পাবলিক ডিপ্লোমেসি

প্রকাশিত: ৫:৩১ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২০, ২০২৩

পাবলিক ডিপ্লোমেসি

: অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)

 

 

আন্তর্জাতিক বাঙালি সম্মেলন বাংলা ওয়ার্ল্ডওয়াইড

 

 

নয়া দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শহরে প্রবেশ করার পথেই পরে চানাক্যপুরীসহ কিছু অভিজাত এলাকা। বিশাল চওড়া রাস্তাঘাট, গ্রিন বেল্ট, সুরম্য সব দুতাবাস ভবন, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের সরকারী ভবন আর ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাদের বাসভবনের মন মাতানো সমারোহের ভিড়েও আলাদা করে দৃষ্টি আকর্ষণ করে ভারতের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় থিংক ট্যাংকের কার্যালয়টি।

বিশাল এলাকা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত এই থিংক ট্যাংকটির প্রধান ভারতের উপরাষ্ট্রপতি স্বয়ং। তবে এর চেয়ে যা গুরুত্বপূর্ণ তা হলো, এই থিংক ট্যাংটির বয়স স্বাধীন ভারতের বয়সের চেয়েও বেশি। ভারত স্বাধীন হওয়ার ঢের আগের। ভারতের কংগ্রেস নেতৃত্ব ভারত স্বাধীন হওয়ার আগেই বুঝেছিলেন যে, দেশটি একদিন দারিদ্র্যের তকমা ঝেড়ে ফেলে আবারও বিশ^কে নেতৃত্ব দেবে। আর সেই ভারতের বিশ^ব্যাপী যে যোগাযোগ, সেই জায়গাটায় সরকারী ডিপ্লোমেসির পাশাপাশি পাবলিক ডিপ্লোমেসিও খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। যে কারণে দূরদর্শী সেই নেতৃত্ব থিংক ট্যাংকটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বলা বাহুল্য, তাদের সেই প্রজ্ঞা আজ শতভাগ সঠিক বলে প্রমাণিত হয়েছে।

সম্প্রতি কোলকাতায় বাংলা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড আয়োজিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক বাঙালী সম্মেলনে যোগ দিয়ে সদ্যই দেশে ফিরেছি। বিশে^র শতাধিক মেট্রোপলিসে বসবাসরত বিশে^র নানা দেশের নানা রঙের পাসপোর্টধারী খাস বাংলাভাষী বাঙালিদের মধ্যে নেটওয়ার্কিং আর বাঙালিদের ভেতর ‘প্রত্যেকে আমরা প্রত্যেকের তরে’ টাইপ সহযোগিতার মেলবন্ধন তৈরি করাই এই বাংলা ওয়ার্ল্ড ওয়াইডের প্রধান লক্ষ্য। বলা বাহুল্য, বাঙালিদের প্রধান দুটি বাসভূমি, বাংলাদেশ আর ভারত বাংলা ওয়ার্ল্ড ওয়াইডের এজেন্ডার শীর্ষে রয়েছে।

একথা অস্বীকার করার জো নেই যে, বাংলাদেশ এবং ভারতের সরকার দুটিও এ বিষয়ে অত্যন্ত সচেতন। বাংলাদেশের মতো ছোট একটি দেশে যেমন ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ভারতের দূতাবাসের পাশাপাশি একাধিক উপ ও সহকারী হাইকমিশন, তেমনি ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনের যত শাখা-প্রশাখা রয়েছে, জানা মতে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দ্বিতীয় আর কোনো দেশে এতটা পেখম মেলেনি। পশ্চিমবঙ্গের কোলকাতা আর ত্রিপুরার আগরতলায় রয়েছে আমাদের হাইকমিশনের এমনি দুটি শাখা।

