্সি’ দুঃখ কষ্টে জীবন-যাপন করছেন। অফিস আদালতে গিয়ে ইংরেজি শব্দের নকলের কাজ করা তখন সমাজচ্যুত ও জাত যাওয়ার ভয় ছিল। তবে অল্প সংখ্যক আশা জাগানিয়া ও দুরদর্শী মুসলমান আধুনিক শিক্ষা গ্রহণের দিকে ক্রমে ঝোঁকতে থাকে।
কোম্পানির আমলে বঙ্গীয় প্রদেশের অংশ হিসেবে সিলেট জেলা ঢাকা ডিভিশনের অধীনে ছিলÑ পরে ১৭৭২ সালে ‘শ্রীহট্ট’জেলা সৃষ্টি হলে আধুনিক অর্থকরী চাকরির অনেক পথ ও পদ খোলে যায়। কিন্তু মুসলিম সমাজের একেবারে প্রস্তুতি ছিল না। শ্রীহট্ট-আসামে চা-চাষের বাগানও পত্তনের কাজ শুরু হয়েছে। এই চাকরিতেও মুসলিম সমাজ অনুপস্থিত থাকে [সাধারণ হিন্দু সহ]। এই শূন্যতায় সিলেটে চাকরির পদগুলো আশপাশের বহিরাগত লোকদের কাছে ‘শ্রীহট্ট’ গুরুত্বপূর্ণ স্থান হয়ে ওঠে। চাকরির খোঁজে ১৮৪৭ সালে ঢাকা বিক্রমপুর থেকে গুরুচরণ মহলানবিশ [১৮৩৩-১৯১৬] শ্রীহট্টে এসেছিলেন। তিনি তাঁর আত্মজীবনীতে এই প্রসঙ্গটি লিখেছেন। ক্রমে চাকরির আশায় ত্রিপুরা [কুমিল্লা], ময়মনসিংহ থেকে লোকজন সিলেটে আসতে থাকে। মূল বহিরাগত লোকজন দ্বারা সিলেটে ‘ইংরেজি শিক্ষা’ চালু হয়ে যায়। শহরের এলিট হিন্দুরা ইংরেজি শিক্ষায় ক্রমে আকৃষ্ট হলেও মুসলিম সমাজ অনেক দেরীতে ‘আধুনিক শিক্ষা’ হজম করা শুরু করে।
উনিশ শতকের মধ্যকালে মুসলিম সমাজের ‘এলিট’ খ্যাতÑ শহরের পুরানো মজুমদার পরিবার, কাজী ইলিয়াসের সৈয়দ পরিবারসহ কিছু বদান্য ব্যক্তিবর্গ কালের চাহিদার দিকে চোখ ফিরায়। তারা মক্তব, মসজিদ ও মাদ্রাসায় ধর্মীয় শিক্ষা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি রোজীরোজগার বাড়ানোর লক্ষে আধুনিক শিক্ষা গ্রহণের পক্ষে সায় দেয় এবং জনমত গড়ার চেষ্টা চালায় [শিশুদের সরকারি বা মিশন স্কুলে ভর্তি করানো]। এই প্রচারণার ফলে ষাটের দশকে [উনিশ শতক] শ্রীহট্ট শহরে ইংরেজি শিক্ষার দোয়ারে খোলে যায়। ততদিনে প্রেসবিটারিয়ান পাদ্রিরা শহরে ইংরেজি ‘শিক্ষা কার্যক্রম’ আরম্ভ করেছে। এই সময় ‘আধুনিক শিক্ষার ভগীরথ’ হিসেবে উইলিয়াম প্রাইজ [১৮২০Ñ১৮৬৯] সাহেব সিলেটে স্থিতু হয়েছেন। প্রাইজ সাহেবের হাত ধরে ১৮৫৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রথম চারজন শিক্ষার্থী ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা দেয় [পরীক্ষায় পাশ করেন মাত্র একজন। তিনি হলেন নবকিশোর সেন (১৮৩৮Ñ১৯১০)]। তখন পর্যন্ত মুসলিম সমাজ থেকে কোনো ছাত্র ইংরেজি শিক্ষার পথ মাড়ায়নি। বিষয়টি হিন্দু-মুসলিম সমাজে আলোড়ন তুলে। ইতোমধ্যে শিক্ষিত বলতে ‘বহিরাগত চাকরিজী’কে বুঝাতো। স্থানীয় সিলেটীরা ছিল পশ্চাতে। প্রশাসন ও মিশনারীরা মুসলিম সমাজে ইংরেজি শিক্ষা বিস্তারে চেষ্টা চালাতে থাকে।
কোম্পনির শাসকরা সিলেট শহরের আদি কয়েকটি অভিজাত মুসলিম পরিবার [যারা মোগল আমলে প্রশাসনে ছিলেন] সাথে ‘সম্মানজনক যোগাযোগ’ বজায় রেখে সখ্যতা গড়ে তোলার চেষ্টা চালায়। তার মধ্যে ঐতিহাসিক মজুমদার পরিবার ছিল অন্যতম। বনেদি মুসলিম পরিবার হিসেবে তারা খ্যাত ছিলেন। ক্রমে এই পরিবার ইংরেজি শিক্ষার পক্ষে প্রকাশ্যে প্রচারণা ও কাজ শুরু করে। ক্ষমতাধর মজুমদার পরিবারের বিপক্ষে কানাঘুষা কথা চললেও তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর মতো শক্তি অসংগঠিত মুসলিম সমাজে তৈরি হয়নি। আধুনিক শিক্ষার প্রথম যুগে এই পরিবারের মুরব্বিদের ইংরেজি শব্দ শিক্ষা নিয়ে একটি প্রচলিত গল্প প্রচলিত ছিল। গল্পটি শোনেছিলাম প্রখ্যাত সাংবাদিক ও স্বাধীনতা সংগ্রামী নিকুঞ্জবিহারী গোস্বামীর [১৯১৩-১৯৯৩] কাছ থেকে। মজুমদার পরিবারের একজন সম্মানীয় মুরব্বি নাকি অনেক কষ্ট করে কয়েকটা ইংরেজি শব্দ শিখেছিলেনÑ ‘আই’ মানেÑ আমি, ‘ইট’ মানেÑ খাওয়া, ‘ইউ’ অর্থÑ তুমি। একদিন তিনি সৌজন্যবশত ইংরেজ জেলা প্রশাসককে তাঁদের বাসায় নিমন্ত্রণ করতে গেলেন। সাক্ষাতের সময় তিনি ইংরেজি শব্দ অনেকটা ভুলে গিয়ে বললেন, ‘আই ইট ইউ’। ফিরিঙ্গী সাহেব বিষ্ময়ে বলেন, ‘হোয়াট’! প্রথম যুগে ইংরেজির এই দশা শহরে সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে মজুমদার পরিবার অনেকটা ইংরেজি শিক্ষা বিস্তারে আশার আলো দেখায়। আধুনিক শিক্ষার অভাবে সিলেট শহরে কোনো নাগরিক সমাজ গড়ে ওঠেনি। জীবনমান সম্পর্কে বৃহত্তর সমাজ ছিল উদাসীন। সিলেটে কোম্পানির কালেক্টরেটের বিভিন্ন শিক্ষা রিপোর্ট থেকে অনুমান করা যায় যে, ১৮৫০-এর আগ পর্যন্ত ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণের প্রতি শহরবাসী দোদল্যমান অবস্থায় থাকে [তখনো শহরের চরিত্র পায়নি]। ধর্মীয় বাধা নিষেধ ছাড়াও স্থানীয় ভূমির পর্যাপ্ত যোগানের কারণে ইংরেজি শিক্ষার প্রতি অনীহা ভাব ছিল।
কোম্পানির শাসনামলে ১৮৩৬ সালে আধুনিক শিক্ষার সূচনা ঘটে সিলেট জেলা স্কুল স্থাপনের মধ্য দিয়ে [অ্যাডাম রিপোর্টের আলোকে। বর্তমান স্থানে ছিল না]। কিন্তু স্থানীয়দের কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। এমনকি ছাত্রদের অভাবে স্কুল কিছুদিন বন্ধও থাকে। বিদ্যালয় পরিচালনার সঙ্গে ছিলেন আমলারা [বহিরাগত]। মূলত তাদের পরিবারের অল্প সংখ্যক শিশু ছাত্র হিসেবে ভর্তি হয়। ১৮৪০ সালে ‘প্রভিশনাল স্কুল’ চালু হয়Ñ যার উদ্দেশ্য ছিল স্থানীয়দের সহযোগিতায় বিদ্যালয় পরিচালিত করা [জনসম্পৃক্ততা বাড়ানো]। কিন্তু স্থানীয় লোকদের তেমন সাড়া ছিল না। কোম্পানি পরোক্ষভাবে স্কুলটি কিছু দিন চালু রাখে। ধর্মাশ্রয়ী শিক্ষার বাইরে ঔপনিবেশিকদের কার্যকরী শিক্ষা গ্রহণে অভিভাকদের অনিহা কাজ করে। ফলে ছাত্রাভাবে এই স্কুলও সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। সিপাহী বিদ্রোহের অনেক পরে সরকারি স্কুলটি বহুপথ মাড়িয়ে বর্তমান জেলা স্কুলে রূপ পেয়েছিল। কিন্তু মুসলিম পরিবার থেকে বিদ্যালয়ে ছাত্র যাওয়া অকল্পনীয় ছিল। ১৮৪৯ সালে মি. লজ নামক স্কুল পরিদর্শক [সিলেটে] লক্ষ করেছিলেন যে, স্থানীয় লোকজন বাংলা স্কুলে [পাঠশালা] পড়তে আগ্রহী। ১৮৪৯ সালের এবহবৎধষ জবঢ়ড়ৎঃ ড়হ চঁনষরপ ওহংঃৎঁপঃরড়হ রহ ঃযব চৎড়ারহপবং ড়ভ ইবহমধষ চৎবংরফবহপু, [চ. ২৩৯] ংুষযবঃ অংশে দেখা যায়, তখন সরকারি স্কুলে ৪৫ জন ছাত্র ছিল। তার মধ্যে ২জন খ্রিষ্টান, বাকিরা হিন্দু [সম্ভবত চাকরিজীবী পরিবারের]। কিন্তু কোনো মুসলিম পরিবারের সন্তানকে স্কুলে দেওয়া হয়নি। মুসলমানরা ‘ফিরিঙ্গিদের’ অধীন ‘না পাক’ চাকরির উপার্জনকে ‘হারাম’ হিসেবে দেখে। এমতাবস্থায় শহরের প্রভাবশালী জমিদার সৈয়দ বক্ত মজুমদার [পরে তিনি মক্কা প্রবাসী হয়েছিলেন] ইংরেজি শিক্ষা চালুর প্রচেষ্টা করলেও স্থানীয়রা তেমন উৎসাহ দেখায়নি। তাঁর পুত্র মহম্মদ বক্ত মজুমদার পরে ইংরেজি শিক্ষাবিস্তারে কাজ করেন।
১৮৫০ সালে সিলেট প্রশাসন শিক্ষার দিকে পুনরায় নজর দেয়। তখন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট রামগতি মিশ্র, সদর আমীন সা’দত আলী, ডব্লিউ এইচ ফক্স [সিলেট স্কুলের প্রধানশিক্ষক], কৃষ্ণকুমার ঘোষ ও গৌরী শেখর তর্কভূষণ [স্থানীয় প্রতিনিধি] প্রমুখ শিক্ষা বিস্তারে কাজ করলে শিক্ষায় কিছু গতি আসে। অর্থাৎ আধুনিক শিক্ষা কিছু গতি পায়। হিন্দু সমাজ থেকে শিশুদের স্কুলে পাঠানোর সবে শুরু হয়। মুসলিম সমাজে তার কোনো প্রভাব পড়েনি। তবে স্কুল ইন্সপেক্টর লক্ষ করেন যে মুসলিম সমাজে ইংজেরী শিক্ষার প্রতি আগ্রহ তৈরি হচ্ছে [এবহবৎধষ জবঢ়ড়ৎঃ ড়হ ঢ়ঁনষরপ ওহংঃৎঁপঃরড়হ রহ ঃযব খড়বিৎ চৎড়ারহপবং ড়ভ ঃযব ইবহমধষ চৎবংরফবহপু, ১৮৫০, ঢ়. ১৬৫-১৬৬]। ড.