আজ রবিবার, ২রা নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৭ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চালু হয়েছে ‘স্কিন ব্যাংক’

editor
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৫, ০২:২৩ পূর্বাহ্ণ
বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চালু হয়েছে ‘স্কিন ব্যাংক’

Sharing is caring!

Manual8 Ad Code

টাইমস নিউজ 

Manual3 Ad Code

দেশে প্রথমবারের মতো জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চালু হয়েছে ‘স্কিন ব্যাংক’। রোববার ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগের উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান।

ইতোমধ্যে চিকিৎসাকেন্দ্রটিতে চারজন দাতার চামড়া নিয়ে দুজন গুরুতর দগ্ধ রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। তাদের শারীরিক পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।

Manual5 Ad Code

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্কিন ব্যাংকটি গুরুতর দগ্ধদের চিকিৎসায় আশা জাগাচ্ছে।

বুধবার ইনস্টিটিউটের ১৩ তলার সি-১৩৩৩নং কেবিনে চিকিৎসাধীন দুই বছরের শিশু হামিদার দগ্ধ শরীরের ৩৫২ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার চামড়া দিয়ে ঢাকা দেখা যায়।

শিশুটির মা রাবেয়া বেগম বলেন, ২২ ডিসেম্বর গোসলের জন্য ফোটানো গরম পানিতে অসাবধানতাবশত মেয়ের বুক-পিঠসহ ঊরুর ৪২ শতাংশ ঝলসে যায়। এখানে ভর্তির পর চিকিৎসকরা জানান, শরীরে সেপ্টিসেমিয়া (ব্যাক্টেরিয়ার দ্বারা রক্তদূষণ) হয়েছে। পোঁড়া ক্ষত থেকে রক্ত-পুঁজ ঝরা বন্ধ হচ্ছিল না। পরে চিকিৎসকরা স্কিন ব্যাংকে একজনের দান করা চামড়া নিয়ে ১৪ জানুয়ারি মেয়ের শরীরে প্রতিস্থাপন করেন। এখন আগের চেয়ে অনেকটাই সুস্থ। ইনফেকশনও ভালো হচ্ছে। বার্ন ইনস্টিটিউটের গ্রিন ইউনিটের ১০০১নং ওয়ার্ডের ৩০ নম্বর বিছানায় ভর্তি থাকতে দেখা যায় ৮ বছর বয়সি আরেক শিশু মরিয়মকে। স্কিন ব্যাংকে সংরক্ষিত চামড়া নিয়ে ২১ ডিসেম্বর চিকিৎসকরা তার শরীরের ৭৭৯ সেন্টিমিটার পোড়া ক্ষত ঢেকে দিয়েছেন।

শিশুটির মা মজেমা বেগম বলেন, মাস দুয়েক আগে গ্যাসের চুলার আগুনে মেয়ের পিঠ, পা, পেট ও পেছনের অংশসহ দেহের ২২ শতাংশ পুড়ে যায়। ৪ ডিসেম্বর এখানে ভর্তি করার পর টানা ২৮ দিন এইচডিইউতে ছিল। মাঝে তার ত্বক প্রতিস্থাপন করা হয়। এখন অনেকটা ভালো আছে।

Manual5 Ad Code

স্কিন ব্যাংকের প্রশিক্ষিত সদস্য ও বার্ন ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান যুগান্তরকে বলেন, কারও মেজর বার্ন (গুরুতর দগ্ধ) হলে সেই স্থান থেকে শরীরের পানি, লবণ, প্রোটিন ও তাপ দ্রুত বের হয়ে যায়। চিকিৎসার অংশ হিসাবে অনেক সময় রোগীর অক্ষত জায়গা থেকে চামড়া তুলে ক্ষতস্থানে লাগিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু অনেকের শরীরে এত বেশি পরিমাণ পুড়ে যায় যে, চামড়া নেওয়া সম্ভব হয় না। তখন স্কিন ব্যাংকে সংরক্ষিত চামড়া নিয়ে পোড়া অংশে লাগিয়ে দিলে ওই জায়গা থেকে রক্ত, রস, ইলেকট্রোলাইটস বের হতে পারে না। অল্প সময়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত অংশ চামড়া দিয়ে ঢেকে দিতে পারলে রোগীর মৃত্যুঝুঁকি কমে আসে। দ্রুত নতুন চামড়া তৈরিতে ভূমিকা রাখে। স্কিন ব্যাংক সেবাটি সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চালু আছে।

তিনি আরও বলেন, একজন সুস্থ ব্যক্তি জীবনে একাধিকবার শরীরের স্কিন ডোনেট বা চামড়া দান করতে পারেন। এক্ষেত্রে দাতাকে অস্ত্রোপচার কক্ষে নেওয়ার পর প্রথমে একজন অ্যানেস্থিওলজিস্ট (অবেদনবিদ) স্পাইনে ইনজেকশন দিয়ে শরীরের নির্দিষ্ট অংশ অবশ করে নেন। এরপর প্রশিক্ষিত সার্জনরা (শল্যবিদ) ডার্মাটম যন্ত্রের সাহায্যে সুবিধামতো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে চামড়া সংগ্রহ করে থাকেন। চামড়া দানের পর হাসপাতালে ভর্তি থাকার প্রয়োজন হয় না। এমনকি ১৪ দিনের মধ্যে দাতার শরীরে নতুন চামড়া তৈরি হয়ে যায়।

স্কিন ব্যাংকের কো-অর্ডিনেটর ও বার্ন ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মাহবুব হাসান বলেন, যে কোনো ধরনের পোড়া রোগীর চিকিৎসায় চামড়া প্রতিস্থাপন জরুরি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক স্কিন ব্যাংক এবং চাহিদা অনুযায়ী সংরক্ষিত চামড়া থাকলে দ্রুত শরীরে প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব। কোনো ব্যক্তি চাইলেই মৃত্যুর আগে স্কিন ব্যাংকে তার চামড়া দান করে যেতে পারবেন। সাধারণত মৃত্যুর ৬ থেকে ১০ ঘণ্টার মধ্যে এবং সঠিক তাপমাত্রায় লাশ সংরক্ষণ করলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চামড়া সংগ্রহ করা যায়। মৃত ব্যক্তির পিঠ ও পা থেকে চামড়া নেওয়া হয়।

Manual2 Ad Code

জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সহযোগী অধ্যাপক ডা. মারুফুল ইসলাম বলেন, কারও চামড়া দানে কোনো আইনি বাধা নেই। স্কিন ব্যাংকের ইনচার্জ তামান্না সুলতানা বলেন, দাতাদের কাছ থেকে সংগৃহীত চামড়া সংরক্ষণে বার্ন ইনস্টিটিউটের ১২৩৯নং কক্ষে স্থাপিত স্কিন ব্যাংকটিতে উন্নত প্রযুক্তির ৮টি বিশেষ ফ্রিজ রয়েছে।

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code