আজ রবিবার, ২৬শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১০ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ব্যাগ থেকে মাদক রেখে ফাঁসানোর ভিডিও ফাঁস

editor
প্রকাশিত অক্টোবর ২৬, ২০২৫, ১১:০৫ পূর্বাহ্ণ
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ব্যাগ থেকে মাদক রেখে ফাঁসানোর ভিডিও ফাঁস

Sharing is caring!

Manual3 Ad Code

জাফর ইকবাল:

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে শ্রীপুরের মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ব্যাগ থেকে মাদক রেখে ফাঁসানোর ভিডিও ফাঁস হওয়ায় এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কার্ক্রমের স্বচ্ছতা নিয়ে।

এব্যাপারে এক মাদক ব্যবসায়ীর যোগসাজসে পরিকল্পিত ভাবে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লোক ঘরে ব্যাগ থেকে মাদক রেখে বাড়ির মহিলাদেরে জিম্মি করে ফাঁসিয়ে এক লাখ দশ হাজার টাকা কৌশলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

এসময় ১৮ মাসের শিশু সন্তান সহ এক মহিলাকে গ্রেফতার করা হয়। ৯ নং ইসলামপুর ইউনিয়নের শ্রীপুর ভান্ডারী গ্রামের বুধবার (১৫ অক্টোবর) শাহজাহান মিয়ার বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে। বিষয়টি প্রকাশ হলে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

এক গোপন ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, মাদক অধিদপ্তরের এক কর্মচারী ঘর তাল্লাশীর সময় তাদের বহন করা একটি ব্যাগ থেকে হাত দিয়ে মাদক রাখছেন। এসময় গোপনে এক মহিলা ভিডিও করলে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মচারী বিষয়টি বুঝতে পেরে ভিডিওটি ডিলেট করার জন্য মহিলাকে শারীরিক ভাবে লাঞ্চিত করারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ভুক্তভোগী পরিবারের শাহজাহানের মা নিয়ারুন বেগম বলেন, ১৫ অক্টোবর দিনে আমি ঘরের রান্নার কাজে ব্যস্ত। হঠাৎ কয়েক জন লোক আমার ঘরে প্রবেশ করে। আমি হঠাৎ ভয়ে চিৎকার করলে একজন আমার মুখে হাত দিয়ে চাপ দেয়। পরে সবাইকে ঘর থেকে বাহির করে দিয়ে কিছু সময় পর বেড়িয়ে এসে বলে ঘরে মাদক পেয়েছে। আমার ছেলে মাদক ব্যবসা করে।

এসময় আমার ঘরে রাখা সমিতি থেকে উঠানো টাকা ও আমার নিজের কিছু টাকা সহ মোট ১ লাখ ১০ হাজার টাকা ঘর থেকে নিয়ে এসে আমার হাত দিয়ে আমার টাকা পেয়েছি বলে ভিডিও করে। পরে ঐ টাকা আমার হাত থেকে তারা নিয়ে যায়।

এসময় তাদের সাথে থাকা পুলিশ আমার ছেলের বউকে ১৮ মাসের একটি শিশু সহ ধরে নিয়ে যায়। তারা বলে আমার ছেলে এলাকার একজন মাদক ব্যবসায়ী।


এলাকার আলোচিত মাদক ব্যবসায়ী আহমদ আলী দীর্ঘ দিন ধরে ভারত থেকে সীমান্ত পথে ইয়াবা, ফেন্সিডিলের চালান নিয়ে আসে। পরে স্থানীয় কিছু যুবক দিয়ে স্থানে স্থানে পৌঁছে দেয়। আমি দীর্ঘ ১৮ বছর প্রবাসে থাকায় আমার ছেলে শাহজাহানকে এই কাজে নিয়োগ করে। আমি প্রবাস থেকে বাড়িতে এসে আমার ছেলেকে এই পথ থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসি। বিষয়টি মাদক ব্যবসায়ী আহমদ মেনে নিতে পারেনি। সে কমলগঞ্জ পুলিশের সাথে যোগসাজস করে ২ বার মাদক বিক্রেতা বলে পুলিশ দিয়ে আমার ছেলেকে থানায় ধরে নিয়ে যায়। পরে আবার তাকে মাদক ব্যবসায়ী আহমদ আলী আমাদের নিকট থেকে টাকা নিয়ে মুক্ত করে আনে। কিছু দিন পুর্বে কমলগঞ্জ থানার তদন্ত ওসি শামীম আখন্দ ( বর্তামানে কুলাউড়া থানায় কর্মরত) মাদক ব্যবসায়ী রুস্তুম মিয়াকে গ্রেফতারের পর শাহজাহানকে মাদক বিক্রেতা সন্দেহে রাতের বেলা থানায় নিয়ে গিয়ে বিদ্যুৎ শক দিয়ে নির্যাতন করেন।