ড. ঐধহঃবৎ-এর পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ১৮৫৬-৫৭ সালে ৩টি বিদ্যালয়ে [সাধারণ] হিন্দু শিক্ষার্থী ছিল ২৪৮ জন, মুসলমান মাত্র ১৯ জন। মুসলিম সমাজের শিক্ষা গ্রহণের প্রস্তুতিকালে বাদ সাজে সিপাহী বিদ্রোহ। ইংরেজ সৈন্য ও সিপাহিদের মধ্যে মুখোমুখি লড়াই হয় সিলেটের লাতু অঞ্চলে। ধৃত বীর সিপাহিদের ফাঁসি প্রত্যক্ষ করেন সিলেট শহরের লোকজন। ফলে ইংরেজি শিক্ষা তাদের মন মজাতে পারেনি। সিলেটের অধিকাংশ জমিদার সিপাহী সিপাহীদের মানসিক সাপোর্ট দিলেও মজুমদার পরিবার সরকারের দিকে সংবেদনশীল থাকে। পরে সরাসরি ব্রিটিশ আইন চালু হলে ইরেজি ভাষার কদর কিছু বাড়তে থাকে।
কার্যত ষাট-সত্তরের দশকে কয়েকটি উঠতি মুসলিম পরিবার আগের দোলাচল অবস্থা কাটিয়ে ছেলেদের স্কুলে পাঠানো শুরু করে। ততদিনে কোম্পানি শাসন ও ব্রটিশ শাসন মিলে সিলেট প্রায় শতবছর অতিক্রম করেছে। মোগল বিচার ব্যবস্থা ভেঙ্গে ব্রিটিশ আদলে আদালতে ইংরেজি ভাষায় কাজ-কর্ম শুরু হয়ে গেছে। আদালতের নথিপত্র ও ব্যবহারিক কাজে ফারসি ভাষা কাম্যতা একেবারে হারিয়ে যায়। শহরের হিন্দু সমাজের রক্ষণশীলতার দুর্গে প্রথম আঘাত করে ‘শ্রীহট্ট ব্রহ্ম সমাজ’ [প্রতিষ্ঠাকাল: ১৫ এপ্রিল ১৮৬২]। নবচেতনার অধিকাংশ ধারক ছিলেন বহিরাগত হিন্দু আমলা ও রাজকর্মচারি। ‘শ্রীহট্ট ব্রাহ্ম সমাজ’ আধুনিক শিক্ষা বিস্তারে সাহায্য করেছিল। তারা ট্রেডিশনাল হিন্দু সংরক্ষণবাদী নীতির বাইরে গিয়ে মুসলিম সমাজের সাথে বাঁধাহীন ওঠাবসা করেন এবং মুসলিম সমাজকে শিক্ষার দিকে প্রাণিত করে। ফলে মুসলিম সমাজে কিছু ব্যক্তির মাঝে প্রাগ্রসর চিন্তার আলো জ্বলতে থাকে। অগ্রসরমান মুসলিম পরিবারের সখ্যতা ছিল শিক্ষিত হিন্দু পরিবারের সাথে। এই বাস্তবতায় মুসলিম সমাজের অগ্রবর্তী অংশ ইংরেজিকে ধরার সুযোগ খোঁজতে থাকে। কিন্তু মুসালম সমাজ কাঠামো থেকে বের হওয়াও ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। শহরের পঞ্চয়েত প্রথা শক্ত ছিলÑ তাদের সিদ্ধান্তের বাইরে গেলে সমাজচ্যুত হওয়ার ভয় কাজ করে। ব্রিটিশ শাসনের আইন-আদালত কঠোর হলে ক্রমে পুরাতন সমাজ কাঠামো কিছুটা অকেজো হতে থাকে। ফলে ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণের অনুকূল পরিবেশ সৃাষ্ট হওয়ার উপাদান যোগায়। সে আমলে মুসলিম সমাজের প্রাগ্রসর কয়েকজন সিংহ-পুরুষ কলকাতা ও ঢাকার মুসলিম সমাজের সাথে যোগায়োগ রাখেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন কাজী মোহাম্মদ আহমদ [(১৮৩১-১৯০৭) দুর্লভপুর, মৌলভীবাজার]। তিনি যেমন ইংরেজি শিক্ষার পক্ষে দৃঢ় ছিলেন, তেমনি অর্থ-বৃত্তের জন্য ‘গোলামি চাকরি’তে যাওয়ার জন্য প্রেরণা দিতেন।
‘শ্রীহট্টে’র ব্রাহ্মধর্মের লোকজন যেমন সমাজ প্রগতির স্বার্থে কলকাতার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন [তাদের অনুকরণীয় ছিলÑ জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ি]; তেমনি মুসলিম সমাজের আধুনিক শিক্ষার সারথীগণ কলকাতার উন্নত মুসলিম সমাজ ও শিক্ষার দিকে উঁকি দেয়ার চেষ্টা করেন। এই প্রচেষ্টার মধ্যে লুকিয়ে ছিল আধুনিক সমাজ গঠনের অনুবীজ। কলকাতায় বিভিন্ন পেশার মুসলিম চাকরিজীবীদের উদ্যোগে ১৮৫৫ সালের ৬ মে ‘আঞ্জুমান-ই-ইসলামী’ [মোহামেডান এ্যাসোসিয়েশন] স্থাপিত হয়। সংগঠনের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল ‘মুসলিম সম্প্রদায়ের সার্বিক স্বার্থ রক্ষা করা’। শিক্ষিত মহলের উদ্যোগে গঠিত সংগঠনটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ব্রিটিশ সরকারের স্বার্থবিরোধী কাজে জড়িত হবে না। ইংরেজি শিক্ষার বিরোধীতা করবে না। মূলত এই সংগঠন মুসলিম