আজ শনিবার, ৮ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৩শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গণ-অভ্যুত্থানের গ্রাফিতির বইয়ের প্রচ্ছদকে গ্রেটার বাংলাদেশের মানচিত্র দাবিতে ভারতীয় গণমাধ্যমে অপপ্রচার : বাংলাফ্যাক্ট

editor
প্রকাশিত নভেম্বর ৮, ২০২৫, ০৯:২৯ পূর্বাহ্ণ
গণ-অভ্যুত্থানের গ্রাফিতির বইয়ের প্রচ্ছদকে গ্রেটার বাংলাদেশের মানচিত্র দাবিতে ভারতীয় গণমাধ্যমে অপপ্রচার : বাংলাফ্যাক্ট

Sharing is caring!

Manual4 Ad Code
অনলাইন ডেস্ক:
whatsapp sharing button
ছবি: বাংলাফ্যাক্ট

ঢাকা, ৮ নভেম্বর, ২০২৫ : গণ-অভ্যুত্থানের গ্রাফিতির বইয়ের প্রচ্ছদকে গ্রেটার বাংলাদেশের মানচিত্র দাবিতে ভারতীয় গণমাধ্যমে ধারাবাহিক অপপ্রচার শনাক্ত করেছে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) ফ্যাক্ট চেক ও মিডিয়া রিসার্চ টিম বাংলাফ্যাক্ট।

এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাফ্যাক্ট।

বাংলাফ্যাক্ট জানায়, ভারতীয় মূলধারার একাধিক গণমাধ্যম সম্প্রতি ‘গ্রেটার বাংলাদেশ’ নামে একটি ষড়যন্ত্রতত্ত্ব ঘিরে ধারাবাহিক গুজব ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করছে।

একটি গ্রাফিতির ছবিকে কেন্দ্র করে তারা নিয়মিত মনগড়া প্রতিবেদন প্রকাশ করছে, যার কয়েকটিতে বিষয়টিকে ‘যুদ্ধ পরিকল্পনা’ পর্যন্ত রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।

বাংলাফ্যাক্ট জানায়, গত ৩ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তুর্কি সংসদীয় প্রতিনিধিদল সাক্ষাৎকালে প্রধান উপদেষ্টা তাদেরকে আর্ট অব ট্রাইআমফ নামক গ্রাফিতির একটি বইটি উপহার দেন।

Manual6 Ad Code

বইটির প্রচ্ছদে শহীদ আবু সাইদ ও বাংলাদেশের মানচিত্রভিত্তিক একটি দেয়ালচিত্র (গ্রাফিতি) আঁকা রয়েছে।

প্রচ্ছদে আঁকা এই গ্রাফিতিকে কেন্দ্র করেই ড. ইউনূস তুর্কি কর্মকর্তাদের একটি ‘গ্রেটার বাংলাদেশ’ মানচিত্র উপহার দিয়েছেন মর্মে ভারতের মূলধারার মিডিয়া ফিনানসিয়াল এক্সপ্রেস, ফার্স্ট পোস্ট, ইন্ডিয়া ডট কম ও এবিপি লাইভ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

গ্রাফিতির বইকে ডকুমেন্ট আখ্যা দিয়ে এর মধ্যে ‘যুদ্ধ পরিকল্পনা’ আছে বলেও বায়বীয় সূত্রের বরাতে দাবি করেছে নিউজ এইটিন।

প্রধান উপদেষ্টা যে বইটি উপহার দিয়েছেন, সেটি মূলত ২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে আঁকা জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত গ্রাফিতির সংকলন।

ওই অভ্যুত্থানের পরের মাসেই, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে, ড. মোহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৯তম অধিবেশনে যোগ দেন।

সেখানে তিনি জো বাইডেন, বিল ক্লিন্টন ও জাস্টিন ট্রুডোসহ বিশ্বনেতাদেরকে এই বইটি উপহার দেন।

পরবর্তীতে আরও অনেক কূটনীতিক, প্রতিনিধি ও বিশ্বনেতাদেরকে তিনি এই বই উপহার দিয়েছেন।

Manual1 Ad Code

এমনকি গত বছর ৯ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রির সাক্ষাতের সময়ও প্রধান উপদেষ্টা তাকে এই বইটি দেখান।

বাংলাফ্যাক্ট জানায়, বইটির প্রচ্ছদে যে মানচিত্রের ছবি দেখা যায়, সেটি মূলত একটি গ্রাফিতি চিত্র— যা কোনো পেশাদার শিল্পী বা সরকারি উদ্যোগে নয়, বরং শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে আঁকা।

স্বাভাবিকভাবেই, এ ধরনের গ্রাফিতি বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক মানচিত্রের সঙ্গে পুরোপুরি পরিমিতভাবে মেলেনি।

তবে এর অর্থ এই নয় যে চিত্রটিতে বাংলাদেশের বাইরে কোনো ভূখণ্ড অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

গত ১৫ অক্টোবর যখন প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস পাকিস্তানের যৌথ বাহিনীর চেয়ারম্যান জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, তখন বইটির এই প্রচ্ছদকেই তথাকথিত ‘গ্রেটার বাংলাদেশ’-এর প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন শুরু করে ভারতীয় গণমাধ্যম।

সেই সময় বইটি উপহার দেওয়ার একটি ছবিকে ঘিরে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো প্রচার শুরু করে যে ড. ইউনূস নাকি পাকিস্তানি জেনারেলকে এমন একটি মানচিত্র উপহার দিয়েছেন, যেখানে বাংলাদেশের পতাকায় ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল সংযুক্ত করা হয়েছে।

