আজ মঙ্গলবার, ১৪ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৯শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

৫৩ বছরেও সংরক্ষিত হয় নি বেলতলী বধ্যভূমি

editor
প্রকাশিত ডিসেম্বর ১৪, ২০২৪, ০৬:১৫ পূর্বাহ্ণ
৫৩ বছরেও সংরক্ষিত হয় নি বেলতলী বধ্যভূমি

Sharing is caring!

Manual7 Ad Code

টাইমস নিউজ 

Manual8 Ad Code

 

রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও সংরক্ষণের অভাবে অযত্নে অবহেলায় পড়ে আছে কুমিল্লার লাকসাম রেলওয়ে জংশন বেলতলী বধ্যভূমিটি। দিনে-রাতে এখন মাদকসেবী ও অপরাধীদের নিরাপদ আড্ডাস্থলে পরিণত হয়েছে ঐতিহাসিক এ স্থানটি।

Manual5 Ad Code

আনুমানিক ৩০ শতাংশ এলাকাজুড়ে বধ্যভূমিটির সীমানা। এখনো মাটি খুঁড়লেই বেরিয়ে আসবে মানুষের হাড়গোড়।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে পাক সেনারা বিভিন্ন বয়সের ১০ হাজার বাঙালি নারী-পুরুষকে নির্মম নির্যাতন ও হত্যা করে মাটি চাপা দেয় এখানে। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও এ ঐতিহাসিক স্থানটি রাষ্ট্রীয়ভাবে চিহ্নিত করা হয়নি। করা হয়নি স্থানটি সংরক্ষণও। নেই কোনো নামফলকও। লাকসাম রেলওয়ে জংশনের লাগোয়া দক্ষিণে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন তৈরি বাংকারের পাশে দুই হাজার ফুট এলাকাজুড়ে এ বধ্যভূমি। তবে রেলওয়ের লাকসাম চিনকি আস্তানা ডাবল রেললাইন নির্মাণকালে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিকদের দাবির মুখে ঠিকাদার সেখানে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করে দিয়েছিল। বধ্যভূমিটির ইতিহাস জানা এবং পাকসেনাদের নির্যাতনের প্রত্যক্ষ সাক্ষীদের অনেকেই এখন বেঁচে নেই।

যারা বেঁচে আছেন এবং মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের গবেষণা সূত্রে জানা যায়, পাক বাহিনী দেশের অন্যান্য এলাকার মতো ৭১ সালের ১৫ এপ্রিল লাকসাম দখল করে। এরপর পাক বাহিনী লাকসাম রেলজংশনের দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে অবস্থিত থ্রিএ সিগারেট কারখানায় ক্যাম্প স্থাপন করে। এ ক্যাম্পে পাক বাহিনী কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের পর যুদ্ধকালীন মিনি ক্যান্টনমেন্ট হিসাবে ব্যবহার করে লাকসাম রেলওয়ে জংশনকে।

এ মিনি ক্যান্টনমেন্টের অধীনে ছিল লাকসামসহ কুমিল্লার দক্ষিণ, চাঁদপুর, ফেনী ও নোয়াখালী অঞ্চল। এ অঞ্চল থেকে পাক বাহিনী শতশত বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষকে ট্রাকে করে তুলে নিয়ে আসত। তাদের মধ্যে নারীদের ওপর যৌন নিপীড়ন শেষে হত্যা করা হতো। এখানে মানুষকে হত্যার পর মাটি চাপা দেওয়া হতো।

বিশেষ করে ফেনী, নোয়াখালী ও চাঁদপুর অঞ্চলের ট্রেনে আসা যাত্রীদের পাকসেনারা ধরে নিয়ে যেত ওই থ্রিএ সিগারেট কারখানায়। সেখানে তাদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে হত্যার পর বেলতলী বধ্যভূমিতে মাটি চাপা দেওয়া হতো।

মুক্তিযুদ্ধের সময় লাকসাম রেলজংশনে ঝাড়ুদারের কাজে নিয়োজিত উপেন্দ্র মালির সহযোগী ও তার ভাগ্নে শ্রীধাম চন্দ্রদাস তার দেখা সে সময়ের ঘটনা সম্পর্কে এ প্রতিনিধিকে জানান, ৭১-এর ১৫ এপ্রিল পাকসেনারা লাকসাম আক্রমণ করে। পরদিন লাকসাম জংশন প্লাটফরমে কয়েকজন বাঙালির লাশ বিক্ষিপ্তভাবে পড়েছিল।

তৎকালীন রেলওয়ে স্যানেটারি ইন্সপেক্টর আমাকে ডেকে লাশগুলো সরানোর আদেশ দেন। আমি নিজেই লাশগুলো রেলওয়ে জংশনের দক্ষিণে নিয়ে মাটি চাপা দিই। শ্রীধাম আরও জানান, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় চাঁদপুর টোবাকো কোম্পানির কারখানায় স্বচোখে দেখেছেন পাকসেনাদের বর্বরতা। তিনি জানান, সারাদিন বেলতলীতে গর্ত খুঁড়ে রাখতাম। পরদিন সকালে সিগারেট ফ্যাক্টরি থেকে লাশগুলো এনে এখানে মাটি চাপা দিতাম। ওই সময় আমি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেকের লাশ মাটি চাপা দেওয়ার সময় স্থানটিকে চিহ্নিত করে রাখি। পরে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সে স্থান থেকে তার লাশ তুলে স্বজনদেরকে বুঝিয়ে দিই। পাক বাহিনীর হাত থেকে নিজে এবং মা-বাবার জীবন বাঁচাতে আমি বাধ্য হয়ে তখন লাশ মাটি চাপা দেওয়ার কাজটি করেছি। কত লাশ দুই হাতে মাটি চাপা দিয়েছি তার হিসাব নেই।

Manual4 Ad Code

শ্রীধাম জানান, সে সময়ের কথা মনে পড়লে এখনো রাতে ঘুম আসে না। শ্রীধাম আরও জানান, শুধু বধ্যভূমিতে লাশ মাটি চাপা দেওয়া ছাড়াও ট্রেনের শত শত যাত্রীকে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করা হতো। তাদেরকে সন্ধ্যার পর অনেক সময় মালবাহী ট্রেনের বগি ভর্তি করে চাঁদপুরে নিয়ে ডাকাতিয়া নদীতে ফেলে দিত।

মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ১৯৯৯ সালে ঢাকার একদল সাংবাদিকের অনুরোধে শ্রীধাম দাস বেলতলী বধ্যভূমি খুঁড়ে বের করেন বেশ কটি মাটি চাপা দেওয়া মানুষের হাড়গোড় ও কঙ্কাল। সে সময় উদ্ধার করা বেশ কটি মাথার খুলি ও কিছু হাড় বর্তমানে ঢাকায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এ স্থানটি রাষ্ট্রীয়ভাবে সংরক্ষণ করা জরুরি বলে মনে করছে সচেতন মহল।

Manual4 Ad Code

 

Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code