Sharing is caring!

সালেহ আহমদ (স’লিপক)
অভাব! অভাব মানে- না থাকা, অবিদ্যমানতা, অর্থকষ্ট, টানাটানি ইত্যাদি। অভাবগ্রস্থদের আমরা ক্ষেত্রবিশেষ অভাগা, অভাগ্য, অভাজন, অভাবগ্রস্ত, অভাবনীয়, অভাবিত ইত্যাদি বিশেষনে উল্লেখ করে থাকি।
যদি প্রশ্ন করেন অভাব কাকে বলে? উত্তরে বলবো- চাহিদার তুলনায় কম প্রাপ্তিকেই অভাব বলে। সহজ ভাষায়- কোনো দ্রব্য পাওয়ার আকাঙ্খাকে অভাব বলে। অভাব হল সেই অব্যক্ত স্তর, যেখান থেকে কংক্রিট ভাব উদ্ভূত হয় বা উদয় হয় কিংবা চাহিদার পরিবর্তে শূন্যতাকে অভাব বলা হয়ে থাকে।
ভাতিজা খোকন মিয়া প্রতিদিন বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় তার ছোট্ট ছেলেমেয়েরা বিভিন্ন বায়না ধরে এটা-ওটা বাজার থেকে কিনে আনার জন্য; সে নিতে পারেনা অভাবের কারণে! এটা খোকনের টাকার অভাব। বাড়ি ফিরতে রাত একটু বেশি হলে, তার বউ তর্কাতর্কি করলে; সোজা উত্তর- কাজের খোঁজে ছিলাম, কাজ না করলে সংসার কিভাবে চলবে? এটাই হচ্ছে অভাব।
খোকনের বউ মাঝে মধ্যে এখানওখান থেকে যে কিছু টাকা সংগ্রহ করে, তা বউয়ের কাছে চাইতে যখন সংকোচবোধ করে; সেটাই অভাব। শত ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও বউ-বাচ্চাকে ঈদে-চাঁন্দে ভালো একটা কাপড় না দিতে পারা কিংবা ভালো খাবার পাতে না থাকাটাই অভাব।
প্রত্যাহিক সন্ধ্যার চায়ের আড্ডায় খোকনকে নিয়ে প্রায়ই হাসি তামাশা করা হয়। আড্ডায় রাসেদ মিয়া বলেন, কাজকাম না করলে অভাবতো লেগে থাকবেই। শাজাহান মিয়া বলেন উঠেন, একদিন খোকনের সব অভাব দুর হয়ে; হাসি, আনন্দ আর সুখসমৃদ্ধিতে ভরে উঠবে তার সংসার। কথা কেঁড়ে নিয়ে বেলাল আহমদ বলেন, খোকনের অভাব দুর হওয়ার তেমন একটা সম্ভাবনা নেই। কাঁচাবাজারে গেলে আনাজ বিক্রেতা ঝিনুক মিয়া প্রায়ই খোকনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, চাচা যতদিন আছেন, খেয়ে যাও। চাচা না থাকলে, অভাব কি জিনিস; হাড়ে হাড়ে টের পাবে।
তোর কিসের অভাব? জিজ্ঞেসিলে খোকন বলে, আমি নিজে একজন অসহায় এবং অভাবী হওয়ায়, কাছের মানুষগুলো যখন আস্তে আস্তে আমার কাছ থেকে দূরে সরে যায়। এই দূরে সরে পড়াটাই আমার কাছে অভাব বলে মনে হয়।
আসলে, আমাদের চারপাশে এমন অনেকেই আছে,
যারা কয়েক মাসের মাঝে শত চেষ্টাতেও তার মনের স্বাদ, ইচ্ছা কিংবা আকাঙ্খা মিটাতে পারছেনা। তবুও মনের সব দুঃখ-কষ্টকে আড়াল করে হাসিমুখে দিনের পর দিন পার করে দিচ্ছেন খেয়ে না খেয়ে! তাদের হাসির আড়ালে লুঁকিয়ে থাকা কষ্টটুকু জানা, বুঝা কিংবা অনুভবের অভাব রয়েছে আমাদের মাঝে। আমরা এসব অভাবের প্রভাবমুক্ত হতে হবে। তবেই সামগ্রিক অভাবের আংশিক হলেও অবসান হতে পারে।
বিশেষ ধরনের যোগাযোগ বা ইন্দ্রিয় যোগাযোগ জড়িত উপলব্ধির কারণেও অভাব হয়। আমাদের চাহিদা আকাশসম। তাই আমরা চির অভাবী। কখনো কখনো অভাব দুঃখ, শোক, ক্ষোভ কিংবা যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। চাহিদার চেয়ে প্রাপ্তি বেশি হলে সুখানুভব হয়। আমাদের চাহিদাকে সময়োপযোগী, যুগোপযোগী এবং সাধ্যনোযায়ীর সীমাবদ্ধ রাখলেই চলমান জীবনে অভাব এসে হানা দেবেনা বা অভাব অনুভব হবে না কখনো। অভাব নিয়ে চিন্তা করলে দেখা যায়, তামাম দুনিয়াতে কোন না কোনভাবে আমরা সবাই অভাবী।
লেখক: কবি, গীতিকার, আহবায়ক- বাংলাদেশ সাংবাদিক সমাজকল্যাণ সমিতি (বিজেএসডব্লিউএ)।