সমাজে আলোর পথ দেখায়Ñ যার প্রভাব সরাসরি এসে পড়েছিল সিলেটের নরম মাটিতে। নবগঠিত এই সামাজিক সংগঠনের সাথে মজুমদার পরিবার এবং তাদের সুহৃদ কাজী মোহাম্মদ আহমদ [(১৮৩১-১৯০৭) দুর্লভপুর, মৌলভীবাজার]-সহ অনেকেই যোগাযোগ রাখেন বা রাখার চেষ্টা করেন। গবেষক ঔধুধহঃর গধরঃৎধ এর গঁংষরস চড়ষরঃরবং রহ ইবহমধষ[১৮৫৫-১৯০৬]: ঈড়ষষধনড়ৎধঃরড়হ ধহফ ঈড়হভৎড়হঃধঃরড়হ থেকে জানা যায় যে, ‘আঞ্জুমান-ই-ইসলামী’ গঠনের খবর শোনে সর্বপ্রথম সিলেট ও মেদিনীপুর জেলায় দুইটি শাখা স্থাপিত হয়। কলকাতার সাথে যোগাযোগ থাকায় শাখা সংগঠনটি সিলেটে দ্রুত গড়ে ওঠে। যা বাংলার পূর্বপ্রান্তে শিক্ষিত মুসলিম সমাজ গঠনে উপযুক্ত উপাদান ও পরিবেশ সৃষ্টিতে সহায়কের ভূমিকা পালন করেছিল। স্থানীয় উদ্যোক্তরা ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি ইংরেজি শিক্ষার বিস্তার চেয়েছিলেন। বৃহৎবঙ্গের মধ্যে কেন সিলেটে ‘আঞ্জুমান-ই-ইসলামী’র শাখা তাড়াতাড়ি গড়ে উঠলো? তার উত্তর খোঁজা আবশ্যক। তবে প্রতীয়মান হয় তখনকার পুরানো জেলা শহরে [ঢাকা, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ] মুসলিম সমাজ ইংরেজি শেখা শুরু করলেও ধর্মীয় প্রভাবে সিলেটে ঘাত-প্রতিঘাতের ভিতর দিয়ে আধুনিক শিক্ষা অগ্রসর হতে হয়। ‘আঞ্জুমান-ই-ইসলামী’Ñ সংগঠনটির সিলেট শাখা ইংরেজি শিক্ষা বিস্তারে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল।
মুসলিম সমাজ যখন ইংরেজি শিক্ষার প্রবেশক, তখন শ্রীহট্ট শহর বহিরাগত চাকরিজীবীদের [অধিকাংশ হিন্দু] হাত ধরে নি¤œ মধ্যবিত্ত সমাজ গঠনের সলতে পাকানোর কাজ শুরু হয়ে যায়। সেআমলের সিলেট শহরের সামাজিক-সংস্কৃতিক অবস্থা, জীবন, শিক্ষা, রাস্তা-ঘাট, অফিস-আদালত, বাড়ি ইত্যদি সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায় বিপিনচন্দ্র পালের ‘শ্রীহট্টের বাল্য স্মৃতি’ প্রবন্ধ ও তাঁর অন্যান্য স্মৃতিকথায়। শহরে স্কুল, আদালত ও প্রশাসনিক কাজ বাড়ার সাথে-সাথে তার পরিধি বাড়তে থাকে। ১৮৬৪ সালে এক সার্ভেতে শহরের পাড়া/মহল্লার নামের একটা তালিকা পাওয়া যায়]। শহরে মোটমাট ৭,২২৮টি বাড়ি ছিল। কাঁচাবাড়িই বেশি। মুসলিম ব্যবসায়িক সৃষ্টি হয় শহরে[হাতি]। এই বাস্তবতায় মুসলিম সমাজের পালাবদল লক্ষ্যণীয়।
শহরের প্রাচীন ‘মুফতি স্কুল’টি মুসলিম সমাজের কাছে জনপ্রিয় ছিল [বাংলা ও ফারসি শিক্ষা]। মক্তবের বাইরে ছিল স্কুলটি। এ স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রকাশ বাবু [ব্রাহ্ম চিন্তক] মুসলমানদের শিক্ষা বিস্তারে সহায়তা করতেন। তাঁর বেশি পরিচয় জানা যায়নি। পরে সরকারি স্কুলের [বর্তমান পাইলট] প্রধান শিক্ষক দুর্গাকুমার বসু [বাড়ি: বিক্রমপুর, তিনি ১৮৬৩Ñ১৮৭০ সালে দিকে সরকারি স্কুল পুনর্গঠন করেন। সে আমলের সিলেটের সকল সমাজ সংস্কারকÑ যেমন বিপিনচন্দ্র পাল, সুন্দরীমোহন, আব্দুল করিম প্রমুখ ছিলেন তাঁর ছাত্র। তিনি ১৯০৪ সালে অবসর গ্রহণ করেন। এই কাল পর্বটি মুসলিম সমাজের শিক্ষা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আবার ব্যবসায় স্থানীয় মুসলমানদের সংখ্যা বাড়ে। কোম্পানির আমলে সিলেট শহরে বহিরাগত কয়েকজন মুসলমান কালীঘাটে ইংরেজদের সাথে ব্যবসা পাতেন [হাতি ব্যবসা]। উনিশের শেষে স্থানীয় ব্যবসায়ী করিম বখস, গাবরু মিয়া, শহর উল্লাহ প্রমুখ বড় পুঁজি নিয়ে ব্যবসায় আত্মনিয়োগ করলে আশার আলো দেখা যায়। এমনকি চা-বাগান ব্যবসায় দুই একজন মুসলমান অগ্রসর হয়েছিলেন। মূলত এই সময় থেকে ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণের দিকে মুসলিম সমাজের অংশগ্রহণ বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়নি।
