আজ বুধবার, ২৫শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাতাস হলেই  ঢেউ ওঠে দুর্গাসাগরে

editor
প্রকাশিত জুন ২৫, ২০২৫, ১১:৫৫ পূর্বাহ্ণ
বাতাস হলেই  ঢেউ ওঠে দুর্গাসাগরে

Sharing is caring!

গাজী তাহের লিটন, ভোলা:
বরিশাল শহর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে মাধবপাশা। সেখানেই দুর্গাসাগর দীঘি। বরিশাল জেলার বানারীপাড়া নেছারাবাদ সড়কের পাশে এটির অবস্থান। ১৭৮০ সালে চন্দ্রদ্বীপ পরগনার তৎকালীন রাজা শিবনারায়ণ এলাকাবাসীর পানির সংকট নিরসনে মাধবপাশায় একটি বৃহৎ দীঘি খনন করেন। স্থানীয়ভাবে এটির নাম একসময় মাধবপাশা দীঘি নামে পরিচিত ছিলো। প্রকৃৃতপক্ষে শিবনারায়নের মা দুর্গাদেবীর নামে দীঘিটির নামকরণ করা হয় দুর্গাগাসাগর।
প্রত্নতত্ত্ব সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিবর্তে দুর্গাসাগর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করছে জেলা প্রশাসন। দুর্গাসাগর এর তিন দিকে ঘাটলা ও দীঘির ঠিক মাঝখানে ৬০ শতাংশ ভূমির উপর টিলা। দুর্গাসাগরে দর্শনার্থীদের অন্যতম আকর্ষণ মাঝখানের এই দ্বীপটির সৌন্দর্য। ২৫০০ হেক্টর আয়তনের দুর্গাসাগর দীঘিকে সাগর হিসেবে কল্পনা করলে, এ টিলাটি যেন একটি দ্বীপ। বাতাসের বেগ একটু বেশি হলেই দুর্গাসাগরে ঢেউ ওঠে। আর সেসব ছোট ছোট ঢেউয়ে ভেসে ওঠে পাড়ের বৃক্ষরাজির ছায়া। স্থানীয়ভাবে এটি মাধবপাশা দীঘি নামেও পরিচিত।
শীত ও বসন্ত ঋতুর শুকনো মৌসুমে দীঘির পাড় লোকে-লোকারণ্য হয়ে প্রাণবন্ত করে তোলে দিনের পুরোটা সময়। দিঘির চারপাশে বাঁধানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে বিনোদনের নতুন মাত্রা খুঁজে পায় ইটের শহরে বাস করা নগরবাসী। আর চিরচেনা গ্রামের বাসিন্দাদের কাছে এ দিঘি যেন গ্রামীণ নিঃসর্গে নিজেকেনতুন করে খুঁজে পাওয়া। চারপাশে বৃক্ষঘেরা স্বচ্ছ জলের এ দিঘির উত্তর পাশেআছে একটি বাঁধানো বড় ঘাট। দীঘির চারপাশে নারিকেল, সুপারি, শিশু, মেহগনি প্রভৃতি বৃক্ষরোপণ করে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়, যা বর্তমানে দিঘিটির শোভা বর্ধন করে চলেছে।
দুর্গাসাগরে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখির সমাগম হয়। পাঁচ প্রজাতির কয়েক হাজার পাখির কলকাকলীতে দীঘিটি শীতকালে মুখরিত থাকে। সরাইল ও বালিহাঁস সহ নানান প্রজাতির পাখি দীঘির মাঝখানে ঢিবিতে আশ্রয় নেয় । সাঁতার কাটে দীঘির স্বচ্ছ, স্ফটিক পানিতে । কখনো বা হালকা শীতের গড়ানো দুপুওে ঝাকঁ বেঁধে ডানা মেলে দেয় আকাশে।
আড়াই শত বছর আগে খনন করা ঐতিহ্যবাহী দুর্গাসাগর। দীর্ঘিটি সংস্কার সহ পাড়ে পর্যটকদের বিশ্রামের জন্য পর্যাপ্ত রেস্ট হাউস এবং পাখিদের অভয়ারন্য নির্মান ও ভাসমান ব্রিজ নির্মিত হলে প্রতি বছর হাজার হাজার দেশ বিদেশী পর্যটকদের আগমন ঘটতো এখানে । এর মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পেতো। পাশাপাশি রক্ষা করা সম্ভব হতো এই প্রাচীণ কীর্তি। অদূরেই লাকুটিয়া জমিদার বাড়িটিও দর্শনীয় স্থান হিসাবে পরিচিত। লাকুটিয়া জমিদার বাড়িটি তিনশত বছরের পুরনো।
নৌপথে ও সড়কপথে খুব সহজেই এখানে আসা যায়। থাকার জন্যও রয়েছে বরিশাল সদরে সুন্দর ও চমৎকার আবাসিক হোটেল এবং আধুনিক পরিবেশ।
শেষ কথা হলো, প্রাচ্যের ভেনিস হিসেবে খ্যাত কীর্ত্তনখোলা নদীর উপকন্ঠে অবস্থিত বরিশাল জুড়েই রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নানা স্পট। যেখানে মনপ্রাণ উজাড় করে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে অবলোকন করা যায় খুব সহজেই।