পরে মাদক ব্যবসায়ী আহমদ আলী আমাদের নিকট থেকে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে ছাড়িয়ে আনে। আমার ছেলেকে ভাল পথে ফেরাতে চেয়েছি কিন্ত মাদক ব্যবসায়ী সহ প্রশাসন ভাল হতে দিচ্ছেনা।

Manual8 Ad Code


অভিযুক্ত শাহজাহান মিয়া বলেন, আমি ৩/৪ মাস আহমদ আলীর মাদক বহন করতাম। বর্তমান এসব ছেড়ে ভাল হতে গিয়ে ভাল থাকতে দেওয়া হচ্ছেনা। এক সময় এলাকার মাদক ব্যবসায়ী আহমদ আলী আমাকে দিয়ে তার মাদক বিভিন্ন স্থানে আনা নেওয়া করত। আমি এই ব্যববসা খারাপ বুঝতে পেরে আমার মার সহযোগীতায় আর এই কাজ করিনা। তাই আহমদ আলী আমাকে হমকি দিতে থাকে আমি তার কাজ ছেড়ে দিলে সে আমাকে ছাড়বেনা। আমাকে ২ বার পুলিশ দিয়ে ধরে নেওয়ায়। পরে টাকার বিনিময়ে ছাড়িয়ে আনে। কমলগঞ্জ থানার তদন্ত ওসি শামীম আখন্দকে দিয়ে ধরিয়ে নিয়ে বিদ্যুতের শক দেন।

পরে আহমদ আলীর মাধ্যমে বাড়ি থেকে ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার পর আমাকে ছাড়া হয়। বুধবার ১৫ অক্টোবর আমাকে পরিকল্পিত ভাবে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়। আমি এসময় গরুর ঘাস কাটতে বাহিরে ছিলাম। পরে মাদক নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর আমার ঘরে মাদক রেখে আমার ১৮ মাসের শিশু সহ স্ত্রীকে ধরে নিয়ে যায়।

এলাকার মিজানুর রহমান বলেন, কিছু দিন আহমদ আলীর হয়ে শাহজাহান মিয়া কাজ করেছে বলে শুনেছি। তার ভুল বুঝতে না পেরে সে এ পথ ছেড়ে দেয়। এখন তার সাথে যা ঘটছে তা সাজানো বলে মনে হয়। আহমদ আলীর বিষয় কেউ কথা বলার সাহস পায়না।

সামছুল ও ওয়ারিদ মিয়া বাড়িতে ঘরের কাজের মিস্ত্রি বলেন, আমরা এ বাড়ির ঘরের কাজ করছিলাম। কিছু লোক হাতে ব্যাগ নিয়ে পুলিশ সহ ঘরে প্রবেশ করে। পরে বের হয়ে বলে কি যেন মাদক পেয়েছে। এগুলো ঘরে ভিতর পেয়েছে না তাদের ব্যাগ থেকে বাহির করছে বলতে পারবোনা।

এলাকার সাইফুল বলেন, আহমদ আলী ইয়াবার ব্যবসা করে। তার ভড়াটে কেহ দল থেকে বেড়িয়ে গেলে তাকে বিভিন্ন ভাবে ফাঁসিয়ে দেয়। শাহজাহানকে বারবার ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়েছে।

