স্বাধীনতা এসেছিলো শেখ মুজিবের হাতে

প্রকাশিত: ১:০৭ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ৭, ২০২১

স্বাধীনতা  এসেছিলো শেখ মুজিবের হাতে

আসলাম সানী
মুজিব বর্ষ উপলক্ষে অমর একুশে গ্রন্থ মেলা ২০২১ এ সপ্তডিঙা থেকে প্রকাশিত হয়েছে পৃথ্বীশ চক্রবর্ত্তীর শিশুতোষ ছড়াগ্রন্থ ‘স্বাধীনতা এসেছিলো শেখ মুজিবের হাতে’।
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ২০টি ছড়ার ৩২ পৃষ্ঠার ক্রাউন সাইজের সম্পূর্ণ রঙিন -এ গ্রন্থটির ভূমিকার এক জায়গায় প্রখ্যাত শিশুসাহিত্যিক লুৎফর রহমান রিটন লিখেছেন…
‘আমি আনন্দিত যে, পৃথ্বীশের ছড়া যাত্রায় নতুন এক মাত্রা যুক্ত হয়েছে। এবং সেটা শুধু বিষয়ের কারণেই নয়, প্রকরণেও। আগামীতে এই ধারা অব্যাহত থাকলে আমাদের ছড়ার ভুবনে পৃথ্বীশের আসন আরো সুদৃঢ় হবে। আমরা পাবো নতুন নতুন ছড়া।’
লেখক গ্রন্থটি উৎসর্গ করেছেন বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে। উৎসর্গ পাতায় তিনি বেগম মুজিবকে নিয়ে দুইটি চমৎকার ছড়া লিখেছেন। ব্যতিক্রম আয়োজন তাই, উৎসর্গের ছড়া দুটি এখানে উপস্থাপন করলাম:
-এ জাতির তুমি জননী যে হও/
জনকের তুমি ঘরণী/ জানে মাটি-নদী, ফুল-ফল-পাখি/
নিখিল-বিশ্ব-ধরণী।
জাতির পিতার পাশে থেকে মাগো/ প্রেরণা দিয়েছো তুমি/
তোমার মতোন মায়ের জন্যে/
ধন্য বঙ্গভূমি।
বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে/কাণ্ডারী ছিলে বেশ/
উৎসাহ পেয়ে মুক্তিযোদ্ধা/
স্বাধীন করেছে দেশ।
উঠবে আকাশে যতোদিন তারা/
সূর্য এবং চাঁন/ দেশের জাতীয় দোয়েল পাখিটা/শোনাবে তোমার গান।/ বাঙালি জাতি স্মরণ করবে/ তোমার সে অবদান। (জাতির জননী)
০২.
বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনার/ বঙ্গভগ্নি শেখ রেহানার/ বঙ্গপুত্র শেখ জামালের/ বঙ্গভ্রাতা শেখ কামালের/ বঙ্গশিশু শেখ রাসেলের তুমি মাতা/
বীর বাঙালির তুমিই মাতা;/
মাতা তুমি বঙ্গমাতা।
সারাজীবন বঙ্গবন্ধুর/
পাশে ছিলে তুমিই মাতা/ তোমার আসন সারা জাতির/ হৃদয়জুড়ে আছে পাতা।/ মুক্তিযুদ্ধের সময় তোমার/ অবদান যে কীর্তিগাঁথা
জাতির তুমি মহান মাতা/ মাতা তুমি বঙ্গমাতা।(বঙ্গমাতা)
প্রচ্ছদ করেছেন সোহাগ পারভেজ এবং অলংকরণ করেছেন টিটনকান্তি দাশ। বইটির শুভেচ্ছা মূল্য মাত্র দুইশত টাকা।