১৮৬০-৬১ সালে বিদ্যালয়ে [সরকারি সাহায্যপুষ্ট ও সামান্য ইংরেজি পড়ানো বিদ্যালয়] মুসলিম ছাত্র সংখ্যা দাঁড়ায় ৭৬ জন। কিন্তু ১৮৭০-৭১ সালে মুসলিম ছাত্র ৭০ জনে নেমে আসে। তখন হিন্দু ছাত্র সংখ্যা দাঁড়ায় ৮০৫ জনে। বিদ্যালয় সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ১৫টি। ১৮৭২-৭৩ সালে সারা জেলায় পাঠশালার সংখ্যা ছিল ১১৯টি। ১৮৭৩ সালে জেলায় [বৃহত্তর সিলেট] ছাত্র সংখ্যা ৪,৪৫২ জনের মধ্যে মাত্র ৯৬৫ জন মুসলমান ছিল। ১৮৬০Ñ৭০ সালের মধ্যে মুসলিম সমাজ যেন অনেকটা দুদোল্যমান অবস্থা কাটিয়ে ওঠা শুরু করে। তবে লক্ষণীয় যে ক্রমে কোর্ট-কাছারিতে ব্রিটিশ সরকারের অধীন ছোটখটো চাকরি গ্রহণ বা নকলনবিস হওয়ার জন্য মুসলমানদের মধ্যে আগ্রহ বাড়তে থাকে। মহকুমায় আদালত সৃষ্টি ও থানা সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক পরিবার ‘ধর্মরক্ষা’ ও ‘আধুনিক শিক্ষা’র মধ্যে সমন্বয়ের চেষ্টা চালায়। অপেক্ষাকৃত উদার পরিবারের তরুণদের দৃষ্টি যায় ইংরেজি শিক্ষার দিকে। তারা প্রাচীনপন্থীদের নিয়ন্ত্রিত সমাজ মধ্যে সববাস করেও ‘নাছারা’ বা ‘আধা খ্রিষ্টান’ হওয়ার ঝুঁকি নিয়েছিল। ত্রমে মুসলিম সমাজে শিক্ষিতদের কদর বাড়তে থাকে। উনিশ শতকের আশির দিকে আধুনিক শিক্ষাগ্রহণের দ্বন্ধ ও দোলাচলের মধ্য দিয়ে মুসলিম সমাজে পূর্ণ অরুণোদয়ের সূচনায় ঘটে। তবে এই সময় পর্যন্ত মুসলিম সমাজের মধ্যে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল।
ইংরেজি শিক্ষা বিষয়য়ে মুসলিম সমাজ যখন দ্বন্ধ-সংঘাত ও অভিঘাতের ভেতর আটকে থাকেÑ তখন এই উত্তুঙ্গ গিরিপথ একাই অতিক্রম করেছেন মোহাম্মদ দাইম [(১৮৪২-১৯২৪); বর্তমান দক্ষিণ সুরমার জলালপুর গ্রাম]। তিনি নিজে আলোকিত হয়ে পরের প্রজন্মকে উচ্চ শিক্ষার পথ দেখান। এই সময়েও তাঁর সমাজ উচ্চ ইংরেজি শিক্ষার গ্রহণের জন্য কোনো প্রস্তুতি ছিল না। সম্ভবত তাঁর ওপর পাদ্রি প্রাইস সাহের প্রভাব পড়েছিল। তিনি ইংরেজি শেখেন। এন্ট্রান্স পাশ করে মোহাম্মদ দাইম আলোকিত ব্যক্তিত্ব জয়গোবিন্দ সোমকে [(১৮৪১-১৯০০), প্রথম এমএÑ ১৮৬৫] সাথে নিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে উদ্দেশ্যে কলকাতা পৌঁছেন। দাইম ১৮৬৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে বি, এ পাশ করেন [১৮৭৪ সালে বিএল]। তাঁর সাফল্য স্ব-সমাজ কতটুকু উপলব্দি করেছিলÑ তা জানা যায় না। দাইম কিছুদিন কলকাতা আলেয়া মাদ্রাসার ইংরেজি বিষয়ে শিক্ষকতা করেন। পরে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সিতে সহকারী স্কুল পরিদর্শক হিসেবে ছিলেন। চাকরিকালীন সময়ে তিনি মুসলিম সমাজে শিক্ষা বিস্তারে কাজ করেন। দাইম পরে আইন ব্যবসায় সিলেট চলে আসেন । তিনি ইংরেজি শিক্ষার একজন পথ প্রদর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। মোহম্মদ দাইমের দাইমের অনেক পরে উচ্চশিক্ষায় সমাজ সংস্কারক আব্দুল করিমের [১৮৬৩-১৯৮৩] আবির্ভাব। তারপর থেকে মুসলিম সমাজ বিরতিহীন ধারাবাহিতকা চলে। এই পরম্পরায় ইংরেজি শিক্ষা বিস্তারে সৈয়দ আব্দুল মজিদ কাপ্তান মিয়ার ভূমিকাও স্মরণীয়।
সেকালে মুসলিম পরিবারে ইংরেজি শিক্ষার বিবর্তনও লক্ষ্যণীয়Ñ যেমন শেখঘাটের জিতু মিয়ার পরিবার [আবু নছর মোহাম্মদ এহিয়া] অগ্রবর্তী ছিল। ছহিফাবানু [১৮৫১-১৯১৮] সমাজ সেবক ও কবি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। ছহিফাবানু জমিদারীও চালাতেন, অন্দরে সামান্য ইংরেজি শিখেছিলেন। মজুমদার বাড়ির হামিদ বখত মজুমদার, মজিদ বক্ত মজুমদার এবং মোহাম্মদ বখত মজুমদার [১৮৬১Ñ১৯৩৬] প্রমুখ মুসলিম ছাত্রদের আধুনিক শিক্ষায় তালিম দিতেন। তাছাড়া শহরের মুরব্বি আবু নছর মোহাম্মদ এহিয়া [জিতু মিয়া] ইংরেজি ভাষা ও ইংরেজ শাসনের প্রতি অনুরুক্ত ছিলেন। তাঁর ধারণা ছিল যে, ইংরেজী না শিখলে রুচিশীল ও ‘আধুনিক’ লোক হওয়া যায় না।
