প্রিন্ট এর তারিখঃ অগাস্ট ২১, ২০২৫, ১:৪৬ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ আগস্ট ২০, ২০২৫, ২:৩২ অপরাহ্ণ

উৎপল বড়ুয়া:
সিলেট বিভাগের ভূমি মালিকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সেবা, জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসের প্রেস, ঢাকায় স্থানান্তরের পায়তারা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে সিলেটজুড়ে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
এর প্রতিবাদে সিলেটের সর্বস্তরের ভূমির মালিকদের ব্যানারে একটি মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (২০ আগস্ট) সকাল ১১ টায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মদনমোহন কলেজের সাবেক অধ্যাপক পীর হাবিবুর রহমান এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, সিলেট মহানগর বিএনপির (ভারপ্রাপ্ত) সভাপতি সাবেক প্যানেল মেয়র জননেতা রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন চৌধুরী। সদর উপজেলা বিএনপি সভাপতি সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আবুল কাসেম, সদর উপজেলা বিএনপি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাজী জাহেদ আহমদ, সদর যুবদলের যুগ্ন আহবায়ক খাদিম নগর ইউপি সদস্য মইন উদ্দিন আহমদ, সদর উপজেলা কৃষক দলের আহবায়ক তমিজুল ইসলাম, মহানগর জিসাসের সদস্য সচিব সাব্বির হোসেন জামিল, জেলা জিসাসের যুগ্ম আহবায়ক নাসির উদ্দিন নাসির সহ বিএনপি অঙ্গ সংগঠনের নেতা কর্মী ও জামায়াত ইসলামী নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও সিলেট নগরীর ভূমির মালিকগণ উপস্থিত ছিলেন।
সভাপতির বক্তব্যে কয়েস লোদী বলেন, সিলেট বিভাগের জরিপের সাথে ঢাকার কর্মকর্তা কেন এত নাখোশ, কেন গোপনে সিলেট বাসীর সাথে প্রতারণা করছেন তারা। আমাদের না জানিয়ে সিলেট থেকে কি কারনে ঢাকায় প্রেস নিয়ে যাবেন। তিনি আর বলেন, আমাদের বাকী মৌজা গুলো সমাপ্তির পর ঢাকায় প্রেস নেয়ার জন্য অনুরোধ জানান, অন্যতায় সিলেট বাসী কে সাথে নিয়ে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে।
তিনি বলেন, সেটেলমেন্ট প্রেস সিলেটের মানুষের জন্য অনেক উপকার হচ্ছে। এখন যদি প্রেস ঢাকায় চলে যায় তা হলে মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়বে। তাই তিনি হুশিয়ারী দেন, যদি প্রেস ঢাকায় স্থানান্তরে আদেশ ৭ দিনের মধ্যে বাতিল না হয় তা হলে জোনাল সেটেলমেন্ট অফিস ঘেরাও সহ লংমার্চের ডাক দিবেন বলে হুশিয়ারী দেন। তিনি জরিপ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এই আদেশ বাতিলের জন্য অনুরোধও জানান। তা না হলে আমরা যারা ফ্যাসিস হাসিনা কে যেভাবে বিদায় করেছি তাদের মত সিলেটবাসী কে নিয়ে লংমার্চ করে আমরা অফিস ঘেরাও করব।
এমদাদ হোসেন চৌধুরী তার বক্তব্য বলেন, সিলেট হল প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকায়, এখানে একজন প্রবাসী মাত্র কয়েকদিন সিলেট থাকেন, এস সময়ের মধ্যে তাদের জাগয়া জমির সংশোধন বা কাগজপত্র সংগ্রহ করতে পারেন অল্প সময়ে। কিন্তু প্রেস যদি সিলেট থেকে ঢাকায় চলে যায় তা হলে মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়বে। তিনি আরও বলেন, আমাদের বিভাগের সব মৌজার কাজ সমাপ্তি পর এখান থেকে প্রেস ঢাকায় নেয়ার আহবান জানান তিনি।
সভাপতির বক্তব্যে পীর হাবিবুর রহমান বলেন, ২০১২ সালে সিলেটে প্রেস স্থাপিত হওয়া আমাদের সিলেটের জরিপ কাজ খুবই দ্রুততার সাথে সমাপ্তির পথে। আর মাত্র ৫০/৬০ টা মৌজার ছাপার কাজ বাকী আছে, সিলেটের কতৃপক্ষ বলছেন কয়েক মাসের মধ্যে বাকী মৌজার ছাপার কাজ সমাপ্ত হবে। কিন্তু কি কারনে প্রেস ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হবে এটাও একটা ষড়যন্ত্রে শামিল?
