আজ রবিবার, ৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সুনামগঞ্জে ফসল রক্ষা বাঁধের সরকারি রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান-উপদেষ্টার সহযোগিতা কামনা

editor
প্রকাশিত মার্চ ১৩, ২০২৫, ০৭:৩৯ অপরাহ্ণ
সুনামগঞ্জে ফসল রক্ষা বাঁধের সরকারি রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান-উপদেষ্টার সহযোগিতা কামনা

Sharing is caring!

Manual3 Ad Code
মোঃ ওবায়দুল হক মিলন, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:

কাবিটা স্কীম প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটি সুনামগঞ্জ কর্তৃক বাঁধের কাজ শেষের দাবি প্রত্যাখ্যান করে সংবাদ সম্মেলন করেছে হাওর বাঁচাও আন্দেলন। তারা এ বিষয়ে সহযোগিতা চেয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা বরাবরে স্মারলিকলিপি দিয়েছে।

বুধবার (১২ মার্চ) সকালে শহীদ জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরীতে সাংবাদিক সম্মেলন করে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পানি সম্পদ উপদেষ্টা বরাবরে স্মারক লিপি দেওয়া হয়।

হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ সভাপতি অধ্যক্ষ চিত্তরঞ্জন তালুকদারের সভাপতিত্বে ও সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ ওবায়দুল হক মিলনের সসঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের জেলা কমিটির সভাপতি ইয়াকুব বখত্ বাহলুল।

Manual1 Ad Code

বক্তব্যে বলা হয়, চলতি বোরো মৌসুমে ফসলের সুরক্ষায় হাওরে ৫৮৭ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের জন্য ১২৭ কোটি টাকা বরাদ্দে ৬৮৬টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ি অর্থবছরের ১৫ ডিসেম্বর বাঁধের কাজ শুরু ও ২৮ ফেব্রুয়ারি কাজ শেষ করার কথা। আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, নির্ধারিত ১৫ ডিসেম্বর নিয়মরক্ষার্থে কয়েকটি বাঁধে লোক-দেখানো কাজ উদ্বোধন করা হয়েছিল।

Manual2 Ad Code

সর্বশেষ মার্চ মাস পর্যন্ত বাঁধের কাজ শুরু করা হয়েছে। তাতে ক্ষতিগ্রস্থ হবেন আমাদের কৃষক বন্ধুরা। ডিসেম্বরে শুরু হয়ে ফেব্রুয়ারিতে যে বাঁধের কাজ শেষ হবে সে বাঁধ আগাম বন্যার চাপ সামলাতে সক্ষম হবে। কিন্তু মধ্য ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে যে সব বাঁধের কাজ শুরু করে নিয়মরক্ষার কাজ করা হয়েছে আগাম বন্যা আসলে প্রথমেই সে বাঁধগুলো ভেঙ্গে যাবে।

এবার বাঁধের কাজে শুরু থেকেই একধরনের ঢিলেমি লক্ষ্য করা গেছে। মাঠপর্যায়ে গণশুনানি করে প্রকল্প নির্ধারণ ও পিআইসি গঠনের দাবি থাকলেও, সেটি করা হয়নি। স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের প্রভাবে পিআইসি গঠন করা হয়। এতে প্রশাসন ও পাউবো কর্মকর্তাদের একটা যোগসাজশ থাকে। যে কারণে ওই ব্যক্তিরা কাজে গাফিলতি করেন। আমরা মনে করি কাবিটা স্কীম বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটি দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে নিজেরা লাভবান হওয়ার জন্য কৃষকের হাওরের ধানকে হুমকির মূখে ফেলে দিয়েছেন। এবার কৃষকের ধান ঘোলায় তুলতে কোন সমস্যা হলে এর দায় কাবিটা স্কীম বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটিকেই নিতে হবে।