সমকালে শ্রীহট্ট শহরের অগ্রগতিও লক্ষ্যণীয়Ñ যেমন অর্থ, শিক্ষা-সমাজ-সংস্কৃতির ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটে। এই ধারাবাহিকতায় ১৮৭৮ সালে সিলেট মিউনিসিপ্যালিটির জন্ম। নাগরিক সংগঠনের উদ্যোগে মুসলিম সমাজে মননশীলতার উৎকর্ষ সাধিত হয়। অনুকুল পরিবেশে আধুনিকায়নের পরিবেশ রচিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। উচ্চশিক্ষিত ও নতুন মন-মানসিতা সম্পন্ন মুসলমানদের উঠাবসা শুরু হয় ‘হিন্দু এলিট’ শ্রেণির সাথে। নতুন শ্রেণির উদ্ভবের ফলে পুরাতন সমাজ-প্রথাগুলো ধাক্কা খেতে শুরু করে। ইতোমধ্যে পুরাতন বনেদী পরিবার ও নব্যশিক্ষিতদের মধ্যে ভেতরে ভেতরে একটা প্রতিযোগিতার দৌড় চলে। তারা ব্রিটিশ সরকারের এবং জমিদারের কাছারিতে চাকরি লাভে উপরে ওঠার চেষ্টা চালায়। উনিশ শতকের একেবারে শেষ পর্যায়ে মুসলিম সমাজের অভিজাত শ্রেণির সমান্তরাল নতুন কিছু আলোকিত পরিবার সৃষ্টি হয়Ñ তবে মফস্বলে ইংরেজি শিক্ষার বিস্তার সেরকম যায়নি। যদিও গ্রামাঞ্চলে ইংরেজি শিক্ষার বিপক্ষে সামাজিক প্রতিবাদের মাত্রা বহুগুণ কমে ছিল। মুসলিম সমাজে অনেকগুণগত পরিবর্তন ঘটে। যেমন শহরের মুসলিম সমাজের মৃতদেহ বাড়ির আঙ্গিণা, পুকুরপাড়ে বা রাস্তার পাশে করব দেওয়ার রেওয়াজ ছিল। অনেক আইন করেও থামানো যায়নি। অবশেষে প্লেগ রোগ সৃষ্টি হলে আসামের চিফ কমিশনার মুসলিম সমাজের সাথে বৈঠক করে এক জায়গায় করব দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। অবশেষে ১৯০৪ সালে বর্তমান জায়গায় সর্বজনীন লাশ দাফন চলছে। এইগুলো আধুনিকায়নের একটা সুচক। তবে ছহিফাবানুর [১৮৫১-১৯১৮] অনেক চেষ্টার পরও নারী শিক্ষার অবস্থা ছিল বড়ই করুণ। ‘ সৈয়দ সিকান্দর আলীর [(১৮৬৭-১৯৩৯); সৈয়দ মুজতবা আলীর পিতা] স্ত্রী আমতুল মন্নান [১৯৭৯-১৯৩৮] জেনানা স্কুলে পড়ার কারণে সমাজের ঝড়ের মুখে পড়তে হয়েছিল। শহরে মুসলিম নারী শিক্ষার সূচনা হয় বিশ শতকের ত্রিশের দশকে।
মফস্বল অঞ্চলে আধুনিক শিক্ষা বিস্তার: আগেই বলা হয়েছে মুসলিম সমাজে ইংরেজি শিক্ষা বিস্তারে আলোকবর্তিকার হয়ে ওঠেছিলেন মৌলভীবাজার জেলার দুর্লভপুর গ্রামের কাজী মোহাম্মদ আহমদ [১৮৩১-১৯০৭]। তিনি সিলেট শহরের মজুমদার পরিবার ও ‘আঞ্জুমান-ই-ইসলামী’ সংস্থা দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। যতদূর জানা যায় তিনি মজুমদার বাড়িতে ‘গৃহশিক্ষক’ হিসেবে অবস্থান করতেন। ছাত্রদের ফারসি-আরবির পাশাপাশি ইংরেজিও তালিম দিতেন। তিনি সম-মনাদের ইংরেজি শিখার কথা বলতেন। মোহাম্মদ আহমদ যেমন আরবি-ফারসি জানতেন, তেমনি স্ব-চেষ্টায় ইংরেজি ভাষা রপ্ত করেছিলেন। তাঁর ধারণা ছিল ইংরেজি পড়া ব্যতীত মুসলিম সমাজের গতির সম্ভাবনা নেই, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নও হবে না। তিনি গ্রামে মুসলমানদের ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণ করতে প্রচার চালাতেন এবং চাকরি করার জন্য উৎসাহ দিতেন। আহমদ সাহেব ইংরেজদের সঙ্গে স্ব-চেষ্টায় ইংরেজিতে কথা বলতেন। মৌলভীবাজার মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হলে [১৮৮২] ইংরেজ প্রশাসকদের কাছে ইংরেজি জানা মুসলমানদের গুরুত্ব অনেক বেড়ে যায়। কিন্তু ইংরেজি জানা মুসলমানের সংখ্য ছিল খুব দুর্লভ। এই অভাব পূরণ করেছিলেন কাজী মোহাম্মদ আহমদ। তিনি বাংলা স্কুলে পড়–য়া মুসলিম ছাত্রদের ডেকে নিয়ে টুিকটাকি ইংরেজি শব্দ-বাক্য শিখাতেন। তাছাড়া তিনি সমাজকে ভ্রুক্ষেপ না করে ইংরেজদের সাথে চলতেন, বাড়িতে ইংরেজ সিভিলিয়ানদের দাওয়াত দিতেন। সে আমলে মুসলমানদের মধ্যে তাঁর বাড়িতে বড়-বড় ইংরেজদের পা পড়েছিল। এ কাজে তিনি আধুনিক শিক্ষতদের কাছে গর্বিত বা ধন্য হলেও স্ব-সমাজের কাছে ছিলেন নিন্দিত।
