প্রিন্ট এর তারিখঃ ডিসেম্বর ২৮, ২০২৫, ১০:১৬ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ ডিসেম্বর ২৮, ২০২৫, ৯:৫১ অপরাহ্ণ
টাঙ্গাইলের নাগরপুরে খেজুরের রস আহরণে ব্যস্ত গাছিরা

এম.এ.মান্নান,নাগরপুর(টাঙ্গাইল)সংবাদদাতা:
দেশের সর্বস্তরে মৃদু কুয়াশা জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। আর মাত্র কিছুদিনের মধ্যে শীত শুরু হবে পুরোদমে। এরই মধ্যে ভোরে লতা-পাতা আর ঘাসের উপর ঝরে পড়ছে শিশির বিন্দু। শিশির ভেঙে গ্রামের চাষিরা ছুটে যাচ্ছে ফসলের ক্ষেতে কেউ বা আবার বপন করছে হলুদের অপরুপ সৌন্দর্যের সরিষা। এ মৌসুমে শীত শুরুর সাথে সাথে খেজুর গাছ প্রস্তুত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন খেজুরের রস সংগ্রহকারী গাছিরাও।
প্রকৃতির ছোঁয়ায় সারা দেশের ন্যায় এবার একটু আগেই শীতের দেখা মিলছে টাঙ্গাইলের নাগরপুরে। দিনে সূর্যের খরতাপ আর রাতে কুয়াশার সঙ্গে বইছে হিমেল হাওয়া। ভোর থেকেই ব্যস্ত গাছিরা দা দিয়ে খেজুর গাছ কাটছে। ক’দিন পরেই গাছ থেকে গাছিদের প্রক্রিয়াজাত করা খেজুরের রস দিয়ে তৈরি করা হবে গুঁড় ও পাটালি। শীতের সকালে গ্রামের গৃহস্থ বাড়িতে খেজুরের রস দিয়ে বানানো হবে মুখরোচক হরেক রকম পিঠা, পায়েসসহ নানা প্রকার সুস্বাদু ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি খাবার। কেউবা আবার হাক ডাক দিয়ে বিক্রি করবেন খেজুরের ঠান্ডা রস।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার ঘিওরকোল, সহবতপুর, মামুদনগর, কলমাইদ, কাউয়াখোলা, ধুকুড়িয়া, শুনশীসহ আশপাশের গ্রামের কাঁচা পাকা মেঠো রাস্তার পাশে সারি সারি লাগানো রাস্তার দু’ধারে খেজুর গাছ কাটতে ব্যস্ত গাছিরা। এসময় গাছিরা বিশেষ কায়দায় কোমরে রশি বেঁধে খেজুর গাছের উপরে উঠে। গাছের উপরের অংশের ছাল বের করার এক সপ্তাহ পরেই আবার হালকা কেটে তাতে বাঁশের নল লাগানো হয়। পরে সেখান থেকে রস সংগ্রহ করা হয়। কয়েকদিনের মধ্যেই পুরোদমে রস সংগ্রহ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন আগত গাছিরা।
খেজুর রস সংগ্রহকারী গাছি মো. শরিফুল ইসলাম (৪০) বলেন, খেজুরের রস সংগ্রহে বাপ-দাদার ঐতিহ্যবাহী পেশায় প্রায় ১৫ বছর ধরে নাগরপুর এ কাজে নিয়োজিত আছি। আমি রাজশাহীর বাঘা থানা থেকে প্রতি বছর এ উপজেলায় শীত মৌসুমে কাজ করছি। স্থানীয়ভাবে গাছি না থাকায় এলাকাবাসীর কোন আপত্তি নেই। খেজুরের রস দিয়ে আগাম গুঁড় ও পাটালি বানাতে পারলে লাভ বেশি হয়। সেই আশাতেই চলতি বছরও গুঁড় তৈরির দিকে ঝুঁকছেন গাছিরা।
তিনি আরও বলেন, ২০-২৫ দিন হয়েছে কাজ শুরু করেছি। গাছের ময়লা ও অপ্রয়োজনীয় ডালপালা ছেঁটে ফেলা হয়েছে। ধারালো দা দিয়ে খেজুর গাছের সোনালি অংশ বের করে নোল স্থাপনের কাজও শেষ। রস সংগ্রহের জন্য গাছে লাগানো হয়েছে মাটির পাতিল। শুরু হয়েছে সুস্বাদু খেজুর রস সংগ্রহের কাজ। তা দিয়ে তৈরি হচ্ছে গুঁড় ও পাটালি।
গাছিরা জানান, গাছ একবার ছাঁটলে তিন-চার দিন রস সংগ্রহ করা যায় এবং পরবর্তীতে তিনদিন শুকাতে হয়। এভাবে কাটলে গাছের রস সুমিষ্ট হয়। রস সাধারণত কার্তিক থেকে ফাল্গুন মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত সংগ্রহ করা যায়। এ রস থেকে তিনি গুঁড় ও পাটালি তৈরি করে উপজেলায় চাহিদামত বিক্রি করেন। এমনকি দূর-দূরান্ত থেকেও পরিবারের জন্য এখান থেকে খাটি গুঁড় সংগ্রহ করে নিয়ে যায় ক্রেতারা।
তারা আরও বলেন, ভোরে গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে তা জ্বাল দিয়ে গুঁড় তৈরি করা হয়। গাছভেদে প্রতি গাছ থেকে দুই থেকে পাঁচ কেজি রস হয়। প্রতি কেজি রস ১২০/১৫০ টাকা আর গুঁড় বিক্রি হয় ৬০০ টাকা দরে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম রাশেদুল হাসান জানান, খেজুরের রস এবং গুঁড় সুস্বাদু ও পুষ্টিকর একটি ঐহিত্যবাহী সুমিষ্ট খাবার। দিন দিন খেজুর গাছের সংখ্যা কমছে, ফলে গাছিও তেমন নেই। উত্তরাঞ্চল থেকে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও খেজুর রস সংগ্রহ করার জন্য গাছিরা এসেছে এবং রস সংগ্রহের প্রস্তুতিও শেষ। উপজেলায় প্রায় এক হাজার খেজুর গাছ রয়েছে। কৃষকরা আগ্রহী হলে খেজুর গাছ পরিচর্যায় প্রশিক্ষণ এমনকি উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে তাদের সার্বিক সহযোগিতা করা হবে বলেও তিনি জানান।
RED TIMES LIMITED
116-117, Concord Emporium, Kataban, Dhaka-1205.
Mobile: 017111-66826
Email: redtimesnews@gmail.com
Copyright © 2025 RED TIMES. All rights reserved.