করোনা পরবর্তী সময়ে শিক্ষা ও শিক্ষার্থী’

প্রকাশিত: ৬:৪৮ অপরাহ্ণ, জুন ১০, ২০২২

করোনা পরবর্তী সময়ে শিক্ষা ও শিক্ষার্থী’

প্রায় দুই বছর শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেছিল। করোনা মহামারীর প্রথম দিকের সময়টা একটু মনে করেন দেখি!

  আতংকিত দিন কাটিয়েছিলাম আমরা। নিজের পরিবারের সদস্যদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছি। সাথে সাথে  ছেলেমেয়েদের ঘরে আটকে রাখা বড় দায়িত্ব মনে করেছি। আটকে রাখতে তাদের বিভিন্ন ডিভাইস ব্যবহারে আগের মতো কঠিন হতে পারিনি আমরা সবাই। তাদের প্রশ্নের উত্তরও দেওয়া কঠিন ছিল। 

ক্লাস দেখার নাম করে তারা আসক্ত হয়েছে বিভিন্ন গেইমে। টিকটক, ইনস্টাগ্রামের জগতে বিচরণ করেছে তারা। মাঠ থেকে দেখা অভিজ্ঞতা থেকে বলছি- খুব বেশি হলে  শতকরা ১৫ জন শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাস দেখেছে এবং পড়ালেখায় ডিভাইসের সঠিক ব্যবহার করেছে। বাকি ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থীদের কথা ভাবুন!  

কি করবো সারাদিন ঘরে বসে? এর উত্তর আমাদের জানা ছিল না।

টিভি দেখা, কম্পিউটার, ল্যাপটপ তাদের সঙ্গী হয়েছিল। কেউ কেউ বই পড়েছে, বিভিন্ন সৃজনশীল কাজ করেছে। সেই সংখ্যা খুবই কম। অনলাইন ক্লাস শুরুর সাথে সাথে ডিভাইস ব্যবহারের বৈধতা যেন পেয়ে গেল শিশু কিশোরেরা। আমরা অভিভাবকরা নির্বাক ছিলাম তখন। কিনে দিতে বাধ্য হয়েছেন অনেকে। পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাবে বলে গরীব খেটে-খাওয়া মানুষও নিজের সন্তানের জন্য মানুষের কাছে হাত পেতেও একটা মোবাইল ফোনের ব্যবস্থা করেছেন। শিশু কিশোরদের জন্য শুরু হয়েছিল এক অন্যরকম সময়। অনেকের কাছে দুর্লভ ছিল মোবাইল ফোন,  হঠাৎ হাতে পেয়ে সে স্বপ্নের মতো উড়ে বেড়িয়েছে। কয়জন পেরেছি তা তাদেরকে নিজেদের মতো ব্যবহার করাতে!

ক্লাস দেখার নাম করে তারা আসক্ত হয়েছে বিভিন্ন গেইমে। টিকটক, ইনস্টাগ্রামের জগতে বিচরণ করেছে তারা। মাঠ থেকে দেখা অভিজ্ঞতা থেকে বলছি- খুব বেশি হলে  শতকরা ১৫ জন শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাস দেখেছে এবং পড়ালেখায় ডিভাইসের সঠিক ব্যবহার করেছে। বাকি ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থীদের কথা ভাবুন!  কি অবস্থা হয়েছে তাদের তা কল্পনাও করতে পারবেন না।  এখন যারা অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী, তারা ষষ্ঠ শ্রেণিতে থাকাকালীন সময়েই বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যায়। অনলাইন ক্লাসে  সৃজনশীল প্রশ্ন  ভালভাবে বুঝে ওঠা বা তাদেরকে বুঝানো কঠিন অবশ্যই ছিল। এরা এখন অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায় বসেছে। তাদের জন্য একটা বোঝা হয়ে যাচ্ছে একেকটা পরীক্ষা।

আবার যারা তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী, তারা প্রথম ও দ্বিতীয় দুই শ্রেণিতেই ক্লাস করতে পারেনি সরাসরি। তাদের জন্য সবকিছু অবশ্যই একটু কঠিন হওয়া স্বাভাবিক। তারা রিডিং পড়তে পারছেনা ভালোভাবে।
আপনি প্রশ্ন করতে পারেন- আপনারা শিক্ষকরা কি করলেন?

শিক্ষকদের কথা ভাবুন!  যে সময়টা আমরা পেয়েছি, তাতে সিলেবাস শেষ করার চিন্তা থেকেও আরও বেশি হিমশিম খেতে হয়েছে নতুন স্বাভাবিক পরিবেশে শিক্ষার্থীদের অভ্যস্ত করতে। এই অবস্থার মধ্যেও সিলেবাস শেষ করে  তাদেরকে পরীক্ষায় বসার মতো প্রস্তুত করতে আমরা সক্ষম হয়েছি, আলহামদুলিল্লাহ।  দুই বছরের ঘাটতি তিন-চার মাসে কতটা পূরণ করা সম্ভব?  তবুও আল্লাহর অশেষ রহমতে আমরা স্বাভাবিক পরিবেশে পরীক্ষা নিতে পারছি এতেই খুশি সবাই।

এবার আসি আসল কথায়- আমরা অভিভাবকরা তাদের সবার প্রস্তুতি বা ফলাফল ঠিক আগের মতোই হয়ে যাবে এমনটা আশা করা ঠিক হবে না। অনেক শিক্ষার্থী হলে বসে কান্নাকাটি শুরু করে দেয়।  না পারার জন্য নয়, সব ঠিকঠাক মতো লিখতে না পারলে মা বা বাবা মারবে এবং বকবে- এই ভয়ে। আমরা নিজের সন্তানদের শাসনের আগেই মনে করা উচিত- তাদের প্রস্তুতিতে  আমরা কি ভূমিকা পালন করেছি সেদিকে।  আর এবারের পরীক্ষা শেষ হলে তাদেরকে আরও বেশি যত্নের মাধ্যমে, নজরে রাখার মাধ্যমে সঠিকভাবে নিজের দায়িত্ব পালন করতে পারি। এবারের পরীক্ষা আমাদের জন্য একটা নতুন  অভিজ্ঞতা হোক।

রোকসানা আক্তার, সহকারী শিক্ষক (জীববিজ্ঞান)