মাদক নিয়ন্ত্রক অধিদপ্তর তাদের ব্যাগ থেকে মাদক রাখার ভিডিও ধারনকারী সালমা বেগম বলেন, শাহজাহানকে বারবার ফাঁসানো হচ্ছে।সকলকে বাহির করে ঘর তারা কি করছে, আমি পাশের ঘর থেকে ভাঙ্গা দরজার ফাঁক দিয়ে ভিডিও করার চেষ্টা করি। মাদক নিয়ন্ত্রক অধিদপ্তরের লোক দেখে আমার দিকে এগিয়ে আসছে দেখে মোবাইল চুলায় ফেলে দেই। পরে আমার কাছে এসে মোবাইল না পেয়ে লোকটি আমাকে মোবাইলের জন্য মারধোর ও শারিরীক ভাবে লাঞ্চিত করে। তারা ব্যাগ থেকে মাদক বের করে ঘরের বাহিরে এসে দেখায় মাদক পেয়েছে।

Manual4 Ad Code

৯ নং ইসলামপুর ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের সবুজুর রহমান সবুজ মেম্বার বলেন, শাহজাহান মিয়া মাদক ব্যবসা করে আমার জানা নেই। সে দিন তার বাড়িতে মাদক বিষয়ে অভিযান হয়েছে ও মাদক পাওয়া গেছে শুনেছি। সব কিছু শুনে আমার ধারনা বিষয়টি সাজানো। আর আহমদ আলীর উপর এলাকায় নানা অভিযোগ সহ মাদক ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে। তার বিষয়ে কেহ সাহস করে কথা বলেনা।

শাহজাহানের স্ত্রী মাজিরুন বেগম বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের লোকেরা সাজানো মাদক রেখে যাওয়ার সময় আমার ১৮ মাসের শিশুসহ আমাকে ধরে নিয়ে যায়। কোথায় এক অফিসে বসিয়ে রাখে। পরে রাতে কমলগঞ্জ থানায় দেয়। তারা আমাকে জেলে পাঠায়। ৪ দিন পর আমি জামিন পেয়েছি। আমার শিশু জেল খেটেছে, সে বড় হয়ে যখন জানবে শিশু অবস্থায় জেল খেটেছে। সে মানষিক ভাবে খুব কষ্ট পাবে। এর জবাব কে দেবে?

এব্যাপারে আহমদ আলী তার উপর আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি মাদক ব্যবসা করিনা। আমি চা পাতার ব্যবসা করি। আমি এর আগেও অনেক মাদক ব্যবসায়ীকে পুলিশকে দিয়ে ধরিয়ে দিয়েছি।

Manual3 Ad Code

এ ব্যাপারে কমলগঞ্জ থানার তদন্ত ওসি( বর্তমানে কুলাউড়া থানায় কর্মরত) শামীম আখন্দ বলেন, আমি একবার রুস্তুম নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে মাদক সহ গ্রেফতার করি। ঐ সময় জানতে পারি একটি মদকের চালান আসবে। শাহজাহান চালান রিসিভ করবে। এই জন্য তাকে ধরে এনেছিলাম তার মাধ্যমে চালানটি ধরার জন্য। পরে চালানটি আর না আসায় ওকে ছেড়ে দেই। ৫০ হাজার টাকা নেওয়ার বিষয় ঠিক নয়। আর আহমদ আলী মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত অনেক অভিযোগ পেয়েছি। ওকে মাদক সহ ধরার চেষ্টা করছি।কিন্ত মাদক সহ ধরতে পারিনি।

কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আবু জাফর মাহফুজুুল কবির বলেন, আমার থানার পুলিশ কোন অভিযান করেনি। রাত ১০ টার দিকে মাদক নিয়ন্ত্রক অধিদপ্তর মাজিরুন বেগমকে আমার থানায় হস্থান্তর করেছে।

মাদক নিয়ন্ত্রক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রাশেদুজ্জামান বলেন, আমার অধিদপ্তর থেকে অভিযান চালানো হয়েছে। মাদক নিয়ন্ত্রক অধিদপ্তর লোক মাদক রেখে ফাঁসিয়েছেন ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবিষয়ে আপনারা কি স্বাক্ষ্যী দেবেন।

Manual8 Ad Code

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code