অনলাইন ডেস্ক:
জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের তথ্যানুসন্ধান দলের প্রতিবেদন প্রকাশ ছিল চলতি বছর অন্যতম বড় ঘটনা। পাশাপাশি মিয়ানমারের জন্য মানবিক করিডোর দেওয়া বিষয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন বেশ সরব ছিল। তবে সব ছাপিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়ে পুরো বছর ব্যস্ত থাকতে হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে।
বছরের শুরুর দিকে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের তথ্যানুসন্ধান দলের প্রতিবেদন তৈরি নিয়ে কিছুটা সমালোচনার মুখে পড়ে অন্তর্বর্তী সরকার।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয় তদন্তে তথ্যানুসন্ধান দলকে আমন্ত্রণ জানিয়ে পূর্ণাঙ্গ তথ্য সরবরাহ করেনি বাংলাদেশ। বিষয়টি তাদের প্রতিবেদনেও ফুটে উঠেছে। পাশাপাশি তথ্যানুসন্ধান দলের করা সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে অগ্রগতি তেমন হয়নি। তবে যে প্রতিবেদন দিয়েছে, তাতে বেশ বিপাকে পড়েছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ। পশ্চিমা একাধিক দেশ এর আগে বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের কথা বললেও তথ্যানুসন্ধান দলের প্রতিবেদন প্রকাশের পর এ ব্যাপারে অনেক দেশের সুর নরম হয়ে এসেছে। দেশগুলো প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের পক্ষ নিতে পারছে না।
জাতিসংঘের প্রতিবেদন প্রকাশের পরের মাসেই চার দিনের সফরে বাংলাদেশ এসেছিলেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সফরে এসে মিয়ানমারের রাখাইনে দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করে রাখাইনে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছাতে অনুরোধ করেছিলেন তিনি। বাংলাদেশ হয়ে ২-৩টি চালান সেখানে গিয়েছিল। তবে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে মানবিক করিডোর নিয়ে পুরো রাজনৈতিক অঙ্গন সরব হয়ে ওঠে। এই সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা ও চরম বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকার সে অবস্থান থেকে সরে আসে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও উপ-প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ ইসহাক দার চলতি বছরের ২৩-২৪ আগস্ট ঢাকা সফর করেন। এটি ছিল প্রায় ১৩ বছর পর পাকিস্তানের কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশে প্রথম কূটনৈতিক সফর। এই সফরকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নতুন করে পুনরুজ্জীবিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্ক স্থবির ছিল। সরকার পতনের পর সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে শুরু করে। ২০ বছর পর দুই দেশের অর্থমন্ত্রী পর্যায়ের যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের (জেইসি) বৈঠক হয়েছে। দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে ১৫ বছর পর। দুদেশের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এত কিছুর মধ্যে বছরজুড়ে ঢাকাকে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে দিল্লিকে সামলাতে। গণঅভুত্থ্যানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতন মেনে নিতে পারেনি দিল্লি। শেখ হাসিনা পালিয়ে দিল্লিতে আশ্রয় নেন। এর পর ভারত থেকে তীব্র বাংলাদেশ-বিরোধিতা শুরু হয়। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলা চালায় উগ্র ভারতীয়রা। সে দেশের গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর তথ্য ও অপতথ্য ক্রমাগত ছড়ানো হয়। এ প্রক্রিয়া চলেছে ২০২৫ সালজুড়ে। শেখ হাসিনা ভারতে থেকে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে ক্রমাগত উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন এবং এ কারণে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনারকে তলবও করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ভারত থেকে যেসব দাবি করা হয়েছে; অন্তর্বর্তী সরকার বরাবরই সেগুলো প্রত্যাখ্যান করেছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর করতে চেয়েছিলেন ভারতে। তাঁর আগ্রহের কথা জানানো হলেও তাতে সাড়া দেয়নি দিল্লি। ফলে অধ্যাপক ইউনূসের দ্বিপক্ষীয় সফর শুরু হয় চীন দিয়ে, যা ভারতে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।
তবে ব্যাংককে ষষ্ঠ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে ড. ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রথম সরাসরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ড. ইউনূস শেখ হাসিনাকে থামাতে মোদির কাছে অনুরোধ জানান। এতেও শেখ হাসিনাকে থামানো যায়নি। দুই দেশই অপর পক্ষের দূতদের একাধিকবার তলব করেছে। দুই দেশেই কূটনৈতিক মিশন অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। বছরজুড়ে মুসলিম ও বাংলাভাষীদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়েছে ভারত।
২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর ভিসা বন্ধ করে দেয় ভারত। তারপর সীমিত পরিসরে চিকিৎসা ভিসা চালু করে। ধীরে ধীরে বাকি ভিসাগুলোও চালু করার পর্যায়ে ছিল। তবে চলতি বছরের নভেম্বরে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রায়ের পর থেকে ক্রমেই সম্পর্কের অবনতি হতে থাকে। দিল্লির কূটনৈতিক অঞ্চলের ভেতরে বাংলাদেশ হাইকমিশনারের বাসভবনের সামনে উগ্রপন্থি হিন্দু সংগঠন বিক্ষোভ করেছে। এর পর বাংলাদেশও ভারতে থাকা কূটনৈতিক মিশনগুলোর কনস্যুলার ও ভিসা কার্যক্রম বন্ধ এবং সীমিত করে। বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক ইতিহাসের সবচেয়ে তলানিতে রয়েছে বলে বিবেচনা করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।
তথ্য সুএঃ সমকাল
RED TIMES LIMITED
116-117, Concord Emporium, Kataban, Dhaka-1205.
Mobile: 017111-66826
Email: redtimesnews@gmail.com
Copyright © 2026 RED TIMES. All rights reserved.