কাজী মোহাম্মদ আহমদ আধুনিক শিক্ষামনস্ক থাকায় মুসলিম সমাজে ইংরেজি শিক্ষা বিস্তারে লক্ষ্যে তাঁর স্বগ্রামে [দুল্লবপুর, সদর মৌলভীবাজার] ১৮৭০ সালে স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেকালে মাইনর পাশ শিক্ষিত যুবকদের তিনি ইংরেজি শিক্ষার জন্য উৎসাহিত করতেন। তাঁর তবে স্কুলটি বেশি দিন টিকেনি। ১৮৮৫ সালে তিনি ‘শ্রীহট্ট দর্পণ’নামে ইতিহাসের বই বাংলায় প্রকাশ করেছিলেন। কাজী মোহাম্মদ আহমদ ১৮৯৪ সালে শ্রীহট্টে ‘আঞ্জুমনে ইসলামিয়া’ গঠন করেছিলেন [কারো মতে সংগঠনটি প্রথমে তিনি মৌলভীবাজার গড়েছিলেন]। ‘আঞ্জুমানে ইসলামিয়া’ ছিল সিলেটে মুসলিম সমাজের বৃহৎ বুদ্ধিভিত্তিক সংগঠন। সংগঠনটি বিশ শততের সূচনায় মুসলিম সমাজে শিক্ষা, সংস্কৃতি-সাহিত্য ও রুচিবোধে আধুনিকায়নের কাজগুলো করেছিল। তারা ধর্মশিক্ষার পঠন-পাঠনের পাশাপাশি আধুনিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সমাজকে বুঝানোর চেষ্টা চালায়। নেতৃবৃন্দ বুদ্ধিভিত্তিক মুসলিম ব্যক্তিত্বকে আমন্ত্রণ জানিয়ে আলোচনা করতো। সংস্কার ছাড়াও আধুনিক শিক্ষার প্রতি অভিভাবকদের অনুরাগী করে তুলতে সহায়কের ভূমিকা পালন করে। গরীব মুসলিম ছাত্ররা উচ্চ শিক্ষার্থে কলকাতা গিয়ে ভর্তি ব্যাপারে সংগঠনটি সাহায্য করত। ‘আঞ্জুমানে ইসলামিয়া’ আসাম সরকারের সাথে মুসলমানদের শিক্ষা ও চাকরির ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা করে। সংগঠনটি সরকারকে মুসলিম সমাজে শিক্ষা প্রসারের জন্য সিলেবাস পুনর্গঠন, অধিক বৃত্তি প্রদান, মুসলমানদের চাকরির নিশ্চয়তা ইত্যাদি বিষয়ে দাবী উঠায়। সিলেটে বিশের দশক পর্যন্ত এই সংগঠনের কার্যক্রম দৃষ্টি গোচর হয়। ‘আঞ্জুমানে ইসলামিয়া’ রবীন্দ্রনাথকে সিলেট আগমনের জন্য [১৯১৯] আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। তারা সিলেটে বরীন্দ্র-বরণ ও সংবর্ধনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল।
কাজী মোহাম্মদ আহমদ তাঁর পড়শি সৈয়দ সিকন্দর আলীকে [১৮৬৭-১৯৩৯)] ইংরেজি পড়ার জন্য উৎসাহিত করেছিলেন। সৈয়দ সিকন্দর আলী তাঁর স্মৃতি কথায় বলেন, ‘তিনি ইংরেজ রাজপুরুষদের সঙ্গে মেলামেশা করতেন। এই নিমিত্ত গোঁড়া মুসলমানেরা তাঁকে নিন্দা করতেন।’ তাঁর প্রেরণায়ই সৈয়দ সিকন্দর আলী সক্রিয় হয়ে ইংরেজি শিখেন। পরে সিকন্দর আলী আধুনিক মানসিকতা পোষণ করতেন। মৌলভীবাজার জেলার গিয়াসনগর গ্রামের মোহাম্মদ ইসরাইল [নাজির] ইংরেজি শিক্ষার প্রতি উৎসাহিত ছিলেন। তিনি সামাজিক বাঁধার উত্তুঙ্গ অগ্রাহ্য করে ইংরেজ সরকারের চাকরি করেন। ক্রমে উনিশ শতকের আশির দশকে মহকুমা পর্যায়ে ইংরেজি শিক্ষার প্রতি মুসলমান সমাজের নমনীয় নীতি চালু হতে থাকে।
সিলেটের ঢাকাদক্ষিণ ও ভাদেশ্বর অঞ্চলের মুসলিম পরিবারে ইংরেজি শিক্ষার গ্রহণের প্রবণতা বাড়ে। ভাদেশ্বর অঞ্চলের নাছিরউদ্দিন আহমদ [অনু. ১৮৭১-১৯৫১] তাঁর অঞ্চলে ইংরেজি শিক্ষা বিস্তারে কাজ করেন। ঢাকাদক্ষিণ অঞ্চলের শিলঘাট গ্রামের শরাফত আলী [১৮৭০-১৯৪৮] সামান্য ইংরেজি পড়ে ও সামাজিক বাঁধা উপেক্ষা করে তখন পুলিশের চাকরি নিয়েছিলেন। তিনি ইংরেজি শিক্ষার পক্ষে ছিলেন। আধুনিক শিক্ষা বিস্তারের লড়াইয়ে তিনি অন্যতম অগ্রপথিক হয়েছিলেন। শরাফত আলী পুলিশ অফিসার হিসেবে ঢাকা শহরে [১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ হলে] বদলি হয়ে মুসলিম সমাজের প্রথা ভেঙ্গে নিজের বড় মেয়ে জোবেদা খাতুন চৌধুরী [১৯০১-১৯৮৬] ও