প্রিন্ট এর তারিখঃ জুলাই ১৫, ২০২৫, ১২:০৪ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ জুলাই ১৪, ২০২৫, ১১:১৪ পূর্বাহ্ণ
আলোচিত কলেজছাত্র হৃদয় হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন; হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোবাইল ও মোটরসাইকেল উদ্ধারসহ গ্রেফতার-২

রেডটাইমস ডেস্ক মৌলভীবাজার:
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে আলোচিত কলেজছাত্র হৃদয় আহমেদ ইয়াছিন হত্যা রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত টমটম চালক কাজল মিয়া ও বাদাম বিক্রেতা সিরাজুল ইসলামকে গ্রেপ্তার ও তাদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত আলামত উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃত কাজল মিয়ার মূল বাড়ি কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর দাড়িয়াকান্দি গ্রামে ও সিরাজের মূল বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার রাজাপুর গ্রামে। তারা ২ জনই শ্রীমঙ্গল শহরতলীর শাহীবাগ এলাকার ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছিল। এরা মাদকাসক্ত বলে জানায় পুলিশ।
নিহত হৃদয় আহমেদ ইয়াছিন কমলগঞ্জ সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন এবং শ্রীমঙ্গল কালীঘাট রোড এলাকায় ওয়াইফাই অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন। অনলাইনে জুয়ায় আসক্ত হয়ে তিনি বন্ধুর কাছ থেকে ধার নেয়া টাকার দেনায় জড়িয়ে পড়েন। এনিয়ে বিরোধের জেরে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে গ্রেপ্তারকৃতরা।
আজ সোমবার (১৪ জুলাই) দুপুরে জেলা পুলিশ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান মৌলভীবাজার জেলার পুলিশ সুপার এম. কে. এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন, পিপিএম-সেবা।
এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) নোবেল চাকমা, শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আমিনুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানায়, গত ৭ জুলাই সকালে শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালিঘাট ইউনিয়নের কাকিয়াছড়া চা বাগান ১ নম্বর সেকশন এলাকায় একটি গাছের নিচে বেল্ট দিয়ে বাঁধা অবস্থায় হৃদয়ের মরদেহ উদ্ধার করে শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশ। মরদেহ শাক্তের পর অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে শ্রীমঙ্গল থানার মামলা নং- ১৪, ধারা- ৩০২/২০১/৩৪ রুজু করা হয়।
পরে জেরা পুলিশ সুপার এম. কে. এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন, পিপিএম-সেবা এর নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) নোবেল চাকমা ও সহকারী পুলিশ সুপার (শ্রীমঙ্গল সার্কেল) আনিসুর রহমানের তত্ত্বাবধানে শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি বিশেষ তদন্ত টিম গঠন করা হয়। শহরের সিসিটিভি ফুটেজ, তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্লেষণ এবং গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ২ আসামির অবস্থান শনাক্ত করা হয়।
পরবর্তীতে এসআই অলক বিহারী গুণ ও এসআই মো. মহিবুর রহমানের নেতৃত্বে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার রাজাপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের স্বীকারোক্তিতে হত্যায় ব্যবহৃত গামছা, স্কুল ব্যাগ, ভিকটিমের মোবাইল এবং মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ভিকটিম হৃদয়ের কাছে প্রায় ২২ হাজার টাকা পাওনা ছিল কাজলের। পরবর্তীতে চাকরি দেয়ার কথা বলে ঢাকায় নিয়ে গেলেও চাকরি না হওয়া এবং পাওনা টাকা ফেরত না দেয়াকে কেন্দ্র করে বিরোধ চরমে ওঠে। এই দুই বিষয় নিয়ে ক্ষোভ থেকেই হত্যার পরিকল্পনা সাজানো হয়। গত ৬ জুলাই রাত ১১টার দিকে কাজল ও সিরাজ পরিকল্পনা অনুযায়ী হৃদয়কে ওই চা বাগানে নিয়ে যায়। কাকিয়াছড়া চা বাগানের ১ নম্বর সেকশনে রাত প্রায় ১১টা ২০ মিনিটের দিকে হৃদয়ের সাথে কাজল আর সিরাজের টাকা-পয়সা নিয়ে ঝগড়া হয়। ঝগড়ার একপর্যায়ে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। এরপর কাজল আর সিরাজ তাদের ব্যাগ থেকে গামছা বের করে হৃদয়ের গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে। একজন তার হাত-পা চেপে ধরে রাখে। হৃদয় মারা গেলে তারা নিশ্চিত হয়ে তার পরনের প্যান্টের বেল্ট দিয়ে গলায় পেঁচিয়ে গাছের সাথে ঝুলিয়ে রাখে যেন মনে হয় আত্মহত্যা করেছে।

এরপর হৃদয়ের মোবাইল ফোন আর মোটরসাইকেল নিয়ে রাত প্রায় ১২টার দিকে হবিগঞ্জ রোডে সখিনা সিএনজি পাম্পের পাশে মোর্শেদ নামে এক জনের দোকানে যায়। সেখানে মোবাইলটি মাত্র ২৫০ টাকায় বিক্রি করে মোটরসাইকেল নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল থানার রাজাপুর গ্রামে নানার বাড়িতে পালিয়ে যায়।
গ্রেফতারকৃতদের সোমবার (১৪ জুলাই) বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হবে।
RED TIMES LIMITED
116-117, Concord Emporium, Kataban, Dhaka-1205.
Mobile: 017111-66826
Email: redtimesnews@gmail.com
Copyright © 2025 RED TIMES. All rights reserved.