Sharing is caring!
অনলাইন ডেস্ক:
ঢাকা, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ (মঙ্গলবার) : ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের আগে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) বেশ কয়েকটি অনুচ্ছেদ পরিবর্তন করে গেজেট প্রকাশ করেছে সরকার।
সোমবার প্রকাশিত সংশোধনীটির মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে প্রবাসীদের জন্য প্রযোজ্য পোস্টাল ব্যালটের ভোট গণনা, ফল ঘোষণা সহজীকরণ, নির্বাচনকালীন নিয়মবহির্ভূত আচরণ বিধিমালা ভঙ্গের বিচার জোরদার করা। এছাড়াও, নিরপেক্ষতা নিশ্চিতে ও স্বচ্ছতা রক্ষায় জবাবদিহিতা জোরদার করার জন্য নির্দিষ্ট ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের বিচারিক ও প্রয়োগকারী ক্ষমতাও এ সংশোধনের মাধ্যমে বৃদ্ধি করা হয়েছে।
অধ্যাদেশে আরপিওর ২৭ নম্বর অনুচ্ছেদ ১০ নম্বর দফা প্রতিস্থাপন করে ডাকযোগে পাঠানো ব্যালট বাতিলের জন্য সুনির্দিষ্ট শর্ত যুক্ত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, একটি পোস্টাল ব্যালট পেপার চিহ্নিত না থাকলে, একাধিক প্রতীকের বিপরীতে বা অস্পষ্টভাবে চিহ্নিত থাকলে, রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক দেরিতে প্রাপ্ত হলে, অথবা তাতে ভোটার কর্তৃক ঘোষণাপত্র না দেয়া থাকলে তা ভোট গণনা থেকে বাদ দেওয়া হবে।
সেইসঙ্গে ৩৭ নম্বর অনুচ্ছেদ সঙ্গে ৩৭ এ উপধারা সংযোজন করে ডাকযোগে পাঠানো ব্যালট গণনার জন্য বিশেষ প্রক্রিয়া নির্ধারণ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, প্রতিটি নির্বাচনী এলাকার রিটার্নিং অফিসারের অফিস এখন থেকে ভোটগ্রহণের আনুষ্ঠানিক শেষ সময়ের মধ্যে প্রাপ্ত সমস্ত পোস্টাল ব্যালট গণনার উদ্দেশ্যে একটি ভোটকেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হবে। এছাড়াও, রিটার্নিং অফিসারকে একজন প্রিজাইডিং অফিসার এবং প্রয়োজনে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যারা প্রাপ্ত ভোটের গণনাকাজ পরিচালনা করবেন।
এতে আরো বলা হয়েছে, প্রিজাইডিং অফিসারকে কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসরণ করে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা তাদের মনোনীত এজেন্টদের উপস্থিতিতে পোস্টাল ব্যালট খাম খুলতে হবে এবং ভোট গণনা করতে হবে।
ভোটগণনা শেষ হওয়ার পরে, পোস্টাল ব্যালট গণনার একটি প্রমাণিত বিবৃতি প্রস্তুত করতে হবে এবং তা অবিলম্বে রিটার্নিং অফিসারের কাছে জমা দিতে হবে এবং রিটার্নিং অফিসার এই গণনাটি ৩৭ অনুচ্ছেদের অধীনে নির্বাচনী এলাকার সমন্বিত ফলাফলে অন্তর্ভুক্ত করবেন।
পোস্টাল ব্যালাটে ভোট প্রদানের ও গণনার নিয়ম সংযোজনের পাশাপাশি নির্বাচনী অপরাধের প্রয়োগ এবং বিচার, একটি বিশেষায়িত বিচার বিভাগীয় সংস্থা প্রতিষ্ঠা এবং নির্বাচনী কর্মীদের জন্য বাধ্যতামূলক নিরাপত্তা এবং প্রশাসনিক সহায়তা আনুষ্ঠানিককরণে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে এই সংশোধনী।
নতুন প্রণীত অনুচ্ছেদ ৯১ক অনুযায়ী নির্বাচনী তদন্ত এবং বিচার কমিটি তথা ইলেক্টোরাল ইনাকোয়ারি এন্ড এডজুডিকেশন কমিটি (ইইএসি) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এতে আরো বলা হয় যে এই আদেশের ধারা ৭৩, ৭৫, ৭৭ এবং ধারা ৯১খ এর ধারা (৩) এর অধীনে বর্ণিত অপরাধসমূহ সংক্ষিপ্ত বিচারের এখতিয়ার ইইএসি’র থাকবে।
সেইসঙ্গে, ইইএসি কে ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধির বিধান অনুসারে এই সংক্ষিপ্ত বিচার পরিচালনা করার জন্য প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে।
কমিটি আদেশের অধীনে অন্যান্য অপরাধের (ধারা ৮৯ক-এ উল্লিখিত অপরাধ ব্যতীত) বিচার গ্রহণের জন্যও আমলে নেওয়ার পর তাকে অবশ্যই বিচারের জন্য উপযুক্ত আদালতে প্রেরণ করতে হবে।
অধ্যাদেশে নির্বাচন কর্তৃপক্ষ এবং নবগঠিত কমিটিকে সহায়তা করার জন্য পুলিশ এবং নিরাপত্তা কর্মীদের কর্তব্যসমূহকেও কঠোরভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।
পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট, পুলিশ কমিশনার, স্থানীয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত যেকোনো বাহিনীর কমান্ডার বা দায়িত্বপ্রাপ্ত যেকোনো কর্মকর্তাসহ পুলিশ কর্মকর্তাদের এখন ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ প্রদান করতে হবে এবং ধারা ৮৯ক-এর অধীনে যথাযথ দায়িত্ব পালনের জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য সহায়তাও প্রদান করতে হবে।
একইভাবে, জেলা পুলিশ সুপার এবং পুলিশ পরিদর্শকসহ এই পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্বাচনী তদন্ত ও বিচার কমিটিকে স্ট্রাইকিং ফোর্স এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
নতুন এই গ্যাজেটে আরো বলা হয়েছে যে, যদি উপরে উল্লিখিত পুলিশ বা নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের কেউ ‘কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়াই’ বাধ্যতামূলকভাবে আদেশ পালনে ব্যর্থ হন, অস্বীকৃতি জানান বা অবহেলা করেন, তাহলে তাদের অদক্ষতা বা অসদাচরণের জন্য দোষী বলে গণ্য করা যেতে পারে।
এতে আরো বলা হয়েছে যে, প্রশাসনিক সহায়তাও বাধ্যতামূলক, যার ফলে রিটার্নিং অফিসার এবং সহকারী রিটার্নিং অফিসারকে ৮৯ক ধারার অধীনে দায়িত্ব পালনকারীদের এবং আদেশের অধীনে তাদের কার্যাবলী যথাযথভাবে সম্পাদনের জন্য ইইএসি’কে প্রয়োজনীয় সব সহায়তা প্রদান করতে হবে।বাসস