বাঁধের প্রাক্কলন থেকে শুরু করে পিআইসি গঠন পর্যন্ত চলচাতুরীর আশ্রয়নেয় পাউবো এবং প্রশাসন যার ফলে সঠিক সময়ে পিআইসি গঠন প্রক্রিয়া শেষ হয়নি এবং কাজ শুরু করতে দেরী হয়।। প্রাক্কলনে কিলো মিটার এর যে মাফ সেটা একটা চালাকী। আমরা হাওর বাঁচাও আন্দেলন এর পক্ষ থেকে অক্টোবর নভেম্বর মাসে যে জরিপটি পরিচালনা করি তাতে দেখা যায়, অনেক বাঁধের কিলোমিটারের পর কিলোমিটার মাটি ভরাটের প্রয়োজন নেই। কিন্তু প্রাক্কলনের সময় অক্ষত বাঁধেতে ক্ষতিগ্রস্থ দেখিয়ে সরকারের টাকা নয়-ছয়ের কাজ সেখান থেকে শুরু হয়। হাওরে অনেক বাঁধ রয়েছে যেখানে মাটি ভরাট না করে শুধু দুর্বাঘাস পরিস্কার করে মাটির প্রলেপ দেওয়া হয়েছে।

সরকারের বেধে দেওয়া ২৮ ফেব্রুয়ারি কোন বাঁধের কাজ শেষ হয়নি। আমাদের জরিপে আমরা দেখেছি সে সময় ৫৫-৬০ ভাগ কাজ হয়েছে। এরপর পাউবো ও প্রশাসন গোপনে ১০ মার্চ পর্যন্ত সময় বর্ধিত করেন। কিন্তু ০৯ মার্চ তারিখ জেলা প্রশাসন ও ডিসি সুনামগঞ্জ ফেসবুক ওয়ালে জানানো হয় যেহেতু সুনামগঞ্জ জেলায় কাবিটা বাঁধের কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং এ পর্যায়ে বাঁধের কাজে কোথাও কোন ত্রুটি থাকলে বিস্তারিতসহ পিআইসির নম্বর ও স্থান উল্লেখ করে ইউএনও কে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। কাজ শেষ হয়েছে দাবি করলে আমরা তা প্রত্যাখ্যান করি। আমাদের হিসেবে ১০ মার্চ পর্যন্ত ৭৫-৮০ ভাগ কাজ হয়েছে। ১০ মার্চ আমাদের বিভিন্ন উপজেলা কমিটির নেতৃবৃন্দকে হাওরে পাঠিয়ে আমরা দেখেছি অনেক বাঁধে মাটির কাজ হচ্ছে। তবে কার্যাদেশ অনুযায়ী মাটির কাজ হয়নি। পুরাতন বাঁধকে মেশিন দিয়ে মাটিকুড়ে নতুন করার চেষ্টা করা হয়েছে। অধিকাংশ বাঁধেই ঘাস লাগানো ও দুর্মোজ করা হয়নি। তাহলে কিভাবে জেলা প্রশাসন বলছে বাঁধের কাজ শেষ তা আমরা জানি না।

তারা বলেন, আমরা আমাদের সকল উপজেলা কমিটি, ইউনিয়ন কমিটি ও আপনাদের সংবাদ মাধ্যমে বুঝতে পারছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারেনি কাবিটা স্কীম বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটি। নির্ধারিত সময় শেষে ১০ মার্চ কাজ শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এসময়েও হাওর রক্ষা বাঁধের কাজ শেষ হয়নি।

