হবিগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতাল থেকে নবজাতক চুরি, ৬ ঘন্টা পর উদ্ধার

প্রকাশিত: ৮:৫৪ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ২৬, ২০২২

হবিগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতাল থেকে নবজাতক চুরি, ৬ ঘন্টা পর উদ্ধার

 

 

 

 

একে কাওসার, হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধিঃ হবিগঞ্জ জেলা আধুনিক সদর হাসপাতালের নবজাতকদের বিশেষ সেবা ইউনিট (স্ক্যানো) থেকে নবজাতক চুরি কান্ডের প্রায় ৬ ঘন্টা পর ওই শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়েছে। অপরদিকে এই খবর ছড়িয়ে পরলে সন্তান চুরি হওয়ার ভয়ে বিপাকে পরে ভর্তি থাকা অন্যান্য নবজাতক শিশুদেরকে বাড়ি নিয়ে যান অভিবাবকরা।

 

 

 

 

এঘটনায় হাসপাতাল এলাকাসহ সর্বত্রে তোলপাড় শুরু হয়েছে। সচেতন মহলের দাবি কর্মরত স্টাফদের দায়িত্ব অবহেলা ও সুনির্দিষ্ঠ উদ্যোগের অভাবে একেরপর এক ঘটে চলেছে ঘটনা। আভিযোগ উঠেছে- নবজাতকদের বিশেষ সেবা ইউনিট কক্ষে নেই কোনো নিরাপ্তাকর্মী ও সিসিটিভি ক্যামেরা।

 

 

 

গতকাল মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) সকালে নবজাতকদের বিশেষ সেবা ইউনিট (স্ক্যানো) থেকে চুরির এ ঘটনা ঘটে।

 

 

 

 

হাসপাতাল সুত্রে জানা যায়- গত সোমবার (২৪ জানুয়ারি) সন্তান জন্ম দিতে হবিগঞ্জ জেলা সদর আধুনিক হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি হন শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার মড়রা গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী ফেরদাউস আক্তার।

 

 

 

 

তিনি সকাল সাড়ে ৬টায় স্বাভাবিকভাবেই পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। এরপর শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে নবজাতকদের বিশেষ সেবা (স্ক্যানো) ইউনিটে ভর্তি করা হয়। সকাল ৯টার দিকে ওয়ার্ড পরিষ্কার করার কথা বলে ওই ইউনিটে থাকা নবজাতকের সব স্বজনদের বের করে দেন দায়িত্বরত সিনিয়র স্টাফ নার্স বিথি ও নার্স শামীমা আক্তার।

 

 

 

 

 

এসময় দায়িত্বে থাকা একজন আয়া অদৃশ্য কোনো এক কারনে অন্য স্বজনের কাছে নবজাতককে তুলে দেন। কিছুক্ষণ পর স্বজনরা সেখানে প্রবেশ করে দেখতে পান তোয়ালে পড়ে রয়েছে। কিন্তু নবজাতক নেই। এ সময় তারা চিৎকার শুরু করলে দায়িত্বরতরা স্বজনদের জানায় নবজাতকের বাবা দুধ খাওয়ানোর কথা বলে শিশুটিকে নিয়ে গেছে। বিষয়টি জানাজানি হলে হাসপাতাল এলাকাসহ সর্বত্রে তোলপাড় শুরু হয়। পরে পুলিশ এসে ঘটনাস্থলের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করে।

 

 

 

 

অপরদিকে, একইদিন সকালে সদর হাসপাতালে কণ্যা নবজাতকের জন্ম দেন আজমিরীগঞ্জ উপজেলার শিবপাশা গ্রামের মাসুম চৌধুরী ও আকলিমা বেগম নামে এক দম্পতি। তাদের একটি শিশুও ছিল নবজাতকদের বিশেষ সেবা (স্ক্যানো) ইউনিটে। তাদের দাবি নার্স শামীমা আক্তার ও নার্স বিথি ভুলবশতঃ কন্যা শিশুর বদলে পুত্র শিশুটি তাঁদের কাছে দিয়েছিল। যে কারণে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি তারা নিজেরাই বুঝতে পেরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অবগত করেন বলেও জানান তারা। পরে ভুলবসতঃ পরিবর্তন হওয়া ওই নবজাতককে হাসপাতাল কতৃপক্ষের কাছে হস্থান্তর করা হয়।

 

 

 

 

 

 

চুরি হওয়া নবজাতকের নানি সফিনা ও ফুফু সামছুন্নাহার জানান, ভোর সাড়ে ৬টায় স্বাভাবিকভাবে ডেলিভারির মাধ্যমে নবজাতকটি জন্ম নেয়। এরপর বাচ্চাটির কান্না থামছিল না। এক পর্যায়ে বিশেষ সেবা ইউনিটে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে কিছু ওষুধ নিয়ে আসতে বলা হয়। ওষুধ নিয়ে যাওয়ার পর ঝাড়ু দেয়ার কথা বলে তাদের বের করে দেন দায়িত্বরতরা। পরে ভেতরে ঢুকে শিশুটিকে আর পাইনি।

দায়িত্বরত নার্সরা জানায়, তার বাবা এসে দুধ খাওয়ানোর কথা বলে নিয়ে গেছে। অথচ এ সময় তার বাবা হাসপাতালে আসেনি।

 

 

 

চুরি হওয়া নবজাতকের বাবা দেলোয়ার হোসেন বলেন, তিনি বাড়িতে ছিলেন। ছেলে সন্তানের খবর পেয়ে সকালে হাসপাতালে আসার আগেই পথিমধ্যে আমার পরিবার মোবাইল ফোনে জানায় আমার ছেলে সন্তানকে হাসপাতালের নবজাতকদের বিশেষ সেবা (স্ক্যানো) ইউনিট থেকে চুরি হয়েছে। পরে হাসপাতালে এসে তিনি বিষয়টি কর্তৃপক্ষকের কাছে বলেন এবং সন্তান ফেরত চেয়ে জড়িতদের শাস্তিদাবি করেন।

 

 

 

তবে এর আগেও বেশ কয়েকবার সদর হাসপাতাল থেকে নবজাক চুরির ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু  চুরি যাওয়া নবজাতক শিশুদেরকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগীতায় উদ্ধার করে পরিবারের জিম্মায় দেয়া হয়।

 

 

 

 

 

এব্যাপারে সদর হাসপাতলের তত্তাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ আমিনুল হক সরকার জানান, নবজাতক চুরির ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে যাই। পুরো ঘটনাটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ খতিয়ে দেখছে। ভবিষ্যতে যাতে করে এ ধরণের ঘটনা আর না ঘটে তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হবে।
হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুক আলী বলেন, হাসপাতাল থেকে শিশু নিখোঁজ ও উদ্ধার হওয়ার ঘটনাটি কিভাবে ঘটেছে তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তদন্তের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

 

 

 

 

 

 

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

লাইভ রেডিও

Calendar

April 2024
S M T W T F S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930