তৈয়বুর রহমান (কালীগঞ্জ) গাজীপুর:
গাজীপুরের কালীগঞ্জ পৌরসভা যেন মশার স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। পৌর শহরের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা ডোবা-নালাগুলো আবর্জনায় ভরে গিয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে, যার ফলে মশা ও মাছির বিস্তার ঘটছে ভয়াবহভাবে। পরিবেশ হয়ে উঠেছে চরমভাবে দূষিত, আর পৌরবাসী পড়েছে চরম দুর্ভোগে। অথচ এসব ডোবা-নালার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে পৌর কর্তৃপক্ষের কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই বলেই অভিযোগ এলাকাবাসীর।
জানা গেছে, ২০১০ সালের ১৫ ডিসেম্বর কালীগঞ্জ পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হলেও গত প্রায় ১৫ বছরে পৌর শহরের ডোবা-নালা পরিষ্কারে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে বছরের পর বছর ধরে পৌর এলাকার নানা স্থানে ময়লা-আবর্জনায় আটকে থাকা পানি পঁচে মারাত্মক দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এসব জায়গা এখন মশার আতুরঘরে পরিণত হয়েছে।
পৌর এলাকার ভাদার্ত্তী, তুমলিয়া, আড়িখোলা, দুর্বাটি, বাঙ্গালহাওলা, দেওয়ালেরটেক, দড়িসোম, মুনশুরপুর, বালীগাঁও, খঞ্জনা, ভাদগাতী, বড়নগর, চৌড়া, ঘোনাপাড়া, মূলগাঁও, উত্তরগাঁও, চরপাড়া, দেওপাড়া ও চৈতারপাড়া এসব এলাকাজুড়ে ডোবা-নালায় জমে থাকা পঁচা পানি ও আবর্জনার কারণে একদিকে যেমন সৃষ্ট হচ্ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি, তেমনি প্রতিদিন রাতে মশার তাÐবে মানুষ ঘুম হারাচ্ছে।
আড়িখোলা এলাকার বাসিন্দা মো. হেলাল উদ্দিন আকন্দ জানান, “ডোবা-নালায় এত ময়লা জমে আছে, অথচ পরিষ্কারে কেউ উদ্যোগ নেয় না। বিশাল মশা জন্ম নিচ্ছে, রাতে ঘুমানোই দায়।”
দড়িসোম গ্রামের বাসিন্দা মুহাম্মদ আল আমিন বলেন, “শুধু ডোবা-নালা নয়, গাজীপুরের কালীগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্রেও ছড়িয়ে পড়েছে মশার উপদ্রব খেয়াঘাট সংলগ্ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভেতরে জমে থাকা বৃষ্টির পানি এখন মশার প্রনন ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। একই দৃশ্য দেখা যায় কালীগঞ্জের প্রধান ডাকঘরেও। সেখানেও সামান্য বৃষ্টিতেই চারপাশে পানি জমে থাকে দিনের পর দিন, আর সেই পানিতেই নির্বিঘেœ বাড়ছে মশার উপদ্রব। এতে করে শহরের স্বাস্থ্য ও জনসুরক্ষার ঝুঁকি বাড়ছে কয়েকগুণ।”
পৌর এলাকার বালীগাঁও গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা বলেন, “পৌর ভবনের আশপাশেই যখন বৃষ্টির পানি জমে মশা জন্ম নিচ্ছে, তখন আমরা সাধারণ মানুষ আর কী করব? পৌরসভাই যদি উদাহরণ না হয়, তাহলে দায় যাবে কোথায়?”
ভাদার্ত্তী গ্রামের শহিদুল সরকার বলেন, “মশা নিধনের ওষুধ ছিটালেও তেমন কাজ হচ্ছে না। ময়লা না সরালে তো মশা জন্মাবেই।”
মূলগাঁওয়ের বাসিন্দা নাইম মিয়ার মতে, “মশার যন্ত্রণায় ঘরে থাকা মুশকিল। ওষুধ ছিটানো হচ্ছে, কিন্তু সেটা প্রয়োজনের তুলনায় কম। সপ্তাহে অন্তত দুই দিন প্রতিটি ওয়ার্ডে স্প্রে দিলে কিছুটা উপকার হতো।”
যদিও কালীগঞ্জ পৌরসভার পক্ষ থেকে ফগার মেশিন দিয়ে মশক নিধনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে, তবে তা মশার প্রকোপ ঠেকাতে যথেষ্ট নয় বলে দাবি স্থানীয়দের।
পৌরসভার এমন অব্যবস্থাপনায় শহরের প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষ এখন দ্রæত কার্যকর পদক্ষেপের আশায় তাকিয়ে রয়েছে। শুধু ফগার মেশিন নয়, টেকসই সমাধান হিসেবে প্রয়োজন নিয়মিত ডোবা-নালা পরিষ্কার এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকীকরণ। অন্যথায় মশা বাহিত রোগের ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
কালীগঞ্জ পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা (পিএনও) শ্যামল কুমার দত্ত বলেন, “মশা নিধনে ইতোমধ্যে ফগার মেশিন দিয়ে ধোঁয়া দেওয়া হচ্ছে। খুব শিগগিরই ডোবা-নালাও পরিষ্কার করা হবে।”
এদিকে কালীগঞ্জ পৌরসভার প্রশাসক এবং ইউএনও তনিমা আফ্রাদ জানিয়েছেন, “পৌর এলাকার পরিত্যক্ত জলাশয় ও ডোবা-নালা পরিদর্শন করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তা পরিষ্কারের কাজ শুরু করা হবে। জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।”
RED TIMES LIMITED
116-117, Concord Emporium, Kataban, Dhaka-1205.
Mobile: 017111-66826
Email: redtimesnews@gmail.com
Copyright © 2025 RED TIMES. All rights reserved.