১০ মার্চ হাওর বাঁচাও আন্দোলন বিভিন্ন উপজেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন হাওর পরিদর্শণ করে যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন তাতে দেখা যায়, শান্তিগঞ্জ উপজেলায় অপ্রয়োজনীয় বাঁধ নির্মান করা হয়েছে, পিআইসি নং ০১, ০৫, ০৬, ০৭, ৫৮, ৬৫। সাংহাই হাওরে নমেনখালি ক্লোজারে ১০ মার্চ মাটির কাজ শুরু হয়েছে কিন্তু ৯ মার্চ কাজ শেষ হয়েছে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। পিআইসি নং ৩১, ৩২, ৪১, ৪২, ৪৩, ৫৯, ৬০, ৬১, তে কাজের মান খুবই খারাপ। মাটির কমপেকশন করা হয়নি, ঘাস লাগানো হয়নি। মাচুখালি ক্লোজার, সাংহাই ক্লোজার, রাঙ্গামাটিয়া ক্লোজার, শল্লারধাইর, আহসানমারা, উতারিয়া, ভগলাডুবি ক্লোজার অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ। ভেদাখালী স্থায়ীবাঁধের কাজ শেষ না হওয়ার কারণে খাই হাওর অরক্ষিত। এর সাথে সাংহাই হাওর ও জড়িত। পাশাপাশি জামখলা হাওরে একটি স্থায়ী বাঁধ হচ্ছে কাইকাপন গ্রামের পাশে এটার কাজও এখনো শেষ হয়নি। এর ফলে ঝুঁকিতে রয়েছে জামখলা হাওর।

সুরমা নদীর বাম তীর দোয়ারাবাজার উপজেলার মান্নারগাঁও ইউনিয়নের পুটিপুশি এলাকা ৪৬ নাম্বার পিআইসি। এখানে বরাদ্দ ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭.৭৬ লাখ। এটা অপ্রয়োজনীয় বাঁধ। এখানে ৭ হাজার টাকার ধানও উৎপাদিত হয়না। অপ্রয়োজনীয় হওয়ায় গতবার এই পিআইসি বাতিল করা হয়েছিল। কিন্তু এবার পাউবোর এসও ও পিআইসি সংশ্লিষ্টরা মিলে আবারও এই পিআইসি করে অপ্রয়োজনীয় বাঁধ নির্মাণ করছে ১৭.৭৬ লাখ টাকা সরকারের ক্ষতি করেছেন।

Manual4 Ad Code

শাল্লা উপজেলার নদী ভাঙন স্থানে সাড়ে ৫ লাখ টাকার আরেকটি নতুন প্রকল্প হাতে নেয় পাউবো। কিন্তু এখন পর্যন্ত ওই প্রকল্পে কাজ শুরু হয়নি। নতুন প্রকল্পের ক্রমিক নাম্বারের হিসেবে ১১৮ নং পিআইসি হওয়ার কথা রয়েছে। ওই পিআইসির কাজ এখন পর্যন্ত শুরু না হওয়ায় আতঙ্কে আছেন এলাকাবাসী। ১০ মার্চ হাওরে গিয়ে দেখা যায়, ১১৩, ১১৪ নং পিআইসির মাটির কাজই চলমান রয়েছে এখনও। ৭৯ নং প্রকল্পে করা হয়নি কমপেকশন ও ড্রেসিং। এমনিতেই ৭৯ নং পিআইসিটি অপ্রয়োজনীয়। ৭৮নং ক্লোজার পিআইসিতে এখনও বাকি রয়েছে কার্পেটিং, গর্ত ভরাট কাজ। ৫৮নং পিআইসির কাজ শেষ করতে আরও ৬দিন সময় লাগবে। বরাম হাওরের ৬৬নং পিআইসি কাজ শেষ করতে আরও ১ সপ্তাহ লাগবে।

৯ মার্চ দিরাই উপজেলার ৮৩ ও ৮৪ নং পিআইসিতে গিয়ে দেখা যায়, বাঁধে মাটির কাজ চলমান। বাকী কাজ এখনো হয়নি। চানপুর ২৮ নম্বার পিআইসি ডুবন্ত বাঁধ ও ডালা বন্ধকরন ৭৭৩ মিটার কাজের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ১৩ লাখ ৯৮ হাজার ১৫৯ টাকা। অভিযোগ রয়েছে, এখানে কাজের চেয়ে বরাদ্দ বেশি। ৬৭, ৬৮ নং পিআইসির কাজের গুণগত মান খুবই খারাপ, তারা নতুন মাটি ব্যবহার না করে পুরাতন বাঁধ কুড়ে মাটি দিয়ে প্রলেপ দিয়েছে।

