আজ সোমবার, ২৭শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সীমান্তে কেন বিএসএফকে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করতে দিচ্ছে না বিজিবি

editor
প্রকাশিত জানুয়ারি ১৩, ২০২৫, ০৬:৩৫ পূর্বাহ্ণ
সীমান্তে কেন বিএসএফকে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করতে দিচ্ছে না বিজিবি

Sharing is caring!

Manual3 Ad Code

টাইমস নিউজ 

Manual5 Ad Code

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের একটি অংশে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ নিয়ে গত তিন-চার দিন ধরে একরকম টানাপড়েন বা উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং নওগাঁ জেলা সংলগ্ন সীমান্তের ভারতের দিকের অংশে বেড়া নির্মাণ নিয়ে বাংলাদেশ অংশ থেকে বাধা দেওয়া হয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার চৌকা সীমান্তের বাংলাদেশ-ভারত দুই দিকেই গ্রামের মানুষজন জড়ো হয় সীমান্তরক্ষীদের সঙ্গে। দুই দিকেরই বেশকিছু ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা গেছে, বাংলাদেশ অংশে বেশি সংখ্যক লোকজন জড়ো হয়েছে, অন্যদিকে ভারত অংশে কিছু মানুষকে লাঠি রামদা, কাস্তের মতো অস্ত্র হাতে ‘বান্দে মাতরম’ স্লোগান দিতেও দেখা যায়।

 

ঘটনার সূত্রপাত হয় গত সোমবার। চৌকা সীমান্তের অপর পারে ভারতের মালদহ জেলার বৈষ্ণবনগর থানার সুকদেবপুর এলাকায় বেড়া নির্মাণের তৎপরতা দেখা যায়।

Manual5 Ad Code

সীমান্তের ১২০০ গজের মতো অংশে কোনো কাঁটাতারের বেড়া ছিল না এবং সেই বেড়া তৈরির পূর্বপ্রস্তুতি হিসাবে ভারতের অভ্যন্তরে ১০০ গজ ভেতরে মাটি খোঁড়া হচ্ছিল বলে জানান ৫৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া। বিজিবি থেকে এনিয়ে বাধা দেওয়া হয় এবং সাময়িকভাবে কাজ থামানো হয়।

Manual3 Ad Code

নিয়ম অনুযায়ী সীমান্ত লাইন থেকে দেড়শ গজের মধ্যে কিছু করা হলে সেটা অপর পাশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে সঠিক নিয়ম মেনে অবহিত করতে হয় যেটা এক্ষেত্রে ভারতের বিএসএফ বাংলাদেশের বিজিবিকে জানায়নি বলে জানান লে. কর্নেল কিবরিয়া।

সোমবার দুই দেশের বাহিনীর পতাকা-বৈঠক হলেও মঙ্গলবারে আবারও নির্মাণকাজ শুরু হয়। মঙ্গলবারেও দুই পক্ষের বৈঠক হয় এবং তার পরও বুধবারে আবারও একই পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি হয়।

বিজিবির বেশ কয়েকজন জানান, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী শূন্য রেখা বরাবর দুই দেশের অন্তত দেড়শ গজের মধ্যে অবকাঠামো নির্মাণ করতে হলে দুই দিকের সম্মতির প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশ-ভারতের ১৯৭৫ সালের নীতিমালা অনুযায়ী সীমান্ত লাইন নির্ধারিত হওয়ার পর লাইনের উভয় পাশে ১৫০ গজের মধ্যে কোনো পক্ষই স্থায়ী বা অস্থায়ী সীমান্ত রক্ষী বা সশস্ত্র কর্মী রাখবে না এবং উভয় পাশে ১৫০ গজের মধ্যে (মোট ৩০০ গজ এলাকায়) কোনো প্রতিরক্ষামূলক কাঠামো, যেমন পরিখা বা অন্যকিছু থাকলে সেগুলো ধ্বংস বা ভরাট করতে হবে।

সর্বশেষ সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ের সৌজন্য সাক্ষাতের পর বিষয়গুলো ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে অবহিত করা হয়েছে এবং এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক।

বৃহস্পতিবার আর নির্মাণকাজ চালানো হয়নি বলে জানান ৫৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া।

 

বিএসএফের একজন কর্মকর্তা অবশ্য বিবিসিকে জানিয়েছেন, বেড়া নির্মাণের কাজটি আগে থেকে অনুমোদন সাপেক্ষেই করা হয়েছে।

মঙ্গলবারে বিএসএফের সাউথ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ারের ডিআইজি এবং মুখপাত্র এন কে পাণ্ডে বিবিসিসহ পশ্চিমবঙ্গের সাংবাদিকদের জানান, তেমন কোনো সমস্যার কিছু না, আমাদের বেড়া নির্মাণের কাজ চলছে, যেটায় অপর পাশ থেকে আপত্তি জানানো হয়েছিল যার জবাব দেওয়া হয়েছে, কাজের অগ্রগতি চলছে।

যদিও বৃহস্পতিবারে আর নির্মাণকাজ আর চালু করা হয়নি বলে জানানো হচ্ছে বিজিবির দিক থেকে। তবে প্রশ্ন হচ্ছে বারে বারে কাজ থামিয়েও আবার কেন চালু করা হলো, অথবা বিএসএফ যে অনুমোদনের কথা বলছে তা থাকলে সমস্যা হলো কেন?

এ বিষয়ে বিজিবি রাজশাহী ব্যাটালিয়নের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মো. ইমরান ইবনে আব্দুর রউফ বিবিসিকে জানান, এখানে অনুমোদন নিয়ে থাকলেও এক্ষেত্রে যে প্রটোকল বা নিয়মনীতি পালনের কথা সেগুলো মানা হয়নি। যারা মাঠে কাজ করেন তাদের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না এবং সাধারণত এমন সিদ্ধান্তগুলো উপর পর্যায় থেকে আসতে হয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।

কর্নেল রউফ বলছিলেন, প্রথম দফায় মনে করেন কোম্পানি লেভেলে হয়েছে, আমি জানি এটা সমাধান হবে না। তারপর ব্যাটালিয়ন কমান্ডার লেভেলে হলো, ওখানেও সমাধান হলো না। তারপর সন্ধ্যায় আমার সঙ্গে সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ে হলো। ওখানেও শেষ কথা এমন ছিল যে আমরা দুই পক্ষই অর্ডারবাউন্ড, আমাদের উপর থেকে যে আদেশটা আসবে আমরা সেটাই করব। এই মুহূর্তে আমরা উত্তেজনা প্রশমনের জন্য যেটুকু দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে, সেটা আমরা দেব। সাধারণত কাজগুলো এভাবেই হয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।

পতাকা বৈঠকের আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, তারা বলছিল ২০১৬ সালে এরকম মিটিং হয়েছিল, অনুমোদন পেয়েছে, আমরা বলেছি ২০২১ সালের আমাদের একটা চিঠি আছে যেখানে আমরা বলেছি অনুমোদন হয়নি, জয়েন্ট সার্ভে করার জন্য, যেটা হয় এটা। এটার কোনো উত্তর দেওয়া হয়নি, এখন ২৫ এ এসে বানানো শুরু করে দেয়া এটা কেমন কথা?

Manual3 Ad Code

নওগাঁর সীমান্তেও অনেকটা একই ধরনের বিষয় হয়েছে যেখানে বিএসএফের দিক থেকে পুরনো অনুমোদনের কথা বলা হচ্ছে কিন্তু বাংলাদেশের দিকে বিষয়টি মীমাংসিত না বলে উল্লেখ করেন তিনি।

Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code