আজ সোমবার, ৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

যে কারণে তরমুজের বাম্পার ফলন

editor
প্রকাশিত মার্চ ২২, ২০২৫, ০৩:০২ পূর্বাহ্ণ
যে কারণে তরমুজের বাম্পার ফলন

Sharing is caring!

Manual2 Ad Code

টাইমস নিউজ

Manual7 Ad Code

এ বছর বরিশাল বিভাগজুড়ে আগাম তরমুজ উৎপাদন লাভবান হয়েছেন কৃষক। কোনও ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াই ফসল কাটতে পারায় চাহিদামাফিক লাভ তাদের এ খুশি এনে দিয়েছে। তবে এক ধরনের ভাইরাস তরমুজের কিছু ক্ষেত বিনষ্ট করেছে।

না হলে আগাম তরমুজে বাম্পার ফলনের আশা ছিল কৃষকের। এরপরও লাভের অংশ ভালো থাকায় প্রতি বছর তরমুজে উৎপাদনে বাড়ছে জমির পরিমাণ। এর সঙ্গে বাড়ছে কৃষকেরও সংখ্যা।

Manual4 Ad Code

বরিশাল খামারবাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র থেকে জানা গেছে, এ বছর বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় ৪৮ হাজার ৩৪৪ হেক্টর জমিতে তরমুজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। সেখানে ৫৪ হাজার ৫৫১ হেক্টর জমিতে তরমুজ উৎপাদন হয়েছে। হেক্টর প্রতি তরমুজ এসেছে ৩৯ দশমিক ১৫ টন করে। মৌসুমের শেষ পর্যন্ত ১৮ লাখ ৮১ হাজার ১৭২ টন তরমুজ উৎপাদনের আশা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

নগরীর পোর্ট রোডের মৌসুমি আড়তদার জসিম উদ্দিন বলেন, প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত বরিশাল নগরীর পোর্ট রোড খালে ভিড়ছে শতাধিক ইঞ্জিনচালিত ট্রলার। প্রতিটি ট্রলার ১০ থেকে দেড় কেজি ওজনের তরমুজে ভরা। প্রতিটি ট্রলারে থাকছে আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার তরমুজ। সেখানে আসার পর আড়তদারদের মাধ্যমে তা বিক্রি হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকারদের কাছে। পাইকাররা বড় তরমুজ ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা শত হিসেবে ক্রয় করছেন। এরপর তা সড়ক ও নৌপথে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।

জসিম আরও বলেন, এ বছর কৃষক থেকে শুরু করে আড়তদার, পাইকার ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই খুশি। বিশেষ করে যারা প্রতি বছর দাদন দেন তাদের মুখে হাসি বেশি। কারণ কৃষক ক্ষেত থেকে তরমুজ কেটে সরাসরি পোর্ট রোডে যার কাছ থেকে দাদন নিয়েছেন তার আড়তে চলে আসেন। এরপর আড়তদার ঠিক করে দেন কত টাকায় শত বিক্রি করতে হবে। তার নির্র্দেশ মতো দাম নির্ধারণ করে এরপর তরমুজ বিক্রি করা হয়।

Manual4 Ad Code

কৃষক মাজেদ, হারুন হাওলাদার ও আয়নাল বলেন, এ বছর কোনও বৃষ্টি হয়নি যার ফলে ফলন খুব ভালো হয়েছে। তবে এক ধরনের ভাইরাস ক্ষেতের কিছু তরমুজ নষ্ট করেছে। ভাইরাসের বিষয়ে কৃষি কর্মকর্তারাও কোনও প্রতিকার দিতে পারেননি। কারণ ওই ভাইরাস দমনে তাদের কাছেও ছিল না কোনও ওষুধ। তবে ভাইরাস নির্মূলে ইতিমধ্যে কৃষি দফতর কাজ শুরু করেছে বলে কৃষকদের জানিয়েছেন ভোলার কৃষি কর্মকর্তারা। তারা আশা করছেন, আগামীতে এ ধরনের ভাইরাস মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।

watermellon1

কৃষকরা আরও জানান, প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হওয়ায় তারা এ বছর বাম্পার ফলনের আশা করেছিলেন। কিন্তু ওই ভাইরাসের কারণে তাদের সেই আশা পূরন হয়নি। তবে প্রতিটি ক্ষেত থেকে তারা তাদের চাহিদামাফিক তরমুজ কাটতে পেরেছেন। এভাবে ফলন পেলে আগামী বছর আগাম আবাদের সঙ্গে সঙ্গে জমির পরিমাণও বৃদ্ধি করবেন বলে জানান তারা।