ছাতক উপজেলার ৭ নম্বর পিআইসির কাজ হয়েছে অত্যন্ত নিম্নমানের। চরমহল্লা ইউনিয়নের এই পিআইসির কাজে মাটি ভরাট সঠিকভাবে হয়নি। ড্রেসিং অসম্পূর্ণ, দুরমুস বাকি। বাঁধে কোনো ঘাসও লাগানো হয়নি। ২১ থেকে ২৮ নম্বর পর্যন্ত পিআইসির বাঁধগুলোতে মাটি ভরাট করা হলেও বাঁধের কম্পেকশন হয়নি।

জগন্নাথপুর উপজেলার নলুয়া হাওরের ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩ ও ১৪ নম্বর প্রকল্পের কিছু কিছু অংশে এখনো মাটি ভরাটের কাজ শেষ হয়নি।

তাহিরপুর উপজেলার বিভিন্ন হাওরে ৪৮, ৫০, ৫১, ৫২, ৫৩, ৫৪, ৫৯, ৬০, ৬১, ৬২ ও ৭৩ নং প্রকল্প পরিদর্শণ করা হয়। তখন পর্যন্ত এ প্রকল্পগুলোর মাটির কাজ চলমান।

Manual8 Ad Code

মধ্যনগর উপজেলার ০১ নং পিআইসি গুড়াডুবা কাজঠিকমতো হয়নি। কার্যাদেশের কোন শর্তপূরণ না করেন ইচ্ছে মাফিক কাজ হয়েছে। রুইবিল হাওরে ৩৪ নং পিআইসিটি অপ্রয়োজনীয়। দুই সাইটে ধানী জমি কিন্তু মাঝ বরাবর পিআইসি। ১৭ নং পিআইসি ও অপ্রয়োজনীয়। এটাতে যে পরিমান কাজ হয়েছে তারও গুণগতমান খুবই খারাপ। ১১, ১২, ১৩, ১৪ নং পিআইসি বাঁধগুলোও অপ্রয়োজনীয়। ১৩ নং ইটাউরীর সামনে কাইল্যানী হাওর কিছু জায়গা গুরুত্ব পূর্ণ বাকী সব অপ্রয়োজনীয়।

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ১৭ নং পিআইসিতে অর্ধেক কাজ হয়েছে। পিআইসি নং ০৯ বালিমাটি দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে।আরো অন্যান্য উপজেলায় একই রকম চিত্র লক্ষ করা গেছে।

এ সময় বক্তব্য রাখেন হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদ উল্লাহ সরকার, সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায়, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক একে কুদরত পাশা, বাঁধ বিষয়ক সম্পাদক রাজু আহমেদ, জেলা কমিটির সহ সভাপতি মুর্শেদ আলম, আলীনুর, যুগ্ম সম্পাদক জিয়াউর রহমান, ওবায়দুল মুন্সীসহ অনেকে। তারা বলেন, হাওরের বোর ফসল রক্ষায় প্রাক্কলন পূর্ব থেকেই আমরা কৃষকের পক্ষে বিভিন্ন দাবি জানিয়ে আসছি। যা আপনার প্রচার ও প্রকাশ করেছেন। আমরা বলছি অনতি বিলম্ভে হাওরের বোর ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ শেষ করতে হবে। যেসব পিআইসি ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাঁধের কাজ শেষ করতে পারেনি তাদের বিল যেন পরিশোধ করা না হয়। আবার যারা সঠিক সময়ে বাঁধের কাজ শতভাগ শেষ করেছে তাদের শতভাগ টাকা পরিশোধের ও দাবি জানাচ্ছি। অন্যতায় হাওরে বিপর্যয় ঘটলে এর দায় কাবিটা স্কীম বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটিকেই নিতে হবে। আমরা হাওরের বিষয়ে রাপথ সরব রয়েছি প্রয়োজনে হাওরের বিষয়ে আদলতের স্মরাপন্ন হবো। এসময় হাওর বাঁচাও আন্দোলনের আরো বিভিন্ন স্তরের  নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দরাও উপস্তিত ছিলেন।

Manual1 Ad Code
Manual2 Ad Code