আজ মঙ্গলবার, ৯ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশের ঐতিহাসিক শ্রম সংস্কার, বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি লাভ

editor
প্রকাশিত ডিসেম্বর ৯, ২০২৫, ০৪:৩৬ অপরাহ্ণ
বাংলাদেশের ঐতিহাসিক শ্রম সংস্কার, বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি লাভ

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code

অনলাইন ডেস্ক:

ঢাকা, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ (মঙ্গলবার) : ব্যাপক ও পূর্ণাঙ্গ আকারে শ্রম সংস্কার বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ শ্রম খাতে গত এক বছরে অভূতপূর্ব বৈশ্বিক স্বীকৃতি অর্জন করেছে।

শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন শ্রমিক, মালিক ও সরকারের কার্যকর ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতাকে এ অগ্রগতির মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

তিনি বলেন, ‘এই সহযোগিতা শ্রম অধিকার, শিল্প শান্তি ও বৈশ্বিক গ্রহণযোগ্যতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে।’

তিনি বেশ কয়েকটি বড় অর্জনের কথা তুলে ধরেন, যার মধ্যে রয়েছে ১৭ নভেম্বর বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ গেজেট প্রকাশ।

Manual1 Ad Code

এই অধ্যাদেশে ঐতিহাসিক সংস্কার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যেমন-গৃহস্থালি ও কৃষি শ্রমিকদের সংগঠনের অধিকার, ১২০ দিন মাতৃত্বকালীন ছুটি, শ্রমিকদের কালো তালিকাভুক্তি নিষিদ্ধ করা, ইউনিয়ন গঠনের ন্যূনতম সদস্য সংখ্যা ২০-এ নামিয়ে আনা এবং বাধ্যতামূলক ভবিষ্যৎ তহবিল প্রতিষ্ঠা।

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতির মধ্যে রয়েছে বেকার শ্রমিক সুরক্ষা কর্মসূচি (ইউডব্লিউপিপি) বাস্তবায়ন নীতি ২০২৫ চালু এবং কাস্টমস সার্ভিসকে অত্যাবশ্যকীয় সেবা হিসেবে ঘোষণা করা।

অর্থনৈতিক সুবিধার ক্ষেত্রে তৈরি পোশাক খাতে বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। সাতটি শিল্প খাতে ন্যূনতম মজুরি সংশোধন করা হয়েছে এবং আরও ২১টি খাতে এই সংশোধন সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে।

উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, বেক্সিমকো গ্রুপের ৩১ হাজার ৬৬৯ জন শ্রমিক ও কর্মকর্তাকে ৫৭৫ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা প্রদান, নাসা গ্রুপের ১৭ হাজার ১৩৪ কর্মচারীকে ৩১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা পরিশোধ এবং সেন্ট্রাল ফান্ড ও শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ২২ হাজার ৯৪৮ শ্রমিক ও পরিবারের কাছে ৮০ কোটি টাকা বিতরণ।

ইইউ তহবিল থেকে ১ হাজার ৭৫৫ জন বেকার শ্রমিককে ১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা এবং এমপ্লয়মেন্ট ইনজুরি স্কিমের আওতায় ৮১ জনকে ১ কোটি ৪ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও জানান, শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ না করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়া মালিকদের বিরুদ্ধে ইন্টারপোল রেড অ্যালার্ট জারির প্রক্রিয়াও চলছে।

শ্রম অধিকার ও কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। এর অংশ হিসেবে ৩৪৭টি নতুন ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধিত হয়েছে, ৪৮ হাজার শ্রমিক সংশ্লিষ্ট ৪৪টি রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে, ৩ হাজার ৪৫৩ শিশুকে শ্রম থেকে সরিয়ে আনা হয়েছে, ১১ হাজার ৬৯১টি পরিদর্শন সম্পন্ন হয়েছে এবং আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ১৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সরকার তৈরি পোশাক কারখানায় ৩৪৭টি শিশু ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন এবং ১ হাজার ২৭০ নারীর জন্য ৩২ কোটি ৬৫ লাখ টাকার মাতৃত্বকালীন সুবিধা দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া, আইএলও কনভেনশন ১৫৫ ও ১৮৭ অনুমোদনের মাধ্যমে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অবস্থান আরও শক্তিশালী হয়েছে।

বাংলাদেশ এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের (এএসপিএজি) ৪৫টি দেশের সমন্বয়ক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। একই সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা জনিত ক্ষতিপূরণ বীমা বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করেছে।

Manual1 Ad Code

শ্রম অধিকার ও নিরাপত্তায় বড় ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক অগ্রগতি হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহীতে জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষণা এবং প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট চালু করা হয়েছে। ময়মনসিংহে নতুন শ্রম আদালত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যা ইতোমধ্যে ১৩ হাজার ১৩টি মামলা নিষ্পত্তি করেছে। এছাড়া নতুন কর্মসংস্থান অধিদপ্তর গঠনের কাজও চলমান রয়েছে।

সরকার ৪৪ হাজারের বেশি লাইসেন্স নবায়ন থেকে ৯ কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহ করেছে, আর চাকরি মেলায় ৪৩৫ জন চাকরিপ্রার্থী কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছেন।

Manual2 Ad Code

ড. সাখাওয়াত জোর দিয়ে বলেন, এসব অর্জন শ্রমিক, মালিক ও সরকারের দৃঢ় ঐক্যের প্রতিফলন, যা আধুনিক, নিরাপদ এবং বৈশ্বিক মানসম্পন্ন শ্রম খাতের শক্ত ভিত গড়ে তুলেছে।

Manual1 Ad Code

তিনি আশা প্রকাশ করেন, এ অগ্রগতির ধারা অব্যাহত থাকবে। এর মাধ্যমে শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত হবে, শিল্প খাতের স্থিতিশীলতা আরও দৃঢ় হবে এবং বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক উন্নয়নকে সহায়তা করবে।বাসস

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code