তারপরও এ কথা কেউ অস্বীকার করবেন না যে, দু’দেশের বাঙালিদের মধ্যে আরও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আর সহযোগিতা গড়ে তোলা, পাশাপাশি তাদের মধ্যকার নানা সমস্যার সমাধান আর মিথস্ক্রিয়াগুলো যথাযথভাবে সামাল দেওয়ার জন্য দু’দেশের সরকারের দক্ষতম ডিপ্লোমেটদের এই উপস্থিতিও যথেষ্ট নয়। আর এই জায়গাটাতেই দারুণ সফল পাবলিক ডিম্লোমেসি যদি তা ঠিকঠাক মতো কাজে লাগানো যায়।
বাংলা ওয়ার্ল্ড ওয়াইডের এই দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক বাঙালি সম্মেলনের কথাই ধরা যাক। সম্মেলনে বীর মুক্তিযোদ্ধা ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলামের মুখে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের গল্প কিংবা বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর কাছে একাত্তরের যুদ্ধগাথা পশ্চিমবঙ্গের আর বিশে^র নানা প্রান্তের বাঙালিরা যেভাবে মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনছিলেন, দেখে মনে হচ্ছিল তারা বোধহয় তাদের নিজেদের সংবিধান রচনার অজানা তথ্যগুলো জানছেন।

আর শিহরিত হচ্ছেন তাদের নিজেদের স্বাধীনতা সংগ্রামে গেরিলাদের বীরত্বের কথা জানতে পেরে। আর যখন আইন বিষয়ক গোলটেবিলে আমাদের সুপ্রিমকোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতিরা বাংলাদেশের সংবিধান আর আইনের ব্যাখ্যাগুলো তুলে ধরছিলেন, তখন তা মন দিয়ে শুনছিলেন পশ্চিমবঙ্গের হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি থেকে শুরু করে সেখানকার শীর্ষ আইনজীবীরা।

বাংলদেশে ব্রিটিশ জামানার সেকেলে আইনগুলো ঝেড়েমুছে এত যে আজকের উপযোগী করে তোলা হয়েছে, এখানে যে এতটাই সুরক্ষিত নারী কিংবা ধর্মীয় সংখ্যালঘুর সাংবিধানিক অধিকারগুলো, সেসব অজানা তথ্যে সমৃদ্ধতর যখন পশ্চিমবঙ্গের আইনজগতের আইকনরা, তখন নিশ্চিত থাকতে পারেন এক লক্ষ পশ্চিমবঙ্গবাসীর সামনে বক্তৃতা করে কিংবা দু’দেশের দক্ষতম ডিপ্লোমেটদের নিয়মিত যোগাযোগেও এই অর্জনটুকু ঘরে তোলা সম্ভব ছিল না।

একইভাবে আমি যখন ফ্যাটি লিভার নিয়ে কথা বলে মঞ্চ থেকে নামছি তখন আমাকে ঘিরে ধরে পশ্চিবঙ্গের যে উৎসুক সুশীলদের ভিড়, তারা যতটা না আরও বেশি জানতে চায় লিভারের চর্বি নিয়ে, তারচেয়েও তাদের ঢের বেশি আগ্রহ বাংলাদেশের রোগীরা কেন সেদেশের ডাক্তার ফেলে তাদের ডাক্তারখানাগুলোয় ভিড় বাড়ায়।
আবার এর উল্টোটাও সত্যি। রিসার্চের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা আর জাপানের একটি পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ে খ-কালীন অধ্যাপনার সুযোগে পৃথিবীর অনেক আধুনিক ডায়াগনোস্টিক ল্যাবরেটরি আর রিসার্চ ফ্যাসিলিটি ঘুরে দেখার অভিজ্ঞতা আমার ঝুলিতে জমা আছে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়েই হলফ করে বলতে পারি যে, এই কনফারেন্সে এসে যদি আমার সঙ্গে সোমনাথদার পরিচয় না ঘটত, আর তার আমন্ত্রণে যদি তার সুরক্ষা ডায়াগনোস্টিক ল্যাব ভেতরে-বাইরে ঘুরে দেখার সুযোগটুকু না পেতাম, তাহলে আমার এ বিষয়ে জ্ঞান স্রেফ অর্ধেক থেকে যেত।

