কবি বাঙ্গাল আবু সঈদের প্রয়াণদিবস

প্রকাশিত: ১১:৪৫ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১০, ২০২২

কবি বাঙ্গাল আবু সঈদের প্রয়াণদিবস

কামরুল হাসান 

আজ ১০ই জানুয়ারী কবি বাঙ্গাল আবু সঈদের প্রয়াণদিবস। ১৯৮৬ সালের এই দিনে তিনি প্রয়াত হন। ১৯১৫ সালে ২০ জুলাই অবিভক্ত বাংলার বৃহত্তর যশোর জেলার নড়াইলে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। নড়াইলের রত্নগর্ভা মাটিতে জন্ম নিয়েছেন অনেক খ্যাতিমান পুরুষ, যেমন পণ্ডিত রবিশংকর, পণ্ডিত উদয়শংকর, কথাশিল্পী নীহাররঞ্জন গুপ্ত, শিল্পী এস এম সুলতান, বিজয় সরকার, চারণকবি মোখলেসউদ্দিন প্রমুখ। অনেকে পাদপ্রদীপের আলোয় উঠে এসেছেন, অনেকে উঠে আসতে পারেননি, রয়ে গেছেন অগোচরে, নিভৃতে। এমনি একজন প্রতিভাবান মানুষ হলেন কবি বাঙ্গাল আবু সঈদ, যিনি তাঁর যোগ্য স্বীকৃতি পাননি। এক জীবনে যিনি প্রায় একশ বই রচনা করেছেন তাঁর জীবন যে অত্যন্ত সৃজনশীল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ হলো তাঁর অন্তরালের জীবন, বহির্দুনিয়ায় তিনি ছিলেন একজন রাজনীতি সচেতন যোদ্ধা।

তিনি সংস্পর্শ পেয়েছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, আবুল কাশেম ফজলুল হক, মাওলানা ভাসানী প্রমুখ দেশবরেণ্য নেতাদের। বঙ্গবন্ধুর সাথে পারিবারিক পর্যায়ে চমৎকার সম্পর্ক ছিল। সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি কিন্ত তিনি দু’দুটো বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশ বাহিনীর সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন; আবার ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনেও যোগ দিয়েছেন। এমন কর্মময় জীবন প্রমাণ করে বাঙ্গাল আবু সঈদ অসম্ভব প্রাণশক্তির অধিকারী ছিলেন। একটা বিষয় লক্ষণীয় যে তিনি যখনি তার বহিঃস্থ পৃথিবীতে হতাশ হয়েছেন, রাজনৈতিক নেতাদের ডিগবাজি ও প্রতিশ্রুতিভঙ্গ দেখেছেন হতাশা লুকাতে মনোনিবেশ করেছেন সাহিত্য রচনায়। রাজপথের প্রতিবাদ তুলে এনেছেন কলমের নিবে, তীব্র শ্লেষে জড়িয়েছেন প্রতিবাদ, অন্তরের ক্ষোভ। তিনি ছিলেন নিপীড়িত মানুষের পক্ষে।

সমাজ বদলের ধ্যান নিয়ে কবি বাঙ্গাল আবু সঈদ কলম ধরেছিলেন। তাঁর ক্ষুরধার লেখনি তাকে বানিয়েছে গণআন্দোলনের এক নায়কে। আবু সঈদ রচিত গ্রন্থের সংখ্যা ৮৭, যার ভেতরে উপন্যাসই বেশি। তাঁর অপ্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্য আত্মজীবনীসহ পাঁচটি। পারিবারিক অ্যালবামে বঙ্গবন্ধুর সাথে তাঁর ছবি আছে; একসাথে রাজনীতি করতেন তারা। তাঁর ‘বাঙ্গাল’ উপাধি, অনেকে যেমনটা ভাবতে পারে, কোনো ‘গালি’ নয়। এটি একটি উপাধি। এই উপাধি দিয়েছিলেন স্বয়ং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। কবি বাঙ্গাল আবু সঈদ ছিলেন মাওলানা ভাসানীর অনুরক্ত শিষ্য। তিনি নিজ নামের সাথে ‘ভাসানী’ যুক্ত করেছিলেন। কবি বাঙ্গাল আবু সঈদ ছিলেন একজন যথার্থ দেশপ্রেমিক, পরোপকারী ও সাদা মনের মানুষ।

কবি বাঙ্গাল আবু সঈদের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য নড়াইলে একটি পাঠাগার ও জাদুঘর স্থাপন করা প্রয়োজন। এ উদ্যোগটি সরকারি পর্যায়ে হলে তা স্থায়ী হবে।

প্রয়াণদিবসে এই মহৎ মানুষটির প্রতি আমার বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই।