সড়কদ্বীপটি ভেঙ্গে ফেলতে হবে কেন?

প্রকাশিত: ১১:১০ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ৫, ২০১৮

সড়কদ্বীপটি ভেঙ্গে ফেলতে হবে কেন?

জান্নাতুল ফেরদৌস

সড়কদ্বীপটি দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায় । লেক ও দুটি ছোট্ট জলাধারে পদ্ম ফুটে আছে। আছে নানা জলজ উদ্ভিদ। ব্যাঙ, শামুক, ঝিনুক । এর সঙ্গে ছোট ছোট মাছও আছে। সাঁতার কাটছে হাঁস। কৃত্রিম পাহাড়সারির চূড়ায় বসানো ঘরে বাকবাকুম করে ডাকছে কবুতর। আছে ফুলসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। ডালে বসে কিচিরমিচির করে শালিক, চড়ুই, দোয়েল। উড়ছে প্রজাপতি, ফড়িং।

রুক্ষ নগরের বুকে এই কোমল সুন্দরের অবস্থান সায়েন্স ল্যাবরেটরির সড়কদ্বীপে, নাম অর্ঘ। কংক্রিটের এই শহরের মিরপুর রোড ও গ্রিন রোডের সংযোগস্থলের এই সবুজ দেখে প্রশান্তি অনুভব করেন পথচারীরা। অথচ দেখতে বদ্বীপের মতো এই ছোট উদ্যানটি ভেঙে ফেলার তোড়জোড় শুরু হয়েছে । ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ভেঙ্গে ফেলতে চায় এই সড়কদ্বীপে্র সবুজ।

মাত্র কয়েক মাস আগে পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার মোড়ের সড়কদ্বীপে হেরিটেজ ক্রিয়েটিভ কাউন্সিলের ‘নগরে নিসর্গ’টি ভেঙে ফেলেছে তারা । সেখানে সিটি করপোরেশন বড় আকারের এলইডি বিলবোর্ড বসিয়েছে। অথচ নগরে নিসর্গ নামের সড়কদ্বীপটি ছিল এই এলাকার একমাত্র সবুজ স্থান। এটির বৈশিষ্ট্য অনেকটাই অর্ঘ উদ্যানের মতো ছিল বলে জানিয়েছেন  প্রকৃতি ও নগরসৌন্দর্যবিদ রাফেয়া আবেদীন ।

অর্ঘ সড়কদ্বীপটি যে অবস্থায় আছে, তাকে সেভাবে রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রকৃতি ও নগর পরিকল্পনাবিদেরা। তাঁরা বলেছেন, সেখানে এলইডি বিলবোর্ড বসালে এই সড়কদ্বীপে পাখি, জলজ প্রাণী, উদ্ভিদ, পোকামাকড়, কীটপতঙ্গ আর থাকতে পারবে না। ভালো জিনিস ভেঙে নতুন করে গড়ার পেছনে বাণিজ্যিক ভাবনা কাজ করছে বলে মনে করছেন তাঁরা।

হেরিটেজ ক্রিয়েটিভ কাউন্সিল জানায়, আগে অর্ঘ সড়কদ্বীপের জায়গাটি পরিত্যক্ত ছিল। ময়লা, আবর্জনা ও মাদকসেবীদের  আড্ডাখানা , পাশেই ছিল পেট্রোল পাম্প। তারা নিজ খরচে দেয়াল নির্মাণ করে  সড়কদ্বীপের জায়গাটি আলাদা করেছেন। পরিত্যক্ত ভুমির সৌন্দর্য বর্ধন রেছেন ।  ২০০৬ সালের জানুয়ারিতে ডিএসসিসি থেকে জায়গাটি সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য বরাদ্দ নেন হেরিটেজ ক্রিয়েটিভ কাউন্সিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাফেয়া আবেদীন। ১৮ কাঠার এই জায়গাটিতে তিনি প্রায় ৪২ লাখ টাকা খরচ করে সবুজ ল্যান্ডস্কেপ তৈরি করেন।  তিনি নিজ খরচে দেড় বছর ধরে সড়কদ্বীপটির সৌন্দর্য রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছেন। এখন শুনছেন, তাঁর বরাদ্দ বাতিল করে দিয়েছে ডিএসসিসি। আর, এই উদ্যানটি ভেঙে ফেলবে । তিনি বলেন, আমার জানামতে, এই সড়কদ্বীপে এলইডি বিলবোর্ড স্থাপন করবে তারা । তা করা হলে রঙিন আলো ও শব্দের কারণে উদ্যানে পাখি আসবে না। পোকামাকড়, কীটপতঙ্গও বাঁচবে না। প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হবে।

রাফেয়া আবেদীন বলেন, আমি চাই সড়কদ্বীপটি যে অবস্থায় আছে, সেভাবেই থাকুক। না ভেঙে এটি রক্ষণাবেক্ষণে যত্ন নিতে হবে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সায়েন্স ল্যাবরেটরির পেট্রল পাম্পসংলগ্ন উদ্যানটির চারদিকে বেষ্টনী দেওয়া। উদ্যানের ভেতর আছে কাঞ্চন, জাপানি কাশিয়া, চেরি, গোল্ডেন শাওয়ার, টাইগার লিলি, বাগানবিলাস, রক্তকরবী, দোপাটি, বকুল, রঙ্গন, জবা, টগর, হাসনাহেনা, কয়েক জাতের কাঠগোলাপের গাছ। উদ্যানের চারদিকের ফুটপাতও সাজানো হয়েছে গাছ দিয়ে। উদ্যানের ভেতরে কালো টাইলসে নির্মিত ভাস্কর্য। ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলালও  বলেছেন, অর্ঘ ও নগরে নিসর্গ-দুটি সড়কদ্বীপ হেরিটেজ ক্রিয়েটিভ কাউন্সিল যেভাবে সবুজময় করেছিল, সেটি প্রশংসার দাবিদার।

 

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

লাইভ রেডিও

Calendar

May 2024
S M T W T F S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031