প্রকাশিত ১১তম গ্রন্থে পৃথ্বীশ চক্রবর্ত্তী বঙ্গবন্ধুকে তাঁর ছড়ায় ছড়ায় ছন্দে আনন্দে শিশুকিশোরদের কাছে উপস্থাপন করেছেন।
বইয়ের প্রথম ছড়াটি: ‘বলো মুজিবুর নামরে’
পড়ো মুজিবুর লেখো মুজিবুর/বলো মুজিবুর নামরে/এই দেখে যাও বলছে মুজিব/ শহর, নগর, গ্রামরে।
মুজিব মুজিব বলছে পাখি/বলছে লতা, ফল ও ফুল/ মুজিব মুজিব বলে বলে/ সবুজ পাতা খাচ্ছে দুল;/ মন আনন্দে মৌমাছিরা/ মধু করছে পানরে।
মুজিব বলে ছুটছে নদী/ সবার প্রিয় মধুমতী/ জলস্রোত নিয়ে নিরবধি / ধন্য সে আজ রূপবতী।/ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া/হয়ে গেলো ধামরে।
মুজিব নামে আমরা সবাই/সুন্দরমতো বেঁচে আছি/বাংলাদেশ আজ বাংলাদেশ নয়/মালয়েশিয়ার কাছাকাছি;/ মুজিব হলেন মিত্র মনের/শত্রু এবার থামরে।
গানের আঙ্গিকে এ ছড়াটি একটি চমকপ্রদ ছড়া, যে কেউ পড়লেই বুঝতে পারবে। ছড়াকার তাঁর এ ছড়ার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর প্রতি অবিচল শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা নিবেদন করেছেন। ছড়াটি শিশুকিশোরদের পাঠ উপযোগী এবং ছড়া হিসেবে উতরে যাওয়ায় পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্তির দাবি রাখে।
কিভাবে ‘স্বাধীনতা এসেছিল শেখ মুজিবের হাতে’ গ্রন্থটির নামীয় ছড়াটি একটু পড়লেই বুঝা যাবে:
আমরা বলি বঙ্গবন্ধু, জাতিরজনক যাঁকে/সারা জাতি এক হলো সেই মহান নেতার ডাকে।/ ছাত্র, শিক্ষক, যুবক, বৃদ্ধ যুদ্ধে গেল সবাই/হায়েনাদের করলো তারা গুলি এবং জবাই।
এমন নেতার জন্ম যদি না হতো এ দেশে/ স্বাধীনতা সূর্যমণি উঠতো কি-না শেষে!
অনেক নেতাই জন্মেছিলেন বাংলা মায়ের ঘরে/ জীবন দিলেন শত্রুর সাথে যুদ্ধ করে করে/ কিন্ত তাঁরা পাননি তখন মুক্তিপাখির দেখা/অবশেষে ‘একাত্তর’ হয় স্বর্ণাক্ষরে লেখা।
মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ত্যাগ আর তিতিক্ষাতে/’স্বাধীনতা’ এসেছিল শেখ মুজিবের হাতে।
বঙ্গবন্ধুই কেন জাতির জনক তা সহজেই বুঝতে পারবে ছোট্ট সোনামণিরা ‘তিনিই জাতির জনক’ ছড়াটি পড়লে…
গোপালগঞ্জের মধুমতির তীরে/ফুলফোটা ও পাখিডাকা নীড়ে/
জন্মেছিলেন খোকনসোনা শেখ মুজিবুর নামে/ সবার প্রিয় টুঙ্গিপাড়া গ্রামে।
এই ছেলেটিই বড় হয়ে
নেতা হবে/ সারা জাতির বন্ধু হবে।/ পরাধীন দেশ
করবে স্বাধীন/ ভেবেছিল কেউ কি কোনোদিন?
তিনিই দিলেন একাত্তরে/হানাদারদের ধমক/ মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে এনে স্বাধীনতা/ তিনিই দিলেন চমক/ স্বাধীন বাংলার স্থপতি তাই/ তিনিই জাতির জনক।
বঙ্গবন্ধু কেন বাঙালি জাতির জনক, তিনি কি সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিলেন। এটাই তাঁর ছড়ার চমৎকারিত্ব।
মুজিব মানেই বাংলাদেশ’ ছড়ায় বঙ্গবন্ধুর গুণগানের পাশাপাশি তাঁর ছড়ার দক্ষতার ছাপ সুস্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন । অন্ত্যমিলের দিকে একটু নজর দিলেই পাঠক অনুমান করতে পারবেন আশা করি।
যাঁর ডাকেতে একাত্তরে/ সকল পাতা পত্তরে/ লেগেছিলো সবুজ ছোঁয়া/ বন-কাননের চত্বরে/ ফুলে ফুলে ভ্রমর ছিলো/ আনন্দে খুব মত্তরে/ পাখির কণ্ঠে ছিলো বাংলার/ বুলি ও সুর কত্তরে/ পূর্ব বাংলা ধরেছিলো
সবুজ এবং শ্যামল বেশ/ গর্ব করে বলি তো তাই-/ মানুষ, ফুল ও পাখি সদাই/ মুজিব মানেই মুক্তিযুদ্ধ /রূপের বাংলাদেশ।
যাঁর ডাকেতে মিললো সবাই/হায়েনাদের করলো জবাই /যুদ্ধ হলো শেষ;/ বাংলাদেশ আজ শান্ত স্বাধীন/ সুখে নাচি তা ধিন তা ধিন/ মনের মাঝে ফেরি করে
আজও বিজয় রেশ;/ গর্ব করে বলি তো তাই/ মানুষ, ফুল ও পাখি সদাই / মুজিব মানেই স্বাধীনতা/ সোনার বাংলাদেশ।’
অপরূপ ছন্দময়তা ছড়াটিকে অনন্য করে তুলেছে।
অনেকের দৃষ্টিতে বঙ্গবন্ধু শুধু বঙ্গবন্ধু নন, তিনি বিভিন্ন কারণে বিশ্ববন্ধুও বটে। পৃথ্বীশ চক্রবর্ত্তীও তাই বঙ্গবন্ধুকে বিশ্ববন্ধু বলেছেন ‘বঙ্গবন্ধু বিশ্ববন্ধু’ ছড়াটিতে
বঙ্গবন্ধু শুধু শুধু/ বঙ্গবন্ধু নন/ তিনি হলেন বিশ্ববন্ধু/ জ্ঞানী-গুণী কন।
নিপীড়িতের, নির্যাতিতের/ ছিলেন প্রিয়জন/ তাইতো তাঁকে বন্ধু ভাবতো/ জনসাধারণ।
অসহায়দের সহায় তিনি/দুর্বলের হন বল/ গরিব দুখীর পক্ষে কথা
বলতেন অনর্গল।
এমন বন্ধু পৃথিবীতে/ হয়নি দুটি আর/ বঙ্গবন্ধু বিশ্ববন্ধু/তোমায় নমোস্কার।’
এভাবেই বঙ্গবন্ধুকে পৃথ্বীশ সালাম জানালেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ছড়াকার তাঁর ‘সেরার সেরা’ ছড়ায় ঘোষণা করেছেন:
‘বাঙালির ভাষা তিনি/ বাঙালির আশা/ তাঁর প্রতি আমাদের/কতো ভালোবাসা।
হৃদয়-মণিকোঠায়/ তিনি হন মিতা/ তাই তিনি আমাদের/ -এ জাতির পিতা।
মানবতার কল্যাণে/ সুপুরুষ যিনি/ মুজিবুর নামে তাঁকে/ সকলেই চিনি।
ব্যথিতের বেদনায়/যিনি পান ব্যথা/ সেরাদের সেরা তিনি
নেতাদের নেতা।
বঙ্গবন্ধুর নামকে
‘মহানাম’ হিসেবে অবিহিত করেছেন পৃথ্বীশ। তিনি লিখেছেন :
এমন নামটি নাম শুধু নয়/ তা তো এক মহানাম/যে নামের দিকে নদীজলস্রোত/ বহে চলে অবিরাম।/ যে নামের বলে গান হয়ে যায়/পাখপাখালির সুর/ যে নাম শুনেই ফুলগুলো ফুটে/অমানিশা হয় দূর।/সে নামের তিনি, যে নামটি হয়/ প্রিয় শেখ মুজিবুর!
