আজ সোমবার, ১৯শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শতবর্ষীয় বটবৃক্ষের বিদায়: শেষ হলো একটি যুগের

editor
প্রকাশিত মে ১৮, ২০২৫, ০১:০৯ অপরাহ্ণ
শতবর্ষীয় বটবৃক্ষের বিদায়: শেষ হলো একটি যুগের

Sharing is caring!

তৈয়বুর রহমান (কালীগঞ্জ) গাজীপুর
স্মৃতির পাতায় চিরস্থায়ী হয়ে থাকলো গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরী ইউনিয়নে অবস্থিত সেন্ট নিকোলাস স্কুল এন্ড কলেজের শতবর্ষীয় বটবৃক্ষ। গত শুক্রবার (১৬ মে) দিবাগত রাতে এক প্রবল কালবৈশাখী ঝড়ের তাণ্ডবে উপড়ে পড়েছে এই ঐতিহাসিক গাছটি, যার ছায়ায় প্রজন্মের পর প্রজন্ম কাটিয়েছে তাদের শৈশব-কৈশোর।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় একশো বছর ধরে স্কুল প্রাঙ্গণের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা বিশাল বটবৃক্ষটি ছিল কেবল একটি গাছ নয়, ছিল শিক্ষার্থীদের অবকাশের স্থান, ছিল আড্ডা আর পাঠচর্চার মিলনমেলা। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত গাছটির ছায়াতলে বসে পড়াশোনা করত শিক্ষার্থীরা, চলত গল্প, গান আর খেলার ধুম। কোনো উৎসব বা অনুষ্ঠানের বর্ণিল সাজও যেন পূর্ণ হতো না এই গাছকে ঘিরে।
স্থানীয়রা জানান, গত শুক্রবার দিবাগত রাতে হঠাৎ একটি ভয়াবহ কালবৈশাখী ঝড়ের আঘাতে গাছটি সম্পূর্ণ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও শোকাহত। এভাবে একটি গাছের পতনের মাধ্যমে শেষ হলো একটি দীর্ঘ ইতিহাসের পরিসমাপ্তি। তবে শতবর্ষীয় বটবৃক্ষটির ছায়ায় গড়া স্মৃতিগুলো রয়ে যাবে হাজারো হৃদয়ে, চিরকাল।
বিদ্যালয়ের প্রাক্তন এক শিক্ষার্থী শাহীন মোড়ল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লেখেন, “এই গাছটার সঙ্গে কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে! মনে হয় যেন ছোটবেলার একটা বড় অংশ হারিয়ে গেল।”
বিদ্যালয়ের প্রাক্তন আরেক শিক্ষার্থী প্রিন্স টি কস্তা ফেসবুকে লেখেন, “আজ আমাদের প্রিয় শতবর্ষীয় বটবৃক্ষটির বিদায়ে হৃদয় ভারাক্রান্ত। সেই ছায়াতলে কেটেছে আমাদের শৈশব, গড়ে উঠেছে বন্ধুত্ব আর স্মৃতি। গাছটা ছিল শুধু একটি বৃক্ষ নয়, ছিল আমাদের নীরব সঙ্গী, নির্ভরতার প্রতীক। বিদায় প্রিয় বটবৃক্ষ, তুমি চিরকাল আমাদের মনে বেঁচে থাকবে।”
বিদ্যালয় এর গেস্ট টিচার যীনাত রহমান বলেন, এখানে আরও সংক্ষিপ্ত এবং আবেগঘন সংস্করণটি দেওয়া হলো: “শতবর্ষীয় বটবৃক্ষটি ছিল আমাদের ইতিহাসের এক জীবন্ত অধ্যায়। তার ছায়ায় আমরা শিখেছি ধৈর্য, সহানুভূতি আর স্থিতি। আজ তার বিদায়ে যেন শেষ হলো এক যুগ, কিন্তু তার শিক্ষা আমাদের অন্তরে চিরকাল বেঁচে থাকবে।”
সেন্ট নিকোলাস স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ব্রাদার লিটন ফ্র্যান্সিস রিবেরো বলেন, “আজ আমরা এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী। শতবর্ষীয় এই বটবৃক্ষ শুধু একটি গাছ ছিল না, এটি ছিল আমাদের বিদ্যালয়ের স্মৃতির প্রাচীনতম এক স্তম্ভ। আমি নিজেও যখন এই বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম, তখন এই গাছের ছায়াতেই দাঁড়িয়ে আমরা খেলেছি, আলোচনা করেছি, স্বপ্ন দেখেছি।
তিনি আরো বলেন, “এই বৃক্ষের প্রতি সম্মান জানিয়ে আমি ঘোষণা করছি, বিদ্যালয় প্রাঙ্গণের এক কোণে, এই প্রাচীন গাছটির আশেপাশেই আমি নতুন একটি বটবৃক্ষ রোপণ করব। এটি হবে আমাদের অতীতের প্রতি শ্রদ্ধা এবং ভবিষ্যতের প্রতি একটি আশাবাদী প্রতিশ্রুতি।”