ময়লা আবর্জনায় বসবাসের অনুপযুক্ত সাভারের ব্যাংকটাউন

প্রকাশিত: ১২:২০ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২৯, ২০১৮

ময়লা আবর্জনায় বসবাসের অনুপযুক্ত সাভারের ব্যাংকটাউন
সাদ্দাম হোসেন
সাভারের ব্যাংকটাউন এলাকা থেকে সামান্য উত্তর দিকে অবস্থিত একটি খাল ও ব্রীজের ধারে ময়লা আবর্জনা ফেলে কয়েকটি স্থানীয় সংগঠন পরিবেশ দূষণ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার (২৮শে আগস্ট) রেডটাইমসকে দেয়া সাক্ষাতকারে ব্যাংক টাউন এলাকার স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি এ অভিযোগ করেন। তাদের দাবি পৌরসভা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ময়লা আবর্জনা ফেলার জন্য কোনো নির্ধারিত স্থান না থাকায় এমনটা হচ্ছে। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন সংগঠনের ভ্যান এসে এখানে ময়লা আবর্জনা ফেলে যায়। বিভিন্ন সময় তাদের বাধা দেয়া হলেও প্রভাবশালীদের কারণে তারা পার পেয়ে গেছে। এদিকে ময়লা আবর্জনা ফেলার কারণে একদিকে পরিবেশ দূষণ ঘটছে অন্যদিকে ঐ এলাকাটি বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে উঠছে। ইতিমধ্যেই খালের ধারের স্থানটি বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে উঠেছে। বর্তমানে যারা এখানে বাস করছে তারা নানা সমস্যা ও রোগে ভুগছে। খালের ধারে অবস্থিত ডেনিটেক্স লিমিটেডের অপরিকল্পিত বর্জ্র ব্যবস্থাপনার জন্য খালের পানি দূষিত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তারা। এব্যাপারে ব্যাংক টাউন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাসরত ড. মোস্তফা বলেন, খাল ও ব্রীজের ধারে ময়লা ফেলার কারণে তাদের এলাকা বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে উঠেছে। ব্যাংক টাউন পার্কটি প্রায় বসার অনুপযুক্ত হয়ে উঠেছে। পার্কের ভিতরে পর্যন্ত ময়লা ফেলা হচ্ছে। ব্যাংক টাউন এলাকায় শিশু কিশোরদের খেলাধুলার জন্য কেবল একটি ছোট্ট মাঠ ও এই পার্কটি রয়েছে। কিন্তু ময়লা আবর্জনা ফেলার কারণে পার্কটি শিশু কিশোরদের খেলাধুলার জন্য প্রায় অনুপযুক্ত হয়ে উঠেছে। পার্কটিতে বসার জন্য বেঞ্চ থাকলেও মানুষজন ময়লা আবর্জনার দূর্গন্ধের কারণে সেখানে বসতে পারছে না। ময়লা ফেলার জন্য একটি নির্ধারিত স্থান থাকলে এমন সমস্যার সৃষ্টি হতে না। নির্ধারিত স্থান না থাকায় আবাসিক এলাকা ও খালের ধারে ময়লা ফেলে একদিকে আবাসিক এলাকাকে বসবাসের অনুপযুক্ত করা হচ্ছে অপরদিকে খাল ভরাট করে পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে। ড. মোস্তফা আরো বলেন, তারা কয়েকবার এ বিষয়ে উপজেলা পরিবেশ অধিদপ্তরে অভিযোগপত্র দিয়েছেন। কিন্তু এবিষয়ে তারা এখনো পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও এব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। বিষয়টিকে বারবার এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে একসময় ব্যাংকটাউন আবাসিক এলাকাটি বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে যাবে। ইতিমধ্যেই ময়লা আবর্জনার দূর্গন্ধের কারণে কয়েকটি বাড়ি জনশূন্য হয়ে গেছে। বাড়ির ভাড়াটিয়ারা অন্যত্র চলে যাচ্ছে। ব্রীজের ধারে ময়লা ফেলতে আসা সিরাজ নামের এক ভ্যান চালকের সাথে কথা বলে জানা যায়, যারা এখানে ময়লা আবর্জনা ভর্তি ভ্যান নিয়ে আসে তাদের অধিকাংশই পৌরসভার বর্জ্র অপসারণ কর্মী। তবে তাদেরকে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ এখানে ময়লা ফেলার ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা দেয়নি। পৌরসভা এলাকার বিভিন্ন বাড়ি থেকে তারা ময়লা আবর্জনা সংগ্রহ করে এখানে ফেলতে আসে। এজন্য তারা প্রতিটি বাড়ি থেকে একটি নির্দিষ্ট হারে চাঁদা আদায় করে। চাঁদার পরিমাণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে সিরাজ বলেন, তারা প্রতি বাড়ি থেকে ১০-২০ টাকা করে নেন। কিন্তু স্থানীয় কয়েকজন বাড়ির মালিকের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিটি বহুতল ভবনের প্রতিটি ফ্লাট থেকে ময়লা আবর্জনা নিয়ে যাওয়ার জন্য ৮০ টাকা করে নেয় তারা। এতে করে একটি বাড়ি থেকে কখনো কখনো তারা ৮০০ থেকে ২৪০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা নেয় তারা। আর এ বিশাল অর্থ এলাকার প্রভাবশালী কয়েকজন ব্যক্তিবর্গ ও সংগঠনের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা হয় বলে জানায় তারা। লিংকন নামে পৌরসভার এক বাসিন্দা বলেন, জনকল্যাণের কথা বলে এসব সংগঠন গড়ে ওঠে। পরে তারা এলাকার বিভিন্ন মানুষের থেকে জনকল্যাণের কথা বলে চাঁদা তোলে। এরকমভাবে ময়লা আবর্জনা অপসারণের কথা বলে বিভিন্ন বাড়ি থেকে চাঁদা তোলা হচ্ছে ও নিজেদের মধ্যে তা ভাগ বাটোয়ারা করে নেয়া হচ্ছে। এব্যাপারে পৌরসভার পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মো. রিয়াজ বলেন, তিনি ঐ খালের ধারে ময়লা আবর্জনা ফেলা প্রতিহত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। কিন্তু কিছুতেই কোনো কাজ হচ্ছে না। রাতের আধারে এসে বিভিন্ন সংগঠনের ভ্যান এখানে ময়লা ফেলে যাচ্ছে। ইতিপূর্বে সেখানে বাশেঁর বেড়া দেয়া হলেও সেটি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। ময়লা ফেলার সময় কয়েকজনকে আটক করে থানায় দেয়া হলেও স্থানীয় প্রভাবশালীরা এসে তাদের ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। তাই কোনোভাবেই এটি থামানো যাচ্ছে না। ময়লা ফেলার জন্য কোনো নির্ধারিত স্থান না থাকায় এব্যাপারে তিনি এখন এক প্রকার নিরুপায় বলে জানান তিনি।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

লাইভ রেডিও

Calendar

April 2024
S M T W T F S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930