মো: জাফর ইকবাল:
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইসরাইল হোসেন দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই জেলার প্রশাসনিক কার্যক্রমে নতুন গতি সঞ্চার করেছেন। স্বচ্ছতা, দুর্নীতিমুক্ত সেবা এবং জনকল্যাণ ও প্রশাসনের কর্মকর্তা কর্মচারীর জবাবদাহিতা নিশ্চিত হয়েছে। জেলা প্রশাসক মোঃ ইসরাইল হোসেন যার কর্মদক্ষতা, সুশাসন , সুব্যবস্থা, ধর্মের প্রতি সম্মান ,ছোট বড় গরিব-দুখী সহ প্রত্যেক স্তরের মানুষের প্রতি সম্মান আর ভালোবাসার মধ্য দিয়ে গড়েছেন মধুর এক সম্পর্ক। জেলায় অন্যায়ের প্রশ্রয় না দেওয়য় স্বৈরাচারের সময় বিচরনকারী সমাজে যেসব দুষ্কৃতিকারী তাদের চক্ষুশূল হয়ে যান জেলা প্রশাসক।
এছাড়াও সেবা থেকে বঞ্চিতরা অভিযোগ জানাতে পারেন জেলা প্রশাসকের মোবাইল নম্বরে। মো. ইসরাইল হোসেন জেলা প্রশাসক হিসাবে যোগদান করার পর তাঁর মানবিক মূল্যবোধ এবং কর্মদক্ষতায় জেলার মানুষের মনে স্থান করে নেন। জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে মৌলভীবাজার জেলায় এক বছর সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে সুনাম অর্জন করেছেন।
তাঁর অফিস কক্ষে গেলে দেখা যায় প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ তার সাথে দেখা করতে আসছেন বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে। কেউ এসেছেন জমি সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে, কেউ এসেছেন চিকিৎসার জন্য সাহায্যের প্রত্যাশায়, কেউ এসেছেন ফোরম ফিলাপের টাকার অভাবে, কেউ এসেছেন মসজিদ-মন্দিরের সংস্কারের জন্য আর্থিক সহায়তার আশায়, কেউবা এসেছেন কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবার আশায়।
সরিজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের মুরইছড়া চা-বাগানের বাসিন্দা গোপাল সাঁওতাল জন্ম থেকেই বহুমাত্রিক শারীরিক প্রতিবন্ধকতায় ভুগছে। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে শিশুটির পরিবার এতদিন তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে সক্ষম হয়নি। মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক উদ্যোগে গোপাল সাঁওতালের সার্বিক চিকিৎসার দায়িত্ব গ্রহণ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের অর্থায়নে তাকে সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অব দ্য প্যারালাইজড (সিআরপি), মৌলভীবাজার শাখায় চিকিৎসা, থাকা-খাওয়া ও থেরাপি প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত যাবতীয় ব্যয়ভার সম্পূর্ণভাবে বহন করেন জেলা প্রশাসক।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে ভূমিহীন ৬৭ পরিবারকে কৃষি খাস জমির দলিল হস্তান্তর করেন তিনি। এ পর্যন্ত ১০৯ জন ভূমিহীনকে তালিকাভুক্ত করা হলেও প্রথম ধাপে ৬৭ পরিবার জমির দলিল ও খতিয়ান পেয়েছেন। দলিল পেয়ে অনেক উপকারভোগী আনন্দাশ্রুতে ভেঙে পড়েন।
নিজ মেধা ও দক্ষতায় ম্যাজিষ্ট্রেট থেকে সচিব, সচিব থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, পরবর্তীতে নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে মোঃ ইসরাইল হোসেন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব পালন করছেন। পরবর্তীতে মৌলভীবাজার জেলার ডিসি ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। সচেতন মহল বলছেন, জেলার মানুষের জন্য অনেক পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি। বিশেষ করে তার দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা জেলার পর্যটন খাতকে পরিকল্পিত ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে । তাঁর নতুন নতুন চিন্তা ও দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনায় দাঁড়িয়েছে এক নতুন মাত্রায়।
