
স’লিপকঃ
চিরাচরিত প্রথানুযায়ী প্রতি চন্দ্র মাসের দশ তারিখ দিবাগত রাতে পীরানে পীর দস্তগীর গাউছুল আ’জম হযরত বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.) এর ভক্তবৃন্দ চন্দ্রমাসের এগারো তারিখে তাঁর স্মরণে যথাযোগ্য মর্যাদার সহিত পবিত্র গিয়ারভী শরীফ পালন করে থাকেন। স্থানীয়ভাবে পবিত্র গিয়ারভী শরীফকে এগারো শরীফ বলা হয়ে থাকে।
বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারী) দিবাগত রাতে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ৪নং আপার কাগাবলা ইউনিয়ন পরিষদের নিমারাই গ্রামে প্রতি মাসের ন্যায় বর্তমান মেম্বার মোঃ আব্দুর রকিবের বাড়ীস্থ এগারো শরীফের খানকায় পবিত্র এগারো শরীফ সম্পন্ন করা হয়।
পবিত্র এগারো শরীফ উপলক্ষে বাদ এশা খানকায় আসনে বাতি প্রজ্জ্বলন, পবিত্র গিয়ারভী শরীফ পাঠ, জিকির-আছকার, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয় এবং গিয়ারভী শরীফে অগত মুসল্লীদের মাঝে তাবারক বিতরণ করা হয়।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ৫নং ওয়ার্ড মেম্বার মোঃ আব্দুর রকিব, আমরা মাদক নিবারণ করি (আমরা মানিক) এর উপদেষ্টা মোঃ সিরাজুল ইসলাম, বাংলাদেশ বাউল সমিতি মৌলভীবাজার জেলা শাখার সদস্য সাংবাদিক মোঃ সালেহ আহমদ (স’লিপক), ইসলামের অনিয়ম দূর্নীতি প্রতিরোধ আন্দোলনের সদস্য মোঃ লিটন মিয়া, এগারো শরীফ খানকার খাদিম ফারুক মিয়া, এমরান মিয়া, জলু মিয়া, জাহিদ মিয়া, ফেরদৌস মিয়া, দিলাল মিয়া প্রমুখ। পরে ভক্তিমূলক মুর্শিদী গানের আসরে গান পরিবেশন করেন বাউল আউয়াল মিয়া ও বাউল কাছন মিয়া।
জানা যায়, কুমিল্লা জেলার ত্রিপুরার পীর সাহেব সৈয়দ মনসুর আহমদ (রহ.) তার মুরিদান নিমারাই গ্রামের ফরিদ মিয়া, আমিন উল্লাহ, হুরমত উল্লা, এলাইছ মিয়া, সজ্জাদ মিয়া, আব্দুল হক, মতাজিল মিয়া, হাসিম উল্লা, আব্দুর রকিব মেম্বার, নাজির উল্লা, আজমান উল্লাগংদের মাঝে এগারো শরীফ পালন করার নির্দেশ দেন। পীর ও মুর্শিদের নির্দেশে স্বাধীনতার পরবর্তী থেকেই নিমারাই গ্রামে চালু করা হয়েছে এগারো শরীফ। যা এখনো বিদ্যমান আছে। শুরুর দিকে আমিন উল্লার বাড়িতে এগারো শরীফ পালন করা হয়। বিভিন্ন কারণে সেখান থেকে মতাজিল মিয়ার বাড়ীতে স্থানান্তরিত করা হয়। পরবর্তীতে ফারুক মিয়ার বাড়ীতে এবং সর্বশেষ মোঃ আব্দুর রকিব মেম্বারের বাড়ীতে খানকাহ স্থাপন করে পীর ও মুর্শিদের মকবুল নির্দেশ পালন করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, ওলিকুল শিরমণি হযরত বড়পীর আবদুল কাদির জিলানী (রহ.)কে দক্ষিণ এশিয়ায় সুফিবাদের প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়। তিনি গাউসে আজম দস্তগীর হিসেবে পরিচিত। গিয়ারভী শরীফ আরবী রবিউস সানি চাঁদের এগারো তারিখ বা মাসিকভাবে ইসলামী ক্যালেন্ডারের প্রতি চন্দ্র মাসের এগারো তারিখ উদযাপন করা হয়।
পীরানে পীর দস্তগীর গাউছুল আ’জম হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.) এর ভক্তবৃন্দ প্রতি চন্দ্রমাসের এগারো তারিখে তাঁর স্মরণে খতম, ওয়াজ-নসিহত ও জিকির মাহফিলের আয়োজন করে উপস্থিত ভক্তবৃন্দের মধ্যে তবারুক বিতরণ করতেন। এই আয়োজন গিয়ারভী শরীফ নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে।
আল্লামা ইয়াফিয়ী (রহ.) ‘কুররাতুন নাজিরা’ নামক কিতাবে লিখেন, “একদা গাউছুল আ’জম (রহ.) রাসূলেপাক (দ.) ফাতেহা শরীফ আদায় করলেন। এই ফাতেহা শরীফের নিয়াজ কবুল হল যে, তিনি প্রত্যেক চন্দ্রমাসের এগারো তারিখ ইহাকে নির্দিষ্ট করে দিলেন। ক্রমান্বয়ে এই আমল তাঁর দিকে নিসবত (সম্পর্কিত) হয়ে গেল, এমনকি চন্দ্রমাসের এগারো তারিখে তাঁর উরস মোবারক অনুষ্ঠিত হতে লাগল।”
আলেমকুল শিরমণি আল্লামা শেখ আব্দুল হক মোহাদ্দেসে দেহলভী (রহ.) ‘মা ছাবাতা মিনাচ্ছুন্নাহ’ নামক কিতাবে লিখেছেন- “গিয়ারভী শরীফ আমাদের দেশে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে এবং তা আমাদের (কাদেরিয়া তরিকার) বুজুর্গানে দ্বীনের বিশেষ আমল হিসেবে পরিগণিত, যাঁরা তাঁর (গাউছে পাকের) বংশধরের মধ্যে ভারতবর্ষে বসবাস করছেন।”
হিজরি চতুর্দশ শতকের মোজাদ্দেদ আ’লা হযরত আল্লামা শাহ্ আহমদ রেজা খাঁন বেরলভী (রহ.) লিখিত ‘ফাতাওয়া রেজভীয়া’ নামক কিতাবের দশম জিলদে লেখা আছে, ‘গিয়ারভী শরীফ’ পালন করা শরীয়তসম্মত উত্তম ও ভাল কাজ।
অতএব প্রত্যেক তরিকতপন্থি মুসলমানের জন্য অযুর সাথে সম্মানসহকারে গিয়ারভী শরীফ পালন করা উচিত। কেননা ‘বাহজাতুল আছরার’ নামক কিতাবে বর্ণিত আছে, পীরানে পীর দস্তেগীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.) বলেছেন, যে ব্যক্তি (আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি লাভ করার জন্য) নিজেকে আমার দিকে সম্পর্ক করবে, তার নাম আমার গোলামদের দপ্তরে শামিল হবে এবং আল্লাহপাক কবুল করবেন। যদিও সে কোন নিন্দনীয় রাস্তায় থাকে আল্লাহপাক তাঁকে তাওবা করার তাওফিক দেবেন এবং সে আমার মুরিদগণের মধ্যে হবে। নিশ্চয় আল্লাহপাক আমার মুরিদান ভক্তবৃন্দকে বেহেস্ত দান করার ওয়াদা করেছেন।