আজ মঙ্গলবার, ২০শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কুলাউড়ার কর্মধা দুষিত হচ্ছে দুর্গন্ধ আর ময়লা আবর্জনায়

editor
প্রকাশিত মে ১৯, ২০২৫, ০২:৫৪ অপরাহ্ণ
কুলাউড়ার কর্মধা দুষিত হচ্ছে দুর্গন্ধ আর ময়লা আবর্জনায়

Sharing is caring!

সালেহ আহমদ (স’লিপক):
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার রবিরবাজারের খাস পুকুর গত ২২ এপ্রিল থেকে পরিস্কার করে পুকুরে জমে থাকা প্লাস্টিক, পলিথিন সহ দুর্গন্ধময় পদার্থ কর্মধা ইউনিয়নের প্রবেশদ্বার রবিরবাজার-কর্মধা সড়কের পাশে শুকনা ছড়া নদীর তীরে ফেলা হয়। এলাকাবাসীর আপত্তির কারণে কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নির্দেশ দিয়ে কিছু ময়লা অপসারণ করান। কিন্তু গত ১৫ মে থেকে রবিরবাজারের বিভিন্ন ধরনের ময়লা আবর্জনা ভ্যানে করে নিয়ে শুকনা ছড়া নদীর তীরে রবিরবাজার-কর্মধা সড়কের পাশে ফেলা হচ্ছে। এতে করে দুর্গন্ধ আর ময়লা আবর্জনায় দুষিত হচ্ছে কর্মধা।
এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করে, এর শিক্ষার্থীর সংখ্যাও অনেক। কর্মধার বিভিন্ন এলাকার শিক্ষার্থীরা লংলা আধুনিক ডিগ্রি কলেজ, রবিরবাজার মাদ্রাসা, আলী আমজাদ স্কুল এন্ড কলেজ, কর্মধা উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে। রবিরবাজার জামে মসজিদের দর্শনার্থীরাও কম নয়। অত্র এলাকার সাথে এতোগুলো প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টতা থাকার পরেও আইনের কোন তোয়াক্কা না করে এলাকা দুষিত করা হচ্ছে। কর্মধাবাসী প্রশ্ন রাখেন, কোন অদৃশ্য শক্তির জোরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এর নির্দেশ অমান্য করে এখানে ময়লা ফেলা হচ্ছে? তারা এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে অনতিবিলম্বে সব ময়লা এখান থেকে সরিয়ে নিয়ে এই জায়গায় বৃক্ষ রোপণের দাবি জানান।
কর্মধা ইউনিয়নে অবস্থিত কালা পাহাড়, পাহাড়ের পাদদেশে ছোট-বড় অসংখ্য ঝর্ণা, রাঙ্গিছড়া লেক, ফানাই লেক, চা-বাগানসহ অসংখ্য দর্শনীয় স্থানে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকদের সমাগম হয়। কিন্তু কর্মধা ইউনিয়নে প্রবেশের প্রধানতম সড়কের পাশে এভাবে ময়লার ভাগার তৈরি করার ফলে আগত পর্যটকদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
বিষয়টি নিয়ে গতকাল কর্মধাবাসীর পক্ষ থেকে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের সাথে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে একটা দরখাস্ত দেওয়া হয়েছে। দরখাস্তে বয়ানী থেকে যানা যায়, রবিরবাজার থেকে প্লাস্টিক, পলিথিনসহ বিভিন্ন ধরণের ময়লা আবর্জনা কর্মধা ইউনিয়নের প্রবেশদ্বার, বারুয়াকান্দি গ্রামের সম্মুখ ভাগে শুকনা ছড়া নদীর তীরে রাস্তার পাশে ফেলা হয়েছে। রবিরবাজার ভূমি অফিসের মাধ্যমে জানতে পারলাম ইউনিয়নের প্রবেশদ্বার ও বারুয়াকান্দি গ্রামের সম্মুখ ভাগে শুকনা ছড়া নদীর তীরে কিছু খাস জমি রয়েছে, সেখানে ময়লা ফেলার বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। আমরা কর্মধা ইউনিয়নবাসীর পক্ষ থেকে তৎক্ষনাৎ তাদের কাছে মৌখিক ভাবে আপত্তি জানিয়েছি।