আরেক মেয়ে খোদেজা খাতুন চৌধুরীকে [১৯০৯-১৯৮৪]Ñ ঢাকা ইডেন [প্রাইমারি] স্কুলে ভর্তি করেছিলেন। তখনো ঢাকা শহরে মুসলিম সমাজে মেয়েরা প্রকাশ্যে স্কুলে যাওয়ার রেওয়াজ তৈরি হয়নি। মেয়েদের স্কুলে পাঠানোর কারণে মুসলিম সমাজে নিন্দর ঝড় ওঠে। দুই বোনের ইডেন স্কুলে পড়াশুনার খবর চারদিকে রটে গেলে তৎকালীন ঢাকার মুসলীম লীগ নেতা নবাব সলিমুল্লাহ খানের [১৮৭১-১৯১৫] আহবানে শরাফত আলী মেয়েদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ রাখেন। জোবেদা খাতুন এক সাক্ষাৎকারে [সাপ্তাহিক বিচিত্রা পত্রিকা] বলেন, ‘নবাব সলিমুল্লাহ আমার বাবাকে অনুরোধ করেছিলেন, আমি যেন হিন্দু মেয়েদের স্কুলে পড়াশুনা না করি। কিন্তু বাবার বড় ইচ্ছে ছিল আমাকে পড়াবেন।’
মৌলভীবাজার জেলার গিয়াসনগর গ্রামের মোহাম্মদ ইউসুফ (১৮৯১-৯৭৪) কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে এম এ পাশ করেন। পরে বি এল ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। তিনিও আধুনিক মনের লোক ছিলেন। মোহাম্মদ ইফসুফ সে আমলে প্রকাশ্যে স্কাউট করতেন। শরাফত আলীর কন্যা খোদেজা খাতুনকে [১৯০৯-১৯৮৪] তিনি বিবাহ করেন। তারা উভয়েই আধুনিক শিক্ষা বিস্তারে কাজ করেন। মুসলিম মৎসজীবী সমাজে আধুনিক শিক্ষা বিস্তারে কাজ করেন মো. সিকন্দর আলী [শেখঘাট]। সিলেট আলেয়া মাদ্রাসা [১৯১৩] আধুনিক শিক্ষা বিস্তারে সহায়কের ভূমিকা পালন করে। অসংখ্য কওমী মাদ্রায় পূর্ণ সিলেটী আলেম সমাজকে আর কখনো ইংরেজি শিক্ষাগ্রহণের বিরুদ্ধে কথা বলতে শোনা যায়নি। নানামুখী উদ্যোগের ফলে বিশ শতকের মুসলিম সমাজ আধুনিক শিক্ষাকে পরিপূর্ণ গ্রহণ করতে সক্ষম হয়।
সেকালে রক্ষণশীল মুসলিম সমাজের প্রাগ্রসর অংশ অনেকটা লড়াই করে আধুনিক শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করেছিলেন। এই গিরি পথকে মসৃণ করতে প্রথম যারা উদ্যোগী হয়েছিলেনÑ তারা অনেকে সমাজচ্যুত হয়ে ইংরেজি শিক্ষার পক্ষে থাকেন।

সূত্র: ১. কুমুদরঞ্জন ভট্টাচার্য, সাহিত্যে ও সাংবাদিকতায় শ্রীহট্টের অবদান, শিলং, ১৩৮০ বঙ্গাব্দ
২. গুরুচরণ মহলানবীশ, আত্মকথা [পুনর্প্রকাশ], অনন্য প্রকাশন, সম্পাদনা: হীরক রায়, কলকাতা, ১৯৮২, পৃ. ১৩-১৪
৩. এবহবৎধষ জবঢ়ড়ৎঃ ড়হ চঁনষরপ ওহংঃৎঁপঃরড়হ রহ ঃযব চৎড়ারহপবং ড়ভ ইবহমধষ চৎবংরফবহপু, ১৮৪৯-১৮৮৫, ঈধষপঁঃঃধ ঝবপৎবঃধৎরধঃ ঢ়ৎবংং
৪.ড.ড. ঐধহঃবৎ, অ ঝঃধঃরংঃরপধষ অপপড়ঁহঃ ড়ভ অংংধস, াড়ষঁসব-১১, ঞৎঁনহবৎ ্ পড়, খড়হফড়হ, ১৮৭৯
৫. ঔধুধহঃর গধরঃৎধ, গঁংষরস চড়ষরঃরবং রহ ইবহমধষ [১৮৫৫-১৯০৬]: ঈড়ষষধনড়ৎধঃরড়হ ধহফ ঈড়হভৎড়হঃধঃরড়হ, কে পি বাগচি এন্ড কোং, কলকাতা, ১৯৮৪, পৃ. ৭৪-৭৫
৬. শ্রীহট্ট সম্মিলনীর হীরক জয়ন্তী স্মারক, ১৯৩৬ সম্পাদক: ক্ষিতিশচন্দ্র ভট্টাচার্য, কলকাতা
৭. নরেন্দ্রকুমার গুপ্ত চৌধুরী, শ্রীহট্ট প্রতিভা, সিলেট, ১৯৬২
৮. রসময় মোহান্ত, সিলেটের শিক্ষাঙ্গণ: অতীত ও বর্তমান, মৌলভীবাজার, ১৯৯০
৯. বিজনবিহারী পুরকায়স্থ, শ্রীহট্টের শ্রেষ্ঠ সন্তানরা, প্রগতি প্রকাশনী, কলকাতা, ১৯৮৮
১০. ড. ইফফাৎ জাহান, সিলেটের সমাজও অর্থনীতি, উৎস প্রকাশ, ২০১০
১১. দীপংকর মোহান্ত, একুশ শতকে সিলেট বিভাগের প্রাথমিক শিক্ষার চালচিত্র ও সম্ভাবনা, অগ্রযাত্রা, সম্পাদক: দীপংকর মোহন্ত, প্রাথমিক শিক্ষা, সিলেট বিভাগ, সিলেট-এর প্রকাশনা, ২০১৬
১২. দীপংকর মোহান্ত, সিলেটে আধুনিক শিক্ষার সূচনা ও দুর্গাকুমার বসু, যুগভেরী, ঈদ সংখ্যা, ২০০৯
১৩. জোবেদা খাতুন চৌধুরীর অপ্রকাশিত ‘আত্মকথা’

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

লাইভ রেডিও

Calendar

April 2024
S M T W T F S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930