১লা মে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৪:৫৩ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৮, ২০২২
ছবি জনকণ্ঠ
অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)
ইউরোপের যুদ্ধ আর বিশ্বজুড়ে তার ডামাডোলে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে অস্থিরতা। স্মরণকালের সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির রেকর্ড ভাঙছে যখন সিঙ্গাপুর আর অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোতে, তখন ব্রিটেন-ফ্রান্স তো বটেই, খোদ মার্কিন মুলুকেই গ্যাসের মজুদ স্মরণকালের তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। ব্রিটেনে ফুড ব্যাংকের সামনের লাইন লজ্জায় ফেলছে এদেশের টিসিবির ট্রাকের লাইনকেও। আর বিশ্বের একের পর এক জায়েন্ট ইকোনমি যখন এমনিভাবে কুপোকাত হচ্ছে, তখন আজকের গ্লোবাল ভিলেজে ইউরোপের শীত ছাপিয়ে সেই উত্তাপের আঁচ যে বাংলাদেশে আমাদের গায়েও এসে লাগবে, সেটাতো বলাইবাহুল্য।
বাস্তবে ঘটছেও তাই-ই। কানটা টানলে মাথাটা তো আসতেই হবে।
তারপরও বৈশ্বিক অর্থনীতির এই ধস থেকে যার যার মতো করে নিজ নিজ অর্থনীতিকে আগলে রাখার চেষ্টা কমবেশি আছে পৃথিবীর সব রাষ্ট্রেরই। ব্যতিক্রম নয় বাংলাদেশও। সংকটটা বৈশ্বিক হলেও তার ধাক্কাটা অর্থনীতিতে এসে লাগছে নানাভাবে আর নানা কারণে। এই হালের টুইটার আর ফেসবুকে যে গণছাঁটাই তার ধাক্কাটা কিছুটা হলেও যে ভারতের অর্থনীতির ভিতেও এসে আছড়ে পড়বে, তা তো বলাইবাহুল্য। যেহেতু অর্থনীতিবিদ নই, এসব বিষয়ে বেশি বলা বা লেখার ধৃষ্টতাও সঙ্গত কারণেই নেই। তারপরও আমাদের ধারণা, এ ধরনের উচ্চ দক্ষতার পেশাজীবীদের ছাঁটাইয়ের চেয়ে অর্থনীতি বরং বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে যদি ছাঁটাইয়ের খড়গটা এসে পরে শ্রমজীবী প্রবাসী বন্ধুদের ঘাড়ে।
একইভাবে প্যারিস আর মিলান ফ্যাশনশোগুলোর চোখ ধাঁধানো ফ্যাশনেবল ড্রেসগুলোর বিক্রি যদি পাশ্চাত্যে কমেই যায়, তাতে আমাদের গার্মেন্টসশিল্প যতটা না ক্ষতির মুখে পড়বে, তার চেয়ে ঢের বেশি ক্ষতি হয়ে যাবে যদি পশ্চিমারা তাদের নিত্যদিনের পরিধেয়গুলো কেনার সক্ষমতাও হারিয়ে বসে। যে কারণে আমরা এই পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্কের বাজারে আমাদের পোশাক রপ্তানির ব্যারোমিটার যথাক্রমে বাড়তে ও কমতে দেখছি। আর এই কারণেই বোধকরি প্রধানমন্ত্রীর বাণিজ্য উপদেষ্টা পরামর্শ দিয়েছেন প্রতিযোগিতার ভয়ে রপ্তানি পণ্যের দাম না কমিয়ে দিতে।
বাংলাদেশের আসন্ন সংকট মোকাবিলায় যে প্রস্তুতি, তাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমাদের আশার জায়গাটাও সেখানেই। যে কারণে বাজারে পণ্যের দাম আর টিসিবির ট্রাকের লাইন ক্রমশ প্রসারণশীল হলেও মানুষ তা ধৈর্যের সঙ্গেই মোকাবিলা করছে। মানুষ জানে, যে নেত্রী কোভিড প্যান্ডেমিক অমন দক্ষ হাতে সামলেছেন, রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের সংকটটাও তিনি ঠিক ঠিকই সামলে নেবেন। তবে কোভিডকালীন সময়ের মতোই এ যাত্রায়ও কিছু লোকের ভূমিকা অত্যন্ত নিন্দনীয়।
সে সময়টায় একদল মানুষ যেমন করোনা কিটের ব্যবসা করে কিংবা মানুষকে আতঙ্কিত করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে তৎপর ছিল, এখনো তাদের সেই অপতৎপরতা লক্ষণীয়। এখনই হঠাৎ তাদের গণতন্ত্রের কথা মনে পড়ছে। জাতির পিতাকে রাতের আঁধারে সপরিবারে আর জাতীয় চার নেতাকে জেলের চার দেওয়ালের ভেতর নির্মমভাবে হত্যা করে যাদের তথাকথিত গণতান্ত্রিক পথ চলার সূচনা, যাদের হাত হাজারো মুক্তিযোদ্ধা সৈনিকের রক্তে রঞ্জিত, তাদেরই এখন এই বৈশ্বিক সংকটে মানুষের ভোট আর ভাতের সো-কল্ড অধিকার আদায়ের তাগিদে পেটের ভাত হজম হচ্ছে না! কি বিচিত্র ও অদ্ভুত!
