বুয়েট থেকে ইমাম তৈরি হবে?

প্রকাশিত: ১০:১১ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ৫, ২০২৪

বুয়েট থেকে ইমাম তৈরি হবে?

বুয়েট  থেকে বিজ্ঞানী তৈরি হতে হবে কেন প্রশ্নটা রেখেছেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এক বুয়েটি প্রকৌশলী? আমি বললাম তাহলে কি সেখান থেকে ইমাম তৈরি হবে? একটি উচ্চতর প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ বিজ্ঞান গবেষণা, সেই সুযোগ না থাকলে তাকে একটি পুর্নাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় কি বলা যায়? পশ্চিমা বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গবেষণায় ও উদ্ভাবন আবিষ্কারের একটি গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর, সেখানে বাংলাদেশে প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে শুধুমাত্র বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কার্যক্রম উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। এখানে তো দুই একটি ব্যতিক্রম ছাড়া বুয়েটের মত এত এত হুজুর তৈরি হয় না, তৈরি হয় শতভাগ প্রযুক্তিবিদ । তাহলে বুয়েটে কেন এত মোল্লার কারখানা?
বাংলাদেশে কৃষি প্রযুক্তির উপর বিশ্ববিদ্যালয়টি ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গত ৬০ বছরে দেশকে কৃষি প্রযুক্তির কোন স্তরে নিয়ে গেছে একটু কষ্ট করে গুগল করলেই বুঝতে পারা যায় । স্বাধীনতা পরবর্তি সাড়ে সাত কোটি মানুষের খাদ্য ঘাটতি আর আশ্বিনের মঙ্গা থেকে বেরিয়ে এসে সাড়ে ১৭ কোটি মানুষের জন্য শত শত উফশি জাত উদ্ভাবিত করে খাদ্য শস্যের যে নিরাপত্তা তারা দিয়েছে তা সম্ভব হয়েছিল উচ্চতর গবেষণার কারনেই। কারন সেখানে দেশপ্রেম ছিল, গণমানুষের অন্ন সংস্থানের আকাঙ্খা ছিল। অপ্রিয় হলেও সত্য বুয়েটে সেই দেশের ভাল মেধাবী ছাত্র মানেই তার ভেতর একটি মনস্তাত্বিক অহমিকা ও আভিজাত্য কাজ করে যে তাকে বিত্তবান না হলে ঠিক মানায় না। সেখানে গবেষণার ভেতর দিয়ে ‘আজাইরা সময় নষ্ট ‘ করার সুযোগ কোথায়? গবেষণার কাজটা কেবল টপ ক্লাস স্টুডেন্টরা করতে সমর্থ, কিন্তু গবেষণার চাইতে কোচিং বানিজ্যে তাদের লাভ বেশি,উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার হলেও লাভ, বিসিএস দিয়ে পুলিশ , আমলা হলেও লাভ, ডেসা, রাজউক , পিডিবিতেও বেশি লাভ। তার সাথে যুক্ত হয়েছে এখন আখেরাতের লাভ। ইহকালেও মালামাল, পরকালেও মালামাল । এজন্যই বুয়েটের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী রকমারির সোহাগের মত টাখনূর উপর প্যান্ট পড়ে, ঢিলা কুলুখ ব্যবহার করে। তারা যতটা না ইঞ্জিনিয়ার তার চেয়ে কাজে কর্মে এক একজন বড় আলেম ওয়াজী হুজুর, ইমামদের মত।
এককালে যে বুয়েটে জামিলুর রেজা চৌধুরীর মত শিক্ষক ছিলেন সেখানে তাদের স্থানে এসেছেন মোচকাটা তালেবানদের মত দেখতে মুফতি ইঞ্জিনিয়ার শিক্ষক। তারা ক্লাশে নিয়মিত উগ্রবাদের তালিম দেন তারপর সময় থাকলে প্রযুক্তির কৌশল শেখান। রাষ্ট্রীয় দিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন আর শহীদ মিনারে কুফরি বলে উস্কানি দেন। আর্কিটেক্ট বিভাগের এক ছাত্রী তাদের নিবাসে শিউলি ফুলের গাছ লাগিয়েছিল। সেটা দেখে গাছের গোড়া সমেত কেটে দেয় তালেবানি প্রভোষ্ট। বুয়েট তো এখন আর বুয়েট নেই, সেটা হয়ে গেছে পলিটিক্যাল ইসলামের খেলাফত তৈরির এক অনন্য পাঠশালা, খাঁটি কওমি মাদ্রাসা। ঘুষ খেয়ে তওবা করলেই সব মাফ’ এইসব মুফতি শিক্ষকরা ছাত্রদের শেখান। একবার বুয়েটের এক ছাত্র নিজেকে ইমাম মাহদি ঘোষনা দিয়েছিল এমন তামাশাও শোনা যায়।
শুধু বুয়েট না, সব বিশ্ববিদ্যালয়েই ছাত্র রাজনীতি বন্ধ হোক এবং সাংস্কৃতিক চর্চা বৃদ্ধি পাক সেটা আমি চাই, তবে তার সঙ্গে পলিটিক্যাল রিলিজিয়াস কার্যক্রম বন্ধ হতে হবে, আণ্ডারগ্রাউন্ড জামাত শিবিরের রাজনীতি চলবে না । জঙ্গিবাদের শিক্ষাও একটি রাজনৈতিক কার্যক্রম, সেই রাজনীতিও বন্ধ হতে হবে। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এমন কাজের জন্য শাস্তির বিধান থাকতে হবে। শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। জামাত শিবির হেফাজতের একটি ছাত্র থাকলেও সেখানে ছাত্র রাজনীতির দরকার আছে ।

 

সুব্রত নন্দী ঃ লেখক , সাংবাদিক