Sharing is caring!
মোঃ জাফর ইকবাল:
মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃ বাদশা মিয়া সরকারী তহবিলের চেক জালিয়াতির ফাইল গায়েব করার অভিযোগ উঠার পর থেকে অফিস করছেননা। তার অফিস রুম পাওয়া যাচ্ছে তালাবদ্ধ। ধারনা করা হচ্ছে চেক জালিয়াতি সাথে তার সংশ্লিষ্টতা মুছে ফেলতে ফাইল গায়েব করে গা ডাকা দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ, আর্থিক অনিয়ম, টেন্ডার–ইজারা প্রক্রিয়ায় অনিয়ম, মাঠ পর্যায়ের দাপ্তরিক কাজে সুবিধা আদায় এবং দপ্তরের কর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের একাধিক অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী, স্থানীয় বাসিন্দা ও দপ্তরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মনসুরনগর ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশের সভাপতি সামছুদ্দিন অভিযোগ করেন, ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশের বকেয়া বেতন ছাড় করতে বাদশা মিয়া তার কাছে ৫ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। তিনি বলেন, ঘুষ না দিলে বেতন পাওয়া যাবে না এমন কথা শুনে বাধ্য হয়ে টাকা দিতে হয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গ্রাম পুলিশের আরও কয়েকজন সদস্য একই অভিযোগ তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার জলমহাল ইজারা, বিসিবির ডিলারশিপ এবং বিভিন্ন প্রকল্পে সুবিধা দেওয়ার আশ্বাসে বাদশা মিয়া বহু মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন।
একাধিক ভুক্তভোগীর দাবি কিছু ক্ষেত্রে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে।
দপ্তরের তৃণমূল পর্যায়ের কয়েকজন সরকারি কর্মীও অভিযোগ করেছেন টিউবওয়েল স্থাপন, অনুমোদন এবং অন্যান্য মাঠ পর্যায়ের ফাইল এগিয়ে নিতে বাদশা মিয়া ৪০–৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত দাবি করতেন।
একজন কর্মী বলেন, “ফাইল এগোতে হলে টাকা দিতেই হবে, এমন কথাই জানানো হয়েছিল।
বাজার ইজারা ও টেন্ডার প্রক্রিয়ায় কৃত্রিমভাবে কম মূল্য দেখিয়ে বাকি অর্থ অন্যত্র সরানো হয় এমন অভিযোগও রয়েছ।
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের প্রশ্ন সরকারি তহবিলে কম টাকা গেলে অতিরিক্ত অর্থ যায় কোথায়?
দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা অভিযোগ করেছেন, বাদশা মিয়া দীর্ঘদিন ধরে সহকর্মীদের সঙ্গে রূঢ় ভাষায় কথা বলেন এবং প্রশ্ন তুললে ধমক ও চাপ সৃষ্টি করেন। তাদের ভাষায় স্বাভাবিক প্রশাসনিক পরিবেশ ব্যাহত হয়। ব্যক্তিগত সুবিধা নেওয়াই তার প্রধান লক্ষ্য।
একটি সূত্র জানায়, উপজেলা চেয়ারম্যান কক্ষের দুটি এয়ারকন্ডিশনার একটি অনুপ চন্দ্র দাস এবং আরেকটি বাদশা মিয়া ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য নিয়ে গেছেন।
এছাড়া অনুপ চন্দ্র দাসের সহায়তায় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি নথিপত্র বাইরে সরিয়ে নেওয়া এবং কিছু নথি ধ্বংসের অভিযোগও রয়েছে।
স্থানীয়দের দাবি, সম্প্রতি বাদশা মিয়া রাজনগর এলাকায় দুই থেকে তিনটি প্লট কিনেছেন।
তাদের সন্দেহ এগুলো অনিয়ম বা ঘুষের টাকায় কেনা হতে পারে। যদিও এ বিষয়ে এখনো সরকারি পর্যায়ে কোনো নিশ্চিত তথ্য মেলেনি।
দপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, অভিযোগগুলো ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে বাদশা মিয়া নিয়মিত অফিস করছেন না। তারা বলেন,
দিনের বেশিরভাগ সময় তিনি অফিসের বাইরে থাকেন। এলেও খুব অল্পক্ষণ থেকে চলে যান।
বাদশা মিয়ার মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোন বন্ধ থাকায় তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
রাজনগর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমা তুজ জোহরা বলেন, এসব অভিযোগ সম্পর্কে বিস্তারিত আমার জানা নেই। তদন্ত করে সত্যতা পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয়দের প্রশ্ন এত অভিযোগ থাকার পরও বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আসে না কেন?
তাদের দাবি দ্রুত তদন্ত, জবাবদিহিতা এবং প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হোক।