আজ মঙ্গলবার, ১৯শে আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সিলেটে দখলকারী জালিয়াত চক্রের স্বরূপ উন্মোচন উপলক্ষে এসএমপির প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত

editor
প্রকাশিত আগস্ট ১৮, ২০২৫, ০৭:৪১ অপরাহ্ণ
সিলেটে দখলকারী জালিয়াত চক্রের স্বরূপ উন্মোচন উপলক্ষে এসএমপির প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত

Sharing is caring!

উৎফল বড়ুয়া, সিলেট:
সিলেটনগরীর কোতোয়ালী মডেল থানাধীন সাগরদিঘীর পাড়স্থ এস.এ. ১৬৮৭ নং খতিয়ানের অন্তর্গত ৪১নং দাগের ১.১০ একর ভূমি দখলকারী জালিয়াত চক্রের স্বরূপ উন্মোচন উপলক্ষে প্রেস ব্রিফিং করেন সোমবার ১৮ আগস্ট সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার মোঃ রেজাউল করিম, পিপিএম-সেবা।
এসময় পুলিশ কমিশনার বলেন, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের কাছ থেকে অভিযোগ আসে এই জায়গায় দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপ পরিচালিত হচ্ছে। মাদক ব্যবসা, গ্যাং সক্রিয়তার মতো অপরাধে এলাকাটি বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ভদ্র ও শান্তিপ্রিয় মানুষজন পরিবার-পরিজন নিয়ে এই এলাকায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই তারা পুলিশের কাছে স্মারকলিপি জমা দেন।
তিনি বলেন, “আমরা অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টিকে দায়িত্ব হিসেবে নিয়েছি , জনগনের সেবার জন্যই আমরা আছি। এখানে আমরা দেখতে পাই, ‘ড্রিম সিটি’ নামে জায়গাটি একটি সংঘবদ্ধ চক্রের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় জালিয়াতির মাধ্যমে গড়ে তোলা হয়েছে।”
তদন্তে উঠে আসে, ২০০৬ সালে কথিত ড্রিম সিটির জমির প্রকৃত মালিক রজনী রঞ্জন দত্তের তিন সন্তানের মধ্যে  একজন এর নাম  ব্যবহার করে  অন্যব্যক্তি  এনআইডি তৈরি করে । তাকে রজনী রঞ্জনের দ্বিতীয় ছেলে হিমাংশু কুমার দত্ত হিসেবে পরিচয় দিয়ে কাগজপত্র জাল করা হয়। এনআইডির ঠিকানা অনুযায়ী বালাগঞ্জের উমেরগাহ গ্রামের খোঁজ নিতে গিয়ে পুলিশের কর্মকর্তারা দেখতে পান সেখানে এমন কোনো গ্রাম বা ব্যক্তি নেই।
পরবর্তীতে অনুসন্ধান করে জানা যায়,  তিনি বর্তমানে ভাতালিয়া এলাকায় বসবাস করছেন। তাকে এনে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় সে একজন সহজ-সরল মানুষ, জনৈক ভূমিদস্যু ইকবাল, সামরান, আনোয়ার, ছমিরন,আইজ্যাকগং তাকে ভয়ভীতি ও প্রলোভন দেখিয়ে এই প্রতারণার কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। তার নামে এনআইডি, পাসপোর্ট, এমনকি একটি আমমোক্তারনামা (পাওয়ার অব অ্যাটর্নি) এবং রেজিস্ট্রিকৃত দলিল তৈরি করা হয়।
অনেকে প্রশ্ন তোলেন, কেন এই এলাকায় পুলিশ ক্যাম্প বসানো হয়েছে। কমিশনার বলেন, “এটি অস্থায়ী ক্যাম্প, যার উদ্দেশ্য হলো জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা।” তিনি আরও বলেন, “বিভিন্ন চক্র পুলিশের নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে  এই জায়গাটি দখলের জন্য বারবার অপচেষ্টা করে। তবে আমরা জনগণের স্বার্থে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছি।”
তিনি জানান, প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটিত হয়েছে এবং সরকার যে জায়গার মালিক, সেই জায়গা সরকারের কাছেই থাকবে। সরকার যাকে দায়িত্ব দেবে, সেই ব্যক্তি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করবেন।
তিনি বলেন, “আমরা দীর্ঘদিনের জালিয়াতি সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে সক্ষম হয়েছি। এটি সম্ভব হয়েছে আপনাদের সহযোগিতার মাধ্যমে। এখানে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের পর থেকে আর কোনো অঘটন ঘটেনি। যারা অবৈধভাবে জায়গা দখল করে রেখেছে কিংবা অন্যায়ভাবে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে, তাদের অনুরোধ করছি—নিজে থেকেই সরে যান। অন্যথায়, আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অপরাধী যেই হোক, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
তিনি বলেন, “আমরা এখানে জুয়ার আসর ভেঙে দিয়েছি, মাদক এবং গ্যাং অপরাধ এর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছি। পুলিশ এখন জনগণের সেবায় নিয়োজিত এবং যে কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে শক্তভাবে কাজ করছে।”
উল্লেখ যে, রজনী রঞ্জন গুপ্ত ১৯৪৬ সালে ভারতে চলে যান এবং তিনিসহ তার উত্তোরাধিকার মৃত্যুবরণ করায় প্রতারক চক্র তার ১১০ শতক ভূমি আত্মসাৎ করার নিমিত্তে ভূয়া দলিল ও জাল-জালিয়াতির আশ্রয় গ্রহণ করে।
উক্ত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের বিভিন্ন পদমর্যাদার অফিসারবৃন্দ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিকবৃন্দ।