সরকারের মদদপুষ্টরা ব্যাংক থেকে হাজার কোটি টাকা লুট করছে ঃ বিএনপি

প্রকাশিত: ৭:০২ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ৪, ২০২১

সরকারের মদদপুষ্টরা ব্যাংক থেকে হাজার কোটি টাকা লুট করছে ঃ বিএনপি

সরকারের মদদপুষ্টরা ব্যাংক থেকে হাজার কোটি টাকা লুট করে পাচার করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বুধবার সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বিএনপির স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটির উদ্যোগে ‘স্বাধীনতার ইশতেহার’ দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় বিএনপির মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, , স্বাধীনতার যে স্বপ্ন দেখেছিলাম আমরা, স্বাধীনতার যে কমিটমেন্ট ছিল, যে ইশতেহার ছিল—তার একটাও আওয়ামী লীগ সরকার কোনো দিন পূরণ করেনি। তারা বাকশাল গঠন করেছিল, পত্রিকা নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল। অধিকারগুলো হরণ করে নিয়েছিল, একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিল এই আওয়ামী লীগ।

১৯৭১ সালের ৩ মার্চ পল্টন ময়দানে তৎকালীন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা শাহজাহান সিরাজ স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেন। এর আগের দিন ডাকসুর ভিপি আ স ম আবদুর রব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন।

বিএনপি এই দুটি দিবসই স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী কর্মসূচির অংশ হিসেবে পালন করেছে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান প্রয়াত শাহজাহান সিরাজের স্ত্রী রাবেয়া সিরাজ টাঙ্গাইলে আরেকটি কর্মসূচিতে থাকায় অনুষ্ঠানে আসতে পারেননি।

আজকে একটা ভিন্ন মোড়কে, ছদ্মবেশে আওয়ামী লীগ একদলীয় শাসনব্যবস্থা চালু রেখেছে অভিযোগ করে এই অবস্থার পরিবর্তনে করণীয় তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, আজকে সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এই সভার মধ্য দিয়ে আমাদের দেশের সব রাজনৈতিক দল, গণতান্ত্রিক দেশপ্রেমিক প্রতিষ্ঠানকে আহ্বান জানাতে চাই, আসুন ১৯৭১ সালে আমরা যে চেতনা নিয়ে যুদ্ধ করেছিলাম, সেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েম করা, আমাদের অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করবার জন্য আরেকবার লড়াই করি, আরেকবার যুদ্ধ করি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা কারো সেবাদাসে পরিণত হতে চাই না। আমরা কারো হুকুমের দাস হতে চাই না। আমরা আমাদের যে অধিকার, সেই অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আমরা নিজেদের আরো বিকশিত করতে চাই। আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরের জন্য সত্যিকার অর্থেই একটা আবাসস্থল গড়ে তুলতে চাই। যেখানে তারা মুক্ত বাতাসে বাস করতে পারবে। আসুন, সেই লক্ষ্যে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই, ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমাদের মাথার ওপর যে দানব বসে আছে, যেটা আমাদের সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা সাহেব বলেছিলেন—সরকার মনোস্টার। সেখান থেকে দেশকে আমরা মুক্ত করি।

মির্জা ফখরুল আরো বলেন, আজকে যে বিষয়ে আলোচনা করছি—শাহজাহান সিরাজের স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ, তখনকার ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, যারা স্বাধিকার আন্দোলনকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে গিয়েছিল, যারা অত্যাচার-নির্যাতনের মধ্যেও আন্দোলনকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল—তাদের এখন আওয়ামী লীগ স্মরণ করে না। স্মরণ করে না আ স ম আবদুর রবকে, স্মরণ করে না শাহজাহান সিরাজকে।

ফখরুল বলেন, আমরা সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠান পালন করতে গিয়ে তাদের সামনে নিয়ে এসেছি। আমরা ইতিহাসকে বিকৃত করতে চাই না। আমরা ইতিহাসে যার যে অবস্থান, সেটা দিতে চাই।

স্বাধীনতার ইশতেহারের বক্তব্য তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠন করে ব্যক্তি, বাক ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, নির্ভেজাল গণতন্ত্র কায়েম করতে হবে। কোথায়? আওয়ামী লীগের শাসনে বাংলাদেশে এই ১৫ বছরে কোথায় এসব? এখন ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে বৈষম্য আকাশসম-পাহাড়সম হয়ে গেছে, বাক স্বাধীনতা, লেখার স্বাধীনতা—সব কিছু হরণ হয়ে গেছে। আর অঞ্চলে অঞ্চলে বৈষম্য আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।

