আজ শুক্রবার, ২২শে আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দেড় দশক ধরে অকার্যকর বাংলাদেশ-পাকিস্তান জয়েন্ট ইকোনমিক কমিশন কার্যকর হবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

editor
প্রকাশিত আগস্ট ২১, ২০২৫, ০৪:৪১ অপরাহ্ণ
দেড় দশক ধরে অকার্যকর বাংলাদেশ-পাকিস্তান জয়েন্ট ইকোনমিক কমিশন কার্যকর হবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

Oplus_16908288

Sharing is caring!

স্টাফ রিপোর্টারঃ
পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা বাড়াতে ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কমিশন গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
 এ ছাড়া, গত দেড় দশক ধরে অকার্যকর থাকা বাংলাদেশ-পাকিস্তান জয়েন্ট ইকোনমিক কমিশন কার্যকর করা হবে বলেও জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) বিকেলে সচিবালয়ে পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খানের সঙ্গে বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন এসব কথা জানান।
এর আগে বুধবার রাতে তিনি চার দিনের সফরে ঢাকায় আসেন। সফরকালে চারটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হওয়ার কথা রয়েছে।
তিনি সরকারের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি ও ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দর, একটি ওষুধ শিল্প প্রতিষ্ঠান ও ইস্পাত কারখানা পরিদর্শন করবেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের ওপর পাকিস্তানের আরোপিত অ্যান্টি ডাম্পিং ডিউটি প্রত্যাহার, চামড়া ও চিনি শিল্প উন্নয়নে সহায়তা, ও ১ কোটি কেজি চা রপ্তানিতে ডিউটি ফ্রি সুবিধা পুনর্বহালসহ বেশ কিছু বিষয় চাওয়া হয়।
এসব বিষয়ে পাকিস্তান ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
গত অর্থ বছর পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ আমদানি করেছে ৭৮৭ মিলিয়ন ডলার এবং পাকিস্তানে রপ্তানি করেছে ৭৮ মিলিয়ন ডলার।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, খুবই ব্যাপক আলোচনা করেছি, জয়েন্ট ইকোনমিক কমিশন চালু করা এবং নতুন করে ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কমিশন গঠনের আলোচনা করেছি।
দুই দেশ যৌথভাবে বা বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে ইন্টারমিডিয়েট পণ্য উৎপাদন করতে পারলে তা উভয় দেশের জন্য লাভজনক হবে।
উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ প্রতিবছর ৮০ বিলিয়ন ডলার আমদানি করে, যার মধ্যে ১৫ বিলিয়ন ডলারের ফুড অ্যান্ড ইন্টারমিডিয়েট পণ্য। দুই দেশের মধ্যে এসব পণ্য বাণিজ্য বাড়ানোর সুযোগ আছে, সেইটা দেখার জন্য নতুন ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কমিশন গঠন করা হচ্ছে।
শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘আমরা কৃষি ও খাদ্যপণ্য, ফল আমদানি ও রপ্তানি নিয়ে আলোচনা করেছি। স্থানীয়ভাবে চিনি উৎপাদনে সক্ষমতা বাড়াতে পাকিস্তানের সহায়তা চেয়েছি।
মধ্যবর্তী পণ্য উৎপাদনে পাকিস্তানের বিনিয়োগ চেয়েছি। তারা আমাদের সব প্রস্তাব ইতিবাচকভাবে দেখেছে এবং নিউ কমিশনে এসব বিষয়ে আলোচনা হবে।’
বাংলাদেশ পাকিস্তানের দিকে ঝুঁকছে কি না— এ প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা সবার দিকে ঝুঁকছি। পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ঝুঁকছি। ভারত থেকেও পেঁয়াজ আনছি। সর্বাগ্রে বাংলাদেশের স্বার্থ, যেখানে দেশের স্বার্থ আছে, সেখানেই ঝুঁকছি।’
এ সময় বাণিজ্যসচিব মাহবুবর রহমান বলেন, ‘গত দেড় দশক পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য তেমন ছিল না বললেই চলে। খাদ্য ও পাথরসহ বিভিন্ন পণ্য আমরা নানা দেশ থেকে আমদানি করি, প্রতিযোগিতা দরে পাকিস্তান থেকে এসব পণ্য আনা গেলে প্রবলেম নেই।’
তিনি বলেন, ‘একই সঙ্গে আমরা আমাদের রপ্তানি বাড়ানোর দিকে গুরুত্ব দিছি। বর্তমানে পাকিস্তান থেকে ইমপোর্ট করি বেশি, রপ্তানি কম করি। আমরা রপ্তানি বাড়াতে পারলে দেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে।’
এদিকে আজ বৃহস্পতিবার শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানের সঙ্গে বৈঠক করেন জাম কামাল খান। বৈঠকে শিল্প উন্নয়নের ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি ও পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
শিল্প সচিব মো. ওবায়দুর রহমানের উপস্থিতিতে মতিঝিলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে শিল্প উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করতে পারে।
 তিনি এ সময় বাংলাদেশে চিনিশিল্প, চামড়াশিল্প, সিমেন্ট, জাহাজ নির্মাণ ও কৃষির উন্নয়নে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বৈঠকে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) ও পাকিস্তানের হালাল অথোরিটির মধ্যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সইয়ের বিষয়ে আলোচনা হয়।
এর আগে জাম কামাল খান খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদারের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের অফিস কক্ষে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। খাদ্য সচিব মো. মাসুদুল হাসানের উপস্থিতিতে বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা হয়।
এ সময় জাম কামাল খান দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধিসহ উভয় দেশের জনগণের কল্যাণে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এদিন ঢাকা চেম্বার আব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসি আই) সভাপতি তাসকিন আহমেদের সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন জাম কামাল খান। মতিঝিলে ডিসিসিআইয়ের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তাসকীন আহমেদ পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের এফটিএ স্বাক্ষর হলে দ্বিপক্ষীয় ব্যবসা-বাণিজ্য আরও সম্প্রসারিত হবে বলে জানান।
জাম কামাল খান বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান উভয়ই রপ্তানির ক্ষেত্রে তৈরি পোশাক এবং টেক্সটাইল খাতের ওপর অধিক মাত্রায় নির্ভরশীল, দুটো দেশেরই রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণের ওপর জোরারোপ করা প্রয়োজন।