প্রিন্ট এর তারিখঃ জুলাই ১২, ২০২৫, ৬:২৩ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ জুলাই ১১, ২০২৫, ১২:৩৮ অপরাহ্ণ

প্রবাসী প্রতিনিধি:
বৃটেনের লন্ডনস্থ টাওয়ার হ্যামলেটসে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার মাধ্যমে সবচেয়ে কনিষ্ঠ ব্রিটিশ-বাংলাদেশি লেখিকা, কেইলি প্রাইমারি স্কুলে ১১ বছরের শিশু জয়নাব চৌধুরী রচিত "মাই প্রাইমারি জার্নি থ্র কেইলি" গ্রন্থ প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস্থ কেইলি প্রাইমারি স্কুলে বার্ষিক সামার ফেয়ার অনুষ্ঠানে স্কুলের ইয়ার-৬ এর ছাত্রী, ১১ বছরের শিশু জয়নাব চৌধুরীর লেখা প্রথম বই "মাই প্রাইমারি জার্নি থ্র কেইলি" জনসম্মুখে আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানমালায় ছিল অতিথিদের বক্তৃতা, লেখিকার নিজস্ব পাঠ, স্বাক্ষর বিতরণ, ছবি তোলা এবং বইয়ের প্রচ্ছদের আদলে তৈরি একটি বিশেষ কেক কাটা। অনুষ্ঠানে বইটি কিনে নেওয়ার সুযোগ ছিল সবার জন্য। বই বিক্রয় থেকে প্রাপ্ত সম্পূর্ণ অর্থ কেইলি স্কুলের শিক্ষামূলক প্রকল্পে ব্যয় করা সিদ্ধান্ত, যা লেখিকার নিঃস্বার্থ ও অলাভজনক প্রচেষ্টাকে তুলে ধরে এবং ডেপুটি মেয়র, কাউন্সিলর এবং উপস্থিত শিক্ষকবৃন্দ কর্তৃক লেখক জয়নাব চৌধুরীকে "ইয়াং অথর এচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড" প্রদান।
কেইলি প্রাইমারি স্কুলের এক গর্বের ও অনুপ্রেরণামূলক মুহূর্তের আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক টম ফস্টার। অনুষ্ঠান সম্পর্কে বিস্তার উপস্থাপন করেন স্কুলের উপ-প্রধান শিক্ষক নিকি পিয়ার।
প্রধান অতিথি ছিলেন স্ট্যাচুটরি ডেপুটি মেয়র, শিক্ষা, যুব ও আজীবন শিক্ষাবিষয়ক ক্যাবিনেট সদস্য, কাউন্সিলর মায়ুম তালুকদার। এছাড়াও কাউন্সিলর আব্দুল মান্নান, কাউন্সিলর জেমস কিং, কেইলি স্কুলের গভর্নিং বডি ও স্থানীয় কমিউনিটির প্রতিনিধি রেজাউল হুসেইন সহ কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ, স্কুল গভর্নর, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকবৃন্দ এবং জয়নাব চৌধুরীর পরিবারবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
অতিথিরা তাদের বক্তব্যে শিশু জয়নাবের এই অসাধারণ সাফল্যকে শিক্ষার উৎকর্ষতা ও তরুণ সৃজনশীলতার প্রতীক হিসেবে প্রশংসা করে বলেন, জয়নাব বর্তমানে টাওয়ার হ্যামলেটসের সবচেয়ে কনিষ্ঠ লেখিকা এবং সিলেটের সর্বকনিষ্ঠ ব্রিটিশ-বাংলাদেশি লেখিকা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। তার এই বইটিতে তিনি তার প্রাইমারি স্কুল জীবনের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা চমৎকারভাবে বর্ণনা করেছেন। বিশেষ করে হোমওয়ার্ক, এসএটিএস, শিক্ষকদের অনুপ্রেরণা, সৃজনশীল শিক্ষা এবং প্রশংসা ও স্বীকৃতির ইতিবাচক প্রভাব বইটিতে ফোটে উঠেছে।
