টাইমস নিউজ
ঢাকায় ফেরি করে সুপারি ও খেজুরের গুড় বিক্রি করে ১১ দিনে জমানো এক লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়ে নাটোরের বড়াইগ্রামের বাড়িতে ফিরছিলেন যুবক সোহাগ হোসেন (২৩) ও তার সঙ্গী ওমর আলী (৫২)।
সোমবার রাতে ঢাকার গাবতলী থেকে ওঠা বাসে গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর এলাকায় মাঝপথে চলন্ত পথেই তাদের সর্বস্ব লুটে নিয়েছে একদল ডাকাত। ইউনিক রোড রয়েলসের আমরী ট্রাভেলস নামের (নম্বর ময়নসিংহ-ব-১১-০০৬৯) বাসের অন্য যাত্রীরাও ডাকাতদের হাত থেকে রক্ষা পাননি।
ডাকাতির সময় দুই নারী যাত্রীকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা চলছে। তবে ভুক্তভোগী যাত্রীরা বলছেন, ডাকাতি হওয়া বাসটি নাটোরের বড়াইগ্রাম থানায় পৌঁছানোর পর দুই নারী যাত্রী পুলিশের কাছে শ্লীলতাহানির অভিযোগ করেছেন। তবে বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলছেন, নারী যাত্রীদের নির্যাতন বা ধর্ষণের ঘটনার কথা কেউ তাকে বলেননি।
বাসের যাত্রী সোহাগ হোসেন, ওমর আলী, মজনু আকন্দ (৭৩) এবং তাদের ব্যবসায়িক অংশীদার আবু হানিফ বাস আটকানোর পর থেকে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত বড়াইগ্রাম থানায় অবস্থান করছিলেন। ঘটনাস্থল মির্জাপুর থানা এলাকা হওয়ায় বড়াইগ্রাম থানা পুলিশের পরামর্শে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মামলা করতে ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে দুজন মির্জাপুর থানায় রওনা রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওমর আলী বলেন, ইতোমধ্যে নাটোরের পুলিশ সুপার তাদের বক্তব্য রেকর্ড করে নিয়ে গেছেন। বৃহস্পতিবার রাতে এই রিপোর্ট লেখার সময় মির্জাপুর থানার একটি টিম ঘটনা তদন্তে বড়াইগ্রাম থানায় অবস্থান করছিল।
এ বিষয়ে মির্জাপুর থানার ওসি মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, লোকমুখে শুনেছি ঘটনাটি মির্জাপুরে তাই আমরা তদন্ত শুরু করেছি। বাসযাত্রীরা বলছেন, ৪০ জনের মতো যাত্রী নিয়ে সোমবার রাত ১১টায় ঢাকার গাবতলী থেকে রাজশাহীর উদ্দেশে বাসটি ছাড়ে। রাত ১২টা ৩৫ মিনিটে বাসে ডাকাতি শুরু হয়। তিন ঘণ্টা ধরে ডাকাতি শেষে ঘুরিয়ে একই জায়গায় বাসটি নিয়ে গিয়ে রাত ৩টা ৫২ মিনিটে ডাকাতেরা নেমে যান। তখন যাত্রীরা দেখতে পান, তাদের অবস্থান মির্জাপুর থানা এলাকার একটি পেট্রলপাম্পের পশ্চিম দিকে। সেখানে বাসচালক, তার সহকারী ও সুপারভাইজার গন্তব্যে না যেতে নানা টালবাহানা করতে থাকেন। তবে যাত্রীদের চাপের মুখে তারা বাস ছাড়েন। মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার দিকে বাসটি যাত্রীদের চাপের মুখে বড়াইগ্রামে থানায় ঢোকানো হয়।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সোহাগ হোসেন বলেন, গাবতলী থেকে বাসটি ছাড়ার সময় পেছনের সিটে তিনজন ডাকাত উঠেছিলেন। বাসের লোকজনের সঙ্গে এই তিনজন কথা বলে কিছু দূর এসে আরও পাঁচজনকে বাসে ওঠানো হয়। তারপর ডাকাতদের একজন বাসের স্টিয়ারিংয়ের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। এই ডাকাতেরা একজন যাত্রীকে ছুরিকাঘাত করেন। এতে তার সাদা জামা রক্তে ভিজে যায়। তখন ওই যাত্রী তার টাকাসহ সবকিছু বিনা বাক্যে দিয়ে দেন। আরেকজনের হাতে ছুরি দিয়ে পোজ (আঘাত) দেয়। তার হাতের মাংস কেটে ফাঁক হয়ে যায়। এই ভয়ে যাত্রীরা যার কাছে যা ছিল সব দিয়ে দেন।