সুরম্য আধুনিক ভবনে সোমনাথদার সুরক্ষার বিশাল আয়োজন। একটা মেশিন আছে যার দৈর্ঘ্য ৩২ মিটার। রোগীর রক্তের স্যাম্পল বোঝাই, বারকোডেড টেস্ট টিউবগুলো সেই মেশিনের একপ্রান্তে ঢেলে দেওয়া হচ্ছে, আর এ,আই আর রোবটের জাদুকরি ছোঁয়ায় অন্যপ্রান্তে বেরিয়ে আসছে হেমাটোলজি, ইমিউনোলজি, বায়োকেমিস্ট্রি ইত্যাকার যত রিপোর্ট। লিখলে শুধু এই সম্মেলনটি নিয়েই ভরা যাবে পাতার পর পাতা। শুধু এটুকু বলতে পারি, এই সম্মেলনে এপারের আর ওপারের সঙ্গে সাত সমুদ্দুর তের নদী পারের যে সমস্ত বিশিষ্ট বাঙালি যোগ দিয়েছিলেন, তাদের প্রত্যেকেই এমনি সব দারুণ অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হয়েই যার যার ঘরে ফিরেছেন। এটাই পাবলিক ডিপ্লোমেসির শক্তি।
আমরা লিভার বিষেশজ্ঞরাও এমনি ধরনের ‘লিভার ডিপ্লোমেসির’ সঙ্গে যুক্ত আছি। আমরা গত চার বছর ধরে ‘পদ্মা গঙ্গা গোমতী লিভার সম্মেলন’ নামে একটি সম্মেলনের আয়োজন করে আসছি। পদ্মা-গঙ্গা বাংলাদেশ আর পশ্চিমবঙ্গের ঐকতান আর গোমতীতে বহমান বাংলাদেশ আর ত্রিপুরার বাঙালির বাঙালিয়ানা। আমরা তেমনটা বিশ্বাস করি বলেই বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ আর ত্রিপুরার বাঙালি লিভার বিশেষজ্ঞদের এই সম্মেলনটিকে আমরা এ নামে ডেকে থাকি। হালে আমরা শুরু করেছি আরেকটি নতুন লিভার সম্মেলন- ‘বালিকা’ অর্থাৎ বাংলা লিভার ককাস।

এর সভ্য বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ আর ত্রিপুরার সীমানা পেরিয়ে বিশ্বের তাবৎ দেশের, তাবৎ পাসপোর্টধারী, তাবৎ বাঙালি লিভার বিশেষজ্ঞ। বাঙালির পাসপোর্ট আজ কাঁটাতারের বেড়ার জালে কারও সবুজ তো, কারও নীল আর কারও বা অন্য কোনো রঙের, কিন্তু তাতে বাঙালির লিভার রোগের থোরাই যায় আসে। ভেতো বাঙালির লিভারের চর্বি জমে ঢাকায়, কোলকাতায় আর ওয়াশিংটন কিংবা লন্ডনে। আবার বাঙালি লিভার বিশেষজ্ঞরা, তা তার পাসপোর্টটা যে রংয়েরই হোক না কেন, তারা যখন এক সঙ্গে হন, তখন হোক চিকিৎসা, হোক গবেষণা কিংবা নিখাদ আড্ডা, তার আমেজটাই থাকে অন্যরকম।

