আজ শুক্রবার, ৩১শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মৌলভীবাজারে ৪ ভাষাসৈনিক ৭৩ বছরেও স্বীকৃতি পাননি

editor
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২৫, ০২:৫২ অপরাহ্ণ
মৌলভীবাজারে ৪ ভাষাসৈনিক ৭৩ বছরেও স্বীকৃতি পাননি

Sharing is caring!

Manual7 Ad Code

সংগ্রাম দত্ত:

ভাষা আন্দোলনের দীর্ঘ ৭৩ বছরেও স্বীকৃতি পাননি বর্তমান মৌলভীবাজার জেলার ৪ ভাষাসৈনিক। হয়নি তাদের যথাযথ মূল্যায়ন। বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলনে অগ্রণী ভুমিকা রাখা এই চার ভাষাসৈনিক যথাক্রমে – সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ইলিয়াস, সৈয়দ মতিউর রহমান, মফিজ আলী ও রাসেন্দ্র দত্ত চৌধুরী।

তাদের মধ্যে রাসেন্দ্র দত্ত চৌধুরী একমাত্র জীবিত ভাষাসৈনিক ।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভাষা সৈনিকদের নামানুসারে বিভিন্ন সড়ক কিংবা প্রতিষ্ঠানের নামকরণ অথবা বৃত্তি প্রদান করা হলেও এই চার ভাষাসৈনিককে নিয়ে সরকারি-বেসরকারি কোনও উদ্যোগ এখনও নেয়া হয়নি।

Manual5 Ad Code

তৎকালীন দক্ষিণ শ্রীহট্ট ( মৌলভীবাজার) মহকুমার কমলগঞ্জ থানার কুশালপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ইলিয়াস। ‘৫২ এর ভাষা আন্দোলনের সময়ে ঢাকার রাজপথে সক্রিয় ছিলেন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন তিনি। ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনি মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭০, ১৯৭৯ ও ১৯৮৬ সালে তিনি জাতীয় সংসদের এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন।

একই থানার পতনঊষার ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামে জন্ম নেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও প্রখ্যাত সাংবাদিক সৈয়দ মতিউর রহমান। তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির ঘটনায় মৌলভীবাজারের স্কুল এবং কয়েকটি মাদ্রাসায় ছাত্র ধর্মঘট পালনের নেতৃত্ব দেন। তাঁর নেতৃত্বে ওই সময় প্রতিবাদ সভা ও ছাত্র ধর্মঘট পালন হয় কমলগঞ্জ উপজেলা সদর, শমশের নগর ও ভানুগাছ বাজারে। আন্দোলনের সময়ে শ্রীমঙ্গলে ছাত্রদের উদ্বুদ্ধ করে বাসা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে অনুপ্রাণিত করেন। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ‘৬২ শিক্ষা আন্দোলন, ‘৬৩ সালে শ্রীমঙ্গলের বালিশিরা পাহাড় আন্দোলন, ‘৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ বিশেষ ভূমিকা রাখেন।স্থানীয়ভাবে ভাষাসৈনিক হিসেবে প্রয়াত সৈয়দ মতিউর রহমানকে একাধিক সংগঠন মরণোত্তর পদক দিলেও সরকারিভাবে কোনও মূল্যায়ন নেই।

Manual5 Ad Code

একই থানার পতনঊষার ইউনিয়নের ধূপাটিলা গ্রামে জন্ম নেন প্রয়াত মফিজ আলী। ভাষা আন্দোলনের সময় সিলেট ও শমশেরনগর কেন্দ্রিক আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন তিনি। ভাষা আন্দোলনের সেই পথ ধরেই তিনি প্রগতিশীল রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। সর্বশেষ পূর্ব পাকিস্তান চা শ্রমিক সংঘের শ্রমিক আন্দোলনে যুক্ত হন। ভাষা আন্দোলনের অগ্রসৈনিক হিসাবে মফিজ আলীকে ২০০৩ সালে কমলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে সংবর্ধনা প্রদান করলেও আর কোনও মূল্যায়ন পাননি। তিনি ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ‘৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ‘৬৩ সালের বালিশিরা পাহাড় আন্দোলন, ‘৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ‘৭১ সালের মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম সহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তাঁর অবদান ছিল অপরিসীম। তিনি এখনো সকলের কাছে বিপ্লবী মফিজ আলী হিসেবে পরিচিত।

Manual7 Ad Code

শ্রীমঙ্গল থানার নোয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন রাসেন্দ্র দত্ত চৌধুরী । ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় শ্রীমঙ্গলে নেতৃত্বদানকারীদের মধ্যে ছিলেন তিনি একমাত্র জীবিত ভাষা সৈনিক। ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমেই তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৫৭ সালে মৌলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে ন্যাপ গঠিত হলে তিনি তাতে যোগ দেন। ‘৬২ শিক্ষা আন্দোলন, ‘৬৬ ছয় ও উনিশ দফা আন্দোলন, ‘৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানসহ ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে ভূমিকা পালন করেন। প্রায় চার দশকের উপর তিনি সাংবাদিকতাও করেছেন। দুঃখজনক হলেও সত্য যে ২০১৭ সালে শ্রীমঙ্গল থানা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটির সভাপতি ও কিছু সদস্যের সংকীর্ণ রাজনীতির কারণে তাঁর নাম মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্তি হয়নি।

তারা সকলেই এলাকায় রাজনীতি করার কারণে সরকারের নজর পড়েনি। অন্যদিকে রাজনৈতিক দলগুলো যারাই ক্ষমতায় আসা-যাওয়া করেছেন ওইসব দলগুলোর স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দের সংকীর্ণ রাজনীতির কারণে তাদের যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়নি।

Manual8 Ad Code

Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code