মো: জাফর ইকবাল মৌলভীবাজার থেকে,
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নে খাস জলাশয় দখলকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ২ জন নিহতের ঘটনায় এলাকায় সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। এলাকায় গ্রাম গুলো পুরুষ শুন্য হয়ে গেছে।
আইনঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে পুলিশের অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এই সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হয় ৫০ জন।
গত রবিবার(২৮ জুলাই) উপজেলা পূর্ব খলিলপুর ও মনুরমুখ ইউনিয়নের মধ্যবর্তী পূর্ব লামুয়া (কর্মদপুর) গ্রামে এই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ঘটে।
সরেজমিনে গিয়ে জানাযায়, কর্মদপুরে . ৩২ একরের জলাশয় লিজ নেন প্রম্মদপুর গ্রামের লেফাস মিয়া। এই জলাশয় জোর পুর্বক দখলে নেওয়ার চেষ্টা করেন লন্ডন প্রবাসী মনর মিয়া ও আনর মিয়া গ্রুপের লোকজন। বিষয়টি নিয়ে উত্তজনা বিরাজ করে এলাকায়।
শনিবার (২৭ জুলাই) সন্ধ্যার পর লন্ডন প্রবাসী মনর মিয়া ও আনর মিয়ার লোকজন আনই মিয়ার বাড়ি, সায়েক মিয়ার দোকান, আমির উদ্দিনের বাড়ি, জয়তুন মিয়া বাড়ি, রব্বান মিয়ার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট করে।
সন্ধ্যার ঘটনাটি স্থানীয়রা সামলে নিলেও রোববার ভোর ৬টা থেকে আবার উভয় পক্ষের মধ্যে প্রায় দুই ঘন্টা ব্যাপী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় ঘর-বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাট ঘটনা ঘটে। দীর্ঘ সময় সংঘর্ষে আহতদেরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে নোমান মিয়া (২৮) মারা যায়। এসময় রেদন মিয়া(১৪) নামের এক কিশোরের নিহত হয়।
পুর্ব খলিলপুর গ্রামের এমদাদুল হক লেফাসের স্ত্রী পরিজান বিবি(৬৫) বলেন, আমি বোনের বাড়িতে ছিলাম। আমার স্বামীসহ সদ্য বিবাহিত ছেলের বউ ও মেয়ে বাড়িতে ছিল। লন্ডন প্রবাসী মনর মিয়ার লোক লাল মিয়া, নামদার মিয়া, আবদাল মিয়া, আলাল মিয়া সহ শাতাধিক ব্যাক্তি আমার বাড়িতে হামলা করে। আমার ছেলের বউ ও মেয়ে পালিয়ে গিয়ে আত্নরক্ষা করে। আমার স্বামীকে তারা খুব মারধোর করে। আমার ছেলের কষ্টের টাকা দিয়ে তৈরী পাকার ঘরটি সম্পূন্ন রুপে ভেংঙ্গে ফেলে। গরু ছাগল সহ ঘরের আলমিরা ভেংঙ্গে ৫ ভরি সোনা, নগদ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, বউয়ের ব্যবহৃত প্রায় ৩ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। শেরপুর পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ এসে আমার স্বামীকে মুমূর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে। পুলিশ চলে যাওয়ার পরও আবারও লুটপাট চালায়। রবিবার সকালে আবারও তারা হামলা করে। নোমান মিয়াকে রব্বান মিয়ার বাড়ির সামনে কুপিয়ে ও টেটা দিয়ে খুন করে। এসময় অনেক লোক আহত হয়। আমাদেরে বাড়ি ঘর থেকে উচ্ছেদ করা তাদের মুল উদ্দেশ্য।
খলিলপুর গ্রামের শিফা বেগম, প্রম্মদপুর গ্রামের মমতা বেগম বলেন, লন্ডন প্রবাসী মনর মিয়ার লোকজন এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে চলছে। লন্ডন প্রবাসী মনর মিয়া দেশে এসেই প্রতিবার একটি সংঘর্ষ বাঁধায়। গত ১৮ সালে এই ভাবে মনর মিয়ার লোকজন সংঘর্ষ বাঁধালে উভয় পক্ষে শফিক মিয়া(১৭), ও আব্দুল মালিক(৫৫) নামে ২ জন নিহত হন। এখানে ৩ টি গুষ্টি চলে লন্ডনী মনর মিয়ার নির্দেশে। এখানে মনর মিয়ার গুষ্টি প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের কথায় এলাকায় চলতে হয়। রব্বান মিয়ার স্ত্রী বিবিজান(৬৫) বলেন, মনর মিয়ার ৩ গুষ্টির মানুষ রবিবারে হামলা চালায়। আমার বাড়ির সামনে নোমান মিয়া কে খুন করে। আমার ঘরে লেফাস আশ্রয় নেয়। তারা ঘরে ঢোকে লেফাসকে দা দিয়ে কুপিয়ে মারাত্নক জখম করে। আমি তাকে রক্ষা করতে পারিনি। নিহত নোমান মিয়ার মা ফুলমতি বেগম(৬৫), বোন তান্নি বেগম(২০), ফুফু খাতুন বিবি(৫০) পাগল প্রায়। বোন তান্নি বেগম কথা বলতে গেলে প্রলাপ বকতে থাকে, আমার ভাই বাড়ি আসতেছে। তোমাদের সাথে কথা বলতে দেখলে আমাকে মারবে। তোমরা যদি আমার ভাইর বন্ধু হও চা খেয়ে যাও। চা না খেয়ে গেলে আমার ভাই আমাকে গালি দেবে।
গত ১৮ সালে সংঘর্ষে নিহত শফিক মিয়া(১৭) মা বানেছা বেগম(৬৫) পাগল প্রায়। মাঠের মধ্য দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বলছেন লবন নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি। লবন দিয়ে ভাত খাবো।
এছাড়াও পুলিশ হয়রানীর ভয়ে আহতদের নাম ও তাদের অবস্থা জানা যায়নি। স্থানীয় খলিলপুর ইউপি সদস্য মিলন মিয়া বলেন, প্রথম দফা মারামারির ঘটনার পর আমরা রাত ৩টা পর্যন্ত আপোষ-মিমাংসায় চেষ্টা করি। কিন্তু উভয় পক্ষকে সমঝোতায় আনতে পারিনি। আরেক ইউপি সদস্য জুনাইদ আহমদ বলেন, সরকারি খাস জলাশয়ের প্রায় ১০ একর জমি নিয়ে তারা ঘন্টাব্যাপী রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত ছিল।
খলিলপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু মিয়া চৌধুরী বলেন, সরকারি খাস জমি নিয়ে পূর্ব খলিলপুর ও মনুরমুখ ইউনিয়নের ওই গ্রামে দীর্ঘ সময় ধরে সংঘর্ষ চলে। হাসপাতালে নেবার সময় নোমান মিয়া নামের এক যুবক মারা গেছেন।
মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম জানান, ওই এলাকায় মারামারির খবর পেয়ে আমি, সদর সার্কেল ও থানার ওসি ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে এনেছি। এখন এলাকার গ্রাম লোক শুন্য । আহতরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ঠিক কি কারণে ঘটনাটি ঘটেছে জানতে চাইলে বলেন, ওখানে খাস জলাশয় ও কিছু মালিকানাধীন জমি রয়েছে। এগুলো নিয়ে আদালতে মামলাও চলছে। তবে এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এপর্যন্ত উভয় পক্ষের ৬ জন গ্রেফতার করা হয়েছে।
সংবাদটি শেয়ার করুন