সেখানে যে আন্তরিকতা আর প্রাণের অনুরণন, সে আর অন্য কোথায়? পদ্মা গঙ্গা গোমতী লিভার সম্মেলনে আর বালিকায় যেসব ভিনদেশী বাঙালি লিভার বিশেষজ্ঞ ঢাকায় পা দিয়েছেন, তারা প্রত্যেকেই শ্রদ্ধা জানিয়ে এসেছেন ৩২-এ বঙ্গবন্ধুকে। কাউকেই বলতে হয়নি। এটি ছিল তাদের প্রত্যেকের ঢাকায় কার্যতালিকার একেবারে শীর্ষে। আমাদের জাতির পিতার প্রতি তারা যেভাবে শ্রদ্ধায় অবনত হয়েছেন, তার চাক্ষুষ স্বাক্ষী আমি আর তার সাক্ষ্য লিপিবদ্ধ আছে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের ভিজিটর বুকেও।

বঙ্গবন্ধু শুধু হাজার বছরেরই নন, তিনি যে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী, সেই বোধটুকু বারবার জাগ্রত হয়েছে, যতবারই এই ভিনদেশী বাঙালি লিভার কলিগদের সঙ্গে নিয়ে ৩২-এ গিয়েছি। বালিকার আয়োজনটা ছিল একেবারেই পদ্মার ধারে। কাচের জানালার পেছনে পদ্মা সেতু আর সামনে বাঙালি লিভার বিশেষজ্ঞের বাংলায় লেকচার তার বাঙালি সহকর্মীদের উদ্দেশেÑ এ এক এমন অনুভূতি যা ভাষায় ফুটিয়ে তোলার ভাষা আমার ভাণ্ডারে অনুপস্থিত। শুধু মনে হচ্ছিল এ তো বাঙালির একের পর এক বাংলায় লিভার চর্চা নয়, এটা বাঙালির লাগাতার বিজয় উদ্যাপন।

কদিন আগে এদেশ থেকে ঘুরে গেলেন পশ্চিমবঙ্গের ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ জন শীর্ষ সাংবাদিক। ওদেশের জাতীয় এবং রিজিওনাল প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক আর সোশ্যাল মিডিয়ার দিকপাল একেকজন। তাদের কয়েকজনই আমার বন্ধু কিংবা দাদা স্থানীয়। ঢাকায় এসে তারা প্রচ- ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। গিয়েছেন চট্টগ্রাম আর কক্সবাজারেও। আর তাদের ঢাকায় অবস্থানের প্রথম দিকটায় আমি আবার ছিলাম কোলকাতায়। কাজেই এ যাত্রায় দেখা হওয়ার আশা যখন প্রায় ছেড়েই বসেছি, তখন সেলফোনে ‘দাদা, চলে আসুন’ আমন্ত্রণটা পেয়ে আর দেরি করিনি।

নাকেমুখে চেম্বার শেষ করে দে ছুট। আর আড্ডা শেষে যখন ঘরে ফিরছি, মহল্লায় মহল্লায় মুসল্লিরা তখন ফজরের নামাজের উদ্দেশ্যে মসজিদমুখী। কখনো রাজনীতি তো কখনো তিস্তা, কখনো স্রেফ হাল্কা রসিকতা তো কখনো রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ আর কোভিডের সর্বশেষ, কোন্ ফাঁকে যে রাতটা কাবার, টেরও পেলাম না। তবে মনটা ভরে গেল আনন্দবাজারে অনা মিত্রদার ‘আরও স্মার্ট হতে চায় বদলে যাওয়া বাংলাদেশ’ লেখাটা পড়ে। আজকের বাংলাদেশ আর বাঙালির শেখ হাসিনাকে কি দারুণ দক্ষতায়ই না ফুটিয়ে তুলেছেন অভিজ্ঞ এই কলমযোদ্ধা তার লেখনীর জাদুকরীতে। জয়তু পাবলিক ডিপ্লোমেসি!
পেশার পাশাপাশি আমি যে সব সিভিল সোসাইটি মুভমেন্টে সময় ব্যয় করি, তার অন্যতম একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পর যদি আর কারও অবদানের কথা শ্রদ্ধায় স্মরণে আনতে হয়, তবে সেটা এই সংগঠনটির। শহীদ জননী জাহানারা ইমাম থেকে শুরু করে আজকের শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, শাহরিয়ার কবির, কাজী মুকুলের মতো অনেক দেশপ্রেমিকের রক্ত-ঘাম-ত্যাগের বিনিময়ে নির্মূল কমিটির আজকের এই অর্জন।

