সদরুল আইন, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
তারেক জিয়া বাংলাদেশের সঙ্গে ডিসকানেক্টেড হয়ে গেছেন। ১০ ডিসেম্বরের মহাসমাবেশের পর থেকে তারেক জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ নাই কোনো বিএনপির বড় নেতার সঙ্গে।
বিএনপির সঙ্গে তারেক জিয়ার যোগাযোগের প্রধান বাহন ছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কিন্তু ৭ ডিসেম্বর মির্জা ফখরুল গ্রেপ্তার হওয়ার পর তারেক জিয়ার যোগাযোগ করতেন ডা. জাহিদের সঙ্গে। জাহিদ ছিলেন এই মহাসমাবেশ গুলোর প্রধান সমন্বয়কারী এবং বিভিন্ন মহাসমাবেশে অর্থ সংগ্রহ এবং অর্থ যোগানদাতা হিসেবে তিনি পরিচিত ছিলেন।
লন্ডন থেকে বা বিভিন্ন দেশ থেকে তারেকের নির্দেশে যে অর্থ গুলো আসত সে অর্থগুলো ডা. জাহিদের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় হস্তান্তর করা হতো।
অন্যদিকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মাধ্যমে তারেক জিয়া কর্মসূচি সংক্রান্ত নির্দেশনা দিতেন। ডা. জাহিদের সঙ্গে গত ৪৮ ঘণ্টায় তারেক জিয়ার কোন যোগাযোগ করেননি। আর বিএনপির বর্তমানে প্রধান নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে তারেক জিয়ার সম্পর্ক অত্যন্ত শীতল। সে কারণে ড. খন্দাকার মোশারফ হোসেনের সঙ্গেও তারেক জিয়া কোন যোগাযোগ করেনি।
এই বাস্তবতায় বিএনপির সঙ্গে তারেক জিয়া আপাতত সকল ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। তবে বিএনপির কোন কোন নেতা বলছেন যে, তারেক সবসময় মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
তাছাড়া বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ে তারেক জিয়ার গুপ্তচর রয়েছে। যারা বিএনপির কোন নেতা কি করেন, মূলত টাকা-পয়সার লেনদেন কিভাবে করেন এ সমস্ত খবর নেয়া যাদের প্রধান কাজ তাদের সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে। কিন্তু দলের নীতিনির্ধারণী কোন বিষয়ে তারেক জিয়া যোগাযোগ করছেন না। বিভিন্ন মহল বিভিন্ন রকম ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
বিএনপির কোন কোন নেতা মনে করেন যে, যেহেতু ১০ ডিসেম্বরের মিশন ফেল করেছে এজন্য তারেক জিয়া হতাশ হয়ে তার যোগাযোগ বন্ধ করে রেখেছেন। তিনি বিএনপি নেতাদের কার্যক্রমে অসন্তুষ্ট।
বিশেষ করে ১০ ডিসেম্বরের মহাসমাবেশ শান্তিপূর্ণ হলো কেন? শেষ পর্যন্ত কেন বিএনপি নেতারা অনেক লাশ ফেলতে পারলেন না এবং নয়াপল্টনে আঁকড়ে ধরে রাখতে পারলেন না। এই নিয়ে তারেক জিয়া ক্ষুব্ধ হয়ে হতাশ হয়েছেন। আবার বিএনপির অনেক নেতাই বলছেন যে, তারেক জিয়ার হতাশার কারণ হলো আন্তর্জাতিক কোন স্যাংশন বাংলাদেশের ওপর না হওয়া।
১০ ডিসেম্বর নিয়ে তারেক জিয়া বিএনপির নেতাদের বলেছিলেন যে, একটা বড় ধরনের স্যাংশন আসছে আপনারা শুধু আন্দোলন চালিয়ে যান। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা যুক্তরাজ্য কেউই বাংলাদেশের ওপর কোন ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেননি।
তারেক জিয়া বাংলাদেশের বিভিন্ন সংগঠন এবং ব্যক্তির ওপর যেন নিষেধাজ্ঞা দেখা হয় সেজন্য শত শত কোটি টাকা খরচ করেছিলেন। একাধিক লবিস্ট ফার্ম এ নিয়ে কাজ করেছিল। কিন্তু সে সবই বৃথা দেওয়ার কারণে তারেক জিয়া মধ্যে হতাশ এবং ক্ষুব্ধ। বিএনপির একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছিলেন যে, তারেক জিয়া যেভাবে আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন সেই পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে।
এখন বিএনপির চূড়ান্ত আন্দোলনের কর্মসূচিতে ২ দিন মাত্র কর্মসূচি দিয়েছে। আজ তাদের বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হবে। এটি নয়াপল্টনের সামনে করা হবে বলে জানানো হয়েছে। আর ২৪ ডিসেম্বর তারা গণমিছিল করবে। ২৪ ডিসেম্বরের গণমিছিল নিয়ে ইতোমধ্যে বিএনপির মধ্যে নেতিবাচক মতামত তৈরি হচ্ছে। বিএনপির কোন কোনে নেতা এটাকে হঠকারিতা হিসেবে চিহ্নিত করছেন।
তাদের মতে ঐদিন আওয়ামী লীগের জনসভা রয়েছে। আওয়ামী লীগের জনসভায় বিএনপি কিভাবে গণমিছিল করে এটি তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। আরেকটি সংঘাতে বিএনপির আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা। আর এই কারণেই বিএনপি নেতারা এখন পারতপক্ষে তারেকের সাথে যোগাযোগ রাখা থেকে বিরত থাকছেন।
বিএনপির একজন নেতা বলছেন যে, তারেক জিয়া উনার হঠকারিতার কারণেই বিএনপি আরেকটি বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে। তারেক জিয়া এখন বিএনপির জন্য একটা ক্ষতিকর ব্যক্তি হিসেবে পরিণত হচ্ছেন।
তারেক জিয়া বিএনপির ব্যাপারে যত কম হস্তক্ষেপ করবে তত বিএনপি ভালো করবে এমনটি মনে করছে বিএনপির কোন কোন নেতা।
সংবাদটি শেয়ার করুন