কম দামে তরমুজ কেনার জন্য নগরীর অনেকেই এখন পোর্ট রোড তরমুজের পাইকাররা বাজারে যান। সেখানে আসা শামসুল ইসলাম বলেন, তরমুজের ফলন এ বছর অনেক ভালো। কিন্তু কম দামে তা কেনা সম্ভব হচ্ছে না। বড় থেকে ছোট তরমুজের দাম হওয়া উচিত ছিল ২০০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে। কিন্তু তরমুজ কিনতে হচ্ছে ৫০০ থেকে ২০০ টাকায়। বরিশালে কেজি হিসেবে তরমুজ বিক্রি হয় না।

তিনি আরও বলেন, কিন্তু খুচরা বিক্রেতারা তরমুজের ওজন বুঝে ৫০ টাকা কেজি দরে দাম হাঁকেন। এরপর আর কমাতে চান না। পরে মাপ দিলে বোঝা যায়, তারা তাদের হিসাব ঠিকই কষে রেখেছেন। ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি না করলেও ওই কেজিতেই ক্রেতার কাছ থেকে দাম আদায় করেছেন বলে জানান তিনি।

তরমুজের দাম কম না হওয়ার কারণ জানালেন কৃষক জবেদ হাওলাদার। তিনি জানান, ভোলার বিভিন্ন উপজেলায় তরমুজ চাষের জন্য জমি লিজ নিতে হয়। প্রতি বছর লিজের টাকা বাড়াচ্ছেন জমির মালিকরা। এরপর ওই জমি চাষ দেওয়া থেকে শুরু করে বীজ ফেলা পর্যন্ত শ্রম দিতে হয়। এরপর ফলন আসলে তা কেটে নৌযানে বিক্রির উদ্দেশে আনা হয়। সেখানে আবার যার কাছ থেকে দাদন নিয়েছিলেন তার কাছে গিয়েই তরমুজ দিতে হয়। ওই আড়তদার নির্ধারণ করে দেন তরমুজের শত কত টাকা করে বিক্রি করতে হবে। এতগুলো ধাপ পার হয়ে একটি তরমুজ বিক্রি করতে গেলে ৩০০ টাকার নিচে হলে লাভ থাকে না।

নাটোর থেকে আসা পাইকার জবেদ আলী জানান, তার এলাকায় তরমুজ বিক্রি হচ্ছে কেজি দরে। কিন্তু বরিশালে এসে ক্রয় করতে হচ্ছে শত হিসেবে। তাতে যে দাম হাঁকা হচ্ছে সে দামে কিনতে তার কোনোভাবেই লাভ থাকবে না। কারণ কেনার পর তাকে তা যানবাহন দিয়ে নাটোর নিতে হবে। এরপর সেখানেও খরচ আছে। ওই খরচ বাদ দিলে এরপর তার লাভের অংশ। তারা তিন জন পাইকার বরিশালে এসে তরমুজ কেনার চেষ্টা করছেন। এখানে তাদের যা খরচ হবে তাও তরমুজ কেনার মধ্যে পড়বে।

Manual6 Ad Code

আড়তদার জহির সিকদার বলেন, প্রতিদিন শতাধিক ট্রলারে তরমুজ আসছে পোর্ট রোডে। আসার সঙ্গে তা শ হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। এরপর তরমুজ তোলা হচ্ছে ট্রাকে। প্রতিদিন কমপক্ষে ৭০ থেকে ৮০ ট্রাক তরমুজ যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর অতিরিক্ত পরিচালক ড. মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম সিকদার বলেন, এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে তরমুজ চাষাবাদ হয়েছে। কোনও ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হওয়ায় ফলন ভালো হয়েছে। যার ফলে কৃষক থেকে শুরু করে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই লাভের অংশ পেয়েছে। আর তরমুজে লাভ ভালো থাকায় প্রতি বছর জমির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে তরমুজ চাষির সংখ্যাও। এ বছর প্রায় ১৯ লাখ টন তরমুজ উৎপাদন হবে। আর তরমুজের উৎপাদনে আগামী বছর চাষাবাদ জমির সঙ্গে বাড়বে কৃষকের সংখ্যাও।

Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code