আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের বক্তব্য চিকিৎসক সমাজের জন্য আত্মমর্যাদা ও পেশাদারিত্বের ওপর সরাসরি আঘাত বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম।
রোববার (১৭ আগস্ট) এক বিবৃতিতে আসিফ নজরুলের বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে এ কথা বলেন তিনি।
বিবৃতিতে ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, দেশব্যাপী কর্মরত চিকিৎসক সমাজকে নিয়ে ড. আসিফ নজরুলের বক্তব্যে গোটা চিকিৎসক সমাজের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্ঠি হয়েছে।
তিনি ঢালাওভাবে চিকিৎসকদেরকে ‘ওষুধ কোম্পানির দালাল’ আখ্যা দিয়েছেন এবং পেশার সততা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, যা শুধু অযৌক্তিকই নয়, চিকিৎসক সমাজের আত্মমর্যাদা ও পেশাদারিত্বের ওপর সরাসরি আঘাত।
তিনি বলেন, যে দেশে এখনো বাবা-মা তাদের সন্তানকে সবার আগে চিকিৎসক বানানোর স্বপ্ন দেখেন সেদেশে তার এমন অনাকাঙ্ক্ষিত বক্তব্য জনমনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। দায়িত্বশীল একটি পদে থেকে কতিপয় ব্যক্তির দায় সমগ্র চিকিৎসক সমাজে দেয়াটা অনভিপ্রেত ও নিন্দনীয়।
চিকিৎসকরা তাদের সীমাহীন শ্রম, মেধা ও ত্যাগের মাধ্যমে দেশের মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছেন উল্লেখ করে ডা. রফিক বলেন, করোনাভাইরাস মহামারির সময় জীবনবাজি রেখে চিকিৎসক, নার্সসহ এ পেশায় যুক্ত সবার অবদান জাতির ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
তিনি বলেন, মহান স্বাধীনতা কিংবা নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে চিকিৎসকদের ভূমিকার কথা এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলেন? এমনকি জুলাই আন্দোলনেও দুইজন চিকিৎসক শহীদ হয়েছেন এবং স্বৈরাচারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে আহতদের চিকিৎসায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন, অনেকে কারাবরণ করেছেন।
এ বাস্তবতায় চিকিৎসকদের সম্মানহানি করার মতো বক্তব্য জাতির চিকিৎসক সমাজকে ক্ষুব্ধ করেছে এবং এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে চিকিৎসকদের প্রতি ভুল বার্তা পৌঁছানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
আসিফ নজরুলের কাজের সমালোচনা করে বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক বলেন, চিকিৎসকদের পেশাগত দুর্বলতা থাকলে তা সমাধান করা যেতে পারে নীতি, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ও পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে। কিন্তু তাদের ‘দালাল’ আখ্যা দেওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
তিনি বলেন, অতিরিক্ত পরীক্ষা দেয়া হয় বলে দাবি করে ড. আসিফ নজরুল বিদেশে চিকিৎসা গ্রহণকে রীতিমতো প্রচারণা করলেন। যেসব চিকিৎসক পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিয়ে আসেন তাদের থেকে জানা যায়, সেসব দেশেও নতুন কোনো ঔষধ বাজারজাতের সময় চিকিৎসকদের মধ্যে বিজ্ঞাপন করা হয়।
পার্শ্ববর্তী দেশের তুলনা এনে তিনি পরোক্ষভাবে সেদেশের ব্র্যান্ডিং করে আমাদেরকে সে দেশের তাবেদার বানানোর চেষ্টা করলেন কিনা সে প্রশ্ন জনমনে থেকেই যায়।
অবিলম্বে তার বক্তব্যের অসৌজন্যমূলক অংশটুকু প্রত্যাহার ও মর্মাহত চিকিৎসকদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমি আশা করি, ভবিষ্যতে কেউ ঢালাওভাবে দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য দিয়ে চিকিৎসকদের সম্মান ক্ষুণ্ণ কিংবা চিকিৎসকদের ওপর জনগণের আস্থা নষ্ট করে বিদেশে চিকিৎসা নেওয়াকে উৎসাহিত না করার।
একইসঙ্গে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই, দেশের স্বাস্থ্যসেবায় যেসব প্রকৃত সংকট রয়েছে-যেমন স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি, অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা, পর্যাপ্ত বাজেটের অভাব, ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণহীনতা, এসব সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হতে।