বাংলাফ্যাক্ট অনুসন্ধান দল জানায়, ‘গ্রেটার বাংলাদেশ’-সংক্রান্ত প্রপাগান্ডা এবারই প্রথম নয়। এর আগে চলতি বছরের পহেলা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করেও ব্যাপক গুজব ছড়ানো হয়, যা ভারতীয় গণমাধ্যম থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত দেশটির পার্লামেন্ট পর্যন্ত গড়ায়।

গত ১৭ মে ভারতীয় গণমাধ্যম দি ইকোনোমিক টাইমস ‘বাংলাদেশে তুরস্ক-সমর্থিত গোষ্ঠী ভারতের ভূখণ্ডসহ গ্রেটার বাংলাদেশ মানচিত্র প্রচার করছে’— শিরোনামে একটি খবর প্রকাশ করে।

ওই প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে দেশটির আরো অন্তত দশটি গণমাধ্যম একই ধরনের সংবাদ পরিবেশন করে।

এসব প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, তুরস্কভিত্তিক একটি এনজিও নাকি বাংলাদেশে ‘গ্রেটার বাংলাদেশ’-এর মানচিত্র প্রচার করছে।

বাংলাফ্যাক্ট তখন অনুসন্ধান করে দেখায়, ভারতীয় গণমাধ্যমে উল্লেখিত ‘সালতানাত-ই-বাংলা’ নামে কোনো সংগঠনের অস্তিত্ব বা কার্যক্রমের প্রমাণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাওয়া যায়নি।

তবে ২০২৫ সালের ১৪ এপ্রিল, পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) সেন্টার ফর বেঙ্গল স্টাডিজ (সিবিএস) নামের একটি সংগঠন ‘ভালো কাজের হালখাতা’ শিরোনামে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করে।

সেখানে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে বাংলা সালতানাতের মানচিত্র প্রদর্শন করা হয়— যা ছিল ইতিহাসভিত্তিক প্রদর্শনী, তথাকথিত ‘গ্রেটার বাংলাদেশ’-এর মানচিত্র নয়।

সিবিএস কোনো এনজিও নয় ও তুরস্ক ভিত্তিক সংগঠনও নয় বলেও নিশ্চিত হয় বাংলাফ্যাক্ট।

Manual6 Ad Code

বাংলাফ্যাক্ট জানায়, ওই প্রদর্শনীর একটি ছবিকে কেন্দ্র করেই ভারতীয় গণমাধ্যমে এমন মাত্রায় অপপ্রচার চালানো হয় যে, বিষয়টি শেষ পর্যন্ত দেশটির পার্লামেন্ট পর্যন্ত গড়ায়।

গত ৩১ জুলাই ভারতের রাজ্যসভায় কংগ্রেস দলের সংসদ সদস্য রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা ‘গ্রেটার বাংলাদেশ’ প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেন।

এর জবাবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এক লিখিত বিবৃতিতে বাংলাফ্যাক্টকে উদ্ধৃত করে বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারের ফ্যাক্ট-চেকিং প্ল্যাটফর্ম ‘বাংলাফ্যাক্ট’ বলেছে, ‘সালতানাত-ই-বাংলা’ নামে কোনো সংগঠনের অস্তিত্বের প্রমাণ তারা পায়নি। তারা আরও জানিয়েছে, যে মানচিত্রটি দেখানো হয়েছে, তা ছিল ইতিহাসভিত্তিক একটি প্রদর্শনীর অংশ, যেখানে প্রাচীন বাংলার সালতানাত বা ‘সুলতানাত’-এর সময়ের মানচিত্র দেখানো হয়েছিল।

এই প্রদর্শনীটি ২০২৫ সালের ১৪ এপ্রিল, পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজন করা হয়।

বাংলাফ্যাক্ট জানায়, ‘একটি বইয়ের প্রচ্ছদের ছবিকে কেন্দ্র করে ভারতীয় গণমাধ্যম ধারাবাহিকভাবে প্রপাগান্ডা ও ষড়যন্ত্রতত্ত্ব প্রচার করছে। বাস্তবতা হচ্ছে, এটি ছিল অভ্যুত্থান-পরবর্তীকালে শিক্ষার্থীদের হাতে আঁকা দেয়াললিখন/গ্রাফিতির একটি ছবি। এই ছবিকে কেন্দ্র করে ভারতীয় গণমাধ্যমে চলমান ‘গ্রেটার বাংলাদেশ’ প্রপাগান্ডা যেমন ভিত্তিহীন, তেমনি হাস্যকরও বটে।

গত বছর থেকে ভারতীয় গণমাধ্যম এবং ভারত থেকে পরিচালিত বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, পাশাপাশি দেশেও বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে বাংলাদেশকে জড়িয়ে, অন্তর্বর্তীকাল সরকার, চব্বিশের আন্দোলনে অংশ নেয়া দল ও সংগঠনের বিরুদ্ধে গুজব, ভুয়া তথ্য প্রচারের হার বৃদ্ধি পেয়েছে বলে প্রমাণ পেয়েছে ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠানগুলো।

ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া শত শত ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে বাংলাদেশের ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠান বাংলাফ্যাক্ট।

Manual8 Ad Code

বাংলাদেশে চলমান গুজব, ভুয়া খবর ও অপতথ্য প্রতিরোধ করে জনগণের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়ায় দায়িত্ব পালন করছে বাংলাফ্যাক্ট।বাসস

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code