অধ্যক্ষ ড. গোলসান আরা বেগম
শিক্ষককে হত্যা,লাঞ্চনা,পেটানো ইত্যাদি অবমাননাকর ঘটনা ভাইরাসের মত সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে।
সচেতন বিবেক এর বিরুদ্ধে মানববন্ধন, প্রতিবাদ, সভা-সমাবেশ, টকসোতে তুলপাড় করছে। তাছাড়া বিভিন্ন সামাজিক সংঘটন এর প্রতিকার চাইছে। ন্যাক্কারজনক ঘঢনায় যারা জড়িত তাদের বিচারের আওতায় এনেছে সরকার। দেশের জনগণ আশা করছে আইন সত্যের পক্ষে অবস্থান নিবে। পেশী শক্তির কাছে মাথা নত করবে না। মানুষ গড়ার কারিগড় শিক্ষকরা এমনতর নেক্কার জনক ও অপমানকর গঠনার মুখোমুখি হবে তা কেউ প্রত্যাশা করে না।
নারায়নগঞ্জের এমপি সেলিম ওসমান একজন ত্যাগী, মানব দরদী, চৌকস মুজিবীয় আদর্শের নেতা। সত্যের মুক্তা ঝরে তাঁর কথায় ও কাজে। অথচ এই মহান নেতার হাত থেকে রেহাই পায়নি শিক্ষক । তিনি সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে কান ধরে ওটবস করিয়েছেন, যা ফেইজবুক পেইজে ভাইরাল হয়েছে। এ লজ্জা রাখবো কোথায় । এ সত্য তো কোন কালিমা লেপন করেই মুছা যাবে না।গঠনাটি হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছিলো । হাইকোর্ট তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল। তদন্ত শেষে সেলিম ওসমান নির্দোষ প্রমানিত হয়েছিল। এহেন অবস্থায় কাকে দোষারুপ করবো ।
নড়াইলের একটি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের গলায় ছাত্র কতৃক জুতার মালা পড়ানো হয়েছে । তার নেপথ্যে ছিলো ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের চেয়ার দখল নিয়ে ঐ প্রতিষ্টানের শিক্ষকদের মধ্যে প্রতিহিংসার কোন্দল । সরকার সংশ্লিষ্ট ছাত্রকে গ্রফতার করে ও তার গলায় জুতা পড়িয়ে ফেইজবুক ফেইজে ভাইরাল করে । তাতে আমাদের সন্মান কিঞ্চিত বৃদ্ধি পেয়েছে কি ? বরং আমাদের বর্বরতার মুখে চুনকালি মেখে প্রতিহিংসার নবায়ন করেছি। সাভারের আশুলিয়ায় একজন ছাত্র তার শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা করেছে । ইভটিজিং এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় শিক্ষককে নির্মম ভাবে হত্যার শিকার হতে হয়েছে । শিক্ষকদের এ সমস্ত লাঞ্চনা, গঞ্জনা সহ্য করা যায় কি ? ছাত্র শিক্ষকের মধ্যে এতো বৈরীতা তৈরী হলো কি ভাবে ? মানবতা লেজ গুটিয়ে পালিয়েছে কোথায় ? আমরা আগামী প্রজন্মের সামনে দুর্বোধ্য, অন্ধকার আলোর দ্যুতি, সামাজিক অবক্ষয় দেখতে পাচ্ছি । এই অনাকাঙ্খিত অবস্থান থেকে আমাদেরকে উদ্ধার করবে কে, কি ভাবে, কেমন করে ?
গত ৭ জুলাই ২০২২ এ রাজশাহীর গোদাবাড়ী ডিগ্রী কলেজের অধক্ষ্য সেলিম রেজার উপর চড়াও হন রাজশাহী-১ এর সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী। বেধড়ক পিটিয়ে শিক্ষককে গুরুতর জখম করেন ( ১৫ জুলাই ২০২২ দৈনিক প্রথম আলো)। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বনাম ধন্য অধ্যাপক আসমা সিদ্দিকা হেনস্তার শিকার হন একজন শিক্শকার কাছে।সাধারন ছাত্রদের বিক্ষোভের মুখে উক্ত ছাত্রকে সাময়িক ভাবে বহিস্কার করে বিশ্বিদ্যালয় কতৃপক্ষ। আমাদের সাধারন মানুষের বিবেককে ভোতা,হতবাক করে ফেলছে আমাদের সন্তান তুল্য ভবিষ্যত আলোর দিশারীদের এ সমস্ত অপকর্ম।
এ দিকে ১৫ জুলাই ২০২২, দৈনিত সংবাদ এর একটি হেড লাইন দেখে হতবাক হয়েছি। এমপির পাশে বসে অধ্যক্ষ বললেন, তিনি( এমপি ফারুখ) আমাকে পেটাননি। অপরপক্ষে অধ্যক্ষের নির্যাতনে অভিযোগ পেয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তদন্ত শুরু করছে।২৪ জন বিশিষ্ট নাগরিক,ঢাকা শিক্ষক সমিতা নিন্দা প্রকাশ করেছে। সেলিম রেজা সাংবাদিকদের কাছে গঠনার সত্যতা শিকার করেছে। অধ্যক্ষ আরো বলেছেন — তিনি লজ্জায় ঘর থেকে বের হচ্ছেন না ও আতংকে আছেন।
প্রশ্ন হলো এতো পানি গড়ানোর পর কেন অধ্যক্ষ বলছেন এমপি তাকে পেটাননি। এমপি কতৃক পেটানোর ঘটনায় এ কী নাটকীয়তা। আমরা কেমন হবু চন্দ রাজার দেশে গবুচন্দ্র মানুষ বসবাস করছি। সত্য কথা জিহ্বায় বেঁধে রেখেছি ভয়ে। নাক একবার নয় দুই বার কেটে দিচ্ছি। শিক্ষকরাও বাস্তব এবং সত্য কথা বলতে পারবে না।
লেখকঃ সাবেক অধ্যক্ষ, উপদেস্টা সদস্য,বাংলাদেশ কৃষকলীগ,কেন্দ্রীয় কমিটি।