পরবর্তীতে গত ২৪ এপ্রিল ভূমি অফিসের লোকজন এসে উক্ত খাস জমি লাল পতাকা দিয়ে চিহ্নিত করে যায়। বিষয়টি কর্মধা ইউনিয়নবাসীর জন্য গভীর উদ্বেগের। কারণ অপচনশীল, দুর্গন্ধময় ও দুষিত এসকল বর্জ্য পদার্থ কর্মধা ইউনিয়নের প্রবেশদ্বার (রবিরবাজার-কর্মধা সড়কের পাশে বারুয়াকান্দি গ্রামে) ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি নদীর পানি দূষিত হয়ে অত্র এলাকায় রোগজীবাণু ছড়িয়ে পড়তে পারে। কর্মধা ইউনিয়নের প্রবেশদ্বার হওয়ায় অত্র ইউনিয়নের জন-সাধারন রবিরবাজার সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করতে হয়। ফলে সমস্ত ইউনিয়নবাসী এর মাধ্যমে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই প্লাস্টিক সহ পলিথিনের ময়লা আবর্জনা শুকনা ছড়া নদী থেকে ফানাই নদী হয়ে হাকালুকি হাওরে গিয়ে পড়বে। যার ফলে তৎসংলগ্ন এলাকার পরিবেশ নষ্ট হবে।
বিষয়টি মৌখিক ভাবে কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে ম্যাসেজে ও ফোনে অবগত করলে তিনি নির্দেশনা দিয়ে গত ২৮ ও ২৯ এপ্রিল কিছু ময়লা অপসারণ করান। কিন্তু তারপর গত ১৫ মে থেকে পুনঃরায় ভ্যানে করে রবিরবাজারের ময়লা আবর্জনা কর্মধা ইউনিয়নের প্রবেশদ্বারে ফেলা হচ্ছে।
পূর্বে এই গ্রামে অপরিকল্পিত ভাবে একটি ইট ভাটা নির্মাণ করার ফলে বর্তমানে অত্র এলাকার লোকজনের শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, সর্দিসহ প্রায় সারা বছর হাঁচি-কাশি লেগে থাকে। এই অবস্থায় একই স্থানে আবারও ময়লার ভাগার স্থাপন করা হলে এই এলাকার মানুষের স্বাভাবিক জনজীবন পরিবেশ দূষণের নেতিবাচক প্রভাবে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
এবিষয়ে কয়েকজন সিএনজি চালক বলেন, প্যাসেঞ্জার নিয়ে যাতায়াতের সময় দুর্গন্ধে অনেকে শারীরিক অসুস্থতা অনুভব করেন।
মৌলভীবাজার জজ কোর্টের এডভোকেট এম সাইফুর রহমান বলেন, কর্মধার ৩টি প্রবেশ পথের মধ্যে প্রধানতম সড়কের পাশে এভাবে ময়লার ফেলে কর্মধাবাসীর সাথে অবিচার করা হচ্ছে। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন অত্র ময়লা  দ্রুত অপসারণ করে অপার সৌন্দর্যের কর্মধা ইউনিয়নকে দর্শনার্থী সমৃদ্ধ করতে সহায়তা করবেন। পাশাপাশি এ ময়লা থেকে দূষিত পলিথিন শুকনাছড়া, ফানাই হয়ে হাকালুকি হওরে গিয়ে পড়ে হাওরের জীব বৈচিত্রের ক্ষতির হাত থেকে পরিবেশকে রক্ষা করবেন।
লংলা আধুনিক ডিগ্রি কলেজের সহকারি অধ্যাপক মোঃ গোলাপ মিয়া বলেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর কর্মধা ইউনিয়নের প্রবেশদ্বারে এভাবে অপচনশীল বর্জ্য পদার্থ ফেলা হলে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার মানুষের জন-জীবন ও স্বাস্থ্যগত বিষয় হুমকির মুখে পড়বে। তবে আমরা আশাবাদী জেলা প্রশাসক মহোদয়ের মাধ্যমে বিষয়টির একটি স্থায়ী সমাধান হবে।