মোঃ জাফর ইকবাল মৌলভীবাজার থেকে:
মৌলভীবাজার শহরের পশ্চিম বাজার নয়ন নামের এক তরুণের মৃত্যু নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেড়িয়ে আসছে। পরিবারের দাবি, এটি কোনো সাধারন আত্মহত্যা নয় বরং সামাজিক ভাবে পরিকল্পিত অপমানে মানসিক প্ররোচনায় কষ্ট থেকে নয়ন এই চরম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে।
এব্যাপারে নয়নের মৃত্যুর ২৫ দিন পর ৯ নভেম্বর তার বোন মনি সুত্র ধর বাদী হয়ে মৌলভীবাজার মডেল থানায় শিউলি বেগমকে আসামী করে একটি অভিযোগ করেন।
জানাযায়, সদরের পশ্চিম বাজার গুললবাগ বেড়িরচর পেশায় গাড়ী চালক নয়ন সুত্র ধরের আত্নহত্যার বিষয় নিয়ে পশ্চিমবাজার স্বর্নের ব্যবসায়ী ইসমাইল মিয়া ও তার স্ত্রী বিরোদ্ধে প্ররোচনার অভিযোগ উঠেছে। মৌলভীবাজার রঘুনন্দপুর ওয়াপদা গেইটে সোনা ভবনের ইসমাইল মিয়ার সাথে নয়ন সুত্র ধর পরিচয় সুত্রে বাসায় মাঝে মাঝে যাওয়া আশা করতো। ইসমাইল মিয়ার স্ত্রী শিউলি বেগম (৪০) তাকে ভাই সম্পর্ক গড়ে তুলেন। ভাই বোন সম্পর্ক এক সময় খুব গভীরে রুপ নেয়। আর এই গভীরে রুপ নেওয়া ভাই বোন সম্পর্ক তার কাল হয়ে দাঁড়ায়। ইসমাইল মিয়া তাকে সন্দেহ করতে শুরু করেন। এই বিষয় নিয়ে ইসমাইল মিয়া তার স্ত্রী শিউল বেগমের সাথে বাসায় ঝগড়া হয়। সন্দেহের বশে ইসমাইল মিয়া কয়েক বার ডেকে নিয়ে নয়নকে এলাকার মানুষের সামনে জুতা পেটা করেন। আবার ঘটনার দিন স্বামী স্ত্রী মিলে মানুষের সামনে তাকে জুতা পেটা করেন। ওই ঘটনার পর থেকেই নয়ন মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ে। গত ২৪ জুলাইয়ের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মামলায় নয়ন আমামী হলে ৪ মাস ইসমাইল মিয়ার বাসায় আত্নগোপন করে থাকে।
নয়নের ছোট বোন মনি সুত্র ধর জানান, নয়ন ঘটনার দিন বাসায় এসে বলে ইসমাইল মিয়ার স্ত্রী শিউলী বেগম তাকে মানুষের সামনে স্বামীর ইন্দনে জুতা পেটা করেছে। তার পায়ে ধরে বলছে বোন আমি আর বাঁচবোনা। এই অপমান আমি সহয্য করতে পারবোনা।
ভাইয়ের মুখে এমন কথা শুনে তিনি ও তাদের মা কেঁদে ফেলেন। মা বলেন, তুমি এমন কথা মুখে এনো না বাবা, তোমার কিছু হলে আমরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবো? তুমি আমাদের একমাত্র সন্তান।
কিন্তু সেই সন্ধ্যায় ঘটে যায় মর্মান্তিক ঘটনা। কিছুক্ষণ পর নয়ন বাথরুমে প্রবেশ করে আর বাইরে আসেননি। প্রায় আধা ঘণ্টা পর পরিবার ডাকাডাকি শুরু করে, কোনো সাড়া না পেয়ে দরজা ভেঙে দেখা যায় গামছা দিয়ে নয়ন ঝুলে আছেন। দ্রুত প্রতিবেশীরা সহযোগিতা করে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পরিবারের সদস্যদের তথ্য মতে জানাযায়, নয়ন মৃত্যুর প্রায় এক ঘণ্টা আগে তার ছোট বোনকে ছাদে ডেকে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে, আমাকে ইসমাইল ভাইয়ের বউ মানুষের সামনে জুতা পেটা করেছে। আমি এই অপমানের মুখ নিয়ে বাঁচতে পারবো না। নয়ন তখন তার বোনকে পায়ে ধরে অনুরোধ করে বলে, ইসমাইল ভাইয়ের বউকে একটা ফোন দাও। বলো আমি মারা গেলে আমার পরিবারের দিকে খেয়াল রাখতে।