সাবেক এ প্রতিমন্ত্রী বলেন, তারা (আওয়ামী লীগ) স্লোগান দেয়—উন্নয়ন, উন্নয়নের জোয়ার বইছে। আর সাধারণ মানুষ হিমশিম খাচ্ছে বেঁচে থাকার জন্য। এক শ্রেণির মানুষ, আওয়ামী লীগের মদদপুষ্টরা ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে পাচার করে দিচ্ছে। আরেক শ্রেণির মানুষ চাকরি হারাচ্ছে। খেতে পারছে না। চরম নৈরাশ্যের মধ্যে আছে। এই হচ্ছে তাদের (আওয়ামী লীগ) বাংলাদেশ।

বাক স্বাধীনতার প্রসঙ্গ টেনে ফখরুল বলেন, লেখক মুশতাক আহমেদকে শুধু সমালোচনামূলক একটা লেখার জন্য এবং সেটা নিজে না, কার্টুনিস্ট কিশোরের ওপর লেখায় তাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছে। ছয় মাস তাকে জামিন না দিয়ে কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছিল। এই মুশতাক আহমেদ একা নন। এই ধরনের ৭০০ মানুষকে তারা শুধু সমালোচনা করার জন্য তুলে নিয়ে আটক করে রেখেছে। আপনারা দেখেছেন—আমাদের ছাত্রদলের নেতারা এটার প্রতিবাদ করতে গিয়ে কী নির্মমভাবে, নিষ্ঠুরভাবে তাদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। পুলিশ তাদের পিটিয়েছে। শুধু তাই না, তাদের বাসা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে, তাদের রিমান্ডে নিয়ে কী পৈশাচিক নির্যাতন করা হচ্ছে। এখন জানতে চান, পুলিশ প্রতিপক্ষ কেন? প্রতিপক্ষ তো আপনারা বানিয়েছেন নিজেদের।

নির্বাচন কমিশনও প্রতিপক্ষ উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, নির্বাচন কমিশনকে দেখেন। প্রকাশ্যে প্রেসের সামনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার আরেকজন নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে ভীষণ তর্কযুদ্ধে লিপ্ত হয়েছেন। আরে ভাই, সারা বাংলাদেশে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে—তাদের মধ্যে দু-একটা বাদে ৮০% তারা নিয়েছে। আমার নিজের পৌরসভাতে সাত দিন আগে থেকে পুলিশ, গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকেরা নেমে বিএনপির যত জন নেতাকর্মী সবাইকে এরেস্ট করেছে। সব জায়গায় নাই। তাহলে এই নির্বাচন কমিশনের কী প্রয়োজন আছে। প্রয়োজন নেই।

স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানসহ মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদানদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে সভাপতির বক্তব্যে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরা। এই ৩ মার্চে তৎকালীন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পরবর্তীকালে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান সিরাজ এই পল্টন ময়দানে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেছিলেন। গতকাল পালন করেছি পতাকা উত্তোলন দিবস। সেই সময়ে ডাকসুর ভিপি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা আ স ম আবদুর রব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। কেন এই দুটি দিন উদযাপন করছি?

ফখরুল আরো বলেন, আজকে যারা প্রজন্ম, আজকে যারা ছাত্র সমাজ, তারা যাতে বুঝতে পারে যে সেদিন যদি পতাকা ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে তুলতে হয়, পল্টন ময়দানে স্বাধীনতার ইশতেহার শাহজাহান সিরাজকে পাঠ করতে হয়, সেদিন কী বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক দল ছিল না। এটা যাতে আজকে প্রজন্ম প্রশ্ন করতে পারে, সেদিন রাজনৈতিক দল কারা ছিল? তখনই তো আসবে সেদিন এমন একটি রাজনৈতিক দল ছিল তারা পূর্ব পাকিস্তানের ৯৮% ভোট পেয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধি ছিল। তাদের কী দায়িত্ব ছিল? তাহলে কেন ছাত্র সমাজকে অগ্রণী ভূমিকা নিতে হয়েছিল।

জাতীয় কমিটির সদস্য আবদুস সালামের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির সেলিমা রহমান, শামসুজ্জামান দুদু, আসাদুজ্জামান রিপন, হাবিবুর রহমান হাবিব, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, নাজিম উদ্দিন আলম, জহির উদ্দিন স্বপন, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, হেলেন জেরিন খান প্রমুখ বক্তব্য দেন।

লাইভ রেডিও

Calendar

March 2024
S M T W T F S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31