আজ রবিবার, ১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতির শ্রদ্ধা

editor
প্রকাশিত ডিসেম্বর ১৪, ২০২৫, ০৬:০৭ অপরাহ্ণ
শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতির শ্রদ্ধা

Sharing is caring!


Manual6 Ad Code

অনলাইন ডেস্ক:

Manual2 Ad Code

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষ্যে রাজধানীর মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে জাতির শ্রেষ্ঠ মেধাবীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

Manual6 Ad Code

আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে তিনি স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি সম্মান জানান।

শ্রদ্ধা নিবেদনের পর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসের সবচেয়ে মর্মন্তুদ অধ্যায়গুলোর একটি। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর, মহান বিজয়ের ঠিক আগমুহূর্তে পরিকল্পিতভাবে দেশের শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়। এ দিনটি জাতির জন্য এক গভীর শোক ও বেদনার স্মারক হয়ে আছে।

নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে যখন পুরো জাতি বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে, তখনই দেশীয় নরঘাতক রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও শান্তি কমিটির সদস্যরা বুদ্ধিজীবী হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে। বিজয়ের চূড়ান্ত মুহূর্তে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়, যা সেদিন শুধু জাতিকেই নয়, গোটা বিশ্বকেও হতবিহ্বল করে তোলে।

Manual8 Ad Code

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাত্র দুই দিন আগে, ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর রাতের অন্ধকারে ঘাতক চক্র ঢাকা শহরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় দেড়শ বুদ্ধিজীবী ও বিভিন্ন পেশার কৃতী মানুষকে চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে যায়। সান্ধ্য আইনের সুযোগে তালিকা ধরে শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী-সাহিত্যিক, সংস্কৃতিসেবী এবং পদস্থ সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তাদের নিজ নিজ বাসা থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে নেওয়া হয়।

পরদিন সকালে ঢাকার মিরপুরের ডোবা-নালা ও রায়েরবাজার ইটখোলায় বিক্ষিপ্তভাবে পড়ে থাকতে দেখা যায় অনেক নিথর দেহ। কারো শরীর ছিল বুলেটবিদ্ধ, কারো অমানুষিক নির্যাতনে ক্ষতবিক্ষত। অনেকের হাত পেছনে বাঁধা অবস্থায় বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়। স্বাধীনতার উষালগ্নে এমন বর্বরতার সংবাদে স্বজনহারানো মানুষের কান্না ও শোক পুরো জাতিকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল।

Manual3 Ad Code

হত্যার আগে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের ওপর ভয়াবহ নির্যাতন চালানো হয়েছিল বলেও তথ্য উঠে আসে। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে জাতীয়ভাবে প্রকাশিত বুদ্ধিজীবী দিবসের সংকলন, পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং আন্তর্জাতিক সংবাদ সাময়িকী নিউজ উইক-এ সাংবাদিক নিকোলাস টমালিনের রচিত নিবন্ধ থেকে জানা যায়, শহীদ বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা মোট ১ হাজার ৭০ জন।

বাঙালি জাতির দীর্ঘ মুক্তিসংগ্রামে শহীদ বুদ্ধিজীবীরা তাঁদের মেধা, মনন ও লেখনীর মাধ্যমে স্বাধীনতার আন্দোলনে প্রেরণা জুগিয়েছেন। তাঁরা জাতিকে অধিকার আদায়ের সংগ্রামে উদ্দীপ্ত করেছেন এবং স্বাধীনতার পথ দেখিয়েছেন। সে কারণেই স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের কাছে তাঁদের অস্তিত্ব ছিল অসহনীয়।

যদিও ১৪ ডিসেম্বরকে বুদ্ধিজীবী হত্যার দিন হিসেবে স্মরণ করা হয়, তবে এই ঘৃণ্যতম অপকর্মের সূচনা হয়েছিল ১০ ডিসেম্বর থেকেই। ওই সময় থেকে সপ্তাহজুড়ে তালিকাভুক্ত বুদ্ধিজীবীদের রাতের আঁধারে ধরে নিয়ে মিরপুর ও রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে ঢাকার মিরপুরে প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৯১ সালে ঢাকার রায়েরবাজারে আরেকটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ শুরু হয়ে ১৯৯৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর তা উদ্বোধন করা হয়।

প্রতি বছর ১৪ ডিসেম্বর শোকের আবহে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়। এ দিন দেশের সর্বত্র জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয় এবং শোকের প্রতীক কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়।

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code