সূর্য উঠেছে স্বাধীনতা নিয়ে/মুখে নিয়ে যেই নাম/ যেই নাম নিয়ে টুঙ্গিপাড়াটা/ হয়ে গেছে মহাধাম।/ সেই নামেরই পূজা করে সব/এগিয়েছি বহুদূর/ সে নামের ফলে জীবন থেকেও/কলুষতা হয় দূর/ মধুর থেকেও মধুর সে নাম/প্রিয় শেখ মুজিবুর!
‘মুজিব তুমিই বাংলাদেশ’ শিরোনামের ছড়াটিতেও লেখক জাতির পিতার মহিমাকীর্তন করেছেন, এভাবে….
স্বাধীনতা তুমি সার্বভৌম ভূমি
মুজিব তুমিই বাংলাদেশ
জাতীয় সংগীত পাখিকণ্ঠগীত
‘সোনার বাংলা’ সবিশেষ।
রূপসী -এ ভবে যতোদিন রবে
আকাশ, বাতাস, তারা, চাঁদ
ইতিহাস থেকে ভুল কিছু লেখে
দিতে পারবেনা তারা বাদ।
মুজিব বরষে মনের হরষে
সবাই এবার কহো গান
তুমি থাকবেই মনে জাগবেই
শেখ মুজিবুর রহমান।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের আকাশ, বাতাস, নদী, সাগর, পাহাড়, ফুল, ফল, পাখি এককথায় দেশের সবকিছুতে মিশে আছেন, তা আমরা অনুভব করি। তাঁকে ছাড়া বাংলাদেশ কল্পনার অতীত। গোটা বাংলাদেশের মানচিত্রটাই বঙ্গবন্ধু। ‘মুজিব আছেন’ ছড়াটিতে লেখক বলেন:
পদ্মা, মেঘনা, সুরমার কূলে/মুজিব হাসেন শাপলা ফুলে।/
দোয়েল পাখির শিসে শিসে/
মুজিব নামটি থাকে মিশে।/
‘আমার সোনার বাংলা’ গানে/
মুজিব থাকেন প্রাণে তানে।/
পতাকার ওই সবুজ লালে/
মুজিব ভাসেন নায়ের পালে।/
বাঙালিদের মনে মনে/
মুজিব আছেন প্রতিক্ষণে।/
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ছড়াশিল্পী পৃথ্বীশ চক্রবর্ত্তীর ‘স্বাধীনতা এসেছিলো শেখ মুজিবের হাতে’ একটি ছড়াগ্রন্থ।
আলোচিত এ ছড়াগুলো ছাড়াও ‘১০ জানুয়ারি’, ‘নামতায় বঙ্গবন্ধু’, ‘জাতির মিতা জাতির পিতা’, ‘মুজিব মানেই বাংলাদেশ’, ‘চিরঞ্জীব শেখ মুজিব’, ‘শেখ মুজিবের নাম’, ‘তিনি শেখ মুজিবুর হন’, ‘টুঙ্গিপাড়ার খোকা’, ‘শেখ মুজিবের জন্য’, ‘প্রিয় মুজিবুর’, ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ নামের ছড়াগুলোও অসাধারণ শিল্পরসে পরিপূর্ণ। লেখক তাঁর ছড়াগুলোতে বঙ্গবন্ধুকে সহজ-সরল-প্রাঞ্জল ভাষায় উপস্থাপন করে শিশু কিশোর কিশোরীদের উপযোগী করে তুলেছেন। শিশুসাহিত্যিকদের ভালো লাগার পাশাপাশি তাঁর এ ছড়াগ্রন্থটি পাঠক প্রিয়তা পাবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

লাইভ রেডিও

Calendar

March 2024
S M T W T F S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31