তবে পাবলিক ডিপ্লোমেসিতে নির্মূল কমিটির যে কি অসাধারণ অবদান, তা বোধ করি অনেকেরই অজানা। এই কদিন আগেও ৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবসে ব্রাসেলসে ইউরোপের শতাধিক হিউম্যান রাইটস একটিভিস্ট আর অনেক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের উদ্যোগে একাত্তরের বাংলাদেশে আর আজকে মিয়ানমারের মানবতাবিরাধী অপরাধের শাস্তি আর বাংলাদেশে একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবিতে যে শীত কাঁপানো মানববন্ধন, তা নির্মূল কমিটির সফল পাবলিক ডিপ্লোমেসির আরেকটি উদাহরণ মাত্র।

মনে রাখতে হবে, বিএনপির মতো কোটি কোটি টাকা খরচ করে একটি বিবৃতি বা পদক কেনার মতো কোনো সহজ বিষয় এটি নয়। আমি নিজে ইংল্যান্ড আর সুইজারল্যান্ডে নিজের গাঁটের টাকা খরচ করে নির্মূল কমিটির প্রতিনিধিত্ব করতে গিয়ে দেখেছি-শিখেছি পাবলিক ডিপ্লোমেসি কিভাবে করতে হয় আর তার সক্ষমতাও কত বেশি। এ কথা জেনে হয়ত বেশিরভাগ পাঠকই অবাক হবেন যে, খোদ পাকিস্তানেই নির্মূল কমিটির শাখা আছে আর সেদেশে বাংলাদেশকে তুলে ধরা আর বঙ্গবন্ধু আর একাত্তরের কথা বলায় আমাদের ইসলামাবাদের দুতাবাসটির পাশাপাশি তাদের ভূমিকাও লক্ষণীয়।
আজকের এই গ্লোবাল ভিলেজে গোটা পৃথিবী যখন এক সুতায় গাঁথা, তখন আলাদা করে আপনার আর আমার ভাবার সুযোগ খুবই কম। আজকের পৃথিবীতে এগোতে হবে একসঙ্গে আর জিততেও হবে ঐ একসঙ্গেই, সবাই মিলে। আর রাষ্ট্রে-রাষ্ট্রে এমনি ‘উইন-উইন’ পরিস্থিতি তৈরি করতে হলে শুধু রাষ্ট্রে-রাষ্ট্রে বোঝাপড়া ঠিক থাকলেই চলবে না, এর জন্য অপরিহার্য মানুষে-মানুষে যোগাযোগও। জিততে হলে ছাড়তে হয় অনেক সময়ই।

হারতেও হতে পারে কখনো-সখনো চূড়ান্ত বিজয়ের স্বার্থে। এই কাজটা খুবই সহজ যখন মানুষ মানুষকে চেনে। আর তারা যদি পরস্পরের কাছে অচেনা হয়ে যায়, তখন পুরো জিনিসটাই অনেক বেশি ঘোলাটে হয়ে দাঁড়ায়। বিষয়টা বুঝতে বেশি দূর যেতে হবে না। একাত্তরে কেন পশ্চিমবঙ্গ-ত্রিপুরার মানুষ এক কোটি বাংলাদেশের বাঙালিকে হাসতে হাসতে জায়গা ছেড়ে দিয়েছিল আর আজকের রোহিঙ্গারা কেন আমাদের জন্য এত বড় বোঝা, তা বুঝতে বোধকরি পাবলিক ডিপ্লোমেসি বোঝার দরকার পড়ে না।

 

 

লেখক : ডিভিশন প্রধান,
ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও
সদস্য সচিব, সম্প্রীতি বাংলাদেশ

 

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

লাইভ রেডিও

Calendar

April 2024
S M T W T F S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930