তারা আরো বলেন, মাত্র ১১ বছর বয়সে লেখা এই বইটি শিশুদের জন্য এক বাস্তব ও শক্তিশালী বার্তা বহন করে। বইটিতে জয়নাব শিখিয়েছেন কীভাবে চ্যালেঞ্জের মাঝেও মনোযোগ ধরে রাখা যায়, কিভাবে সৃজনশীলতা দিয়ে পড়াশোনাকে আনন্দদায়ক করা যায় এবং কিভাবে শিক্ষা প্রতিদিনের একটি আনন্দময় অভিযানে পরিণত হতে পারে। এমনকি কোভিড-১৯ মহামারির সময়ও তিনি নিয়মিত হোমওয়ার্ক করে গেছেন এবং স্কুল খোলার পর সেইসব কাজ শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষককে উপস্থাপন করে "হেডটিচার অ্যাওয়ার্ড" অর্জন করেন।
অতিথিরা বলেন, শিক্ষা এবং পরিবারের সম্মিলিত অনুপ্রেরণাই যে একজন শিশুর আত্মবিশ্বাস ও অগ্রগতির মূল চাবিকাঠি তা বইটিতে তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়াও অভিভাবকরা সন্তানের প্রচেষ্টায় আগ্রহ দেখানো এবং শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে তাঁদের প্রশংসা করার উৎসাহ দেয়া হয়েছে রচনায়। একটি পুরস্কার কার্ড বা সার্টিফিকেটের জন্য বাড়িতে একটি হাসি বা উচ্ছ্বাস, একটি শিশুর জীবনে বিশাল অনুপ্রেরণা হয়ে উঠতে পারে উল্লেখ করা হয়েছে বইটিতে। বইটি জয়নাবের পক্ষ থেকে কেইলি প্রাইমারি স্কুলের প্রতি একটি কৃতজ্ঞতার উপহার। এমন একটি প্রতিষ্ঠান যা গড়ে তুলেছে আজকের জয়নাবকে। তারা আশা করেন, অন্যান্য শিশুরাও এই বই পড়ে অনুপ্রাণিত হবে এবং নিজের সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করবে।
কেইলি প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক টম ফস্টার তার বক্তব্যে বলেন, আমাদের স্কুলের গর্ব জয়নাব চৌধুরী রচিত "মাই প্রাইমারি জার্নি থ্র কেইলি" বইটি বর্তমানে লন্ডনের বিভিন্ন স্কুল, লাইব্রেরি ও অনলাইনে পাওয়া যাবে। এটি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে নয় বরং শিশুদের অনুপ্রাণিত করার উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে এবং এর সমস্ত আয় স্কুলের শিক্ষামূলক প্রকল্প উন্নয়নে ব্যবহৃত হবে।
কেবল পরিবার কিংবা স্কুলের গর্বই নয়, বৃটেন তথা আন্তর্জাতিক বাংলাদেশি কমিউনিটির গর্বের প্রতীক হয়ে উঠা শিশু লেখিকা জয়নাব চৌধুরীর পিতা বৃটেনের লন্ডন দ্য কেয়ারার সেন্টারের সভাপতি হাসান চৌধুরী তার মেয়ের এমন প্রতিভায় মহান আল্লাহ তালার দরবারে শুকরিয়া আদায় করে সবার কাছে তার মেয়ের জন্য দোয়া চেয়েছেন।
উল্লেখ্য, সবচেয়ে কনিষ্ঠ ব্রিটিশ-বাংলাদেশি লেখিকা, "মাই প্রাইমারি জার্নি থ্র কেইলি" গ্রন্থ রচয়িতা জয়নাব চৌধুরী বৃটেনের লন্ডন দ্য কেয়ারার সেন্টারের সভাপতি হাসান চৌধুরীর কন্যা। তাদের পারিবারিক শিকড় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ছলিমবাড়ি। জয়নাবের দাদি রুনা বেগম কমলগঞ্জ গার্লস হাই স্কুলের জ্যেষ্ঠ শিক্ষিকা এবং তার প্রয়াত দাদা ছিলেন ঢাকাস্থ মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের সুপারিন্টেনডেন্ট।