Sharing is caring!
মোঃ জাফর ইকবাল:
মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেল থেকে বড়লেখায় বদলী প্রাপ্ত সিএ অনুপ চন্দ্র দাস অবশেষে চাকুরী থেকে সরকারি তহবিলের চেক জালিয়াতিতে কোটি টাকার আত্মসাৎ অভিযোগে বরখাস্ত করা হয়েছে। তার দীর্ঘ দিনের চেক জালিয়াতি ও প্রতারণা প্রশাসনের প্রাথমিক তদন্তে উন্মোচিত হয়।
রাজনগর ও বড়লেখা উপজেলায় সরকারি তহবিল থেকে চেক জালিয়াতির মাধ্যমে পোনে দুই কোটি টাকার বেশি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা পরিষদের সাঁট–মুদ্রাক্ষরিক–কাম–কম্পিউটার অপারেটর (সিএ) অনুপ চন্দ্র দাসের বিরুদ্ধে। জেলা প্রশাসনের তদন্তে দীর্ঘদিনের এই অনিয়ম ও প্রতারণার প্রমাণ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মোসা. শাহিনা আক্তারের নেতৃত্বে পরিচালিত তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৪ সালের জুন থেকে ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত সময়ে রাজনগর উপজেলায় বিভিন্ন তহবিল থেকে মোট ১ কোটি ৫০ লাখ ৫১ হাজার ৪৫৫ টাকা আত্মসাৎ করেন অনুপ চন্দ্র দাস। বড়লেখা উপজেলায় আগস্ট মাসে জয়েন করে মাত্র দুই মাসে আরও ২২ লাখ টাকা তুলে নেওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজনগরের হাট–বাজার তহবিল থেকে ৮০ লাখ ৫১ হাজার ৪৫৫ টাকা, রাজস্ব তহবিল থেকে ৪০ লাখ এবং উন্নয়ন তহবিল থেকে ৩১ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
তদন্ত–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চেক প্রস্তুতের সময় অনুপ দাস কৌশলে টাকার অংক লেখার সময় সামান্য ফাঁকা রেখে সংখ্যা লিখতেন। পরবর্তীতে ইউএনও স্বাক্ষর করার পর তিনি নিজের মতো করে সামনে একটি সংখ্যা বসিয়ে চেকের পরিমাণ কয়েক গুণ বাড়িয়ে নিতেন। সাবেক ইউএনও সুপ্রভাত চাকমা, ফারজানা আক্তার মিতা ও আফরোজা হাবিব শাপলার দায়িত্বকালেও একই পদ্ধতিতে জালিয়াতি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে।
গত ২৮ অক্টোবর সদ্য বিদায়ী জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন রাজনগর উপজেলা পরিষদ পরিদর্শনে গিয়ে ক্যাশবই ও ব্যাংক স্টেটমেন্টে অমিল দেখতে পান। পরে হিসাব মিলিয়ে দেখতেই জালিয়াতির তথ্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এর পর জেলা প্রশাসন ও দুদক যৌথ তদন্ত শুরু করে।
ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর অনুপ আত্মপক্ষ সমর্থনে বিভিন্ন মাধ্যমে তদবির শুরু করেন। সূত্র জানায়, তার স্ত্রী ঝুমি রানী সরকার রাজনগর উপজেলা পরিষদের অ্যাকাউন্টে ৮০ লাখ টাকার বেশি জমা দিয়েছেন। এর পাশাপাশি বড়লেখা অংশের ২২ লাখ টাকাও তার স্ত্রী জমা দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন বড়লেখা ইউএনও গালিব হোসেন।
বড়লেখা ইউএনও গালিব হোসেন বলেন, “ঘটনা জানার পর অনুপ দাসকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় আইনি প্রক্রিয়া চলছে।”
রাজনগর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত ইউএনও ফাতেমা তুজ জোহরা বলেন, “ঘটনার সব তথ্য জেলা প্রশাসকের দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। জেলা প্রশাসক বিষয়টি অবগত আছেন এবং তদন্তও চলছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোসা. শাহিনা আক্তার বলেন, “এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করার এখতিয়ার জেলা প্রশাসক বা ইউএনওর।”
তদন্ত–সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, অনুপ দাস তার কক্ষ থেকে গুরুত্বপূর্ণ ফাইল, প্রকল্প–সংশ্লিষ্ট নথি ও রেকর্ড সরিয়ে ফেলেছেন বা ধ্বংস করেছেন বলে ধারণা পাওয়া গেছে। উপজেলা চেয়ারম্যানের কক্ষের দুটি এসি নিজেদের ব্যবহারের জন্য নিয়ে যাওয়ার অভিযোগও তদন্তে উঠে এসেছে। অফিসের কয়েকজন কর্মচারীর সহায়তায় তিনি নিয়মিত এসব কর্মকাণ্ড চালাতেন। তাদের মধ্যে একজনের নাম মো. বাদশা মিয়া উঠে এসেছে বলে সূত্র জানিয়েছে। তবে এ বিষয়ে প্রশাসন এখনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য দেয়নি।
জেলা প্রশাসক তৌহিদুজ্জামান পাভেল বলেন, “অনুপ চন্দ্র দাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্তে অন্য কারও সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিললে তার বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”