প্রসঙ্গটা টেনে আনার কারণ একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক নয়। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে হালের যে টান তার জন্য রপ্তানির ধীরগতি আর ডলারের ঊর্ধ্বগতি যেমন দায়ী, তার চেয়েও বড় কারণ হিসেবে সম্ভবত চিহ্নিত হচ্ছে হুন্ডি। প্রবাসীদের রেমিটেন্স প্রচলিত ব্যাংকিং চ্যানেলে না এসে হুন্ডির মাধ্যমে দেশে ঢোকায়, দেশের রিজার্ভ হচ্ছে ডলার বঞ্চিত। নানা রকম প্রণোদনা দিয়েও কোনোমতেই রেমিটেন্সকে হুন্ডিবিমুখ করা সম্ভব হচ্ছে না। এর বড় কারণ হিসেবে দায়ী করা হচ্ছে জামায়াত-বিএনপির প্রবাসী সমর্থকদের, যারা দেশে আওয়ামী লীগ সরকারকে কুপোকাত করার হালের আন্দোলনে বাতাস দেওয়ার জন্য এমন কাজটি করছে। ভালোবাসা আর যুদ্ধে যেহেতু সবই চলতে পারে, কাজেই এই মানুষগুলোও হয়ত তাদের এমন দেশবিরোধী কার্যক্রমকে দেশহিতৈষী মনে করে আত্মতৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতেই পারে। তারা তো ভাবতেই পারে যে, আওয়ামী লীগ সরকার পড়ে গেলে তাদের কি? এতে তো ক্ষতি আওয়ামী লীগারদেরই।
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে- সমীকরণটা সম্ভবত অতটা সরল নয়। যদি হুন্ডির কারণে রিজার্ভে বড় রকম টান পড়ে আর তাতে যদি দেশ মুদ্রাস্ফীতির ধাক্কায় টালমাটাল হয়ে পড়ে, তখন দুশ’-তিনশ’ টাকা কেজির চাল কি খালি আওয়ামী লীগাররাই খেতে বাধ্য হবেন? দেশে তাদের যে স্বজনরা আছেন, বেশি দামে চাল কিনে তারাও কি মাসের শেষে স্বস্তিতে থাকতে পারবে, কিংবা এখন তাদের পাঠানো রেমিটেন্সের যে টাকায় দেশে তাদের পরিবারগুলো এত ভালো আছে, ছেলেমেয়েরা খাচ্ছে ভালো, পড়ছে ভালো স্কুলে, তখন সেই টাকায় তাদের ভালোবাসার এই মানুষগুলোর জীবনমান এই বাংলাদেশে কি অতটা ভালো থাকবে? অর্থনীতিবিদ নই, তবে এর উত্তর জানার জন্য সম্ভবত অর্থনীতিবিদ হওয়াটা জরুরিও নয়। এই লেখাটা যাদের জন্য লেখা, তাদের কারও হাতে এটি পড়লে একটু পড়ে-ভেবে দেখবেন প্লিজ!
লেখক : ডিভিশন প্রধান, ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও সদস্য সচিব, সম্প্রীতি বাংলাদেশ
S | M | T | W | T | F | S |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | 2 | 3 | 4 | |||
5 | 6 | 7 | 8 | 9 | 10 | 11 |
12 | 13 | 14 | 15 | 16 | 17 | 18 |
19 | 20 | 21 | 22 | 23 | 24 | 25 |
26 | 27 | 28 | 29 | 30 | 31 |
RED TIMES LIMITED
116-117, Concord Emporium,
Kataban, Dhaka-1205.
Mobile: 017111-66826
Email: redtimesnews@gmail.com