নয়নের বাবা প্রদীপ সুত্র ধর, মা মালতি সুত্র ধর ও একমাত্র বোনের মনি সুত্র ধর এর দাবি, আমাদের ভাইকে পরিকল্পিতভাবে অপমান মান-সম্মান নষ্ট করে মরতে বাধ্য করা হয়েছে। আর এই অপমান সহয্য করতে না পেরে আত্নহত্যা করে নয়ন। এই ঘটনায় যারা জড়িত তাদের বিচারের আওতায় আনা হোক। নয়নের মৃত্যুর ৩ দিন পর শিউলি বেগম বাসায় এসে জানায়, নয়ন তার নামে ২ টি ডিপিএস করে রেখেছে। ঐ টাকা তিনি ফেরৎ দিতে চান। তারা ঐ টাকা গ্রহন করেননি। নয়ন তার নামে ডিপিএস করার বিষয়টি কিসের ইঙ্গিত বহন করে। নয়নের একটি মোবাইল ফোন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস আই জয়ন্তের নিকট আছে। তার মোবাইল চেক করলে আত্নহত্যার অনেক তথ্য বেড়িয়ে আসবে।
এছাড়া ইসমাইল মিয়া এলাকায় সুমন নামেএক ব্যক্তির নিকট বলেছে ৫ লাখ টাকা দিয়ে আত্নহত্যার বিষয় শেষ করেছে। ইসমাইল মিয়ার অপপ্রচার ও হুমকিতে তারা নিরাপত্তাহীনতায় আছেন।
এই ঘটনায় এলাকাজুড়ে আলোচনা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। স্থানীয়দের মতে একজন তরুণকে জনসম্মুখে জুতা পেটা করা এবং অপমানিত করা কোনোভাবেই মানবিক নয়। এমন অপমান একজন মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারে।
অভিযুক্ত ইসমাইল মিয়া সাংবাদিকদেরে বলেন, নয়নের সাথে আমার পরিচয় হয় গাড়ির ড্রাইভিং শেখানোর নিয়ে। মাঝে মধ্যে আমার বাসায় আসতো। তবে আমার স্ত্রীর সাথে তার কোন সম্পর্ক ছিলনা। গত ২৪ জুলাইর ৫ আগষ্টের পর তার বাসায় ৩/৪ মাস তার বাসায় আত্নগোপন করেছিল জানতে চাইলে প্রথমে বলেন, নয়ন আমার বাসায় আত্নগোপন করেনি। পরে বলেন ৪/৫ দিন ছিল। এরপর বলেন সাবেক কমিশনার, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ওলিউর রহমান ও কাবাডি ফেডারেশনের কার্যকারী কমিটির সদস্য দেলোয়ার হোসেনকে নয়নের বাসায় নিয়ে গিয়ে সমাধান করে এসেছি।
ইসমাইল মিয়ার স্ত্রী শিউলি বেগমের সাথে মোঠো ফোনে বলেন, নয়নের সাথে আমার ভাই বোনের সম্পর্ক। আর ডিপিএস এর বিষয় বলেন, নয়ন বিদেশ যাওয়ার জন্য টাকা রাখতে আমার নামে ডিপিএস ও একটি একাউন্ট করে। আমি তাদের বাসায় যাই তাদেরে সাহায্য দিতে।
সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ওলিউর রহমান বলেন, নয়নের বাবার সাথে আমার দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক। তার মৃত্যুর পর পরিবাটিকে সমবেদনা জানিয়েছি। কিন্তু ইসমাইল মিয়ার কথা ঠিক নয়। শেষ করার বিষয় আমি কিছু জানিনা। তবে নয়নের পরিবারের পাশে আমি সব সময় আছি।
কাবাডি ফেডারেশনের কার্যকারী কমিটির সদস্য দেলোয়ার হোসেন বলেন, নয়নের পরিবারের সাথে ইসমাইল মিয়া কি শেষ করেছে এ বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে নয়নের আত্নহত্যা ঘটনা দু:খ জনক। পরিবারের সাথে আমরা আছি।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার পরপরই নয়নের মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে পোস্টমর্টেমের জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়। পরবর্তীতে পরিবারকে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।
বর্তমানে নয়নের পরিবার মৌলভীবাজার মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
মৌলভীবাজার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ গাজী মাহবুবুর রহমান বলেন, ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিক ভাবে এটি আত্মহত্যা বলে মনে হলেও পারিবারিক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত চলছে। আত্নহত্যার প্ররোচনার বিষয় খতিয়ে দেখা হবে।
RED TIMES LIMITED
116-117, Concord Emporium, Kataban, Dhaka-1205.
Mobile: 017111-66826
Email: redtimesnews@gmail.com
Copyright © 2025 RED TIMES. All rights reserved.