তিনি আরও বলেন, কি কারনে এবং কার সার্থে সিলেট থেকে প্রেস ঢাকায় নিবেন সেটার ব্যাখ্যা সিলেট বাসী জানতে চায়। ৭ দিনের মধ্যে যদি এই আদেশ বাতিল না করা হয় তা হলে সিলেট বাসী কে সাথে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে, এবং লং মার্চ করে জোনাল সেটেলমেন্ট অফিস ঘেরাও করা হবে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ সালে সিলেটে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের অধীনে এই মিনি প্রেসটি সিলেট জোনাল অফিসে স্থাপন করা হয়েছিল। স্থাপনের পর থেকেই প্রেসটি সুনামের সঙ্গে সিলেটের, ৪ জেলার ভূমি মালিকদের জন্য দ্রুত খতিয়ান ছাপার কাজ করে আসছে। এর ফলে এখানকার প্রবাসীরাও দ্রুত সেবা পাচ্ছিলেন, যা ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে সহায়ক ছিল। এই প্রেসের কারনেই সিলেট জরিপ কাজ দ্রুত সমাপ্তির পথে।
১৯৮৭-৮৮ সিলেট জোনে জরিপ কাজ শুরু হয়। ধীরগতিতে চলা জরিপ কাজ এই সেটেলমেন্ট প্রেসের কারনে দ্রুততার সাথে কাজ সমাপ্তি পথে।
এই প্রেস নিয়ে অতীতেও নানা যড়যন্ত্র চলেছিল, সেটা শান্তিপ্রিয় সিলেট বাসী রুখে দিয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে, সাবেক জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার কাজী মাহবুব উর রহমান অনৈতিক সুবিধা না পেয়ে একটি লিখিত পত্রে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ভুল বুঝিয়ে প্রেসটি ঢাকায় স্থানান্তরের প্রস্তাব দেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। তিনি না-কি সিলেটে প্রেসের প্রয়োজন নেই এমন মন্তব্য করে ঢাকায় প্রতিবেদন পাঠান! তার এমন হঠকারী সিদ্ধান্তে সিলেট বাসী ক্ষুব্ধ।
যদিও তাকে তার নানাবিধ কর্মকাণ্ডের কারনে ইতোমধ্যে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে, তবুও তার এই প্রস্তাবের কারণে সিলেটবাসী এখন চরম উদ্বেগে রয়েছেন।
যদি এই প্রেসটি সিলেট থেকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়, তবে ভূমি মালিকদের ভোগান্তি বহুগুণে বাড়বে। বর্তমানে সিলেটে খতিয়ান সংশোধনের কাজ দ্রুত সম্পন্ন হয়। প্রেস সিলেটে থাকায় ভূমি মালিকরা সংশোধিত খতিয়ান কয়েকদিনের মধ্যেই হাতে পেয়ে যান। কিন্তু প্রেসটি ঢাকায় চলে গেলে এই সেবা পেতে মাসের পর মাস লেগে যাবে।
সিলেট সদর উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ কিছু মৌজা, যেমন সিলেট মিউনিসিপ্যালিটি মৌজা, যেখানে হযরত শাহজালাল (র.)-এর মাজার শরিফ ও সরকারি গুরুত্বপূর্ণ অফিস আদালত অবস্থিত, সেগুলোর খতিয়ান ছাপার কাজ এখনো বাকি আছে। একটি রিট মামলার কারণে প্রায় ১৫ হাজার ভূমি মালিকের সম্পত্তি আটকে আছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রেসটি স্থানান্তরিত হলে এই কাজগুলো আরও বিলম্বিত হবে।
ভূমি মালিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা কোনোভাবেই এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে রাজি নন। ফয়েজ আহমেদ নামে একজন ভূমি মালিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমাদের ছাপা খতিয়ান না পাওয়া পর্যন্ত সিলেট থেকে প্রেস ঢাকা নিতে দেওয়া হবে না।” তিনি হুঁশিয়ারি দেন, যদি এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তবে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে। মিউনিসিপালিটি মৌজার বাসিন্দা জনাব কয়েস আহমদে ক্ষোভের সাথে তিনি বলেন, কোন মতে আমরা সিলেট থেকে এই প্রেস ঢাকায় স্থানান্তরে হতে দিব না। প্রয়োজনে বৃহত্তর আন্দোলনে যাব।
সিলেট জজ কোর্টের অতিরিক্ত জিপি অ্যাডভোকেট তাজ রীহান জামানও এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেন, এমন হঠকারিতার কারণে ভূমি মালিকরা সেবা থেকে বঞ্চিত হবেন।
সিলেট থেকে প্রেস ঢাকায় নেয়ার বিষয়টি সিলেটের জনপ্রিয় সাবেক মেয়র জনাব আরিফুল হক চৌধুরী এবং বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব জনাব খন্দকার আবদুল মুক্তাদির উনাদের কে ও বিষয়টি অবগত করা হয়েছে বলে জানাগেছে।