প্রত্যেক যাত্রীকে ডাকাতেরা বার বার করে তল্লাশি করেন উল্লেখ করে সোহাগ আলী বলেন, তাকে একজন ডাকাত বাসের সিটের মাঝখানে ফেলে দিয়ে বুকের উপর পা তুলে দিয়ে দাঁড়ায়। এ সময় তার ব্যবসায়িক অংশীদার ওমর আলীর গলায় ছুরি ধরে ২০ হাজার টাকা বের করে নেয়। এ সময় ওমর আলী এক লাখ টাকার বান্ডিলটি নিচে ফেলে দেন। পরের বার তল্লাশি করতে এসে ডাকাতেরা সেই টাকাটাও পেয়ে যায়। কোনো যাত্রীর মোবাইল ডাকাতেরা রেখে যায়নি। শুধু তার ফোনটি নিচে পড়ে যাওয়ার কারণে ডাকাতরা বুঝতে পারেনি। আরেক যাত্রী বড়াইগ্রামের মৌখাড়া গ্রামের মজনু আকন্দের ৪৬ হাজার টাকার সব কেড়ে নিয়েছে ডাকাতেরা। তিনি বলেন, বাসে মেয়েদের ডাকাতেরা একেবারে বেইজ্জত করে ফেলেছে।
ওমর আলী বলেন, দুই নারী যাত্রী তাদের কাছে একাধিকবার বলেছেন যে ডাকাতেরা তাদের শ্লীলতাহানি ঘটিয়েছে। তারা ঘটনাটি বড়াইগ্রাম থানার এসআই শরিফুল ইসলাম কাছেও বলেছেন।
এ বিষয়ে বড়াইগ্রাম থানার এসআই শরিফুল ইসলাম বলেন, দুজন নারী যাত্রী তাদের গায়ে হাত দিয়ে গয়নাপত্র খুলে নেওয়ার কথা বলেছেন। যেভাবে খুলে নেওয়া হয়েছে, তাতে তাদের শ্লীলতাহানি ঘটেছে।
ওই বাসের যাত্রী রাজশাহীর চারঘাটের এক নারী যাত্রী বলেন, ডাকাতেরা বলামাত্র তিনি তার কাছে থাকা সাড়ে ৭ হাজার টাকা, সোনার বালা ও চেইন দিয়ে দিয়েছেন। যারা দিতে দেরি করেছে ডাকাতরা তাদের শ্লীলতাহানি করেছে।
মির্জাপুর থানার ওসি মোশারফ হোসেন বলেন, মঙ্গলবার ভোরে কিছু লোক থানায় এসেছিলেন বলে তিনি জেনেছেন। পরে ঘটনা তদন্তে মির্জাপুর থানার পুলিশ বড়াইগ্রাম থানায় গিয়েছে। বড়াইগ্রাম থেকে মামলা করতে লোকজন মির্জাপুর থানায়ও এসেছে। এদিকে ডাকাতির ঘটনায় আটক বাসের সুপারভাইজার, চালক ও চালকের সহকারী ইতোমধ্যে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।
বুধবার সন্ধ্যায় জামিন পেলেও বিষয়টি বৃহস্পতিবার দুপুরের পর আদালত সূত্রে বিষয়টি জানা যায়। নাটোরের বড়াইগ্রাম আমলী আদালত সূত্রে জানা যায়, বড়াইগ্রাম থানার এসআই শরিফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চালান মূলে ঢাকা-রাজশাহী চলাচলকারী ইউনিক রোড রয়েলস বাসের চালক বাবলু ইসলাম (৩৫), চালকের সহকারী সুমন ইসলাম (৩৫) ও সুপারভাইজার মাহবুল আলমকে (৩৮) বুধবার বিকেলে আদালতে পাঠানো হয়। সন্ধ্যায় তাদের আদালতের সামনে হাজির করলে আদালত শুনানি শেষে জামিনের আদেশ দেন।
আদালত পুলিশের পরিদর্শক মোস্তফা কামাল বলেন, মামলাটি ফৌজদারি কার্যবিধি ৫৪ ধারার হওয়ায় এবং আসামিদের বিরুদ্ধে কোনো ধর্তব্য অপরাধের অভিযোগ সুনির্দিষ্ট না থাকায় আদালত তাদের জামিনের আদেশ দেন।
বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম বলেন, বাসের যাত্রীরা মৌখিকভাবে পুলিশকে ডাকাতি হওয়ার কথা বলেছেন। অনেক যাত্রীই রাস্তায় নেমে গেছেন। দুজন নারী যাত্রী এসেছিলেন। মোবাইল নাম্বার না থাকায় তাদের সঙ্গে আগে যোগাযোগ করা যায়নি। এখন তারা মামলা করতে এসেছেন। মির্জাপুর থানার পুলিশও বড়াইগ্রাম থানায় এসেছে।
RED TIMES LIMITED
116-117, Concord Emporium, Kataban, Dhaka-1205.
Mobile: 017111-66826
Email: redtimesnews@gmail.com
Copyright © 2025 RED TIMES. All rights reserved.