সরকারি চাকরিতে ফাঁকা পদের সংখ্যা বেড়েছে

প্রকাশিত: ১২:৪৭ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৯, ২০২০

সরকারি চাকরিতে ফাঁকা পদের সংখ্যা বেড়েছে

সরকারি চাকরিতে ফাঁকা পদের সংখ্যা বেড়েছে। করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হচ্বেছে না । কিন্তু বেড়েছে চাকরিপ্রার্থীর সংখ্যা ও ।

সরকারি চাকরিতে এখন তিন লাখ ৮৭ হাজার ৩৩৮টি পদ ফাঁকা পড়ে আছে । এটা মোট পদের ২১ দশমিক ২৭ শতাংশ।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলছেন, অগাস্ট মাসে কোভিড-১৯ সংক্রমণ কমে আসবে বলে তারা আশা করছেন। পরিস্থিতির উন্নতি হলে ঝুলে থাকা বিষয়গুলো নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

গত ২৯ জুলাই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৩ সালে সরকারি চাকরিতে মোট পদের ১৮ দশমিক ৮০ শতাংশ পদ ফাঁকা থাকলেও ২০১৮ সালে এসে তা বেড়ে ২১ দশমিক ২৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

সবশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সরকারি চাকরিতে ১৮ লাখ ২১ হাজার ২৮৪টি অনুমোদিত পদের বিপরীতে ১৪ লাখ ৩৩ হাজার ৯৪৬ জন কর্মরত আছেন, ফাঁকা আছে তিন লাখ ৮৭ হাজার ৩৩৮টি পদ।

ফাঁকা পদগুলোর মধ্যে ৫০ হাজার ৯৩০টি প্রথম শ্রেণির, ৫৫ হাজার ৪৫৭টি দ্বিতীয় শ্রেণির, এক লাখ ৮৮ হাজার ৩৭৭টি তৃতীয় শ্রেণির এবং চতুর্থ শ্রেণির পদ ৯২ হাজার ৫৭৪টি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, মন্ত্রণালয়গুলোর ‘উদাসীনতার জন্যই’ সরকারি চারকিতে এত পদ ফাঁকা পড়ে থাকে।

মন্ত্রণালয়গুলো আরও তৎপর হলেই দ্রুত এসব পদ পূরণ করা সম্ভব। তবে এটাও ঠিক যে সব সময়ই কেউ না কেউ অবসরে যাচ্ছেন, নতুন নিয়োগ হচ্ছে। সরকারি চাকরির পদগুলোতে কখনই নিয়োগপ্রাপ্তদের সংখ্যা শতভাগে যায় না।

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদগুলোতে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) নিয়োগ দেয়। আর তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে সরাসরি নিয়োগ দেয় মন্ত্রণালয়।

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে সরকারি চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না হওয়ায় চাকরিপ্রার্থীর সংখ্যা অন্যবারের থেকে কী পরিমাণ বেড়েছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, নন-ক্যাডারের বিভিন্ন পদ এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদগুলোতে গত ছয় মাসে বলতে গেলে কোনো নিয়োগই হয়নি। কিন্তু চাকরির বয়স শেষ হওয়ায় এই সময় অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী অবসরে গেছেন।

সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ক্যাডার) আ ই ম নেছার উদ্দিন বলেন, মহামারীর মধ্যেও ক্যাডার পদে নিয়োগ কার্যক্রম এখন পর্যন্ত ঠিক আছে। তবে নন-ক্যাডার পদে বেশ কিছু পরীক্ষা নেওয়া যায়নি।
পিএসসির একজন কর্মকর্তা বলেন, “নন-ক্যাডার পদগুলোতে অন্যবারের থেকে এবার অনেক কম নিয়োগ হবে। ঝুলে থাকা নিয়োগগুলো শেষ না হলে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়াও বিলম্বিত হবে, এটাই স্বাভাবিক।”

এরপক্ষে যুক্তি তুলে ধরে ওই কর্মকর্তা বলেন, “একসঙ্গে কতগুলো নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে কাজ করার সক্ষমতা পিএসসির আছে, সেটিও আমাদের মাথায় রাখতে হবে।”

শ্রম মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে সব মিলিয়ে সাড়ে ছয় কোটি মানুষ কাজে নিয়োজিত আছেন। এর মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক খাতে এক কোটি এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষ কাজ করেন।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে পাঁচ হাজার ২০১টি এবং অধিদপ্তর ও পরিদপ্তরে দুই লাখ ৫৬ হাজার ৬৩৩টি পদ ফাঁকা রয়েছে।

আর বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ১৩ হাজার ৮১২টি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনে ফাঁকা রয়েছে এক লাখ ১১ হাজার ৬৯২টি পদ।

এর মধ্যে প্রথম শ্রেণির দুই লাখ ২০ হাজার ৪০২টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন এক লাখ ৬৯ হাজার ৪৭২ জন।

দ্বিতীয় শ্রেণির এক লাখ ৯০ হাজার ৭৮৯টি পদের বিপরীতে এক লাখ ৩৫ হাজার ৩৩২ জন, তৃতীয় শ্রেণির ১০ লাখ ৬৩ হাজার ২২৭টি পদের বিপরীতে আট লাখ ৭৪ হাজার ৮৫০ জন এবং চতুর্থ শ্রেণির তিন লাখ ৪৬ হাজার ৮৬৬টি অনুমোদিত পদের বিপরীতে দুই লাখ ৫৪ হাজার ২৯২ জন কর্মরত।

২০১৮ সালে সরকারি শূন্য পদের সংখা ছিল মোট পদের ২১ দশমিক ২৭ শতাংশ২০১৮ সালে সরকারি শূন্য পদের সংখা ছিল মোট পদের ২১ দশমিক ২৭ শতাংশপরিসংখ্যান বলছে, সরকারের ১৪ লাখ ৩৩ হাজার ৯৪৬ জন কর্মচারীর মধ্যে ১০ লাখ ৩৭ হাজার ৫২৯ জন পুরুষ এবং তিন লাখ ৯৬ হাজার ৪১৭ জন নারী।
নারী কর্মচারীদের ৩৩ হাজার ৫৫১ জন প্রথম শ্রেণির, ৪৪ হাজার ৫৯৩ জন দ্বিতীয় শ্রেণির, দুই লাখ ৭৩ হাজার ১৭৮ জন তৃতীয় শ্রেণির এবং ৪৫ হাজার ৯৫ জন চতুর্থ শ্রেণির।

বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এর বিস্তার বাড়তে থাকায় গত ২৬ মার্চ থেকে টানা ৬৬ দিন সাধারণ ছুটির মধ্যে কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেনি পিএসসি। তার আগে গত ডিসেম্বর থেকে চাকরিতে নিয়োগের নতুন কোনো বিজ্ঞপ্তি দেয়নি কমিশন।

তবে ৩০ মে সাধারণ ছুটি শেষে জুনের প্রথম সপ্তাহে নন-ক্যাডারে বেশ কয়েকটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে পিএসসি। কয়েকটি মন্ত্রণালয় হাতেগোনা কয়েকটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, আশা করছি অগাস্ট মাসের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমবে। ভাইরাস সংক্রমণ আর না বাড়লে অক্টোবর-নভেম্বরের দিকে বিসিএস পরীক্ষাটা হয়ে যাবে।

অগাস্ট মাসের পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ঝুলে থাকা বিষয়গুলো নিয়ে অগাস্টের শেষ দিকে সিদ্ধান্ত আসবে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

লাইভ রেডিও

Calendar

April 2024
S M T W T F S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930