ব্যবসায়ীদের বাজার সিন্ডিকেশনের কারণে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য মূল্যের উর্দ্বগতি রোধ করার জন্য জেলা প্রশাসন শুরু করে নায্যমূল্যের বাজার। এই বাজারে কৃষকের ক্ষেত থেকে সরাসরি সবজি কিনে কমমূল্যে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করার ফলে বাজারে এর প্রভাব পড়তে শুরু করে এবং বাজার নিয়ন্ত্রণে আসতে বাধ্য হয়। তাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে জেলা প্রশাসন আয়োজিত নায্য মূল্যের বাজার সহজেই পরিচালনা করা সম্ভব হয় এবং জনগনের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।
প্রতি বছর মৌলভীবাজার জেলাকে টুরিস্টদের নিকট আরো বেশি জনপ্রিয় করে তোলার জন্য জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
আমাদের নতুন প্রজন্ম দিন দিন মোবাইল গেমস, মাদক, জুয়াসহ বিভিন্ন সামাজিক অবক্ষয়ের দিকে যখন ঝুকে পড়ছে ঠিক তখনই জেলা প্রশাসন, মৌলভীবাজারের নতুন প্রজন্মের কাছে হারিয়ে যাওয়া খেলাধুলা গুলো জনপ্রিয় করার জন্য জেলাব্যাপী গ্রামীণ খেলাধুলা আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
জেলাটি সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ার কারণে ভারত থেকে প্রচুর পরিমাণে মাদকদ্রব্য এ জেলায় এসে থাকে এবং তরুণ প্রজন্ম মারাত্মক ভাবে মাদকের প্রতি ঝুঁকে পড়ছে। জুলাই-আগস্ট পরবর্তী জেলা প্রশাসন মাদকের ভয়াবহ বিস্তার রোধে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। সামাজিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিভিন্ন পাড়ায়, মহল্লায়, ইউনিয়নে এবং গ্রামবাসীসহ শিক্ষার্থীদের নিয়ে সভা সমাবেশ, মতবিনিময়, ম্যারাথন দৌড়, প্রীতি ফুটবল ম্যাচ, পদযাত্রা, সাইকেল রেস ইত্যাদির মাধ্যমে মাদকের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা এবং জনমত তৈরি করা হয়।
মৌলভীবাজার শহরটি এখানে প্রচুর পরিমানে রিক্সা, ভ্যান, ইজিবাইক, অটোরিক্সার কারণে যানজট লেগে থাকে। ট্রাফিক পুলিশের অপর্যাপ্ততার কারণে এবং পৌরসভার পর্যাপ্ত লোকবলের অভাবে যানজট নিরসন এবং শহর পরিচ্ছন্ন রাখা যখন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছিল তখন শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে আলাপ আলোচনা করা হয়। বর্তমানে শহরের যানজট নিরসনে এবং শহর পরিচ্ছন্ন রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।
জেলা প্রশাসকের স্বেচ্ছাধীন তহবিল হতে জেলার দুস্থ, অসহায়, মানুষকে সাহায্য করার সুযোগ থাকে। এই তহবিল থেকে জেলা প্রশাসকের পক্ষ হতে পরিকল্পিতভাবে হত দরিদ্র মানুষের চাহিদা অনুযায়ী কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন জানান, আমরা জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেয়ার মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে কাজ করছি। স্বচ্ছ ও দুর্ণীতি মুক্ত জনপ্রশাসন কে জনকল্যাণে জনগণের দোরগোড়ায় পৌছে দিতে সকলের সার্বিক সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন তিনি।
RED TIMES LIMITED
116-117, Concord Emporium, Kataban, Dhaka-1205.
Mobile: 017111-66826
Email: redtimesnews@gmail.com
Copyright © 2025 RED TIMES. All rights reserved.